জ্বলদর্চি

কালের অতল তলে কলোরাডো - ৩/ চিত্রা ভট্টাচার্য্য

কলোরাডো নদী পথের পাশে

কালের অতল তলে কলোরাডো - ৩ 
চিত্রা ভট্টাচার্য্য


সারা দিনের মেঘে ঢাকা সূর্য অস্তাচলে যাবার বেলায় একরাশ কমলা রাঙা আলোর আভা   পশ্চিম আকাশের ধূসরিমায় ছড়িয়ে দিয়েছে। আধারের ছায়া নামতেই দূর পাহাড়ের গায়ে জ্বলে উঠেছে সাঁঝবাতির ঝলমলে আলো যেন সাতনরী হার কণ্ঠে দুলিয়ে মার্কিনী শহুরে  রাতের রানী সেজেছে চকিত চপলা মনোহারিণী র বেশে। শহর ছাড়িয়ে পাহাড়ের পাকদন্ডী বেয়ে এগিয়ে চলেছি। এ পথ ভারী বিপদসংকুল ; খুব সাবধানে বাঁক গুলো চারধারে সুতীক্ষ্ণ নজর ও মনোসংযোগ রেখে ড্রাইভ করে পথ পাড়ি দেওয়ায় গাড়ির মধ্যে স্তদ্ধ পরিবেশ। একমাত্র অতনু শিস দিয়ে গান গাইছে '' ঘুমঘুম চাঁদ ঝিকিমিকি তারা এই মাধবী রাত আসেনি তো বুঝি আর জীবনে আমার '.- --শিস দিয়ে গান গাওয়া শেষ হলে পারভীনের অনুরোধে  গান টার কথা গুলো আমার সীমিত জ্ঞান টুকু দিয়ে বাংলা থেকে ইংলিশে বলি।    when moon is sleeping and stars are glittering, night is so dark clam and cool,,, etc ,,  celebrate the beauty and tranquility of  the night and how it canprovide comfort and  hope to those who appriciate   ,,, ,  ইয়মের ও সমান  আগ্রহ, আমার  মনে শঙ্কা জাগে ঠিক বলছি তো?  অতনু উৎসাহ যোগায়  বলে Really its very  nice,  ইয়ম পারভীনের  আগ্রহ আমায় অনুপ্রাণিত করে,আলোচনা নতুন পথে এগিয়ে চলে। ওরা বলে ব্রতীন অতনুর কাছ শুনেছি  তোমাদের সাহিত্য সংগীত বিশেষ করে রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং সেই মহান যুগপুরুষ স্বামী বিবেকানন্দ , বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ,নেতাজী নজরুলের মত মানুষ জন্মেছেন সে দেশের মত এমন ধনী সমৃদ্ধশালী জাতি কোথায় খুঁজে পাবো ?  আমি বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি। ওরা পৃথিবীর  কত খবর রাখে।

 পার্কে যাবার পথে এদিক টা ভারী নির্জন। মাইনাস -৩/ -৪ ডিগ্রী তাপাঙ্ক ঠান্ডায় চারদিকে আধারের ছায়া ঝুপঝুপ করে নামলো। অজস্র  অজানা বুনো গাছের সোঁদা সোঁদা গন্ধ মন উতলা করে। পথের ধার ঘেঁষে যত দূর চলেছি তারাও চলেছে। কাছে দূরের সারা পাহাড় ঢাকা পড়লো গাঢ় কালো রাত্রির খামে। আমরা Ante lope island এ এসে পৌঁছলাম। ইয়ম পাঁচ বছর বাদে পাভলোর দেখা পেয়ে অফুরন্ত খুশিতে ভাসছে দুজনেই। গলগল করে রাশিয়ান ভাষায় মান অভিমানে অভিযোগ খুনসুঁটি চলতে থাকে। ওদের চোখের আনন্দাশ্রু অজান্তে আমাদের ও চোখের পাতা ভারী করে তোলে। ভাই বোনের এমন অকৃত্রিম টান ,এমন স্নেহের মিলন মায়ার বাঁধন দেশ কালের বেড়া ডিঙিয়ে সর্বত্র একই রকম সুন্দর পাহাড়ের ঢালের মত গড়িয়ে যায়। 
মসৃণ কালো সর্পিল পথ।

পাভলো প্রায় সাড়ে ছয়ফুট লম্বা ফর্সা মেদহীন বছর তিরিশের রাশিয়ান ছেলে টি      বেশবুদ্ধিদীপ্ত  চেহারা , সপ্রতিভ হাসি তে ভরা মুখ ইয়মের মতই নীল চোখ। প্রাথমিক  আলাপের পর্ব সারা হলে আমাদের পরম যত্নে গেষ্ট হাউসে নিয়ে এলো। ভীষণ ঠান্ডায়  প্রায় জমে গিয়েছি ,জড়োসড়ো হয়ে কুন্ডলি পাকিয়ে বসে আছি ড্রয়িঙ রুমের  দেওয়ালে ফায়ার প্লেসের আগুনের সামনে ,হাত পা অসাড় যেন জরায় ধরেছে। তবু হাড়হিম করা  শীত থেকে রেহাই নেই। পাভলো আরো মোটা সোটা শুকনো গাছের ডালপালা ফায়ার প্লেসের চুল্লিতে গুঁজে দিয়ে জ্বালানির আগুন কে উস্কে দিয়েছে। গনগনে আগুনের তাপে বেশ আরাম লাগে। এবার  Cupboard থেকে Wine এর বাহারী বোতল বার করে সবাই কে গ্লাসে সার্ভ করে। বলে এই পানীয় এখন তোমাদের খুব প্রয়োজনীয়। আগুনের চারপাশ ঘিরে গোল হয়ে বসেছি। বারবিকিউ এ ঝলসানো শিক -কাবাব ও বিভিন্ন স্নাক্স সমেত আড্ডা চলছে । এতোক্ষণে হাড় হীম করা ঠান্ডা সয়ে গিয়ে শরীরে আরাম এলো ,বেশ সুস্থ বোধ করছি।   
         জন মানব হীন পার্ক এলাকায় এখন গভীর রাত। নিঝুমপুরির ,ডাইনিং হলের সাবেকী দেওয়াল ঘড়িতে রাত ন' টার ঘন্টা সদর্পে বাজলো। ডিনার রেডি ব্রেড চিকেনে আহারের পর্ব শেষে সারাদিন ঘুরে পরিশ্রান্ত হয়ে থাকায়  যে যার ঘরের  পালকের বিছানায় নরম কম্বলের আশ্রয়ে রুম হিটারের উষ্ণতায় ঘুমের সাগরে ভেসে চলেছি। গতকাল রাতের ঘুটঘুটে ঘোর অন্ধকারে ফেন্সিংয়ের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা পাইন সিডার ওকের ঝাঁকড়া মাথার গাছ গুলোকেই যেন মনে হয়েছিল সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে অশরীরী আত্মার দল। এলোমেলো ঝোড়ো বাতাসে ঘনঘন মাথা নাড়া দেখে ভেবেছি এই নির্জন, জন মনুষ্য হীন ঘোরকান্তারে হয়তো কোনো বিপদ ছুটে আসছে। ভয়ে চুপচাপ চোখ বুজে শুয়ে থেকে কখন ঘুমিয়েছি খেয়াল ছিল না। 
জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇
এক ঝাঁক ম্যাগপাইয়ের সুরেলা কণ্ঠের কলরব সেই কাক ভোরেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। দেওয়াল জোড়া কাঁচের জানলার ওপাশে পর্দা সরিয়ে দেখি  সিডার আর সদ্য নবীন এঞ্জেল ওকের ডালে চলছে অন্যপাখির ঝাঁকের পাখার ঝটপটানি ,কলকোলাহল। এতো ভোর বেলায় এমন ঠান্ডায় এক সাথে এতো পাখির ডাক !  বিছানায় শুয়ে থাকা মুশকিল। হয়তো জোরালো ঝোড়ো হাওয়ায় ওদের ঘর ভেঙেছে। কিম্বা অসম্ভব ঠান্ডায় একটু উষ্ণতার জন্য এতো হুটো পাটি। দরজা খুলে বারান্দায় শাল গায়ে বেরিয়ে এসেছি শুধু পাখিদের দেখতে। সামনের ঝাঁকড়া মাথা বেওবাব গাছের ডাল থেকে ঝোড়ো হাওয়ায় অনেক যত্নে বাঁধা সাধের বাসাটি  মাটিতে পরে লুটোপুটি খাচ্ছে। আর তাকে ঘিরেই এতো শোরগোল। রাতে নিশ্চয়ই কোনো পাখি খাদক জন্তু এসেছিল ,সদ্য ডিম ফুটে বেরোনো বাচ্চা সমেত পাখি গুলো সাবরে দিয়েছে। এত সাধের বাসাটি ও মাটিতে ফেলেছে। ব্রতীন বকুনি লাগায়  ''ওভার কোট     জুতো মোজা ছাড়া বাইরে বেরিয়েছো ? নির্ঘাৎ ঠান্ডা লাগাবে।'' সত্যি অসহনীয় ঠান্ডা তবে ওয়েদার রিপোর্টে বলেছে সকালে নয় বেলা বাড়লে তুষার পাতের সম্ভাবনা আছে ।                        
আজ 3rd March---- এবারে ক্যালিফোর্নিয়ায় দুদিন আগেই মার্চের শুরু টা দেখেছিলাম বেশ মনোরম। আমেরিকার ঋতু বৈচিত্র্যে বসন্তের  প্রাবল্যের ছোঁয়া এলেও এই পাহাড়ি অঞ্চলের সর্বত্রই গম্ভীর শীতে জর্জরিত। কুয়াশার চাদর সরিয়ে এখানে বসন্তের আবির্ভাব এখোনো সে ভাবে হয়নি।                                                                                                                       ব্রেকফাস্ট সারা হয়ে গেলে আমরা সবাই পরবর্তী যাত্রার জন্য প্রস্তুত। পাভলো এলো ঘুম ভাঙা চোখে একরাশ প্রসন্নতা নিয়ে। গুডমর্নিং জানিয়ে হাসির বিনিময়ে চলে সুসম্পর্কের আদান প্রদান এবং Antelope island  ,রকি পর্বতমালা ও এস্পেন নগরীর সাথে কলোরাডো রাজ্যটি র ও গল্প র সাথে স্টেটরুট বা হাইওয়ে যান জট ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা চলে ।                                                                                                      বিদায়ী পর্বে পাভলোর হাত ধরে ইয়মের চোখে আবার শ্রাবণের ধারা বইতে শুরু করলে ব্রতীন অতনু হেসে উঠে ওদের ইয়ার্কি ঠোঁটের গোড়ায়  বলে ''ওরে তোর গালের গোলাপি মেক আপ চোখের জলের কালি তে  ধুয়ে যাচ্ছে-- প্লীজ আর কাঁদিস না !' ওদের কথায় ইয়মের এক চোখ জলে ভাসলে ও ঠোঁটে হাসির ছোঁয়া লাগে। পাভলোর অতিথেয়তার তুলনা নেই। ও কে লস্গাটসে আসার নিমন্ত্রণ জানিয়ে গেষ্টহাউসের বিল মিটিয়ে পার্কের রাস্তায় কিছুটা ঘুরে বেড়াই।                                                                       
 হীম শীতল হাওয়া পথের ধারের গাছ গুলোর ডালে পাতায় মর্মর শব্দ তুলে কানের পাশে যেন সজোরে ঝাপ্টা মারছে। মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে বেওবাব গাছের ঝাঁকড়া মাথায় মগ ডালে  সূর্য দেব যদি তার আদি অকৃত্রিম হাসি টুকু নিয়ে হলদে আলোর সিংহাসনে চড়ে বসেন তাহলে বেশ হয়। কিন্তু ছায়াঘন মেঘলা আকাশ   ,আবহাওয়ার কোনো পরিবর্তন নেই। ওপর থেকে  নীচের ছবি তুলতে ক্যামেরা নিয়ে এক উঁচু টিলার মাথায় উঠে যাচ্ছে ব্রতীনরা চারজন। সাংঘাতিক ঠান্ডায় ইয়মের শ্বাসরোধ হওয়ার অবস্থা দেখে তখন ই দেখি চারজনেই দল বেঁধে নেমে আসছে ।                                                                              
এবার আবার চলা শুরু হলো , ট্যাকোমায় স্টার্ট দিয়ে সোজা Antelope island এর ভিজিটিং সেন্টারে পৌঁছতে পাঁচ মিনিট  লাগলো। বিশাল লম্বা এই পার্ক টির আদি অন্ত দেখতে পাচ্ছি না। এখানেও সল্টলেক তার মিহি সাদা বালির ঢেউ সেই জিপসাম দিয়ে এই দ্বীপ টিকে ও ঘিরে রেখেছে। চারদিক ধবধবে চোখ ঝলসানো সাদা। মনে হয় একটু গভীরে এগিয়ে গেলে হয়তো এই মিহি চোরা বালিতে পা ড়ুবে যাবে ,হয়তো ধীরে ধীরে পাতালে তলিয়ে যাবো।বালি নয় ! দূর থেকে মনে হয় ধীর স্থির সাদা ফেনায় ভরা এক মহাসাগর দেখতে পাচ্ছি। তুষারাবৃত হয়ে আছে দূরদূরান্তের পাহাড়ের সীমানা জুড়ে সর্বত্র। সহজে বোঝা যায় না সে শুধুই লবন গুঁড়ো ,সাদা বালি, না তুষার কণা ? মরুপ্রান্তরের শেষ সীমানায় দিগন্তরেখায় সাদা বালির ওপর পূবের নীলাভ আকাশ নেমে এসে মিলে মিশে একাকার । নরম আলোয় স্নিগ্ধ মোহময় অপরূপা প্রকৃতির এই ভাষাহারা সৌন্দর্যে নির্বাক হয়ে যাই।   

        এর মধ্যেই দর্শকের ভীড় জমে উঠছে। নানা বয়সের মানব মানবী  ভ্রমণার্থী রা শিশু যুবা থেকে বয়োবৃদ্ধের দল নানা রঙের পোশাকে আনন্দে মেতেছে। তারা বালির পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঁচু থেকে নীচে গড়িয়ে পড়ছে ,বালির মধ্যে কেউ আনন্দে গড়াগড়ি দিচ্ছে কেউ হাবুডুবু খাচ্ছে। দেখছি বালিতে তারা সমানে হৈ হুল্লোড়    করছে কিন্তু কেউ ডুবে যাচ্ছে না। এতক্ষণে আমার ভ্রান্ত  ধারণা ভাঙলো। এখানে চোরা বালির কোনো গল্প নেই।  আলসে সূর্য মেঘের আঁচলের আড়ালে থাকায় ক্যামেরায় ফ্লাশের আলোয় ছবি উঠছে তেমন ভালো আসছে না । এতো শুনেছিলাম এন্টিলোপের কথা কিন্তু  এই পার্কে এসেছিলাম এন্টিলোপ দেখতে। সম্পূর্ণ হতাশ হ'লাম  সে শুধু কল্পনায় রইলো। বিশাল বড়ো গাছের ডালের মত  শিংওয়ালা বা তার থেকে মাঝারি বা ছোটো কোনো তৃণ ভোজী এন্টিলোপ হরিণ বা বাইসন জাতীয় কোনো প্রাণী কে দেখতে পেলাম না। হয়তো তারা মানুষের ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। ভাবছি এক্ষুণি কোথাও থেকে চমকে দিয়ে এন্টিলোপের দল ছুটে তাদের বিরাট বড়ো শিং গুলো নিয়ে তাড়া করবে।                                               
  আমরা এগিয়ে চলেছি সামনের 15inter state এর রাস্তায় গুগুলের নির্ভুল নিশানায়। পথে ডেভিলস ক্যানিয়ন পার হয়ে পেলাম কলোরাডোর প্রধান উপনদী স্বচ্ছ কাকচক্ষু জলে ভরা গ্রিন রিভার।,সামান্য বিরতির অবকাশে নদীর পাশে এসে দাঁড়ালাম। দেখি স্নিগ্ধ  জলের ওপর নীল আকাশে র প্রতিচ্ছবির সাথে চক্রাকারে ঘোরা মাছ লোভী শিকারি পাখি গুলোর ও ছায়া বুকে বয়ে নিয়ে নদী তরতর করে এগিয়ে চলেছে কোন অচেনা ঠিকানায়।  Antelope island থেকে নেমে এসেছি ,আবার চরৈবেতি শুরু হলো। লাঞ্চ টাইম হয়ে গিয়েছিল পার্ক সিটিতে ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে পেয়ে গেলাম চিংড়ি চিকেন মাছ এমন কি চাইনিজ ও সব পাওয়া যাবে। 

  170 east Rd  ধরে  প্রায় আড়াই ঘন্টা ড্রাইভ হয়ে গিয়েছে। অনেক দূর থেকেই বিরাট    পাথরের চাই বুকে বয়ে জল শুকিয়ে যাওয়া কলোরাডো নদীর সর্পিল পথ চলা দেখছিলাম।কল্পনায় ছিল খলখল ছলছল উদ্দাম স্রোতের গর্জনে দুই পার ভেঙে ভাসিয়ে নিয়ে চলা এক উত্তাল স্রোতস্বিনী তরঙ্গিণী কে দেখতে পাবো। উৎসুক চোখে পলক পরে না ,যদি তার দেখা পাই। না! তার দেখা পাইনি .বরং দেখেছি নদী শুকিয়ে বিভিন্ন রঙের পাথুরে মরুভুমি জেগে উঠে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে। ডেভিলস ক্যানিয়ন ও নামি অনামি কত জায়গা পার হয়ে    অনেকটা পথ একই  পর্বত শ্রেণীর অসামান্য রূপে ডুবে আছি। অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছি ,অতুলনীয় এই পাহাড়ি প্রকৃতির তামাটে ধূসর অথবা রক্তিম বর্ণে শোভিত  আকাশ ছোঁয়া অচলায়তন পাহাড়ের অনাবিল সৌন্দর্য্যের রূপে সাজানো রুক্ষতায় ভরা অপরূপা প্রকৃতি অধিশ্বরীর এক বিশাল সাম্রাজ্য । তিনি  তার সব সঞ্চিত সৌন্দর্য্য ঐশ্বর্য্য  উজাড়  করে দিয়ে তিলে তিলে সাজিয়ে তুলেছে এই রুক্ষ পাহাড়ি মরুর অঞ্চল কে।  চলার পথে মগ্ন হয়ে দেখে কিছুটা   মিল খুঁজে পেলাম  আমাদের বাঁকুড়া বিষ্ণুপুরের লাল পাহাড়ের সাথে ,সেখানের টেরাকোটা কাজের মন্দিরের সাথে।
                    আর্চেস ন্যাশানাল পার্ক
                                                             
অনেকটা পথ একনাগাড়ে চলে এসে আর্চেস ন্যাশনাল পার্কের সামনে নামলাম। পারভীন বলে আমরা এসেছি কলোরাডো নদীর সংলগ্ন ইউটার পূর্বপ্রান্তে ,মোয়াবের উত্তরে  sand stone arches park , এ পার্ক দেখতে এখন নয় অবশ্যই আসবো বেশী সময়  নিয়ে ফেরার পথে। এ পাথুরে  অঞ্চল বেশ শুনশান ,অজস্র গাড়ি তীর বেগে ছুটে চলেছে পাহাড়ের গা ঘেঁষে। এখোনো কেউ কোথাও নেই ,বোধহয় আজ আমরাই এখানে প্রথম এসেছি। আকাশের নীলসীমানায় মাথা ঠেকিয়ে কোথাও গোলাপী কোথাও বা গাঢ় তামাটে রঙের সুউচ্চ খাড়াই পাহাড় গুলো সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে অঙ্গুলির নির্দেশে  যেন দুনিয়া টাকে শাসন করছে। ভাবতে অবাক লাগছে শত সহস্র শতাব্দী আগে শুধু নদীর বেগে ধেয়ে আসা জল স্রোত পাহাড় কে ক্ষতবিক্ষত করে কত রূপে কত রকম ভাবে ধাক্কা মেরেছে ভেঙেছে ,গড়েছে  জুড়েছে  ভাসিয়েছে। মুগ্ধ চোখে চেয়ে আছি এ দেখার শেষ নেই। দুপুর বেলায় মাথার ওপরে নীলাকাশে মেঘের পানসী ভাসছে। এখন ঝকঝকে রোদ   মেঘ বৃষ্টি তুষার পাতের বালাই নেই।     ইউটা আর আরিজোনার বর্ডার ধরে ফাঁকা মসৃণ কালো রাস্তায় গাড়ির চাকায় ঝড় তুলে দুই পাহাড়ের বুকের মধ্যে দিয়ে আবারএগিয়ে চলেছি ---অন্তহীন চলার এ পথ  ডাকে  আয় -আয় -আয়।   জানিনা ''শেষ কোথায় ''সে যে  শেষ হয়ে ও শেষ হয় না।


Post a Comment

0 Comments