জ্বলদর্চি

পুলককান্তি করের 'মোহ দাও মুগ্ধে, পাপে'/ঋত্বিক ত্রিপাঠী


পুলককান্তি করের 'মোহ দাও মুগ্ধে, পাপে' 

ঋত্বিক ত্রিপাঠী 

খেলাছলে যদি বিষাদসিন্ধু চেয়েছ
নীল-অঞ্জন দেব চন্দনছলে
চোখের আড়ালে অশ্রু নামাও যদি
তবে ভেসে যাব দুজনে চোখের জলে

— লাইনগুলোর স্রষ্টা কবি পুলককান্তি কর। ২০১১ সালে প্রকাশ পেয়েছিল 'সেও সন্ধে হয়' কাব্যগ্রন্থ। পেশায় স্বনামধন্য চিকিৎসক। কবিতা লিখছেন বহুদিন। প্রথম কাব্যগ্রন্থেই তিনি তাঁর স্বকীয়তা প্রমাণ করেছিলেন। ২০২২ সালে প্রকাশ পায় 'মোহ দাও মুগ্ধে, পাপে'। দুটি বইয়ের চমৎকার  প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী শোভন পাত্র।

কবি 'মোহ দাও মুগ্ধে, পাপে' কাব্যগ্রন্থ উৎসর্গ করেছেন 'শূন্য জেনেও সিঁধ কেটে যায় যারা'। বইয়ের নামকরণ ও এই উৎসর্গপত্র আমাদের কাছে তুলে ধরে এক নিভৃত রোমান্টিকতা। ভূমিকা ও উপসংহারে মোড়া ছোট্ট ছোট্ট কবিতাগুলো মূলত প্রেমের। কিন্তু প্রেমকে ঘিরে আছে নিঃসঙ্গতা ও অবহেলার পাশাপাশি স্পর্ধা ও প্রতিস্পর্ধার দ্বন্দ্ব। উচ্চকিত না। নীরবতা ও অল্প কথার আশ্চর্য শক্তিতে শব্দসমবায় হয়ে ওঠে তাঁর কবিতা। 'ইশারা' কবিতায় লেখেন—

"নির্গুণ! মোহটি মাখো, যেন তীর্থকাক!
দাঁড়হীন মাঝি ভাসে, নাকি ভাসে নদী?
বিশ বাঁও জলে যদি রেখে আসো ডাক
শব্দ যাবে পিছু পিছু,
ভেসে ওঠে যদি!"

 কিংবা 
'অপর' কবিতার শুরুতে লেখেন —

"তোমার কাছে যেতে তো চাই রোজই।
মিথ্যে যত সয়ে নেওয়া বাহানাদের পুঁজি
সামলে রাখো।"

অর্থাৎ বক্তব্য স্পষ্ট।  কিন্তু সীমাবদ্ধতার কথাও জানেন। জানেন হাহাকারের গভীরতা। তাই তো এমন সুন্দর ভাবে নির্মাণ করেন এই কবিতার শেষ অংশ—

"কাকে দেবে সন্ধাকুসুম নেভা চোখের আলো?
থমকে গেছে জীবন যাপন, লক্ষ্য এলোমেলো
পেতে তো চাই বৃষ্টি ভেজা সকল অস্বীকার 
তোমার চোখে স্বপ্ন সাজাই, স্বপ্ন সাজে কার!"

শেষ লাইনের চমৎকৃত ভঙ্গি কবির একান্ত রীতি যা তাঁর পাঠকের সঙ্গে গড়ে তোলে যোগসূত্র। এ কবিতার বইতে রয়েছে এই রকম অনেক বহু কাতরতাপূর্ণ শব্দসমবায়, যা পাঠককে স্বস্তি দেবে। দেবে দ্বিতীয়, তৃতীয় পাঠের আগ্রহ। 'সকাতর মেঘ', 'মেঘের প্রাকার' 'দিশাহীন কালিন্দীর জল', 'নিহত নিষাদ', 'অজাত ভৈরব' ইত্যাদি শব্দবন্ধ আমাদের লক্ষণা থেকে ব্যঞ্জনার দিকে টেনে নিয়ে যায়। অজান্তেই পাঠকের মধ্যে জন্ম নেয় পিছুটান। এখানেই তিনি অনন্য। সমকালীন কোলাহল থেকে খুব দূরে থাকেন। কিন্তু তাঁকে অস্বীকার করার উপায় নেই।

উল্লেখ্য, পুলককান্তি কর বর্তমান সৃষ্টি করছেন নিত্যনতুন গান। গানের সুর ও স্বর তাঁরই। তাঁর ইউটিউব ইতিমধ্যেই শ্রোতার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিশেষ করে যাঁরা অন্য ধরনের বাংলা গান নিয়ে চর্চা করেন, তাঁদের কাছে পেয়েছে সমাদর। আগামীদিনে আমরা কবি, গায়ক, গীতিকার পুলককান্তি করের নতুন নতুন সৃষ্টির দিকে সাগ্রহে তাকিয়ে থাকবো।

🍂

Post a Comment

0 Comments