জ্বলদর্চি

সৌন্দর্যের পরিভাষা /মলয় রায়চৌধুরী

আমার জীবনের ঘটনা -১০
সৌন্দর্যের পরিভাষা

মলয় রায়চৌধুরী


পাটনায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নোট পোড়াবার চাকরি ছেড়ে অ্যাগ্রিকালচারাল রিফাইনান্স অ্যাণ্ড ডেভেলাপমেন্ট কর্পোপরেশনের লখনউ শাখায় যোগ দিলুম । অফিসে ঢুকে, প্রথম দিনেই, একজন সুন্দরী যুবতীর দিকে দৃষ্টি চলে গেল । অপরূপা বলতে যা বোঝায় । পাটনা অফিসেও বহু তরুণী কাজ করতেন । স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু কিশোরী, তরুণী, যুবতী সহপাঠি ছিল, কিন্তু এই মেয়েটির মতন সুন্দরী ছিল না কেউ । 

আমাকে যে বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হলো, সে কী আনন্দ, মেয়েটি সেই বিভাগের কেরানি । এমন সুন্দরী মেয়েকে কেরানি ভাবতে কেমন যেন বাধো-বাধো লাগতো । আমার আন্ডারে যারা কাজ করতো তারা কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে ফাইল নিয়ে আসতো, পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে । রোজ চাইতুম সুন্দরী যুবতিটিও আসুক, সামনে বসিয়ে কথা বলি, ভালো করে দেখি তাকে, বাড়ির লোকজনদের বিষয়ে জিগ্যেস করি । আসতো না কখনও ।

যে পাড়ায় অফিস আমাকে বাড়ি দিয়েছিল, তার পাশে থাকতো বয়স্ক একজন কর্মচারী, আমারই অফিসের, নবাব পরিবারের, হায়দর আলি, বেশ লম্বা চওড়া । আমার স্কুটার মেরামতের জন্য গেলে হায়দর আলির গাড়ি করে অফিস যেতুম । হায়দারকে একদিন জিগ্যেস করলুম ওই তরুণীর ব্যাপারে । গাড়ি চালাতে-চালাতে হায়দার বলল, হ্যাঁ, মেয়েটি পাঞ্জাবি, ফিল্মে নামার মতো সুন্দরী, রোজ সেজেও আসে ফিল্মস্টারদের মতন, প্রতিদিন নতুন পোশাক, পারফিউম, ঠোঁটে লিপ্সটিক, বড়ো-বড়ো নখে নেলপালিশ, নেলপালিশ আর লিপ্সটিকের রঙও পালটায় ইচ্ছেমতন । 
জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇
—আপনার বিভাগেই কাজ করে  মেয়েটি অথচ আপনি তার সম্পর্কে এখনও কিছু জানেন না ? কর্মীদের সম্পর্কে খোঁজখবর রাখবেন তো !

—না, জানি না, জানতে চাই, এরকম সুন্দরী কর্মী আমি আগে দেখিনি । সব কর্মী ফাইল নিয়ে আমার কাছে আসে, এই মেয়েটা কখনও আসেনি । আমার মনে হয় সুন্দরী বলে গর্ববোধ করে, ফিল্মস্টারদের মতন ।

—না স্যার, শুনলে আপনার মন খারাপ হয়ে যাবে । মেয়েটির পা দুটো বিকলাঙ্গ ; আমরা কেবল ওর ওপরের অঙ্গ দেখতে পাই । টেবিলের ওই পাশে আড়ালে থাকা বিকলাঙ্গ অংশটা দেখতে পাই না । ওর একজন আয়া রোজ স্পেশাল হুইল চেয়ারে বসিয়ে আনে, হুইল চেয়ারটা গ্যারেজে রেখে চলে যায়, মাঝে দুপুরে এসে মেয়েটাকে টয়লেটে নিয়ে যায় । অফিস ছুটির সময়ে এসে হুইল চেয়ারে বসিয়ে, বুকে বেল্ট বেঁধে বাড়ি নিয়ে যায় । আমাদের অফিস থেকে বেশি দূরে নয় ওদের বাড়ি । যদিও ওর স্কুল-কলেজের রেজাল্ট খুব ভালো, বিকলাঙ্গের স্পেশাল কোটায় চাকরি পেয়েছে ।

এসব শোনার পর অফিসে ঢুকেই তাকাতুম মেয়েটির দিকে । ওর মানসিক যন্ত্রণা বা মনোব্যথার রেশ খোঁজার প্রয়াস করতুম । 
একদিন অফিস ছুটির পর বেরোবার সময়  দেখলুম মেয়েটি একা বসে আছে । কেমন যেন কাঁদো-কাঁদো গম্ভীর । হায়দরের গাড়িতে আমার ফেরার কথা । ওকে বললুম, এইভাবে একজন সুন্দরীকে একা ফেলে তো চলে যেতে পারি না, তায় আবার বিকলাঙ্গ । শালা স্টাফগুলোও কেমন, বিকলাঙ্গ বলে একা ফেলে পালিয়েছে; মেয়েটা যদি বিকলাঙ্গ না হতো তাহলে দশবারোজন ওর চারপাশে ঘুরঘুর করতো । কয়েকজন নির্ঘাৎ প্রেমে পড়ে বিয়ের প্রস্তাব দিতো ।

হায়দর জানালো, মেয়েটির আয়া এখনও আসেনি । 

তখনকার দিনে মোবাইল ছিল না যে ওর বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করব । ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করার পরও ওর বাড়ির কাউকে আসতে দেখলুম না । হায়দর আলিকে বললুম, তোমার গাড়ি করে পৌঁছে দাও, তুমি ওকে তুলে নিয়ে গিয়ে তোমার গাড়িতে বসাতে পারবে, এরকম পালোয়ানি চেহারার নবাব তুমি । 

—আপনি পাগল হয়েছেন স্যার, বলল হায়দর, আমি মুসলমান, নবাব বাড়ির হলেও, মুসলমান। একজন হিন্দু যুবতীকে জড়িয়ে ধরে তুলেছি জানলে কালকে দাঙ্গা বেঁধে যাবে । আপনি বরং মেয়েটাকে গিয়ে আশ্বাস দিন যাতে ও মনে না করে যে ওকে বিপদে ফেলে আপনি পালাচ্ছেন ।

আমি তাই করলুম । মেয়েটাকে বললুম যে হায়দরের গাড়ি করে তোমাকে পৌঁছে দেবো আমরা । তোমার হুইলচেয়ার ওর গাড়ির ডিকিতে রেখে নিয়ে যাবো । ফিকে হাসি ফুটলো মেয়েটার মুখে ।

হায়দর আলি গ্যারেজ থেকে স্পেশাল হুইল চেয়ারটা নিয়ে এলো । অফিসের যে চেয়ারে মেয়েটা বসেছিল সেটা আমি আর হায়দর দুজনে মিলে নিজেদের দিকে ঘোরালুম । দেখলুম চেয়ারে একটা বিশেষ ধরণের গদি পাতা । গদিটা হুইলচেয়ারে রাখলুম ।

সামনে দিন থেকে মেয়েটার পাছার তলায় দুদিক থেকে দুহাতের জোরে তুলে নিলুম । মেয়েটা আমার গলা দুহাতে জড়িয়ে ধরল, আঃ কী সুগন্ধ । মনে হলো আমার ঘাড়ে ঠোঁট চেপে রেখেছে ; লিপ্সটিকের দাগ বসে গিয়ে থাকবে । আঁচ করতে পারলুম, মেয়েটা আমার লিঙ্গের সঙ্গে নিজেকে চেপে ধরতে চাইছে । ফলে আমার শরীরে পুরুষের আদেখলা প্রতিক্রিয়া আরম্ভ হয়ে গেল । আলতো করে হুইলচেয়ারে নামিয়ে বেল্ট বেঁধে দিলুম বুকের ওপর দিয়ে । 

হায়দর আলি হুইলচেয়ার টেনে লিফ্টে করে নিয়ে গেল গ্যারেজে । আমি প্যাণ্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে নিজেকে সামলালুম । টয়লেটে গিয়ে টিশ্যুপেপার দিয়ে লিপ্সটিক মুছলুম । মুখময় ঘাম দেখা দিয়েছিল, তা পুঁছলুম আরেকটা টিশ্যুপেপারে।

লিফ্ট দিয়ে নেমে দেখলুম মেয়েটি তখনও হুইলচেয়ারে বসে, স্ট্র্যাপ বাঁধা, হায়দর গাড়ির পেছনের দরোজা খুলে দাঁড়িয়ে । আবার একই ব্যাপার ঘটল, স্ট্র্যাপ খুলে গাড়ির পেছনের সিটে বসাবার সময়ে । মেয়েটি আমার হাত ধরেছিল, যাতে আমি ওর পাশে বসি । অন্য দরোজা খুলে বসলুম ওর পাশে । আড়চোখে দেখলুম, পাদুটো একেবারে সরুসরু । এক অচেনা ভয় আর উত্তেজনা চেপে রেখে চললুম ওকে ওর বাড়িতে পৌঁছে দিতে ।

বাড়িতে গাড়ি পৌঁছোলে, মেয়েটি বলল, ‘স্যার ওয়ান্স মোর, প্লিজ হেল্প মি টু গেট ডাউন’ ।

যা ভাবলুম তা ঠিক কিনা জানি না । এর আগে যুবতিটি কোনো পুরুষকে বুকে জড়িয়ে ধরেনি।


Post a Comment

0 Comments