জ্বলদর্চি

শ্রীরামকৃষ্ণের সন্ন্যাসী সন্তানেরা /পর্ব--১১১/প্রীতম সেনগুপ্ত

শ্রীরামকৃষ্ণের সন্ন্যাসী সন্তানেরা
পর্ব--১১১
প্রীতম সেনগুপ্ত

বিবেকানন্দ প্রসঙ্গে অধ্যাপক বিনয়কুমার সরকার
----------------------------------------------------------------------
বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী, অধ্যাপক এবং জাতীয়তাবাদী বিনয়কুমার সরকার বিবেকানন্দ সম্পর্কে বলতে গিয়ে এক জায়গায় লিখছেন -- “বিবেকানন্দ দুমুখো ছুরি। এই ছুরির কোন মুখই ভোঁতা নয়। দুই চকচকে, ধারালো, জোরালো -- যাকে আমাদের বিক্রমপুরে বলে ‘চোখা’। বিবেকানন্দ ‘মিছরির ছুরি’ নয়। এই ছুরি বিলকুল তেতো, বিষাক্ত। বিবেকানন্দ জবর বিষ, যবর যম --  কোন কোন লোকের পক্ষে, কোন কোন দলের পক্ষে, কোন কোন চিন্তাপ্রণালীর পক্ষে, কোন কোন কার্যপ্রণালীর পক্ষে। বিবেকানন্দের ব্যবসা -- দুনিয়াকে লড়াইয়ে ডাকা, আহাম্মুকদের বেয়াকুবিগুলাকে কুচিকুচি করিয়া কাটা আর কাপুরুষদের মেজাজ ও হাত-পাকে গুঁড়া করিয়া ফেলা।
ইউরোপ-আমেরিকার দিকে, খ্রিস্টানদের দিকে, সাদা-চামড়াওয়ালা নরনারীর দিকে ‘পশ্চিমা’দের দিকে বিবেকানন্দের এক মুখ। অপর মুখ পুবের দিকে, এশিয়ার দিকে, ভারতের দিকে, আর বিশেষ করিয়া আমাদের বাংলার দিকে। পশ্চিমমুখো বিবেকানন্দ আর পুবমুখো বিবেকানন্দ -- দুই বিবেকানন্দই জবরদস্ত শক্তিযোগী, দুই বিবেকানন্দই লড়াইয়ের পাঁয়তাড়া ঢুঁড়িতে অভ্যস্ত।
পশ্চিমাদের দিকে তাকাইয়া বিবেকানন্দ বলে -- ‘আরে ভাই মার্কিন, আরে ভাই ইয়াঙ্কি! বাপের বেটা হোস তো একে একে লড়ে যা।’ আমেরিকানরা জিজ্ঞাসা করিতেছে -- ‘আরে বিবেকানন্দ, কি হলো ছাই, ভাল করে বুঝিয়ে বল।’ বিবেকানন্দের জবাব নিম্নরূপ -- ‘দ্যাখ আমেরিকান নরনারী, তোদের লম্ফঝম্ফ এত বেশি কেন জানিস? তোদের টাকা আছে, তোদের বাড়িঘর আছে, তোদের ব্যবসা আছে, তোদের ব্যাঙ্ক আছে, তোদের জাহাজ আছে, তোদের ব্যাপারী আছে, তোদের কনসাল আছে, তোদের পল্টন আছে, তোদের এই ধরনের কত কি আছে! তোরা যখন লম্বা চওড়া কথা বলিস, তখন তোদের পেছন থেকে এতগুলো লোক, দল, সঙ্,ঘ দপ্তর, অর্থশক্তি, রাষ্ট্রশক্তি, সমরশক্তি। আর আমি বঙ্গচন্দ্র গোলামের বাচ্চা। আমার না আছে পয়সা, না আছে নাম। আমাদের বাংলাদেশের লোককে জিজ্ঞাসা করিলেই বুঝিতে পারিবি। বিবেকানন্দের নাম-গন্ধ পর্যন্ত কেহ জানে না। দু-আনা, চার আনা, দশ আনা কুড়াইয়া কেহ কেহ কোনমতে আমাকে তোদের মুল্লুকে পাঠাইয়া দিয়াছে। আমার জোর ‘কৌপীণবন্তঃ আলু ভাগ্যবন্তঃ।’ কষ্টেসৃষ্টে সমুদ্রে সাঁতার কাটিয়া মার্কিন মুল্লুকে আসিয়া হাজির হইয়াছি। আমার পেছনে কেহ নাই। যদি থাকে তো ভগবান রামকৃষ্ণ। সেইজন্যই বলি, তোরা একজন একজন করিয়া এই ন্যাংটা বাঙালি বাচ্চার সঙ্গে লড়িয়া যা। দেখি তোদের কার কত মুরোদ।’ ( বিবেকানন্দ দু-মুখো ছুরি -- বিনয় কুমার সরকার, উদ্বোধন:পুরাতনী, বইমেলা ২০০৬, উদ্বোধন কার্যালয় )
🍂

বাস্তবিকভাবে শ্রীরামকৃষ্ণই ছিলেন স্বামীজীর সকল শক্তির উৎস। যে শক্তির বলে তিনি সারা দুনিয়াকে কাঁপিয়ে দিতে পেরেছিলেন। বস্তুতপক্ষে শিকাগো ধর্মমহাসভায় স্বামীজী এক উদার, সর্বজনীন ধর্মের মহিমা কীর্তন করেছিলেন। পরবর্তীকালে এক ইহুদি পণ্ডিত স্বামী নিখিলানন্দকে বলেছিলেন,“After hearing Swami Vivekananda ( in the parliament ) I realized that my religion was also true.” ( Vivekanand centenary volume p.179 )
পাশ্চাত্যে তিনি মানুষের দেবত্ব সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেছেন। মানুষকে ‘অমৃতের সন্তান’ বলে সম্বোধন করেছেন। পাশ্চাত্যবাসীকে তিনি বলেছেন --“I am a plain spoken man, but I mean well. I want to tell you the truth. You are my children. I want to show you the way to God by pointing out your errors. Therefore, I do not flatter you, or always say fine things about your civilization.” ( Prabhuddha Bharata, January 1945, p. 45 )
সাধুত্বের উচ্চতম বিকাশ বিষয়ে স্বামীজী বলছেন, ‘Even the Buddhas and Christs are but second-rate men; the greatest men of the world have passed away unknown. These highest ones silently collect ideas and the others, Buddhas and Christs, go from place to place preaching and working. The highest men are calm, silent and unknown. They are the men who really know the power of thought. They are sure that even if they go into a cave and close up the door, simply think five thoughts will live through eternity. They will penetrate through the mountains and cross the oceans and travel through the world and will enter into some brain and raise up some man, who will give expression of these five thoughts.’  ( Prabhuddha Bharata, June 1897, p. 135 )

Post a Comment

0 Comments