সুমিত্রা ঘোষ
১৮১৭ সালে প্রীতরাম দাস যখন মারা যান তখন নগদ সাড়ে ছয় লক্ষ টাকা ও প্রচুর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি একমাত্র পুত্র রাজচন্দ্রের দখলে আসে। প্রীতরাম পৃথিবী ছেড়ে চলে- যাওয়ার পর সমগ্র বাংলায় শুরু হল নতুন যুগ। নতুন যুগের আলোয় জানবাজার জমিদারবাড়িও উদ্ভাসিত হয়ে উঠল।
রাজচন্দ্র পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তি আরও বাড়াতে লাগলেন। রাজচন্দ্রের মস্তবড় গুণ ছিল দানধ্যান করা। দান ধ্যানের ব্যাপারে রাজচন্দ্রের সহধর্মিণী আরো উপরে ছিলেন। প্রীতরাম দাসের মৃত্যুর পর থেকে রানি রাসমণি স্বামীকে ব্যবসার কাজে শক্তি ও সাহস যোগাতেন এবং সুপরামর্শ দিতেন। পরামর্শদাতা রূপে বুদ্ধিমতী ভার্যা রানিকে পেয়ে রাজচন্দ্র উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথে এগোতে লাগলেন। রানি রাসমণির মধ্যে উপস্থিত বুদ্ধি ও পরিচালন ক্ষমতা স্বামী রাজচন্দ্র দাসের চেয়ে কিছু কম ছিল না। সময় সময় তাঁর সিদ্ধান্ত স্বামীকে অতিক্রম করেও যেত। ব্যবসা ও জমিদারি সেকালে অনেকেরই ছিল। তৎকালীন বাংলায় বড়লোকের সংখ্যা নেহাৎ কম ছিল না। সেকালে জমিদারগণ দুপ্রকার ছিলেন। একশ্রেণির জমিদার বদান্য ছিলেন অপর শ্রেণি অত্যাচারী জমিদার ছিলেন। জানবাজারের জমিদার বদান্য জমিদার হিসেবে সুপরিচিত ছিল। জানবাজারের সেবামূলক ও সদাচার চিরকালের উজ্বল দৃষ্টান্ত। এই ব্যাপারে পরে আলোচনা করা যাবে।
এখন আসি রানির কিছু ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে। ১২ বঙ্গাব্দে রানি জন্মগ্রহণ করেন। ইংরাজী ১৭৯৩ সাল। ১২১১ বঙ্গাব্দে রানির বিবাহ সম্পন্ন হয়। ১২১৩ সালে রানির প্রথম কন্যার জন্ম হয়। নাম রাখা হয় পদ্মমণি। ১২১৮ বঙ্গাব্দে রানির দ্বিতীয় কন্যার জন্ম হয়, নাম রাখা হয় কুমারী। আবার পাঁচ বছর পর ১২২৩ বঙ্গাব্দে রানির তৃতীয় কন্যার জন্ম হয়, নাম রাখা হয় করুণা। দীর্ঘ সাত বছর পরে রানির কোলে এলেন শেষ কন্যা জগদম্বা, জগদম্বার জন্মের চার বছর পূর্বে রানি একটি মৃত পুত্র সন্তান প্রসব করেন বলে জানা যায়।
🍂
১২ বঙ্গাব্দে রানি জন্মগ্রহণ করেন এবং ১২৩০ বঙ্গাব্দে রানির সন্তানাদি সব হয়ে যায়। তিনি তখন চার সন্তানের জননী এবং জানবাজারের জমিদার বাড়ির সুগৃহিণী। এবার পূর্ব প্রসঙ্গ টেনে জানবাজারের জমিদার বাড়ির বদান্যতা, সদাচার ও সেবামূলক কাজের দৃষ্টান্ত তুলে ধরা যাক। ১২৩০ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ইংরাজী ১৮২০ সালে বিদ্যাসাগর জন্মেছেন। আর তাঁর চার বছর পরে ১৮২৪ সালে মধুসূদন দত্ত জন্মগ্রহণ করবেন। এইভাবে একের পর এক রত্নগর্ভা মায়েদের সন্তানরা পৃথিবীর আলো দেখতে শুরু করবেন। ১২৩০ বঙ্গাব্দে পশ্চিমবাংলার কয়েকটি জেলা বন্যায় ভেসে গিয়েছিল। বহু পরিবার সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়েছিলেন। রানি রাসমণি আগ্রহী হয়ে এদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করলেন এবং আহারাদির জন্য এককালীন বহু অর্থ ব্যয় করেন। চারিদিকে বন্যা, হাহাকার রবের মধ্যে রানি এক মর্মান্তিক খবর পেলেন। তাঁর পিতা হরেকৃষ্ণ দাস পরলোকে পাড়ি জমিয়েছেন। তখনকার দিনে চতুর্থী করার চল ছিল গঙ্গার তীরে। পিতার মৃত্যুর পর চতুর্থী করবার জন্য গঙ্গার তীরে গিয়ে দেখেন গঙ্গার ঘাটের অবস্থা খুবই শোচনীয়, পলিতে ঢাকা পড়ে গেছে গঙ্গা। ভাঙাচোড়া রাস্তা দিয়ে সাধারণ লোককে গঙ্গায় স্নানে যেতে হয়। স্নান ছাড়া অন্যান্য কাজে অনেক লোককে গঙ্গায় যেতে হয়।ক্রমশ
0 Comments