জ্বলদর্চি

চিতল হরিণের সবুজ বনে /গৌতম বাড়ই

চিতল হরিণের সবুজ বনে
গৌতম বাড়ই 


এককের জন্য একক অনুভূতি
গদ্যপদ্যের ধূসর আয়োজনে
আজব ক্ষমতার বিষবাষ্প।

এমন তো দিন আসতেই পারে 
যেদিন বাতাস গায়ে লাগলেও
তুমি গলে জল হয়ে যেতে পারো
তোমার হাতে কাব্য থাকলেও
তোমায় কবি বলে কেউ 
স্বীকার করবে না
যদি না তুমি দম্ভ ঝেড়ে ফেলো।

ফ্রেঞ্চকাট আর ফরাসি সৌরভে
ভরপুর কবিতা সন্ধ্যায় 
তোমায় দেখলে করুণা হয় আজকাল
কারণ কবিতার মাটি গায়ে মেখে 
চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে গেলে 
মানুষ তোমাকে অবিশ্বাস করবে 
এতটাই অবিশ্বাস যে, 
বিগত দিনের কবিতাভুবন 
এক বড় প্রশ্ন চিহ্ন হয়ে দেখা যাবে।

এমন তো দিন আসতেই পারে 
সততার কুঠুরীগুলো পেরিয়ে 
তুমি এক অন্ধকার গলি ঘুপচি ঘরে বসে 
নিজেকে সৎ বলে আপ্রাণ চেষ্টা করছো
বোঝাতে হাজারবার ।
কিছুতেই পারছো না ,
ক্রমশ নির্জন একা হয়ে যাচ্ছো।

ভাত ছড়ালে কাকের অভাব হয়না শুনেছি
শূন্য নির্জনতায় এক ও একক আমি 
আশপাশে কোনো কাকের দেখা নেই ।
জীবন ও নিয়তি পাশাপাশি হাত ধরে চলে
যে গান গেয়েছিল গায়কেরা 
সবটুকু তাদের কন্ঠ থেকে নেওয়া 
তাদের আদিম বুকে শুষ্কতা তাদের গানের 
কোনো স্বরলিপি আঁকা নেই সেখানে ।
এই দৈন্যতা ভালো নষ্ট অভিনয় জানে
স্নেহ-মায়া-মমতা বলে কিছু নেই এ ক্লীববুকে।

চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বললেই সবকথা কথা নয়
যা বিশ্বাস করিনা তা আজন্মকাল 
লিখে গেলেই হবে? 
যে ভীরুতা গ্রাস করে রাখে অষ্টপ্রহর 
যে পৃথিবী এ চোখের আলো 
মস্তিষ্কের কোষ শুকিয়ে ফেলে 
নর অধম করে ফেলে অনবরত
অথচ রবিঠাকুরের গানে সুর মিলিয়ে গাইব?

এ ধরণী দ্বিধা হও
বিভক্ত করো আমার সত্তা 
পরীক্ষাগারে নিক্ষেপ করো 
তারপর আমি শুচি হতে চাই এ অরুণআলোয়।
বিবেকের কাছে গচ্ছিত রেখো নিজেকে 
পৃথিবী একদিন ঠিক অগ্নি-পরীক্ষা নেবে।
বাতাস গায়ে লাগলেই একদিন ঠিক
গলে জল হয়ে যাবে 
এ শরীর স্থির হলে মাটির সাথেও মিশে যায়
মিশে যায় লাভার স্রোতে।
এক থেকে বহু আর বহু থেকে এক 
নিরন্তর দৃষ্টিকোণে মেপে-মেপে দেখো
এই মানবজীবনে 
একটাই শুদ্ধমানুষ হতে চেয়েছিলাম।
বিজ্ঞাপনে গানে কবিতায় গল্পে নয় 
মানুষের কাঁধে হাত রেখে 
যে প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়েছি চিরতরে।

উদভ্রান্ত তারাদের সাথে সন্ধেরাতের মজলিশে
আমি তোমাদের খুঁজে পাইনি আর, 
মহাপাতকের মতন এ জীবন বরফের তীক্ষ্ণ চোখ
ইস্পাতের ফলা উঁচিয়ে ধরে। 
নিজস্ব প্রত্যেকের হাতে আজ অস্ত্র,
কন্ঠ আর পদক্ষেপকে প্রতিরোধ করবার 
অথচ তারা শান্তিরদূত। 
তোমাদের থেকেও কবি বলে তাদের শ্রদ্ধা করি
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, গোলাম রসুল 
তাদের যাপনে এ জীবনের 
শব্দরা কথা বলে 
কত অনায়াসে খিদের মতন এ জীবনের 
কবিতা অনুভব করান অক্ষরে-অক্ষরে ।

আমাদের ভুবনডাঙা ভরে থাক তাহাদের নিয়ে,
নিস্তরঙ্গ সমুদ্রের সৈকতে 
একদিন হেঁটেই যেতে হবে আমাদের ।
তাই বনচঞ্চল হাওয়ার কূর্ণিশে 
নিজেকে তৈরী  রেখো।
এমন তো দিন আসতেই পারে 
যেদিন বাতাস গায়ে লাগলেও 
গলে জল হয়ে যেতে পারো
গলে জল হয়ে যেতে পারো। 

চিতল হরিণের সবুজ বনে।
জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇



Post a Comment

0 Comments