জ্বলদর্চি

বার্লিনের ডায়েরি --৩৪ পর্ব। চিত্রা ভট্টাচার্য্য

মিলানো মিউজিয়াম।

বার্লিনের ডায়েরি --৩৪ পর্ব। চিত্রা ভট্টাচার্য্য 
            মিলানো ক্যাথিড্রালের শেষ পর্ব।
                                      
বর্ষণ ক্লান্ত আষাঢ়ের বৃষ্টিঝরা দুপুরের বেলাশেষে গোধূলির রাঙা আলোয় ভেজা আকাশ জুড়ে অর্দ্ধাবৃত্তাকারের  রামধনু  , তার সাতরঙের বাহারে নবীন চোখে অনিমেষে তাকায় সিক্ত সবুজের দিকচক্রবালের দিকে। বৃষ্টি স্নাত নির্মল প্রকৃতিতে আসন্ন সাঁঝের আলোয় শ্রীর মনের একতারায় বাজে    ইমনের সুর। আকাশজুড়ে পাখিদের দিনের শেষে আকুল কোলাহলে কুলায়ে ফেরার চঞ্চলতা। এক ঐকান্তিক নিবিড়তায় শ্ৰীময়ী ছাদে পায়চারির সময় আপন মনে চিন্তার সাগরে তলিয়ে যায়।মনেপড়ে  দশ বছর আগের দেখা ইতালীর মিলানো ডুমোর কথা --,আশ্চর্য্য হয়ে ভাবে ,সেদিন মিলানো ডুমোর ৫০ তলার ওপরে ও কেমন করে উঠেছিল ? শরীরে শিহরণ জাগে ,যেন এক কল্পলোকের গল্প । ওর স্বহস্তে স্বাক্ষরিত স্মৃতির পাতা উল্টে চলেছে ,সেই সময়ে মিলানো ডুমোর কত অপঠিত গল্প বলা হয়নি এখোনো।  

  মনে পড়ছে , ডুমোর বিশাল স্টেইন্ড কাঁচের জানলা গুলোর কথা। বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে স্টেইন্ড কাঁচের জানলার মধ্যে সর্বাধিক প্রাচীন জানালাটি ৫০০ বছরের ও বেশী পুরোনো এবং সবথেকে সুন্দর।যেখানে নিখুঁত ভাবে যীশু খ্রীষ্টের জীবন বৃত্তান্ত রং তুলির টানে অপরূপ চিত্রিত করা রয়েছে। শোনাযায় শেষ স্টেইন্ড কাঁচের উইন্ডো টি আধুনিক সময়েই ইনস্টল করা হয়েছিল। ক্রসের ছোট্ট চ্যাপেলের ওপর সম্রাট কন্সট্যান্টাইন আই গ্রেট এর মা সেন্ট হেলেনার চিত্র যুক্ত  যে জানলা টি দেখতে পাওয়া যায় তা ও অপরূপ কারুকার্য মন্ডিত।  বার্টিনি ভাইরা ১৯ শতকে ওল্ড টেস্টামেন্ট থেকে  নিউ টেস্টামেন্ট এবং আপোক্যালিপস থেকে দৃশ্য চিত্রিত করে এই এপ্সউইন্ডো টি নির্মাণ করেছিলেন। বেলাশেষে পরন্ত উজ্জ্বল আলোয়  এই কাঁচের আভ্যন্তরীন চিত্র গুলো রামধনুর রঙের সাজ দিয়ে গাঁথা এক অবিনশ্বর জীবনের রূপকথার  চিত্রস্পষ্ট ভেসে ওঠে । আদ্রিজা অবাক হয়ে বলে লক্ষ্য করে দেখ এখানে পড়ন্ত সূর্যের আলোয় কেমন প্রভু যীশুর জন্ম থেকে বড়ো হওয়া এবং কর্ম জীবন কী অপরূপ ভাবে ফুটে উঠছে।        মিলানো ডুমো                                                                                      
 শ্রী  কেমন করে সেদিন ,অমন শৈত্য প্রবাহের সাথে লড়াই করেছিল?  অত উঁচু মিলানো ক্যাথেড্রালের ছাদের  থেকে যত দূর দেখা যায় দেখেছিল ,সমগ্র শহরটিকে নীলাকাশের তলে সবুজ বার্চ লার্চ পাইনে ঢাকা আল্পস পাহাড়ের পদ তলে সাজানো ছবির মত সুন্দর মায়াময় এক নগরী। তখন দূরে আল্পসের শীর্ষ চূঁড়ায় শ্বেত শুভ্র তুষার মুকুটের ওপর সূর্যের সোনালী আলো পড়ায় স্বর্ণ মুকুটে রাজার মত সেজেছিল আল্পস। অগুনিত কলস ভরা তরল সোনা গড়িয়ে পড়ছিল ,যতদূর দেখা যায় পর্বত শ্রেণীর শীর্ষ থেকে  , উম্মুক্ত নীলচেপাহাড়ের গায়ে। মন ভরা প্রশান্তি নিয়ে খুব ধীর গতিতে ক্যাথেড্রালের ছাদ থেকে নীচে নেমে এসেছিল ওরা। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেছিল মাত্র ২৭ মিনিট সময় লেগেছিল ক্যাথেড্রালের   সিঁড়িটি বেঁয়ে নীচে নামতে।   
 মিলানো ডুমোর অন্দর মহল

এরপর ওরা দেখেছিল লা স্কালা অপেরা হাউজ টিকে। যে টি  বিশ্বের দরবারে অন্যতম প্রসিদ্ধ অপেরা হাউজ ,যেখানে ২০০০এর ও বেশী লোকের এক সাথে বসার ব্যবস্থা আছে। গ্যালারিয়া ভিট্টোরিও ইমানুয়েল একটি প্রাচীন এবং চমৎকার শপিংগ্যালারি। ইউরোপের সেরা কিছু শৈল্পিক কাজের সাথে পাইরেলি টাওয়ার ,১৯৬০ এর দশকের আধুনিকতা বাদী ইতালিয়ান স্থাপত্যের সানশিরো একটি বিশাল খ্যাতিমান স্টেডিয়াম বা কাস্তেল সফরজেসকো একটি মধ্যযুগীও দুর্গ। বিশেষ করে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট "সান্তা মারিয়া দোল্লা গ্রাতজে চার্চ বা বেসিলিকা" যার কথা  স্মরণ না করলে শ্রীময়ীর বার্লিনের ডায়েরির গল্প অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এখানের এই গ্যালারীর  টিকিট গুলো খুব সীমিত বলে প্রায় মাস তিনেক আগেই  অদ্রিজা ওর নির্বাচিত আর্ট গ্যালারীর টিকিটগুলো সংগ্রহ করে রেখেছিল। এবং প্রচন্ড উৎসাহ নিয়ে একটুও সময় নষ্ট না করে ওরা পৌঁছলো সেই গ্যালারীতে। 

 রেনেসাঁ যুগের বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত চিত্র  "দা লাস্ট সাপার" এবং মহান  শিল্পী চিত্রকর লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মিউজিয়ামে। সঙ্গে আছেন এখানকার চার্চের নিয়োজিত গাইড মহিলা মারিয়া স্টেলা। আপাতত ওরা  চলেছিল গাইডের পথ নির্দেশে। তিনি প্রায় জনা ২০ সদস্যের একটি দল কে  নিয়ে এলেন একেবারে লাস্ট সাপারের চিত্রের দেওয়ালের কাছে।প্রথমেই উনি লিওনার্দোর জীবনের কিছু সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিলেন ,সবাই উৎসুক চিত্তে তাকিয়ে আছেন ম্যাডাম স্টেলার মুখের দিকে।  

   লিওনার্দোর জন্ম ফ্লোরেন্সের কাছাকাছি ভিঞ্চি গ্রামে ,কৃষাণি মা ক্যাটরিনা বাবা পিয়োরোর যত্নে বড় হতে থাকা লিওনার্দোর প্রথাগত শিক্ষার সুযোগ না পেলেও  জিওমেট্রি ল্যাটিন আর ম্যাথস নিজের আগ্রহে শিখেছিলেন এবং তাঁর পেইন্টিংএর হাত  ছিল এক কথায় অনবদ্য। ঈশ্বর প্রদত্ত প্রতিভার অধিকারী ছিলেন  লিওনার্দো। ওর পিতা পিয়োরো এই প্রতিভাবান ছেলেকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন বিখ্যাত শিল্পী ভেরক্কিওর ওয়ার্কশপে। সেই সময়ে এই ওয়ার্কশপে বত্তিচেল্লি ,ডোমেনিকো পেরুজিনো ছাড়াও  অনেক বিখ্যাত গুণী জ্ঞানী শিল্পী ব্যক্তিদের সমাবেশ হয়েছিল। এখানে লিওনার্দো ড্রইং পেইন্টিং মডেলিং স্কাল্পচার ছাড়াও কেমেস্ট্রি ড্রাফটিং মেটালার্জি প্লাস্টার কাস্টিং মেকানিক্স কার্পেন্ট্রি এর মত জটিল বিদ্যা এক দশক ধরে গভীর ভাবে শিখেছিলেন। 

  এরপর মিলানের ডিউক লুদোভিকোর আমন্ত্রণে মিলানে আসেন। ১৪৮২সাল থেকে ১৪৯৯সাল পর্যন্ত মিলানে থাকার সময়ে লিওনার্দো সৃষ্টি করেন তাঁর  বিখ্যাত রেনেসাঁ যুগের  দুই কালজয়ী শিল্প কর্ম "দ্য লাস্ট সাপার" এবং "ভার্জিন অফ দ্য রক"। এ ছাড়া লুদোভিকোর জন্য তাঁর করা কাজ গুলো ছিল মিলানের ডুমো ,ইকুয়েস্ট্রিয়ান মনুমেন্ট এবং গ্রান কাভাল্ল  যা এখোনো  বিশেষ উল্লেখযোগ্যতার দাবি রাখে। শ্রী ও তিতির দুজনেই তৃষিত চোখে খুঁজেছিল লিওনার্দোর কালজয়ী  অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি --রহস্যময়ী নারী মোনালিসার চিত্র টি। ম্যাডাম স্টেলা মারিয়া জানালেন সেই অরিজিনাল বিশ্ববন্দিত ছবিটি সংরক্ষিত আছে ফ্লোরেন্সের মিউজিয়ামে।  

 লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির সমৃদ্ধ ময় জীবনের বিরাট চমকপ্রদ প্রতিভার গল্প ম্যাডাম অনেকক্ষণ ধরে   বলছিলেন --- দ্য ভিঞ্চির সমৃদ্ধ ময় জীবনীপঞ্জীর  এখানে তার পূর্ণ  বিবরণ দিতে গেলে এতো স্বল্প   পরিসরে  শ্রীর মিলানো দেখার অভিজ্ঞতার সঞ্চয়ের ঝুলির সব কথা লেখা শেষ হবে না। তাই মহান শিল্পী লিওনার্দো কে স্মৃতির ঘরে বন্দি রেখে  ওরা পৌঁছলো লাস্ট সাপারের দেওয়ালটি তে। এখোনো মনেপড়ে  সেখানে পৌঁছোবার আগে দুই ধরণের সাবধানতা নেওয়া হয়েছিল যাতে বাইরের আবহাওয়া জলীয় বাষ্পের কারণে ঢুকে ভিতরের পেইন্টিং নষ্ট না হয়ে যায়। গাইডের মত অনুযায়ী এই ম্যুরালটি  প্রায় ছয় বারের মত রিস্টোর করা হয়েছে.। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়ে ১৯৪৩সালে ব্রিটিশ ও আমেরিকান দের ফেলা বোমার আঘাতে গীর্জার অধিকাংশ দেওয়াল ধ্বসে গিয়েছিল। এবং লাস্ট সাপারের দেওয়ালটি ও সে আঘাতে  সাঙ্ঘাতিক ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছিল। অবশ্য পরে নিজস্বতা বজায় রেখে এই দেওয়ালটি তে ছবিটি পুনর্নির্মিত বা রিস্টোরেশন করা হয় ।যদিও বেশীর ভাগ মানুষ লাস্ট সাপার কে ফ্রেস্কো মনে করে ভুল করলেও এটি ফ্রেস্কো নয়। কনভেন্টের খাবার ঘরে ১৫ বাই ২৯ ফিট দেওয়াল জুড়ে করা এই ম্যুরাল টি কে রেনেসাঁস সময়ের সেরা মাস্টার পিস বলা হয়। যদিও  লিওনার্দোর আগে অনেকেশিল্পী ই এই চিত্রটি এঁকেছিলেন ।           

লাস্ট সাপার নিউ টেস্টামেন্টের উল্লিখিত ঘটনার একটা গ্রাফিকাল রি-প্রেজেন্টেশন মাত্র। জেসাস তাঁর বারোজন শিষ্য নিয়ে সাপার করার সময় যখন উল্লেখ করলেন বারো জনের এক জন তাঁকে  বিট্রে করবে মারবে সূর্যোদয়ের আগে তখন সবার মুখ ও চেহারার প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন কেমন ছিল সেটাই এখানে নিখুঁত ভাবে রংতুলির টানে তুলে ধরা হয়েছে। ছবিটিতে দেখা গেছে বিশাল টেবিলে শান্ত সৌম্য ভঙ্গিতে বসে থাকা জেসাসকে ঘিরে তার বারো জন শিষ্যের রাগ দুঃখ অবিশ্বাস হিংসায় ভরা চেহারার প্রতিফলন।  এতো জীবন্ত প্রাণবন্ত ছবি রঙ তুলির টানে যা অকল্পনীয়। মনে হবে ছবি নয় যেন সব সত্য। ঠিক ১৫ মিনিট দেখার সময় ছিল তারপরেই গাইড স্টেলা তাড়া লাগিয়ে সেখান থেকে সকলকে বার করে নিয়ে  এসেছিলেন। বাইরে বেরিয়ে ঋষভ শ্রী কে বলে ভাবতে খুব খারাপ লাগছে  '' বহু বছরের  অক্লান্ত পরিশ্রমে  লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি মিলানের গীর্জার দেওয়ালের যে অনুপম সৃষ্টি টি করলেন ,সেই  অমর শিল্প কলা সময়ের বিবর্তনে এবং বিভিন্ন কারণে তার আসল রঙ রূপ হারিয়ে ক্রমশঃ অনেকটা বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে।হয়তো ভবিষ্যতে একদিন সম্পূর্ণ টাই কালেরস্রোতে বিলীন হয়ে যাবে। '' 

  অদ্রিজা এগিয়ে গিয়েছিল ঐতিহাসিক স্মারক রূপে উজ্জ্বল হয়ে থাকা সেই সময়ের বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ন্যাশানাল মিউজিয়াম ইতিহাসের বিশাল সংগ্রহ শালা টিতে । যা ছিল লিওনার্দোর বহুমুখী বিশাল  কর্মজগৎ নিয়ে ১৬ শতকের তৈরী একটি সংগ্রহ শালা। সে সময়ের ব্যবহৃত দ্য ভিঞ্চির নিজস্ব যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে বিজ্ঞানের ও প্রযুক্তি প্রদর্শন এতো বিস্ময়কর যা অচিন্তনীয়। এই কর্ম শালাটি  দেখে  ঋষভ মোহিত হয়ে গিয়েছিল। ওর মতে রোম পুরোনো ইতালির প্রতিনিধিত্ব করে কিন্তু মিলান কে  নতুন ইতালির স্মারক প্রতিভূ বলা যায়। ইতালীয় সমস্ত শহর গুলোর মধ্যে মিলান সবচেয়ে আধুনিক এবং এখনো ও তার অতীত ইতিহাস কে বেশীর ভাগ অক্ষত রেখে দিয়েছে।

🍂

 সেন্ট এম্ব্রোজি ও মিলানের পৃষ্ঠ পোষক সেন্ট চতুর্থ শতাব্দীর গীর্জা ,ভিতরে অনেক অবাস্তব কারভিংস আছে। পিনাকাটাকে ( pinacoteca)  ডি ব্রেরা মূলত নেপোলিয়ান দ্বারা শুরু মিলানের সবচেয়ে মর্য্যাদা পূর্ণ আর্ট গ্যালারী। এর ৪০ টির বেশী কক্ষে ৬০০টির ও বেশী কাজের একটি বিশাল সংগ্রহশালা রয়েছে।   এখানে সংরক্ষিত আছে দ্যভিঞ্চি ,ক্যারা ভাজ্জি  ও  তিনতারেত্তো রাফায়েল সহ অনেক বিশ্ববিখ্যাত কালজয়ী শিল্পীর অনবদ্য সব চিত্রশিল্প। এ ছাড়াও য়্যামব্রজিওর নারীর চিত্র ,বত্তিচেলির প্যাভেলিয়নের ম্যাডোনা ইত্যাদি অসংখ্য ছবি দেখতে পেয়ে অদ্রিজা মুখরিত হয়ে শ্রী কে ও দেখাতে শুরু করে । তবে এখানে ক্যামেরা নিষিদ্ধ থাকায় কোনো ছবি তোলা যায়নি। এবং সব গ্যালারীগুলো ও দেখা হয়নি। 

  মনে আছে , ৫০০ বছরের পুরোনো এক গ্রন্থাগার দেখেছিল যা এই পিনকোটেকো  আমব্রোসিয়ানার একটি অংশে । কিন্তু রক্ষনা বেক্ষনের জন্য এই শতাব্দী প্রাচীন বহু পুরানো গ্রন্থাগারটি এখন বন্ধ। বছরের নির্দিষ্ট গ্রীষ্ম কালীন সময়ে এই লাইব্রেরিটি খোলা থাকে। বাইরে থেকে এক সাইনবোর্ডে এর ছবি দেখাগেল রেনেসাঁ যুগের কত জ্ঞানীগুণী বিদ্বজন শিল্পী কবি সাহিত্যিক লেখক বিজ্ঞানী দার্শনিক তৎকালীন বহু স্মরণীয় মানুষের সমাবেশ হতো এই গ্রন্থাগারে।রেনেসাঁ যুগের মহান দার্শনিক ইতালীয় মানবতাবাদী পন্ডিত কবি পেত্রার্ক যার কবিতা লরা কে সম্বোধন করে একটি কালজয়ী প্রেমের  গীতিকবিতার গুচ্ছরচিত হয়েছিল।  একটি গ্যালারীতে আইরিশ চিত্র কর ফ্রান্সিস বেকনের চিত্র কর্ম প্রদর্শনী শালায় ,শিল্পীর সারা জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের সৃষ্টি দিয়ে সাজানো সে ও এক অসাধারণ শৈল্পিক জগৎ।  শ্রীর খুব আফশোস হচ্ছিলো এই পুস্তক মন্দিরটির এতো কাছে এসেও অসময়ে তার দ্বার রুদ্ধ হওয়ায় অন্দরে প্রবেশ করতে পারেনি। বাইরে থেকে দেখেই একরাশ মুগ্ধতায় মা ও মেয়ে ডুবে ছিল। 
সাঁঝের মিলানো

  আসন্ন সাঝেঁর  কালচে আকাশের বুকে একঝাঁক খুব ছোট পাখি দলবদ্ধ হয়ে চক্রাকারে উড়ে ঘরে ফিরছে , দিনান্তে এমনি  করে ওদের পাখায় ভর করে সাঁঝের আঁধার পৃথিবীর বুকে নেমে এসেছিল।ঋষভ বলে এই পাখিগুলো  যে আমাদের দেশের ঠিক নাককাটি পাখির মত ওমনি করে মুক্ত আকাশে ওড়ে।   

  সারাদিন কত মাইল কত পথ হেঁটেছিল তিতিরের হিসেব নেই ! দিন ভর ঘুরে বেড়ানোয় দুপুরের লাঞ্চ পর্বের কথা ও বেমালুম  ভুলে গিয়েছিল। এবার যে আর  ক্ষিদে সহ্য হয় না। ঋষভ বলে আর একটু হাঁটলেই কাছেই আজনবী তে আশিকভাইয়ের রেস্তোরাঁয় পৌঁছে যাবো। সেখানে বাংলাদেশী  মাছ ভাতের অর্ডার দিয়েছি ,প্লীজ আর পাঁচ মিনিট ।এবং আজনবীতে ভারী উপাদেয় মেনুটি ছিল। শ্রী দের জন্য স্পেশাল ডিশ একেবারে ঘরোয়া রান্না সরুচালের ভাত মাহী মাছের ঝাল টুনা মাছ ভাজা ,মুসুর ডাল গন্ধরাজ লেবু আলুবোখরার চাটনী ,পাঁপড় যা বিদেশের রেস্টোরেন্টে জাস্ট ভাবা যায়না।  

ডিনারের পর হোটেলে ফিরে এক মুহূর্ত ও তর সয় না।  ক্লান্তিতে ওর চোখের পাতা আঠার মতজুড়ে যাচ্ছে।  রুম হিটারের উষ্ণতায় নরম কম্বলের গভীর আরামে নিজেকে কোনোমতে ডুবিয়ে দিয়ে শ্রী চোখ বোজে। আগামী কালের অন্য এক ভোরের নতুন আলোর অপেক্ষায়।  সকাল থেকেই ব্যাগপ্যাক করে যাত্রা শুরু। পরিচয় হবে বিখ্যাত মার্চেন্ট অফ ভেনিস গল্পের নায়িকা পোর্শিয়ার ভেনিস নগরীর সাথে। দারুণ  থ্রিলিং লাগলেও শ্রী এখন অকাতরে ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছে।
আরও পড়ুন 
বিজ্ঞাপনের বিকল্প বিজ্ঞাপনই || ঋত্বিক ত্রিপাঠী 

Post a Comment

0 Comments