দূরদেশের লোক গল্প— চিন (এশিয়া)
গুরুরও উপরে এক কাঠি
চিন্ময় দাশ
এক মঠে পড়তে এসেছে একটি অভাবী ছেলে। এখানে সন্ন্যাসীরাই পড়ান ছাত্রদের। দিন কয়েক না যেতেই ছেলেটা দেখতে পেল, একজন শিক্ষক প্রতিদিনই ক্লাশে এসে ঘুমিয়ে পড়েন।
আসলে হয়েছে কী, ক্লাশে আসবার আগে, ভরপেট খেয়ে নেওয়া আর তার পরে ছোট্ট একটা ঘুম-- তাঁর অভ্যাস। ক্লাশ শুরু হওয়ার একটু বাদেই তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম ভাঙে ক্লাশ শেষের ঘন্টা পড়লে, তবেই।
ছেলেটার মনে খটকা—কেন হয় এমনটা? একজন শিক্ষক ক্লাশে এসে, ঘুমিয়ে যাবেন! এটা কি আদৌ মানায় তাঁকে?
একদিন মওকা পেয়ে, শিক্ষক মশাইকে জিজ্ঞেস করে বসল ছেলেটি—আচ্ছা, গুরুদেব? একটা কথা জিজ্ঞেস করছি । পুরো ক্লাশটা আপনি ঘুমিয়ে থাকেন কেন?
প্রশ্ন শুনে গুরুদেব চমকালেন না, ভড়কা্লেন না। শান্ত গলায় উত্তর দিলেন—বৎস, এটাই হোল তাঁর সাথে সাক্ষাতের সহজ উপায়। ক্লাশের এই কয়েকটা মিনিট আমি তাঁর সাথে কাটাই।
এমন উত্তর শুনে কে না অবাক হয়? ছেলেটিরও সেই অবস্থা। মাথায় কিছুই ঢুকল না। কিন্তু সে নাছোড়বান্দা।
--ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কার সাথে কাটান আপনি?
-- সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তিনি। স্বয়ং ভগবান বুদ্ধ। তাঁর মহামূল্যবান বাণী শুনি। কী চমৎকার কন্ঠস্বর তাঁর। কী গভীর জ্ঞান! তাই তো নিয়মিত ঘুমিয়ে পড়াটা অভ্যেস করে নিয়েছি।
এক দিনের ঘটনা। বাড়িতে ছেলেটির বাবার ভারি অসুখ। রাত জেগে সেবা করতে হয়েছে বাবাকে। ক্লাশে এসেই ঘুমিয়ে পড়েছে ছেলেটি। কখন ক্লাশ শেষের ঘন্টা বেজেছে, কখন সন্ন্যাসী শিক্ষক মশাই জেগে উঠেছেন, কিছুই জানতে পারেনি সে।
🍂
শিক্ষক মশাইর জেগে উঠেই চোখে পড়ে গেল, ক্লাশের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে ছেলেটি। রাগে লাল হয়ে উঠে এলেন। চুলের মুঠি ধরে দাঁড় করিয়ে, গর্জে উঠলেন—এতো সাহস তোর! আমার ক্লাশে ঘুমিয়ে পড়েছিস?
ছেলেটি শান্ত গলায় বলল—গুরুদেব! আপনার মনে হয়েছে, আমি ঘুমিয়ে আছি। আসলে আমি ভগবান বুদ্ধের সাথে ছিলাম এতক্ষণ। তাঁর মূল্যবান বাণী শুনছিলাম।
শিক্ষক মশাই রাগে গরগর করে উঠলেন। চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন—তাই নাকি? বেশ বেশ। খুব ভালো কাজ। তা, সর্বশক্তিমান ভগবান বুদ্ধ কী বললেন তোকে?
এখনও ছেলেটির গলা শান্ত। বলল-- সর্বশক্তিমান ভগবান বুদ্ধ বললেন, কোন দিনই নাকি আপনার সাথে দেখা হয়নি তাঁর। কোনদিনই না। কথাবার্তা তো দূরের কথা।
শিক্ষক মশাইর মুখে কথা সরছে না তখন। চুলের মুঠি ছেড়ে, মাথা নামিয়ে বেরিয়ে গেলেন ক্লাশ থেকে।
0 Comments