জ্বলদর্চি

ইতি তুঙ্গবিদ্যা.. /সুবর্ণা নাগ

ইতি তুঙ্গবিদ্যা.. 
সুবর্ণা নাগ

"রাধা-পূর্ণশক্তি, কৃষ্ণ-পূর্ণশক্তিমান। 
দুই বস্তু ভেদ নাই, শাস্ত্র-পরমাণ।।
মৃগমদ, তার গন্ধ-যৈছে অবিচ্ছেদ। 
অগ্নিজ্বালাতে যৈছে নাহি কভু ভেদ
রাধাকৃষ্ণ তৈছে সদা একই স্বরূপ।
লীলারস আস্বাদিতে ধরে দুইরূপ।। " 
[চৈতন্যচরিতামৃত আদিলীলা (৪/৯৭) ]



হে হৃদয়বল্লভ জনার্দন, 

আমি তুঙ্গবিদ্যা,তোমার অষ্টসখীর এক সখী ।আশা করি স্মৃতিতে আছি। এ পত্র কোনো পথি মধ্যে ধুলায় লুটোবে জেনেও লিখছি, কারণ কালি কলম দোয়াত যে আমায় চুপ করতে বলে না বাকিদের মত। চলে গেলে মথুরায় গোপীনাথ,সে রয়ে গেল  এক ব্যভিচারিণী ভক্তির নাম হয়ে।তবু লোক মুখে রাধা ঈশ্বরী, পরমেশ্বরী কারণ সে যে শ্রী কৃষ্ণের  লীলাসঙ্গী, পরম প্রেয়সী, কালোত্তীর্ণ প্রেমিকা। 
       সই রাধারাণী হলেন পূর্ণ শক্তি এবং তুমি শ্রীকৃষ্ণ পূর্ণ শক্তিমান। তোমাদের মধ্যে কোনো ভেদ নেই, দুই অঙ্গে এক আত্মা । কস্তুরী থেকে তার গন্ধকে যেমন আলাদা করা যায় না, আগুন থেকে তার তাপকে , তেমনি রাধা যেনো শ্রীকৃষ্ণের অবিচ্ছেদ্য অংশ  ।
    হে নন্দদুলাল, দেখো এ কি পরিনতি সই এর! তোমার বিহনে সে যে এখন এক পাগলিনী। তাকে সমাজ মেনে নেয় না, সংসার স্থান দেয় না, আর তার সে অনুভূতিও নাই। সে শুধু তোমায় নিয়ে এক অন্য মনোজগতে বাস করছে , কানহা। প্রতি নিয়ত তোমার উপস্থিতি তার শরীরে, মনে আজও প্রস্ফুটিত।
   বৃন্দাবনের যত গোপ নারী, আমরা সবাই তোমার আরাধিকা, লীলাসঙ্গিনী, তবে কেউই রাধা হয়ে উঠতে পারিনি কখনো। রাধারাণীর মত কূল মান, স্বত্বা বিসর্জন দিয়ে  হয়তো কৃষ্ণে লীন হতে পারিনি আজও। রাই কিশোরী আজ প্রৌঢ়া, কিন্তু বিরহীনির বুঝি বয়স বাড়ে না, । সে নিজেই কৃষ্ণ হয়ে ওঠে আর আত্ম আদরে ভরে ওঠে । তোমার ফেলে যাওয়া বাঁশিকে এমন ভাবে ঠোঁটে নেয়, যেনো তোমার অধরে অধর রেখেছে রাই। এক সময় সে ছিল আমাদের চোখের বালি , কিন্তু আজ যে বড়ো করুণা হয় ওকে দেখে গোপীনাথ। তোমার চরণে লুটিয়ে পড়ে যেনো বলি , 

কি রাধা রেখে গেলে শ্যাম,
সে যে নেই আপনার মাঝে।
তোমার আসার অপেক্ষায়, 
সে যে নানা রং মেখে সাজে। 
কি যন্ত্রণায় কাঁদে?
কি খুশিতে যে হাসে?
কারণে অকারণে বলে
"রাধা শুধু কৃষ্ণ ভালোবাসে "!
 
    বহুকাল থেকে শুনে আসছি রাধার 'রা ' অর্থে রমন অর্থাৎ আনন্দ বর্ধনকারী আর 'ধা ' অর্থে যিনি ধারণ করেন, রাধা নারী রূপে শুধু প্রেমিকাই নয়, তোমার আনন্দের আধার। আর তুমি গোপীনাথ সচ্চিদানন্দ - সৎ, চিৎ ও আনন্দ যার সত্ত্বার মাঝে বিরাজে। তবে তুমি রাধা ত্যাজি , আছো কেমন! কে আজ ধারণ করে তোমার আনন্দকে?
    তুমি কংস বধ থেকে কুরুক্ষেত্রে বিশ্বরূপ ধারণ করতে ব্যস্ত যখন রাধা আনমনে তোমায় খুঁজে চলে তমাল কুঞ্জ বনে।কেবল ই বলে " সই শোন, ওই যে কানুর বাঁশি আমায় ডাকে, আমায় বেনী বেঁধে দে, সাজিয়ে দে যতনে সই, পঙ্কিল পথ পেরিয়ে আমায় যেতে হবে অভিসারে...", কি করুণ তার মিনতি শ্যাম! আমরা অসহায় হয়ে চেয়ে দেখি রাই সুন্দরীর  বৃথা অপেক্ষা!
  তুমিও কি সবার মাঝে 'রাধে রাধে ' বলে তাকে স্মরণ করো হৃদয়নাথ? বিরহ কি তোমায় ছুঁয়ে যায় না? তুমি কি সত্যিই ভুলেছ এ বৃন্দাবনকে?

" রাধা খুঁজে ফেরে  কৃষ্ণ, 
ভেসে যায় চোখের জলে, 
বলো গোপীনাথ ,তুমিও কি 
যাপন কর,
রাধে রাধে বলে?"
   নিদ্রাহীন দুটি চোখ ভোরের ফুলে ভ্রমরের গুঞ্জনে তোমায় খোঁজে, কালো মেঘে তোমার ই ছায়া দেখে, পথের ধুলো মাখে আর বলে " আমার প্রিয় এই পথেই গেছে মথুরায়, এই পথের ধুলায় মৃগ নাভির গন্ধ"। 
   তোমার হ্লাদিনী শক্তির মূর্ত রূপ আজ ধুলায় লুটায়, পরিহাস করে এ সংসার তবু রাখাল রাজা ফিরবে বৃন্দাবনে  , অপেক্ষায় অধীর সে। যুগ যুগ ধরে রাধা নির্বিকারে আশায় আছে , যদি তার প্রানসখা
একটি বার নয়ন সমুখে আসে। 

লীলাভূমে রাধা একেলা, 
কেবল পথ চেয়ে থাকে, 
ক্ষুদাহীন, নিদ্রাহীন 
অপেক্ষায় থাকে।
না শোনে কোনো 
সখীদের বারণ, 
বলে শ্রীকৃষ্ণ চরণে
 আমার জীবন মরণ।
কলঙ্কের কালি মাখে
বৃষভানু- কন্যা, আয়ানের
ঘরণী, 
হে মুরারী, এত নিবেদিত প্রাণ
তুমি বুঝি চিনতেই পারনি।

এত প্রশ্ন করি মনে মনে, উত্তর ও আমি জানি। জানি সারা বিশ্ব ভার তোমার কাঁধে, সমাজের শান্তি, ধর্ম রক্ষার্থে তুমি চলে গেলে পার্থ সারথী।
কিন্তু প্রতি মুহূর্তে, প্রতি দিনে, প্রতি ঋতুতে রাধিকার কেবল  পথ চেয়ে থাকা ।যা কিছু অমোঘ, অখণ্ডনীয় তাকে যে মেনে নেওয়া উচিত , রাধিকা বোধয় তা বোঝে না বা এমন হতে পারে সে হয়ত মেনে নেয়, কিন্তু ' মনে ' নিতে পারে না। সখীকে আগলে রাখি, আগল দিতে পারি কই? 
সে যেনো ফুটিফাটা মাটির মত বুকের ওপর কৃষ্ণ মেঘের বৃষ্টি চায় শুধু।

কালের নিয়ম মানে না হৃদয়,
এমনই যাতনা প্রেমে, 
এ বিষের জ্বালা বোঝাতে প্রভু, ধরায় এসেছো নেমে?
অষ্ট সখীর মনেও তুমি আজও যে  পরম প্রিয়, 
অন্তরে নাই রাখো হে কানু,
চরণেই স্থান দিও। 
চায়নি তো রাধা শিকল দিতে,
চায়নি তো রাধা স্বীকৃতি! 
তবু জানি হে যাদব রাজা, 
তুমি পুরুষ আর সে প্রকৃতি।

         গ্রীষ্মের দাবদাহে, প্রখর রোদ্রে  সারা বিশ্বসমাজ যখন তৃষ্ণার্ত, পশু পাখির প্রাণ ওষ্ঠাগত, তখনও শ্রীরাধিকা অবচেতনেই ৺হেটে চলে কুঞ্জ পথে। তপ্ত পথে রাধারানীর কমলের ন্যায় কোমল চরণ দগ্ধ হতে থাকে, তবু সে কৃষ্ণ নাম নিয়ে পথে পথে ঘুরে ফেরে। 

পায়ের পাতা পুড়ছে, 
পথ হয়েছে তপ্ত, 
রৌদ্র-বিলাসী দগ্ধ রাধা , 
তবু অপেক্ষাতেই ব্যাপ্ত।

     রাখাল রাজা তুমি সেই দিনগুলিতে রাধার ৺আচলে ছায়া খুঁজে নিতে, সেই ৺আচল লুটিয়ে আজ কুঞ্জে বসে আছে সে। তার সোনার অঙ্গ পুড়ে যায় রোদে, তাকে পায়ে ধরে সাধি আর বলি, "গৃহে চল সই ", সে প্রত্যুত্তরে বলে, " তোরা ফিরে যা, আমি আরও কৃষ্ণ কালো  হই"।। 
     সারা বৃন্দ গোপ নারীরা যখন শীতল যমুনার জলে অবগাহন করে, রাধা দূর হতে শুধু দেখে, আসে না সখী দে্র কাছে , বলে 

" শূন্য সে তমাল ডালি, 
আর কেউ করে না বস্ত্র হরণ, 
ও যমুনাও বড়ো রিক্ত আজি,
কৃষ্ণ বিনা কি আছে মোর? 
না জীবন, না মরণ।।"

ঘর্মাক্ত রাধিকাকে দেখি আর ভাবি, শুধু তার নয়ন নয়, সারা দেহই যেন অশ্রুবারিতে স্নাত হচ্ছে।
🍂
  
আজ ও মনে পড়ে সেই বর্ষার জলধারায় বৃন্দাবনে চলত লীলা ক্রীড়া, ঋদ্ধ যৌবনা রাধা সিক্ত বস্ত্রে ময়ূরের মত নেচে নেচে অভিসারে যেত, তুমিও চির তৃষ্ণার্তের মত প্রেয়সীর মিলনের অপেক্ষায় অধীর হতে , তোমার সে নয়নাভিরাম রূপে মুগ্ধ হতে গোপিনীরাও ছুটে যেতাম কুঞ্জে! 
    আজ  সে পথে কেউ যায়না।শুধু রাধিকা বিহ্বল হয়ে হেঁটে যায়, দাদরীও তার কানে মধুসুদনের বাঁশির সুর হয়ে বাজে বোধয়।তাই গুরু গম্ভীর মেঘ গর্জন, দামিনীর ঝলক , ঝড়ো হাওয়ার দাপট কিছুতেই তাকে থামাতে পারে না। কালো মেঘের মাঝে সে তার কালাসোনার মুখ খুজেঁ পায় আর বিদ্যুতের ক্ষনিকের রশ্মি যেন কৃষ্ণের আভরণের ঝলক মাত্র। পাগলিনী রাই খুঁজে ফেরে সেই বিনোদিনী রাইকে। কর্দমাক্ত পথ যেন সমাজের সেই গঞ্জনা, যা উপেক্ষা করে রাই চলতে থাকে। সে কালো যমুনার জলে অবগাহন করে , আর অপেক্ষা করে কানাই এসে বুঝি তার কেশ মুছে দেবে।
উন্মাদিনী রাই কে দু হাত বাড়িয়ে ফিরে আসতে বললে , সে বলে 
"যা সখী, দিসনে বাধা,
কৃষ্ণ জলে নাহায় রাধা!
তোদের চোখ জ্বলে যায় বুঝি?
আয় না তবে, সবে মিলে 
কানুকে নীল যমুনায় খুঁজি। 
জলে ডুব দিয়ে শুনি, 
 কানুর আসার নিক্বন ধ্বনি, 
রাধা রাধা ডাকে নাম। 
আসছে আমার খেলার সাথী
নবদূর্বাদল শাম।।"

       আজ ও শিহরিত হই শরত পূর্ণিমার সেই মধুক্ষণ স্মরণে,  ব্রজগোপীনিদের সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত যাপন। বনমালী তুমি কুঞ্জে মগ্ন হতে রাশ লীলায়, সখী পরিবেষ্ঠিত হয়ে রাশ নৃত্যে লিপ্ত হতে তুমি , অন্তর তোমার প্রেমের সাগর আর সে তরঙ্গে দেহতরী ভাসাতাম যতেক গোপ নারী। রাধা হতো তার মূলমধ্য মনি।
    দৈনন্দিন জীবনের সুখানুভূতিকে আধ্যাত্মিকতায় ও কামপ্রবৃত্তিসমূহ প্রেমাত্মক প্রকৃতি রূপে তোমার মাঝেই দেখতে পেতাম আমরা। 
    আজ সে রিক্ত কুঞ্জে, রাধা একাকী ই নৃত্য করে, ভগ্নপ্রায় ঝুলনায় একাই দোদুল দোলে। শরতের কাশ ফুলের বনে ঘুরে ফেরে আর কুঞ্জে বসে কাশের পালকের  ছোয়ায় বুঝি তোমার পেলব  স্পর্শ পায়। আপন মনে গুনগুনিয়ে গায়...

"সই, কুঞ্জ সাজা ফুলমালায়, 
পূর্ন করি গানের ডালি, 
নৃত্যে বিভঙ্গে দেহের বেড়ি খোল,
আসবে আমার প্রেমিক বনমালী।।"
সই কে বলি, 
"ওলো সই, কেন মাখিস সেধে, 
কলঙ্কের এই অঙ্গার? "
 খোপায় ময়ূর পালক ৺গেথে রাধিকা শুধায়,
" সই, কালা আমায় সাজায় যতনে, 
ওই কালি আমার শৃঙ্গার।। "


    হেমন্তে যখন  তুলোর মত মেঘ ভেসে যায় সুনিবিড় নীল আকাশে, রাধিকা সবুজ মাঠে একাকী শুয়ে ওই নীল রং দেখে , বলে ওঠে
"দেখ লো সই, যশোদা মায়ের নীলচে গোপাল কেমন আপন মনে মাখন নিয়ে খেলছে, কিছু খাচ্ছে আর কিছু মাখছে! " হৈমন্তী সন্ধ্যায়  সন্ধ্যা দীপের শিখা দেখে বলে  আমার ৺বাকা বিহারীর শিখি পাখা দুলছে যেন। 
লোকে পাগলের প্রলাপ বলে হেসে চলে যায়, কিন্তু তোমার আবেশে রাধিকা স্তব্ধ হয়ে রয়। 
কোলে মাথাখানি নিয়ে, রাই কে বলি 
 "ও সই, মনটারে তুই বোঝা, 
 এবার একটু সংসারী হ, 
সবটা হবে সোজা।"
বিহ্বল রাধা বলে তখন,
" সংসারীই তো আমি।
মনের ঘরে আমি স্ত্রী, 
আর কৃষ্ণ মানি স্বামী।
 এমন রতন মোর অন্তরে
আর কি চাইব আমি? 
আমার কুটিরে ঘনশ্যাম আছে, 
সেই তো পরম দামি। "

এরপর আসে তীব্র শৈত্য প্রবাহ। কুয়াশাচ্ছন্ন মেঠো পথে  গোপিনীরা যাই যমুনায় জল আনতে। দেখি রাধা দুয়ারে বসে, গায়ে তার শীত বস্ত্র নাই। 
ছুটে যাই তার কাছে, 
কপট রাগে বলি, 
     ওরে এভাবে আসে কি কৃষ্ণ? 
দুচোখে তার চমক খেলে, বলে
" সেই তো আমায় জড়িয়ে থাকে, সেই তো রেখেছে উষ্ণ। "
নতুন ফসলের উৎসবে, নতুন ফলের স্বাদে রাধিকার মন নেই, বলে " "গোবর্ধন বিনে কিসের উৎসব? 
বৃন্দাবন প্রভুহীন, বৃথা কলরব। "
  যদিও ভুল বলে না সই। 

তাকে বুঝিয়ে বলি, 
ওলো  সই, তোমার কালা মানিক 
আজ সুদর্শন চক্রধারী। 
কুরুক্ষেত্রের ত্রানকর্তা
 ধর্ম ধারনকারী। 
ঘরে তাঁর রাজার দুলালী 
রুক্মিণী সুন্দরী, 
রাধা শুধু কানুর লীলাসঙ্গী
তোরে আর বোঝাতে নারি।। 

সে অশ্রু সজল নয়নে বলে, 
"সখী , 
নিঠুর কানাই যত দূরে যাক, 
আমিই তো তার আধার, 
তাইতো জগৎ কৃষ্ণ পূর্বে, 
নাম নেয় গো রাধার। "

মনে পড়ে কানাই, তোমার প্রিয় ঋতু বসন্তের কথা?
কত রঙে রাঙানো ফাগুন আসতো আমাদের বৃন্দাবনে। ফুলের রং লাগত মনেও। প্রকৃতি তার অপার রূপের ডালি সাজিয়ে মুখরিত হয়ে উঠত কুহু কুজনে আর এই প্রেমের ঋতুতে তোমার বাঁশি যেনো সকল গোপ নর - নারীকে মিলিত করতো আনন্দ উৎসবে।  রাধা আর আমরা সখীরা তোমার সাথে মেতে উঠতাম এক অদম্য প্রাণ চঞ্চলতায়। 
    ফাগুন মাসের পূর্ণিমার সেই রোমাঞ্চকর রঙিন মুহূর্ত আজও আমাদের মনের মণিকোঠায় রয়েছে মদনমোহন। তোমার কর কমলের রং মেখে হোলি খেলায় মেতে উঠতাম আমরা। রাধার সাথে প্রেমের বন্যায় ভাসতে তুমি, আর তার তরঙ্গে আমরাও রঙিন হয়ে উঠতাম।
    মনে পড়ে , হোলি খেলার সেই শুরুর দিনটির কথা - 
রাধা সেদিন লীলাক্ষেত্রেই রজঃস্বলা হলো, তার বাসন্তী ঘাগরা রঙিন হলো দেহরসে। লোক লাজে লজ্জিত রাধাকে তুমি রক্ষা করতে তার দেহ , বস্ত্র রাঙিয়ে দিলে ফুলের রঙে তৈরি আবির গুলালে। আমরাও রঙে রঙে রাঙিয়ে দিলাম সারা বৃন্দাবনকে। আমাদের হরি কে নিয়ে হোরি খেলায় মেতে উঠলো সারা বিশ্ব জগৎ। 
     আজ ও বৃন্দাবনে হোলি খেলা হয় ফাগুনের তিথিতে। রাধা নিজেই নিজের অঙ্গে তোমার নামের আবির মেখে নেয়। সখীদের বলে 

' প্রীতম মোর, প্রেমিক ঘোর      
কানুর হৃদয়-রানী আমি,
আমি কোন খানে,
কি বেশে আছি, 
জানেন অন্তর্যামী।
 
ভাবনা তোদের,সমাজ ভুলে 
রাধা অপেক্ষাতেই থাকে, 
জানিস তোরা ! আজও ব্যথা পেলে,
কৃষ্ণ রাধে রাধেই ডাকে।

তোরা রাধিকায় কেনো বিরহ খুঁজিস?
আমি বিরহীনি নই।
ওলো সই, মদন আমার দূরে আছে ঠিক ই, 
তবু মোরা কথা কই।

অশ্রু চোখে সেও শুধায়, 
'বড়ো অসহায় জেনো কানাই,
যেদিকে তাকাই রাধা আর রাধা,
শুধু ভাগ্যেতে মোর নাই।'
    আরও শত সহস্র আবেগ ও ব্যকুলতায় ভরা নীরব অপেক্ষার কাহিনী লিখে যেতে পারি, লিখে যেতে পারি 
এরকম সহস্র পত্র। কিন্তু হে দয়াময়, তার একটিও কি পৌঁছবে তোমার ঠিকানায়? 
যদি কোনো বাতাসের দল কিম্বা বলাকার সারি কিম্বা ভ্রমর বাহিনী তোমার কাছে বয়ে নিয়ে যায় এই পত্র খানি, দেখবে এ  পত্র নয়, রাধারানীর অন্তর বিদারিত , আর এই তুচ্ছ তুঙ্গবিদ্যার আকুল মিনতির উপাখ্যান মাত্র। 
ওগো পরম করুণাময়, কৃপা সিন্ধু চরণে এই শুধু নিবেদন -

অভাগী রাধার প্রতি
কর কৃপা বরষণ, 
তারে মুক্তি দাও জগৎ- লীলা হতে, 
না হয় দাও দরশণ।।
                    ইতি
              কোটি প্রনামান্তে, 
             তোমার আরাধিকা 
               তুঙ্গবিদ্যা।

Post a Comment

0 Comments