জ্বলদর্চি

দূর দেশের লোকগল্প—রাশিয়া (এশিয়া)শেয়ালের পণ্ডিত উপাধি /চিন্ময় দাশ

চিত্র- শুভম দাস

দূর দেশের লোকগল্প—রাশিয়া (এশিয়া)
শেয়ালের পণ্ডিত উপাধি
চিন্ময় দাশ

শেয়াল একটা ঘর বানিয়েছে তার নিজের জন্য। বেশ আরামেই থাকে। ভালোই কেটেছে গরমের দিনগুলো। ঝামেলা শুরু হোল, যেই শীতের দিন এলো। বরফ পড়তে শুরু করেছে। শরীর যেন জমে যাবে, এমন অবস্থা। 
কী করা যায়, কী করা যায়? ভেবে ভেবে, গ্রামে গিয়ে ঢুকে পড়ল শেয়াল। এক বুড়ির ঘরে গিয়ে হাজির—পেন্নাম গো, ঠাকুমা। শুভ সকাল।
বুড়ি বলল—পণ্ডিত যে! হঠাৎ কী মনে করে? 
--ভারি ঠাণ্ডা পড়েছে। উনুন না জ্বালালে চলছে না আর। একটু আগুন দেবে আমাকে?
--কেন দেব না? একটু বোস এখানে। পাঁউরুটি সেঁকছি তো। কাজটা সেরে নিই আগে। এই বলে, বুড়ি রান্নাঘরে চলে গেল। 
পপিবীজের পাঁউরুটি বানাচ্ছে বুড়ি। একটা পাঁউরুটি হয়ে যাচ্ছে। এনে খাবার টেবিলে রেখে, আবার রান্নাঘরে চলে যাচ্ছে। মিষ্টি গন্ধে ম’-ম করছে খাবার ঘরটা। জিভে জল এসে গেল শেয়ালের। লোভ সামলানো মুশকিল।
বুড়ি একবার রুটি রেখে রান্নাঘরে গেল। অমনি, আর দেরি নয়। একটা পাঁউরুটি তুলে নিয়ে, সুড়ুৎ করে বেরিয়ে গেল শেয়াল। 
খানিক দূর এসে একটা ঝোপ। তার আড়ালে বসে, পাঁউরুটি খেতে শুরু করল। শেয়াল হোল বদবুদ্ধির রাজা। কামড় বসাল না রুটিতে। ভেতরে পপিবীজের পুর। গন্ধ বেরোচ্ছে ভুর-ভুর করে। একদিক ফুটো করে, ভেতরের পুর বের করে করে খেতে লাগল। খাওয়া শেষ হলে, শুকনো ঘাস-খড় ভরে দিল রুটির ভেতরে। কাদা দিয়ে আটকে দিল ফুটোটা। এবার অন্য রাস্তা ধরে চলেছে।
কিছুদূর গিয়েছে, দুটো রাখাল ছেলের সাথে দেখা। এক পাল গরু-ভেড়া নিয়ে, নদীর দিকে চলেছে জল খাওয়াবে বলে।
শেয়াল বলল—সুপ্রভাত বন্ধুরা।
ছেলে দুটোও শেয়াল পণ্ডিতকে ফিরতি সম্ভাষণ জানাল। শেয়াল বলল—সেই তো কোন সাত সকালে বেরিয়েছ। খিদে পেয়েছে নিশ্চয়। 
--সে আর বলতে? পেট একেবারে চুঁই-চুঁই।
শেয়াল বলল— খিদেয় কষ্ট পাওয়া, ভালো কথা নয়। তার চেয়ে এসো, আমরা বরং খাবার বিনিময় করি। 
ছেলে দুটো ভারি খুশি—সে তো ভারি ভালো কথা। বলো, কী বিনিময় করা যাবে?
--তোমরা আমাকে ভালো দেখে একটা ভেড়া দাও। আমি তোমাদের একটা পাঁউরুটি দেব। যেমন তেমন জিনিষ নয় কিন্তু। ভেতরে পপিবীজের পুর দেওয়া। যা মিষ্টি সুবাস, মুখে দিলেই মালুম হয়ে যাবে তোমাদের।
--তাই না কি? ঠিক আছে। আমরা রাজি। বলেই একটা হৃষ্ট-পুষ্ট ভেড়া শেয়ালকে দিয়ে, পাঁউরুটি নিল তার কাছ থেকে। বলল—নদীতেই চললাম। সেখানে বসেই খাওয়া যাবে। 
--সেই ভালো। বলেই ভেড়া বাগিয়ে নিয়ে, চটপট বনে ঢুকে পড়ল শেয়াল। হাত-মুখ ধুয়ে, নদীর পাড়ে বসেছে রাখাল দুটো। পাঁউরুটি খেতে গিয়ে দেখে, শেয়াল তাদের বেদম ঠকিয়ে গিয়েছে। কোথায় পপী বীজের পুর? কোথায় তার সুগন্ধ? পুরোটাই ঘাস আর খড়ে ভর্তি রুটিটা!
এদিকে নিজের ডেরায় পৌঁছে, একটা গাছ কেটে আনল শেয়াল। বসে বসে সুন্দর একটা শ্লেজগড়ি বানিয়ে ফেলল। নিজের একটা শ্লেজগাড়ি, চাট্টিখানি কথা নাকি?
গাড়ি চেপে বেরিয়েছে, নেকড়ের সাথে দেখে। নেকড়াটার সাথে শেয়ালের ভারি ভাবসাব। নিজের ভাইবোনের মত থাকে দুজনে। 
নেকড়ে বলল—এমন সুন্দর একটা গাড়ি! পেলে কোথায় তুমি?
--কোথায় আবার পাবো, দিদি? নিজেই বানালাম বসে বসে।  
তার নিজের গাড়ি শুনে, লোভ হল নেকড়ের। বলল—আমাকে একটু চড়তে দাও তাহলে। 
--তা কী করে হয়? গাড়ি তো ভেঙে যাবে। 
-- ভেঙে যাবে? বললেই হোল? ওজন আর কতটুকু আমার? ঠিক আছে। আমার সামনের একটা পা রাখতে দাও তাহলে। 
শেয়াল তাতে আপত্তি করল না। গাড়ি চলেছে। গল্প চলছে দুজনের মধ্যে। কিছুদূর গিয়ে, নেকড়ে বলল—সামনের আর একটা পা রাখব? কিছু ভয় নাই তোমার।
--দ্যাখো, দিদি! আমার গাড়ি ভেঙে যাবে না তো? 
--আরে, না না। ভাঙবে কেন? 
শেয়াল দোনামোনা করে বলল—চলো তা হলে।
গাড়িতে সামনের দুটো পা তুলে দিয়েছে নেকড়ে। তাতে বেশ আরামও লাগছে তার। খানিকটা রাস্তা গিয়েছে, হঠাৎই ক্র্যাক করে একটা শব্দ। শেয়াল আঁতকে উঠেছে—সর্বনাশ! গেল তো গাড়িটা ভেঙে?
নেকড়েও বুঝেছে ব্যাপারটা। কিন্তু সে তাড়াতাড়ি বলে উঠল—কোথায় ভেঙেছে? কোন একটা খিল নড়ে গেছে মনে হয়। তারই শব্দ।
কিছু দূর গিয়েছে। নেকড়ে বলল—শেয়াল ভাই, পিছনের একটা পা তুলব? 
শুনেই শেয়াল হামলে পড়ল—সর্বনাশ! অমন কাজটি কোর না। গাড়ি ভেঙে গেলে, জ্বালানি কাঠ বইব কী করে আমি? শীতে একেবারে মরে যাওয়ার জোগাড় হয়েছে আমার।
নেকড়ে বলল—আমি তো সাথে আছি। ভয়ের কী আছে তোমার? বলেই তিন নম্বর পা-টা তুলে দিয়েছে গাড়িতে। তখনই একটা শব্দ—ক্র্যাক । শেয়াল চেঁচিয়ে উঠল—হায়, হায়! আমার গাড়িটা ভেঙে গেল। হায়, দিদি। 
গেল তো গাড়িটা ভেঙে? 
--আরে, না। দাঁতে সুপারি ভাঙছি আমি। তারই শব্দ।
--ওহ, তাই বলো। আমি তো ভয় পেয়ে গেছলাম।
গলা গম্ভীর করে, নেকড়ে বলল—কথায় কথায় এমন ভয় পেলে, জীবনে উন্নতি করবে কী করে?
এ কথার কী আর জবাব দেবে? নীরব হয়ে গেল শেয়াল। কিছু দূর গিয়ে, নেকড়ে বলল—বাকি আছে আর একটা মাত্র পা। ওটা আর বাইরে রেখে কী হবে? উঠেই পড়ি গাড়িতে। 
শেয়াল আঁতকে উঠল—খবরদার, খবরদার। এমন কাজটি কোর না বলছি। সর্বনাশ হয়ে যাবে আমার। 
নেকড়ে বলল—ঘ্যানর ঘ্যানর করো না তো। কতবার ধরে বলছি, গাড়ি ভাঙবে না। সেই একই কথা—ভেঙে যাবে, ভেঙে যাবে। ঠিক আছে। ভাঙলে, সে দায় আমার। 
অগত্যা শেয়াল কিছু না বলে, গাড়ি চালাতে গেল। শেয়াল নিজে চড়েছে গাড়িটাতে। সাথে একটা ভেড়া। এবার তাতে চেপে বসেছে আস্ত একটা নেকড়ে। যেই না নেকড়ে চারটা পা-ই তুলে ফেলেছে, অমনি, সত্যিই  সর্বনাশ। মড়মড় করে ভেঙে পড়ল তার সাধের শ্লেজগাড়ি। 
মুখে যা এল, তাই বলে গালাগাল করতে লাগল শেয়াল। শেষে বলল—শ্লেজ একটা আমার চাইই চাই। নইলে কাঠ বয়ে নিয়ে যাব কী করে? যাও তুমি, বন থেকে গাছ কেটে আনো। ভালো দেখে আনবে কাঠের গুঁড়ি।
নেকড়ে বলল—জীবনে এসব কাজ করেছি নাকি আমি? ভালো গাছ চিনব কী করে? এক কাজ করো, আমি তোমার ভেড়া পাহারা দিচ্ছি, গাছ তুমি কেটে আনো। সেটাই ঠিক হবে। 
অগত্যা শেয়াল চলল গাছ কাটতে। নেকড়ে রইল পাহারায়। শেয়াল বেরিয়ে গেছে। চোখের সামনে হৃষ্টপুষ্ট একটা ভেড়া। নেকড়ে আর মাথা ঠিক রাখতে পারে? 
বেশ যত্ন করে ভেড়ার পেটে একটা ফুটো করল নেকড়ে। ভিতরের কলজে, প্লীহা ইত্যাদি নরম মাংসগুলো খেল পেট ভরে।
এবার তার সরে পড়বার পালা। কিন্তু অত সহজে চলে যাওয়া যাবে না। হতভাগা শেয়াল, দুটো রাখাল ছেলেকে ঠকিয়্‌ তাদের ভেড়া বাগিয়ে এনেছে। তাকেও একটু শিক্ষা দেওয়া দরকার।
নেকড়ে করল কী, কতকগুলো ঘুঘু পাখি ধরে এনে, ঠেসে ভেড়াটার পেটে ভরে দিল। সরে পড়বার আগে, শুকনো খড়ের ডেলা পাকিয়ে গর্তটার মুখ আটকে দিয়ে গেল। 
নেকড়ে দিদি পাহারা দিচ্ছে—এই ভরসা ছিল শেয়ালের মনে। বনের ভিতরে বসে বসে কাঠ কেটেছে। শ্লেজ বানিয়েছে। কাজ সেরে, মনের আনন্দে ফিরে এসেছে রাস্তায়।
নেকড়ে নাই দেখে, একটু ভালোই লেগেছে শেয়ালের। ওজন কমলো। গাড়ি ভেঙে যাবার ভয় নাই আর। ভেড়া যেমনটি দাঁড়িয়ে ছিল, দাঁড়িয়েই আছে। গাড়ি যুতে দিয়ে, হাঁক পাড়ল—চল ব্যাটা। আর ভাঙবার ভয় নাই। 
কিন্তু ভেড়া নড়েও না, চড়েও না। কষে লাগাল চাবুক এক ঘা। তাতে যা হোল, শেয়ালের তো চোখ দুটো চড়কগাছ! গাড়ি চলবে কি? ভেড়াটাই পড়ে গেল ধপাস করে। তাতে খড়ের ছিপি গেল খুলে। অমনি ফর-ফর করে উড়ে বেরিয়ে গেল কতকগুলো ঘুঘু পাখি। 
হাঁ করে পাখিগুলোর পথের দিকে চোখ তুলে চেয়ে রইল শেয়াল। শীতের দিন। স্বচ্ছ কাঁচের মতো ঝকঝকে নীল আকাশ। ছোট্ট বিন্দুর মত ফুটে আছে পাখিগুলোর অবয়ব।
প্রচণ্ড রাগে মাথা ঝিমঝিম। বিড়বিড় করে উঠল—নেকড়ে দিদি! আমার সাথে এমন ধূর্তামি? এর ফল তোমাকে পেতেই হবে, ভুলে যাওয়ার লোক আমি নয়।
শেয়ালের চোখ ভারি খর। একটু বাদেই দেখল, দূরের রাস্তায় এক সারি গাড়ি আসছে। শেয়ালকে আর পায় কে? মাথায় বুদ্ধি এসে গেল চিড়িক করে। রাস্তার উপরেই চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পড়ল সে। যেন মরে গেছে।
একটু বাদেই ঘড়-ঘড় আওয়াজ। গাড়িগুলো এসে পড়েছে। টেরিয়ে দেখে নিল, নদী থেকে মাছ ভর্তি গাড়ি নিয়ে হাটে চলেছে তিন জন লোক। সামনের গাড়িটাতেই বসেছে তারা। গল্প করতে করতে চলেছে। পিছনে মাছভর্তি চারটে গাড়ি।
রাস্তার উপর আস্ত একটা শেয়েল দেখে, দাঁড়িয়ে পড়েছে তারা। চোখ চকচক করে উঠল লোকগুলোর—আরে, আস্ত একটা শেয়াল! কী মজা, কী মজা! একজন বলল—তুলে নাও, তুলে নাও। মাংস তো খাওয়া যাবেই। চামড়াটাও বিক্রি করে দেব হাটে। ভালো দস্তানা তৈরি হয় শেয়ালের চামড়ায়। দামও পাওয়া যাবে ভালোই। 
শেয়ালটাকে তুলে একেবারে পিছনের গাড়িতে ছুঁড়ে দেওয়া হোল। মনের আনন্দে গাড়ি হাঁকিয়ে চলে গেল লোকগুলো। 

🍂

গাড়ির সারি চলেছে। একেবারে সামনের গাড়িতে তিন জন সওয়ারি। শেয়াল আছে পেছনের গাড়িতে, একেবারে শেষে। মাছ ভর্তি গাড়ি। এমন মওকা সহজে মেলে না। একটা করে মাছ তুলছে, আর ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলছে রাস্তার ধার ঘেঁষে। যখন গাড়ি প্রায় অর্ধেক খালি, টুক করে নেমে গেল শেয়াল।
সবমাছ কুড়িয়ে জড়ো করেছে। ডাঁই হয়ে উঠেছে মাছগুলো। মজা করে খেতে শুরু করেছে শেয়াল। খানিক বাদে দেখে, নেকড়ে আসছে সেই রাস্তায়।
একটা স্তুপের মত মাছ সামনে। বসে বসে মজা করে খাচ্ছে শেয়াল। নেকড়ের তো জিভে জল এসে গেল।
--আরে শেয়াল ভাই। হচ্ছেটা কী এটা?
চোখের সামনে নেকড়েকে দেখেও, মাথা গরম করল না শেয়াল। বলল--কী আর হবে? সারাদিন খেটেখুটে একটু ভুরিভোজ করে নিচ্ছি। 
কথা বলছে বটে, মুখ তুলে তাকাচ্ছেও না শেয়াল। খেয়েই যাচ্ছে।
নেকড়ে বলল--আমারও সারাদিন পেটে পড়েনি কিচ্ছুটি। আমাকে দু-চারটে দাও।
--হুঁ, বুঝেছি। মাছ নয়। উচিত শিক্ষা দিতে হবে তোমাকে। যা ধূর্তামি করেছ তুমি আমার সাথে।
--কী করি বলো। খিদেয় পেট গুলাচ্ছিল। তোমারও ফেরার নাম নাই। তাই তো…। একটা মাছ অন্তত দাও, ভাই।
শেয়াল বলল—গায়ে গতর আছে। নিজে ধরে খাও।
নেকড়ে করুণ গলায় বলল—সে বিদ্যা কি আমি জানি? 
--তাহলে আর কী? কেটে পড় এখান থেকে। মাথা গরম কোর না আমার। 
শেয়াল দেবে না। অগত্যা নেকড়ে বলল—তাহলে, মাছ ধরবার বিদ্যাটা শিখিয়ে দাও আমাকে।
--হ্যাঁ, এটা করতে পারি। কিন্তু একটু কষ্ট আছে। ঘাবড়ে গেলে চলবে না। 
নেকড়ের চোখে মুখে আলো। বলল—না, না। তুমি বলো। আমি পারবো কষ্ট সইতে।
মুখ ফিরিয়ে একটু মুচকি হেসে নিল শেয়াল—পথে এসো, বাছাধন। হাতেনাতেই শিক্ষা দিয়ে দিচ্ছি তোমাকে। জীবনে ভুলবে না।
শেয়াল মুখ মুছে নেকড়েকে বলল—দ্যাখো, দিদি। মাছ আছে নদীতে। বরফের আড়ালে। মাথা খাটিয়ে তুলে আনতে হবে তাদের। আমার চেয়েও বেশি ঝাঁকড়া তোমার লেজ। 
নেকড়ের ধৈর্য ধরে না। শেয়ালকে থামিয়ে, সে বলল—লেজের গুণগান পরে গাইবে। মাছ ধরার কৌশলটা কী, সেটাই শুনি। 
--সেটাই তো বলছি। মন দিয়ে শোন। শেয়াল বলল—নদীতে যাও। বরফে একটা গর্ত খুঁজে বার করো। গর্ত পেয়ে গেলে, কেল্লা ফতে। কাজ শেষ। লেজটা গর্তে ঢুকিয়ে বসে থাকো।
নেকড়ে অবাক-- গর্তে লেজ ঢুকিয়ে কী করব?  
--যা বলি, মন দিয়ে শোন। তাড়াহুড়ো করে লেজ তুলে নিও না। শেয়াল বলে যাচ্ছে--মাছেরা এসে লেজ কামড়ে ধরবে। যত দেরি করবে, তত বেশি মাছ। আর কথা নয়। সোজা নদীতে চলে যাও। আর হ্যাঁ, লেজ ঢুকিয়ে স্থির হয়ে বসে থাকবে না। লেজটা একটু নাড়াবে মাঝে মাঝে। তারপর দ্যাখো, কী কাণ্ডটাই না ঘটে।
 নেকড়ের আর তর সইল না। দৌড় লাগাল নদীর দিকে। ঘুরে ঘুরে একটা গর্তও পেয়ে গেল। লেজ ঢুকিয়ে, চেপে বসে রইল।
পেছন পেছন শেয়ালও এসেছিল আড়াল রেখে। নেকড়ে বসে পড়েছে, দেখেই ছুট লাগাল শেয়াল। গ্রামে ঢুকে চেঁচাতে লাগল—যারা নেকড়ে নিকেশ করতে চাও, বেরিয়ে এসো। চলো আমার সাথে। এমন মওকা আর পাবে না। যারা নেকড়ে নিকেস করতে চাও …
শেয়ালের কথা কানে যেতেই, হুড়মুড় করে বেরিয়ে  পড়ল গ্রামের মানুষজন। নেকড়ে ভয়াণক জ্বালাতন করে তাদের। ছাগল ভেড়ার লোভে প্রায়ই গ্রামে ঢুকে পড়ে। সবাই চলল নদীর দিকে। 
নেকড়ে তখন বন্দী হয়ে গিয়েছে। বরফ জমে জমে পাথর হয়ে গেছে তার লেজে। গর্তের মুখ থেকে আর বেরুচ্ছে না। অসহায়ের মত এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, শেয়াল এসে যদি বাঁচায় তাকে।
শেয়াল ফিরে এসেছে। কিন্তু পিছনে এক দল লোক। কুড়ুল, কাটারি, বল্লম তাদের হাতে। সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ল বেচারা নেকড়ের ওপর। 
কাজ শেষ। শত্রু খতম। লোকগুলো শেয়ালকে ধরে পড়ল—এই দশা হোল কী করে নেকড়ের? তুমি জানলে কী করে।
নিজের বাহাদুরি, কে না দেখাতে চায়? শেয়াল তখন শুরু করল তার কাহিনী। একেবারে গোড়া থেকে সাতকাহন করে বলে যেতে লাগল। যত শোনে, তত তারিফ করে লোকেরা। যত তারিফ শোনে, ঘটনাটা ততই ফেনাতে থাকে শেয়াল।
কাহিনী শেষ হোল। লোকেরা বাহবা দিতে লাগল শেয়ালকে—ভারি বুদ্ধি তো তোমার!! একেবারে পণ্ডিতের মতো মাথা। বলিহারি যাই অমন মগজকে।
সেদিন থেকে ধূর্তটার নামই হয়ে গিয়েছে—শেয়াল পণ্ডিত।

বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

1 Comments

  1. শেয়ালের গল্প দারুণ।

    ReplyDelete