গুচ্ছ কবিতা / শুভশ্রী রায়


গুচ্ছ কবিতা / শুভশ্রী রায়

সাঁঝেলি মায়া

এক স্তর সন্ধ্যা মনখারাপের সঙ্গে আঙুলে আঙুল জড়িয়ে হাজির,  
আরেক সাঁঝেলি স্তর অনেক আশায় বিছিয়ে রেখেছে নিজেকে,
মাঝখানে ছড়ানো প্রার্থনা -
ব্যাকুল মুহূর্ত কিছু ধূপের ধোঁয়ার মতো অস্পষ্ট অত নয়,
অভ্যস্ত মন্ত্রোচ্চারণে ব্যষ্টি ও সমষ্টির মঙ্গলাকাঙ্ক্ষা মিশে থাকে,
বিষাদ একটু, গতায়ু পূর্বজনের জন্য বুকে বেদনার অনুরণন তোলে নিষ্কলুষ শাঁখ,
আজন্ম মঙ্গলাকাঙ্ক্ষায় স্থির। 


ব্ল্যাক হোল

টেনে নাও, সব টেনে নাও তুমি নিজের ভেতর
অফুরন্ত মাধ্যাকর্ষণ দিয়ে,
অন্দরে তোমার রাখো আমাদের সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়,
পাকে পাকে তোমার ভেতরে
আমাদের পূর্ব, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সমস্ত সঞ্চিত..
তোমার গভীর যন্ত্রণা সব আমাদেরই,
হে অনিবার্য কৃষ্ণ, অবধারিত গহ্বর
সত্তা আমার গর্ভে তোমার,
এই গ্রহে জীবনের মতো একটু যাপন করতে এসেছি টুক করে!
হাল্কাফুল্কা বেঁচে থাকার কাছাকাছি এই অস্তিত্ব ফুরিয়ে গেলে,
সমর্পণ ইচ্ছুক এই আমি-কে
চামড়ার ফুৎকার শাসন থেকে বার করে নিও।

🍂

পরম আগুন

সোজা নয় তারাদের কথা ভাবা,
ছাইছাই হয়ে আসে চোখের মণি,
ধূর্তেরা দল বেঁধে ঢিলও ছোঁড়ে,
তার চেয়ে ঢের সোজা ভালোবাসার গোলগাল গল্প লেখা,
অন্তত যে রকম লিখতে পারলে
দু' চারটে হাসিখুশি গোলাপের পাপড়ি স্বতঃস্ফূর্ত উড়ে আসে।

ছাড়ো ভালোবাসার নিরাপদ গালগল্প,
নক্ষত্রদের পরম আগুন কেড়ে নিতে চেষ্টা করো,
তারাও বুঝুক তাদের জন্য মর্তের সামান্য কবিরাও পিপাসিত হয়;
তারপরে দেখো- গল্পেগাথায় কবিকেও কেউ কেউ
আকাশে বসিয়ে দেয় কিনা।


উজ্জ্বল অন্বেষণ 

আমি সাহসী, হৃদয়বান ও দীর্ঘকায় পুরুষ,
আমাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছিল,
তারপরে কারো পাপবোধ কারো উপকথা বানানোর ইচ্ছা মিলেমিশে
একেবারে আকাশে উঠিয়ে দেওয়া হল আমায়।

হার মানিনি।
শিকার, অহঙ্কার ও তীব্র কামে ভর্তি মর্ত্য ছেড়ে
আকাশে এসেও কঠিন অঙ্গীকারে
কালপুরুষ হয়ে খুঁজে বেড়াই আমার চতুর হত্যাকারীকে
আর খুঁজতে খুঁজতেই জ্বলজ্বল করি।

পায়ের তলায় সভ্যতার পর সভ্যতা সসম্ভ্রমে দেখে,
স্তব-স্তুতি-গাথা লেখে প্রতিটি মন্ত্রমুগ্ধ যুগ, 
কিংবদন্তী হয়ে ছড়িয়ে পড়ে আমার উজ্জ্বল অন্বেষণ।

Post a Comment

1 Comments

  1. ভালো কবিতা লিখছেন। অভিনন্দন।

    ReplyDelete