জ্বলদর্চি

যাপন চিত্র/ অলক জানা

যাপন চিত্র 

অলক জানা 

চোট পায়ের আব্দার মিটিয়ে সাত মাসের এক খণ্ড সময় নির্ধারিত পরমায়ু থেকে দিব্যি খরচ হল। তিনটে ধাতব পাত এখন ঘোর সংসারী। ডান পায়ের ভেতর আস্তানায় তারা আমার প্রতিটি পদক্ষেপের সজাগ সাক্ষী। পড়ালেখা আহার বিশ্রাম হাঁটাচলা মুহূর্তে তাদের মিলিত সাড়া কায়াহীন নিঃসঙ্গতাকে ভুলিয়ে রেখেছে একপ্রকার। বাড়ি থেকে দু-বেলা বেরিয়ে দানা সংগ্রহ। ভূগোল থেকে ভূগোলান্তরে যাত্রা। বাঁশখালি, গণপথ, কেলেঘাই, চণ্ডীয়ার বাতাস মাধুকরী স্পর্শের সমর্পণে না জানি নিরাময় বার্তা ফেরি করে। চোখের তারায় কিছু প্রত্যক্ষ  সম্ভাবনার নোঙর। হয়ত দোমড়ানো এলুমিনিয়াম হাঁড়ির বিক্ষিপ্ত প্রতিফলনের মতো টুকু পরিমাণ সুস্থতার গান বাঁধা। 

সুন্দরী এখন পরিবারের একজন। ঋণাত্মক লোকসংখ্যা ও বাচ্চাপীড়ন না থাকায় দিনরাতের বড়ো অংশ এবাড়িতেই কাটিয়ে দেয়। আমার আশ্রয়ের তক্তাপোশ, বিছানার গা ঘেষে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে নির্ঝঞ্ঝাট উপভোগ। সকালে ওর আন্তরিক ডাকে ঘুম ভাঙে। মাটিতে পা রাখলেই জড়িয়ে ধরে। দুটো বিস্কুট দিলে তবেই পরিত্রাণ। খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে বেজায় রক্ষণশীল। মাছ-মাংসের প্রতি অধিক আগ্রহ। যেদিন খাদ্য তালিকা থেকে বাদ পড়ে এই প্রণীজ প্রোটিন সেদিন সুন্দরী পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। গা ছাড়া স্বভাব। বাড়ি থেকে বেরনোর সময় দেখি রাস্তা অবধি আমাকে এগিয়ে দেয়। বড়সড় ইঁদুর মেরে শিকার জয়ের উল্লাসে ম্যাও ম্যাও শব্দের বিশেষত্বে আমাকে জানান দিয়ে যায়। সুন্দরী ? আমাদের বিড়ালিনী ! 
🍂
ওকে নিয়ে অশান্তিরও কিছু কিছু খবর কানে আসে। খাবার টেবিলে ত্রিকোণ প্রেমের গল্প মাঝেমধ্যে বেশ জমে ওঠে। সুন্দরীকে নিয়ে দুটো হুলোর মধ্যে দৌড়ঝাঁপ সংঘর্ষ মাসিক পত্রিকা প্রকাশের মতো এখন নিয়মিত। সুন্দরী যাকে পছন্দ করে আমার সেই পোদ-হুলোকে না পসন্দ। কিন্তু আমার পছন্দের পাত্রের সঙ্গে সুন্দরীর পছন্দের পাত্রের চূড়ান্ত সংঘাত সত্যি উপভোগ্য। তখন দেখা যায় সুন্দরী বাড়ির বাইরে আর পা রাখে না। নবাগত বধূর মতো, খাটের তলায় দীর্ঘ অবসর। 

বাইকের সামনের চাকায় কুকুর এসে আমার যত বিপত্তি। এই সাত মাস পর একটি স্রী কুকুর দেখি আমার বাড়িতে হঠাৎই আসাযাওয়া করে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সুস্বাস্থ্যের আলোয় নয়নাভিরাম। ও নিকটে আসে। ওর জন্যও এখন বিস্কুট বরাদ্দ। কী আশ্চর্য খাওয়ার পর "লাইনে বেরি যা" বললেই কাল বিলম্ব না করে একেবারে ভিটেপ্রস্থান। আসে যায়, যায় আসে এভাবেই বাগিয়ে নিয়েছে আমার কিছু মনোযোগের স্পর্শ। আমার কুকুর প্রেম, সুন্দরী এই ব্যাপারটি মোটেও ভালোভাবে নেয়নি। কুকুরকে দেওয়া বিস্কুটের বখরা নিতে সজোর অগ্রগতি, ফলাফল হিসেবে সুন্দরীর গালে জুটেছে কুকুরের তরফে একটা কষিয়ে চড়। অসম লড়াই না চাইতে সেদিনের সন্ধ্যাকে মোহময় করেছিল। এর পরই কুকুরটির প্রতি আমার বিরক্ত প্রকাশ, মানে একটু ধমক দিতেই সুন্দরী তেড়ে নিয়ে যাওয়া সত্যিই অভূতপূর্ব। 

এই হেমন্তে আমি তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছি। পর্দা সরালেই শীতকাতুরে রোদ মনেহয় এককাপ চায়ের জন্য প্রতীক্ষা করে। সঙ্গে কাক, শালিক একঝাঁক সাতভায়া পাখির স্বগত সংলাপ। ওদের মুঠো করে মুড়ি ছড়াই, দানা খায় আর আমাকে গান শোনায়। আমি এখন রাষ্ট্র ভুলে গেছি। ভুলে গেছি স্বার্থ দুরভিসন্ধির হাড় কাঁপানো গলাবাজি। এসবের মধ্যে সমহিমায় পরমাত্মীয়  গীতবিতানের সুর, অপেক্ষার জন্য সামান্য মনখারাপ একটি-দুটি নতুন চারাগাছ, ছাপা কবিতা অথবা প্রকাশিত একক গ্রন্থের মলাট উন্মোচন।

সংগ্রহ করতে পারেন। হোয়াটসঅ্যাপ -৯৭৩২৫৩৪৪৮৪


Post a Comment

0 Comments