নিমাই জানার ছয়টি কবিতা
অর্থোপেডিকের চেম্বার ও ছয় ইঞ্চির তৃণভোজী জিব
জ্ঞানশূন্য অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরানো আমার দাদার অসাড় পায়ের উপর ৩৩ টা সূঁচের হাঁ মুখ কামড়ে ধরে দুমুখো সাঁড়াশি ও ধারালো ছুরি দিয়ে রক্ত পুঁজ মেশানো পচা পচা মাংসের পিণ্ড গুলো চেঁচে দিচ্ছেন ডাঃ তিমির বরণ পাল ,
অর্থোপেডিকের একটি করে নিজস্ব ছয় ইঞ্চির ক্রেপ ব্যান্ডেজ থাকে তার গোপন চামড়ার কাঁধে ঝুলানো ব্যাগের ভেতর যা মাতাল সমুদ্র তরঙ্গে অন্তর্বাস ফেলে আসা ঘাতক গুলোর অনিয়ন্ত্রিত গতিপথ আটকে দেয় ,
মিথ্যে সরীসৃপের মতো দুলতে থাকে O T চেম্বারে ঝুলানো পেন্ডুলামের দোলক , শুধু লাল অক্ষরে লেখা অতি জাগতিক শব্দের পেছনে কতগুলো মাকড়সা সব জীবাণুদের খেয়ে খেয়ে দীর্ঘতর হয়ে যায় শীতকাল রাতের মতো ঢোলা পাজামা পরিহিতা সেবিকাদের সাইড ব্যাগের গোপন কক্ষের কন্ট্রাসেপটিক পাখিটির মতো
আমি নির্জনে দুর্বা ঘাসের বাগানে গিয়ে বসে বসে দেখি সেবিকারা নির্জনে সিগারেট খাচ্ছে , নাইট ডিউটি সেরে চুড়িদার পাল্টাচ্ছে খাবারের ঢাকনা খুলছে , কানে গুঁজে রেখেছে দীর্ঘ কেঁচোর মতো সরু সরু কালো রঙের হেডফোন ,
তারা ন্যাংটো দৃশ্যের অপরা অভিনেত্রীদের মতো অনেক দূরের মৃত মানুষদের কান্না ও অবয়বহীন ভৌগোলিক কথাবার্তা শুনছে ,
নিমতলার দিকে কেউ যেতে চাইছে না শ্মশান আছে বলে
পাতলা ফিনফিনে কর্পূর ও ফেব্রিক হোটেল গণিকা
পাতলা ফিনফিনে ডায়ালিসিস কেবিনের পাখিটির মতো করবী ফুলের শূন্যতা , ফুড প্লাজার রেস্টুরেন্ট দোকানের সাইন বোর্ডের মতো কটকটে লাল চা পাতার কষ , সোনা দোকানের বিজ্ঞাপনরতা অর্ধ বুক খোলা নারীটির মতো সেবিকারা একবারই ঘর থেকে বেরিয়ে উদ্বায়ী হয়ে যায় ফুরফুরে কর্পূরের মত , চা খাচ্ছে আশ্রমের জৈবনিক বাসিন্দারা মুখ থেকে আঙ্গুরের ফ্লেভার বেরিয়ে আসছে ,
শিথিল যৌন সামগ্রী নিয়ে আমাদের মাঝ রাতের হাইরোডের ধারে গিয়ে দাঁড়ানো উচিত নিঃস্বার্থ ফেব্রিক কোটেড গণিকাদের মতো , চাঁদ প্রতিদিন একটু একটু করে ভুল করে পিছিয়ে ফেলছে তার শুক্র খাবার সময় ও প্রদাহের কক্ষপথ
হাইড্রেন থেকে উড়ে আসে, মশার মতো পিচ্ছিল সেবিকা গন্ধ আর দীর্ঘ স্ট্রিট লাইটের দোমুখো আগ্নেয় পিণ্ড , গলার ভিতরে তুলো জমিয়ে রাখতে ইচ্ছে করছে আমার
আমি শুধু দুই হাতে কুয়াশার গন্ধ মাখা পচে যাওয়া হাইড্রেনে কৃষ্ণচূড়া গন্ধ খুঁজতে থাকি নিষিদ্ধ নির্জন ঘরের ভেতর দাঁড়িয়ে , যারা এখন পরকীয়ায় অভ্যস্ত হয়ে পানশালায় যায় তারা আর কোনদিন ঝাউয়ের চারাগাছ লাগাতে পারেনি নিজেদের সংসারে, টগর ফুলের নিচে অগ্নিষিদ্ধ ঈশ্বরী আমাকে আপতন কোণে দেখে লাল রঙের অন্তর্বাস পাল্টাচ্ছে সামুদ্রিক ডলফিনের মত
সব ভাড়া করা নারীদেরই দেখি সস্তার হোটেলে খাওয়ানোর জন্য কেমন ঠোঁটেও মুখে এক্সট্রিম কালারের বিশুদ্ধ ম্যাগমা লাগিয়ে রেখেছে , রক্ত বিক্রয় একটি কুটির শিল্পে পরিণত হয়েছে আজকাল , একটি দীর্ঘ পারাপারের সামুদ্রিক জাহাজটি লিঙ্গহীন গুমটির পিছনে দাঁড়িয়ে আছে হলুদ অনুপ্রবেশকারীদের মত
রাত ২ টো ৪৫ মিনিটের হাইরোড ও ইমার্জেন্সি অ্যালার্ট
রাত ২ টো ৪৫ মিনিটের ডিমের খোলসের মতো উপবৃত্তাকার নির্জন হাইরোডের ধারে কখনো কখনো দাঁড়িয়ে এম্বুলেন্সের অসুস্থতা দেখতে হয়
আমার বাড়ির নিকট আত্মীয়দের থেকে কিভাবে দূরত্বের বাইকালার ক্যাপসুল গুলো ব্যস্তানুপাতিক নিস্তব্ধতার খোলকে ঢুকতে গিয়েই ভেঙে ফেলেছে একটা কাঁচের দরজা , দুটো কাঁচের গ্লাস একটি দোমুখো সাপের পিণ্ড খাওয়া দাঁত
ইনবক্স চ্যাটিং ইনস্টাগ্রাম সব শিখে ফেলেছে রোগা রোগা ঈশ্বরীর দল যারা লাল রঙের ইমারজেন্সি অ্যালার্ট সাউন্ডের জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় জন্মের ৮০ শতক অবধি , অনেক দূরে মৃত্যুর নৃত্যানুষ্ঠান চলছে , মুখাগ্নি করার জন্য প্রতিটা মানুষকে অপেক্ষা করতে হয় সরীসৃপের মত
যুবতী রঙের গোলাপী পড়ুয়ারা তিনতলায় দরজার পাল্লা খুলে রেখে কোন উপগ্রহের দেশে চলে যায় , নার্সিংহোমের দরজা গুলো খুব ছোট্ট দেখায় বলে ভেপার ও রেড কালার্ড বার্বন ফ্লেভার ও শিরা রক্ত মেশানো ভ্যানিলা গন্ধের এলইডি বাল্বের শূন্য দ্রাঘিমায় আমার যমপুরি নাচছে , আমি নাচছি , চুনা পাথরের ঈশ্বরগঞ্জ নাচছে
কাঁচের কাছে এলে মনে হয় নক্ষত্রের মহাজাগতিক কোন তারাখসা নেমে এলো আই সি ইউ মেডিকেল সেন্টারে যেখানে দুই হাতে শুধু প্লাস্টার অফ প্যারিসের গন্ধ আর বিচিত্র ধূপ গন্ধের ডিস্পোভ্যানের অগ্নুৎপাত ভুত আমার হাঁ মুখে পেচ্ছাপ করে দিচ্ছে তিন ঠ্যাং ফাঁক করে ,
কিছু চেতনানাশক ওষুধ ও দীর্ঘ লাক্সারি বাস গুলো বৃহত্তম পূর্ণচ্ছেদ উপেক্ষা করে দ্রুততম চলতে চলতে একটা দীর্ঘ বস্ত্রালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে নিঝুম শীতল কুয়াশার শুক্র গ্রহ ভেদ করে , বিকেলের ডেলিভারি বয়টি ফাঁসির দড়ির মতো হুকে বেঁধে পলিথিন চাঁদের দেশে খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছে এলিয়েনের মতো , হৃদপিন্ডের বিভক্ত মানুষেরা তেজস্ক্রিয় নৈশভোজনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে হাফ গ্লাস মহাশূন্যের তরল নিয়ে
🍂
১২ নম্বর কেবিনের পাহারাদার ও এক ইসিজি রিপোর্টার
আমি কিছু করবি ফুলের চারা লাগাতে পারি আজ এই ফার্স্ট ফ্লোরের ১২ নম্বর জেনারেল কেবিন থেকে বেরিয়ে , পায়ের ভিতর জমে আছে দুটো পাথর রঙের হাড়ের কিসমিস
শেষ রাতের দিকে এক পাতলা দৈর্ঘ্যের ঝাড়ুদার এসেছিল খাবারের উচ্ছিষ্ট কণাগুলোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য , ছড়িয়ে দিচ্ছে ব্যবহৃত সিজারিয়ান প্যাড , বেসিনের কফ , রক্ত পুঁজের তুলো ,
আমার মাথার চারদিকে কোন দুর্গন্ধ নেই শুধু পচে যাওয়া খাবারের ভেতরে একটা মৌতাত গন্ধ থাকে , নিকোটিন বিক্রি করা নারীটি সাদা পাতাবাহারের মতো তুলতুলে জিরাফের পালক ছড়িয়ে রেখেছে আমার সারা গায়ে
মিথ্যার চাঁদ আমাকে প্রশ্ন করে স্বর্গ থেকে নেমে এসে
মাঝে মাঝে হাইওয়ের ধারেই সারারাত কাটানো ভালো এই ২৯ শে অক্টোবরকে উদযাপন করার জন্য, আমি ঠিক ১৯৮২ সালে আরো একবার চলে গিয়েছিলাম মোমের আলো জ্বেলে, যখন আমাকে নিয়ে কোন এক ইসিজি রিপোর্টার বলে দেবে হোটেলের শেষ খাদ্য বিন্দুগুলো কেমন টক টক স্বাদ লাগছে , আমাকে কিছু মৃত্যু পাহাড় কিনে দেওয়ার জন্য খয়েরী রঙের মশারি দিয়ে গেছে নীল কীর্তনীয়াটি
মৃত্যু থেকে বাঁচতে আমরা দশ টাকার মশা মারার ধূসর ধূমপান কিনে জ্বালাই আনারসের মতো আমাদের মাথার ভোকাট্টা সিফিলিস গন্ধ নিয়ে , স্ট্রেচারের শুয়ে থাকে শুধু অসুস্থ বর্ণমালার ঈ কার , অসংখ্য হাড়ের টুকরো ভেদ করে সাদা রঙের চাঁদ হঠাৎ হঠাৎই আলো নিভিয়ে শুক্রাণুময় লিফটে উঠানামা করছে অসংখ্য অশরীর
কতবার বিনিদ্র চোখে চোখে জানালার পাশে উত্তুঙ্গু স্বরবর্ণমালায় তারা অন্তর্বাস পাল্টাতে পাল্টাতে গোলাপি রঙের পরিচ্ছদ পাল্টে ফেলে আমার বিষাক্ত চোখ এড়িয়ে , আমি অথচ জীবিত আত্মা ছিলাম আরবিয়ান খেজুর খাওয়ার পর
আমি নীল নেশাখোর সাজতেই ভালোবাসি অথচ তাদের ভেতরে কোন হলুদ রঙের অন্তর্বাস ছিল না , সকলে নীল জ্যোৎস্নার মতো চাঁদহীন অসুস্থ আবহবিকারের প্রতিদিন স্নানাগারে নেমে যেত সমুদ্রের উলঙ্গ স্রোত নিয়ে,
রাত সাড়ে আটটার পর ক্রমে ক্রমে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায় প্রতিটি নার্সিংহোমের আয়ু ও এলোপ্যাথিক দরজা
ম্যানগ্রোভ সেবিকা ও পুরনো ব্লেডের গন্ধ
জিওল মাছের পার্চমেন্ট পদার্থের মত চটচটে সেবিকাটির এখন দরজা বন্ধ করার প্রয়োজন ছিল না কোনমতেই , ব্রহ্মপুত্রের মতো দীর্ঘ ফ্যানের ব্লেড ঘুরছে নীল আলোর বিক্ষিপ্ত আগ্নেয় ফলক ছাড়িয়ে , অনেক দূরে লেজারের ম্যানগ্রোভ ছড়িয়ে পড়ছে ক্রমশ ,
আমার চোখে মুখে সৈনিকের রনং , বুদ্ধং
বৃদ্ধ চা দোকানেটির মত আমি ও কোন অসুস্থ মানুষের মানসিক উপসর্গের কথা বলছি না রগরগে থার্মোফ্লাক্সের "র "চা ও অশক্ত কুকুরের দীর্ঘ চিৎকার স্বর ও রাত্রিকালীন যুদ্ধাস্ত্র ছুঁয়ে ছুঁয়ে , খেলতে চাইছি এখনো একটি দরজার নিষিদ্ধ ঘোরাঘুরির কফ উপেক্ষা করে
অনেক দিনের পর মৃত ঈশ্বর এসে আমার ডানা মেলে নিয়ে গেছে
অমরাবতীর পাড়ে , একটু নার্সিংহোমের পাশে শুধু ভাঙ্গা কাঁচের বোতল আর সাদা ছিপ ছিপে পুরানো ব্লেডের গন্ধ
মানুষের আয়ু বেড়ে যায় ছায়াকে গিলে খেতে পারলেই ,নিজের এত অসুখ নিয়ে মানুষ বাঁচে কোথায় ? শেষ সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে কোন ভাবেই একবার মরে যাওয়ার জন্য
অর্থোপেডিক আর গাইনোকোলজিস্টের চেম্বার থেকে বেরিয়ে কিভাবে একটি নিষিদ্ধ গোটা শহর ঔষধ দোকান ও আউটডোর ডাক্তার বাবুদের চিকিৎসালয়ে ভরে গেছে , টিম টিমের আলো ও খালি গ্লাসে মৃত্যুর কিউবিক স্ফটিক তরঙ্গ খেলা করছে
প্যারাফিন যন্ত্রাংশের দোকান ও হাইড্রেনের নীল কফের টুকরো
সার্জিকাল গজ আর চাঁদের হঠাৎ করেই শীঘ্রপতন দেখা দিতেই আমি নীল রঙের একটি দরজার ওপাশে থাকা নীল ঈশ্বরের সদ্য প্রার্থনা সেরে যাওয়া একটা নারীর আবক্ষমূর্তির চারপাশে নীল সৈন্ধব লবনের গুঁড়ো ছড়িয়ে দিচ্ছি , 0 গর্তের দিকে মাংসের টুকরো গুলোকে ঢুকিয়ে দিচ্ছে দুহাতে
এখানে কেউ কেউ ঈশ্বরের মুদ্রা দোষ ভাঙ্গানোর জন্য শঙ্খ ধ্বনি করতে থাকে , আনন্দে নেচে উঠি, দীর্ঘদিন ভাঙ্গা হাড় নিয়ে ভর্তি থাকা রোগীর ডিসচার্জ দিন ঘোষণার পর
প্যারাফিন মেশানো ঘাতক দ্রব্যাদি গুলো গুঁজে রাখি পায়ের দীর্ঘতম ক্ষতস্থানে
আমি একটা ফাঁকা ঘরের আলো বন্ধ করে দুই হাতে খেয়ে ফেলছি কিছু পচা খাবার , এখানে শুধু যন্ত্রাংশ আর বিভিন্ন অঙ্গের কাটাকুটি , শুভ সার্জিক্যাল সেন্টার থেকে সকলে পোস্টমর্টেমের পূর্বে কিছু গজ , সাদা তুলো ও স্টেনলেসের টুকরো নিয়ে হাড়ের সাথে ঝুলিয়ে দেয় ,
বিষাক্ত ঘুম নেমে আসছে না কোনমতেই সারারাত অনেক দূর থেকে অসংখ্য নৃত্যশিল্পীরা কিভাবে মৃত মৃত পেন্সিল দিয়ে মানুষের অবয়ব মাখতে মাখতে হাইড্রেনে ফেলে দেয় তাদের নিষিদ্ধ আসবাবপত্রের টুকরো ও উচ্ছিষ্ট কোহিনুর ডট এক্সট্রা পাওয়ার ফোর এক্স পাওয়ার ভিগোরা , বিশ্রামাগারটি লাল এরোপলিশ মাছ ছাড়া একাকী অরকেরিয়ার কঙ্কাল দিয়ে গেছে মৃতদেহের ইয়ং গুণাঙ্ক নির্ণয়ের জন্য
একটা দীর্ঘ ডেসট্রোজ মেশানো স্যালাইনের বোতলের মতো কৃষ্ণাঙ্গ ঝাউ গাছের দিকে মুখ করে হাফ গ্লাস মহাশূন্যের কথা ভুলে গেছি , জুতো জোড়াটা খুলে রেখে আরো একবার পদুমবসানের নিষিদ্ধ শরীর কারখানা থেকে ফিরে এসেছি লাল থ্রি কোয়াটার উলের ব্লাউজ কিনে , প্রতিটা হোটেলে দুধ মেশানো কাতলা মাছ গুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট কৌটার ভেতর তাদের ঠোঁটে সাবানের ফেনা লেগে আছে
0 Comments