জ্বলদর্চি

ভাঙা আয়নার মন/পর্ব-৫/মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া

ভাঙা আয়নার মন
পর্ব-৫
মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া 
     
|| নাও এ নিস্তব্ধ ...||
                     

শোনো, শুনতে পাচ্ছো? শ্যাওলা সবুজ রঙ করা বাড়ি ঘুম ভেঙে পিছু ডাকছে! আজ রাতে মৃদু আলোর আবহে পুরনো সংলাপ শুরু হয়েছে আবার। ধুলো ঝেড়ে উঠে দাঁড়ালো বইপত্তর, ডালপালারা লাফিয়ে উঠলো হাওয়ার ইশারায়। ম্যাজিক এক লণ্ঠন জ্বেলে বুড়ো ঝাউয়ের ডালে ঝুলিয়ে দিল রাত্তির। জলে ডোবা বাড়ি উঠে এসে তিন ভাইবোনকে ঘিরে আজ আমোদ করছে খুব। নাম ধরে ধরে ডাকছে অরু, মিতু ঝিনিইইইই।
      ভুলে যাওয়ার কী যে ছাই অসুখ হয়েছিলো তাদের মায়ের,আজ সেরে গেছে মা'র সব অসুখও।  ছেলেপুলের জন্য নতুন আদা আর সুগন্ধী চাল বেটে মউফুলি খেজুর রস দিয়ে রান্নাঘরে পিঁড়ি পেতে নবান্ন বানাতে বসেছে অল্প বয়সী মা।
       ফজরের নামাজের পরে পরেই কবর থেকে উঠে নছিম চাচা জিরেন কাটের রস পেড়ে এনে গেলাসে গেলাসে ছেঁকে দিচ্ছে। তাজা মিষ্টি রস খেয়ে ঝিনি কেঁপে কেঁপে উঠছে যত, শীত করছে না মেয়ে?শীত করছে না তোর খুকি? বারবার রুশ উপকথার বরফ বুড়োর মতোই জিজ্ঞেস করছে চাচা আর গল্পের ঢঙে প্রত্যেকবার সে বলছে কই নাতো! শুনে হাসতে হাসতে উঠোনে টিনের চৌকো কড়ায় রস জ্বাল দিতে দিতে আগুন পোয়াচ্ছে চাচা। উনুনে রাঙাআলু পোড়া দিয়ে দল ধরে ঘিরে বসেছে তারাও। ওবেলা রসের পায়েস হবে বলে বড় জামবাটি ভরে সর্ষেফুলি রস তুলে রাখছে মা। তাদের হাতে হাতে কাঁঠাল পাতায় গরম গুড়ের চাছি তুলে দিচ্ছে চাচা। বাতাসা ফুট দে দেছ বউমা,টক করি সরা কাপড় নে এসু। মাটির বড় সরায় নরম কাপড় দুফেরতা করে পেতে দিলো মা।  কড়ার গায়ে খেজুরের বেগোর হাতা ঘসে ঘসে পাটালির ফুট উঠে গেলে তাড়াতাড়ি সরায় ঢেলে দিল চাচা।নলেন পাটালিও চাক বেঁধে জমে উঠল।
      আজ মিঠে গন্ধে ভরে গেছে পাকঘর।সেজ জেঠাইমা দুধশাদা ক্ষীরের পাটিসাপটা বানাচ্ছে আর বাউটি পরা হাত ঘুরিয়ে  জেঠামণিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছে ক'দেহি ছোট বৌ,এই খুলনাইয়া লোকগুলান খাওনদাওনের জানেডা  কী? তোর আমার লাহান বরিশাইলের মাইয়া না হইলে খাইতো তো তিলের ত্যাল দিয়া কলমি শাগের রান্ধন। ছুটি পেয়ে জেঠামনি জেঠাইমা এসেছে শিমুলপুর থেকে।মা'র হাত থেকে চায়ের কাপ নিতে নিতে জ্যাঠামনি বলছে ওই রান্ধনেই তো দিন তার কাবার তুমিই কও বউমা। খোঁপার ওপর আধো ঘোমটায় মা হাসছে। মা কখনও ঘোমটা দেয় না। ইস্কুলে যাবার সময়েও না। শুধু জেঠামনিরা এলে খোঁপার ওপর ওই আঁচলটুকু তুলে দেয়।রাগি বড়দিদিমনি থেকে আধঘোমটার এই লাজুক হাসিতে বদলে যাওয়া মাকে কী সুন্দর যে লাগে তখন। বাপিরও বোধহয় চমৎকার লাগছে আজ।ছবি থেকে নেমে হাসতে হাসতে তাই মার কাছে চা চেয়ে বসল ।
      তাদের বাবার পছন্দই ছিল গাছপালা আর বই। বই উপচে পড়া তাদর ছোট্ট বাড়ি ঘিরে বড়সড় এক বাগান ছিল; যেখানে খুশিমত বেড়ে উঠত বেজায় অবাধ্য সব ফুল ফলের গাছপালারা। কারো কথা না শুনে বেয়াড়া রকম বেড়ে উঠত শনশন।তাদের তোয়াজ করার জন্যই বাগানে করিম ভাই বা এনসানভাই কাজ করত নিয়মিত। ঝিনিও তাদের পিছন পিছন ঘুরে ঘাসপাতা বেছে, আগাছা তুলে দিয়ে সাহায্য করতে চাইত।হরদম তার এই কাজ করার উৎপাতে মোটেও বিরক্ত না হয়ে তারা অবিশ্যি হাসত। তবে পিঁপড়ের কামড়, কোদালের আগায় আগায় ঘোরা বা মাটি মাখা থেকে তাকে নিরস্ত করতে প্রায়ই গপ্পো ফাঁদত তারা।
     কাঠ পিঁপড়েকে ঝিনিরা বলত মাঝালি। তার কামড়ের এক মন্তরও ছিল যে কোনও পিঁপড়ে বা পোকা কামড়ালেই তার অব্যর্থ ফলাফল।
     সেটা ছিল― মাঝালি-রে মাঝালি/কী কামড় কামড়ালি/ঘরে ছিল লাঙল জোয়াল/বাইরে ছিল ঈষ/নিয়ে যা তোর বিষ!
     এই মন্তর পড়ে ফোলা জায়গাটায় করিম ভাই তার খড়-খড়ে আঙুল বুলিয়ে তিনবার ফুঁ দিত আর ব্যাস! চোখে জল নিয়ে ঝিনি হেসে উঠত। ব্যথাই যখন চলে গেছে কান্নাকাটিরতো কোনো মানেই হয় না!
       সমস্ত স্মৃতির শুরু কিংবা শেষে জলইতো উঠে আসে। তখন অবশ্য জানত না সে কথা। সাঁতারও শেখেনি তখন।পুকুরঘাটে তবু ঝুঁকে পড়ে দেখত মেঘের ছায়া। কী এক অতল রহস্যে গা শিরশির করত! ভারি অচেনা কিছু ঘটছে বুঝি ওখানে। ঘাটের রানায় উঠে আসা গুটিগুটি শামুক খপ করে তুললেই ঢাকনা বন্ধ করে যেন দুয়োরে খিল এঁটে বসল সে। ছেড়ে দিলে টুপ করে ডুবে যায় ঢেলার মতোই। খানিক পরে আবার গুড়গুড়িয়ে উঠে আসে। জলের তলায় ওরা করে কী? ঘরবাড়ি আছে নাকি ওদের? গাছ আর মেঘের ছায়ায়  ছমছম করে যেখানে যেন প্রাচীন বৃষ্টির কাহিনি শোনাতে শোনাতে জলের তলা দিয়ে শামুক ঝিনুক চলেছে সার সার আর সে মোটেও সে সব গল্পের নাগাল পাচ্ছে না।জানা নেই বলেই ভয় ধরতো। অথচ রহস্যময় জল ঝিনিকে টানত বরাবর।
     পুকুরির ধার থেকি এবাড়ে এসু ছোড়দি। ভালো রাজার গল্প ঝানো তো?এনসান ভাইয়ের কাছেই সে রাজা হরিশচন্দ্রের গল্প শুনল একদিন। আহা, অমন ভালো সে রাজার সবকিছু দিয়েথুয়ে কী কষ্ট কী কষ্ট! শেষে  সবকিছু  ফিরে পেলে তবেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো!
     করিম ভাই একদিন বলল, মার-নে বসিরহাট গিয়েছ্তো ছোড়দি? ও জাগার নাম বসিরহাট কেন বলোদিন? রোদির মধ্যি না ঘুরি এই ছোঁমায় এসি চুপ করি বসলিপ্পর বলবো। সে হলুগে অনেকদিন আগেরকার কথা।
     কে-না জানে রূপকথা এভাবেই শুরু হয়। কাজেই দুব্বো ঘাসের ওপর ঝিনি ঘট হয়ে বসে গেলো।  
     বসিরুদ্দিন বলি এট্টা লোক ছেলো। গামছা কাপড় এইসব তাঁতে বুনি ঘাড়ে কর-নে অনেক দূরির হাটে গে-গে বিককির করত সেই লোক। তা একদিন হাট করতি সনঝি হইগেছ তার। চাঁদ উঠিছ বলি কেবল ফকফক করতিছ সুনসান জঙ্গলির রাস্তা। যেতি যেতি বসিরির গা কেরাম ছনছন করতিছ বুইলে কাপড়ের মোট ঘাড়ে কোরে হনহন করি সে বাড়ি ফিরতিছ হ্যাদে ত্যাকোন হলু কী...! কী হলো? করিম ভাইয়ের গা ঘেঁষে আমিও ঘনিয়ে আসি। বিড়ির লম্বা টানে ধোঁয়া ছেড়ে করিম ভাই বললো, বসির দেখতিছ খুনখুনে এট্টা বুড়ো তাল গাছের তলায় একলা বসি রইছ আর ডেকি জিগেস করতিছ ওই, কনে যাচ্ছিস তুই? বসির বলতিছ্ বাড়ি যাচ্ছি। তা বুড়ো বলতিছ কী, এইডা নে-যা, ভালো কাজ করিসতো দেকপি ভালো হব্যান তোর; বলি এট্টা থলিমতো দেলে সেই বুড়ো। কী আছ্ ইতি? খপরদার! আ্যকোন বলো দেকপি-নে।বাড়ি নে-গে খুলিসকোন।
      ত্যাকোন বসির সেই থলিডা নে যেতি যেতি কী মন করি পাছুত ঘুরি দ্যাকে সেই বুড়োর হাত-দুকান লাম্বা হতি হতি তালগাছের মাতায় আর পা লাম্বা হয়ি হয়ি দূরির এট্টা মাটে গে ঠেকিছ! ত্যাকোনো সে লাম্বা হচ্ছে! উরি আল্লা-রে বলি বসিরতো মেরিছ দৌড়! একেবার তার গেরামের বটতলায় গে হাপড় দে পড়িছ য্যাকোন, মুকি তার গ্যাঁজলা উটি গেছ!
     নামো ছোড়দি আর ভয়-নি। ঠিক বলছো? আর ওসব কথা নেই?হ্যা-আ্য, আল্লার কিরে। ভয়ের পার্টটায় ঝিনি করিম ভাইয়ের ঘাড়ে চড়ে বসেছিল। আশ্বাস পেয়ে গুট-গুট করে নেমে এল।
     চ্যাতনা পেয়ি বসির ত্যাকোন দ্যাকে থলির ভেতর মেলা ট্যাকা। ভালো কাজ করতি বলিছলোতো বুড়ো, বসির তাই গেরামে পুকুর কাটিইলো, ইদগা বানিইলো, আর তার গেরামেই একখান হাট বসিই দেলো। বসিরির নামে হাট; তাই গেরামডাও বসিরহাট হই গেলো।
     বড় হয়ে যদিও এ শহরের নামকরণ নিয়ে নানা মতামত পড়েছে সে এই যেমন স্বাধীনতারও আগে নদীপথে বানিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই অঞ্চল। ডকহাটের ইজারা নিত বসু পরিবার। তাই বসুরহাট থেকে এই নাম। আবার কেউ বলেন, ইচ্ছামতীর লোনা জল থেকে নুন তৈরি হত। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নীলচাষ আর লবন ব্যবসার আপিস তৈরি হলে ১৮২২ সালে যার সেরেস্তাদার বা 'নিমকি দেওয়ান' হন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। জ্ঞানেন্দ্রমোহনের অভিধানে বসির মানে সামুদ্রিক লবন।সেই নুনের হাট তাই বসিরহাট। আবার বাঁশের হাট থেকে বসিরহাট বা বসতি থেকে বসি এবং সেখান থেকেই বসিরহাট। নানা মুনির নানা মত হোক গে তার কাছে করিম ভাইয়ের সেই ভালো ভুতের গপ্পোটাই বেশ লাগে। নাম মাহাত্ম্য যাই থাক, পুরোনো এই ভাঙাচোরা শহরে জড়িয়ে আছে তার ছোটবেলার অপার বিস্ময়!
     বসিরহাট থেকে মাইল পাঁচেক দূরে (স্কুলে যখন পড়ত সে, দুই দাদা আর মাসতুতো ভাইবোনরা সবাই একমত ছিল, যে জায়গা তিনদিক দিয়ে ঘেরা ইচ্ছামতী নদী দিয়ে; নির্ঘাত সে জায়গা চাঁদের দেশ) তো সেই কাটিয়াহাটে তাদের বাড়ি। 
     মা কিনা গার্লসস্কুলের বড়দিদিমণি, তাই স্কুলের নানা কাজে সপ্তাহে দু'তিন দিন মাকে বসিরহাট যেতে হয়। প্রতিবারই যাওয়ার জন্য  সে যদিও বায়না করে, মা কিন্তু নিয়ে যায় খুবই কম।প্রায়দিন তো আর জামা-জুতো কেনা, দাঁতের ডাক্তার দেখানো বা নেমন্তন্ন এসব হয় না।
        যখন বড় ইস্কুলের মাঠ অবধি গেলেই তার গা ছমছম করে হারিয়ে গেছে ভেবে, খুব  উঁচু ঝাউগাছের মাথা দেখে তাকে বাড়ির রাস্তা ঠিক করতে হয়, তখন বসিরহাট যাওয়া উৎসবের মতোই একখানা ব্যাপার বটে! অনেক ঘ্যানর-ঘ্যানর আর অপেক্ষা পার করে মার সঙ্গে বাসে চড়ে রওনা দিয়েও ঠিক যেন বিশ্বাস হত না, সত্যিই সে যাচ্ছে তবে। জানলার সিটে বসে পাঁচ মাইল চলন্ত রাস্তাও কী যে অফুরন্ত হয়ে ওঠে ঘোর ভাঙে একেবারে সংগ্ৰামপুর গিয়ে মায়ের ডাকে।
     ছোট ডিঙি নৌকোয় চড়ে মিলনী হলের ধারে ঘাটে গিয়ে উঠতে হত তখন। অবশ্য জোয়ার-ভাঁটা, নদীর স্রোত ইত্যাদির ওপর নৌকোর গতিপথ ও সময় নির্ভর করত। বড় খেয়া নৌকোর ঘাট ছিল খানিক দূরে। ভ্যানে করে সেখানে গিয়ে তাতে চড়তে হত। ওপারে গদি পেতে মোটাসোটা ঘাটবাবু বসে থাকতেন, আর কেমন আছেন দিদিমণি বলে হেসে হেসে মার কাছ থেকে খেয়ার পয়সা নিতেন। 

🍂

           সেই ঘাটে বাঁধা নৌকোয় চড়িয়ে দিত মাঝিমাল্লারা। ঝোঁকপানা বলো একদম।জলের খোলে কারেন্ট আছে, পড়লিই টেনি নেবান, খুঁজলিউ বলো পাওয়া যাবে না। সে কাঠ হয়ে বসে পাটাতনে। ঘোলা জলের ঢেউ দেখে। দাঁড়ের ধারে ধারে ঘূর্ণিপাকের মতো জলের গর্ত দেখে। ওর মধ্যে তালে কারেন্ট দৈত্য থাকে। ধরতে পারলেই যে নিয়ে যাবে পাতালে কেউ আর খুঁজেও পাবে না! আর ওপার পৌঁছে  মাঝির হেই লাগদিছ লাগদিছ সামাল সামাল ধাক্কা হোও-ও! সবাই নৌকো লাগার ধাক্কা সামলে ঘাটে নামে।
       ওপারে অবশ্য দোকান বাজার, লোকজন হট্টগোলের নানা রং আর গন্ধ মিলে সরগরম হয়ে ওঠে দিন। নতুন বাজারের শ্রীকৃষ্ণ,নিউ শ্রীকৃষ্ণ, জনকল্যাণ বস্ত্রালয়,রেনবো টেলার্সের কোটপরা মস্ত ভুঁড়িওলা লোকটার ছবিসমেত নানা দোকান পেরিয়ে তারা যেত পুরোনো বাজারে।
     এক জায়গায় বই বাঁধানোর দোকান,আতরের দোকান সার সার বাতাসার দোকান ছিলো। টাল দেওয়া বাতাসার ধারেই চটের ওপর গুড়ের বাতাসা কাটছে দোকানিরা, আর ম-ম গন্ধে  উড়ে আসছে নীল মাছির দল। আজও ঝিনির মনে  ভালোবাসার গন্ধ আনন্দের গন্ধ বললেই পুরোনো বাজারের ওই গরম গুড়, সুর্মা-আতর আর পুরোনো বইয়ের গন্ধ মেশানো এক আলোর গন্ধই মনে আসে। যার চারপাশে মউ পোকার মতো ঘুরে ঘুরে ওড়ে  তার পুরোনো মন। ডানায় কুয়াশার আওয়াজ তুলে জিজ্ঞেস করে ঝিনি নামের সেই মেয়ে হারালো কোনখানে? চোখের মণিতে যার আজও বালিকা স্মৃতির মতো আজানের নীল ছায়া কেঁপে কেঁপে বলে খোলো উপত্যকা। খুলে দাও সাত পাপড়ির নীল ঘন্টিফুলেদের বুনো গল্প। ওখানে ঝিনির ছোটবেলার আলপথ আছে। ময়লা শাড়ি জামার ঝুড়ি কাঁকালে রুখোশুখো চুলের মেয়েদের ধানকাটা মাঠে ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ধান খোঁজা আছে।কোদাল শাবল দিয়ে ওরা কি গুপ্তধন খোঁজে? রহস্য সন্ধানে ওদের পিছু পিছু ঘুরে বেড়ায়  তার অবুঝ ছোটবেলা।ধান খোঁজার দলের সাথে উঁকি মারে গর্তে আর হাত ঢুকিয়ে  তুলে আনে আহ্ মাটি মাখা সোনার বন্ন ধান! 
      সে নাকি ঘুমের মধ্যে গোঙায় রোজ। আসলে তো আলপথে দৌড়তে দৌড়তে চিৎকার করে সে ,খোঁড়ো।খুঁড়ে তোলো দেখি পুরোনো পৃথিবী।শাঁক আলু,কন্দভরা মাটির নিভৃত ফলনের সুবাসে সিনা ভরে নিই। মাটি মাখা ধানের ঝুড়ি কাঁখে হেসে ওঠে রোদেলা আকাশ। মর্মরে বেজে ওঠে কবেকার পাতার ঘর। থরেথরে বাতাস সাজানো। পুরনো আলরাস্তা দিয়ে আজকের দিনে ফিরতে ফিরতে ঝিনি দেখে নিস্তব্ধ এক সন্ধের মোহনায় গাঙশালিখরা উড়ে উড়ে খুঁজছে তাদের মরে যাওয়ার  উত্তর। ঘোরলাগা অন্য এক মানুষের মতো ঝিনি বিড়বিড় করে ভালো থেকো মাটির আকাশ,আকাশ নুয়ে আসে প্রান্তরের দিকে। ভালো থেকো শান্ত অন্ধকার... অন্ধকার  জোনাকি জ্বেলে দেয়।ভালো থেকো ও জলে ভেসে যাওয়া মন কেমন .. ভালো থেকো চেনা নদীর ধারে ঘিঞ্জি ভাঙাচোরা শহর আমার..  শান্ত জলোচ্ছ্বাসে  কতকালের  চেনা ইচ্ছামতী তার জানলা খুলে ধরে। তাকে আজ কী দেবে ঝিনি?জল ছুঁয়ে তার বুকের স্তব্ধতাটুকুই নদীকে দেয় সে...

বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

0 Comments