দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে
লাতিন ভাষায় 'মেডিকাস' শব্দ থেকে ("আরোগ্য লাভে সক্ষম," "যিনি যত্ন নেন" বা "আরোগ্য") চিকিৎসক শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। পারিভাষিক শব্দ হিসেবে এটি ফরাসী ভাষায় আরবি 'তাবিব' শব্দের মাধ্যমে অনুপ্রবেশ ঘটেছে বাংলায়।
চিকিৎসক বা ডাক্তার হলেন, একধরনের স্বাস্থ্য সেবা প্রদায়ক, যাঁদের পেশা হলো, শারীরিক বা মানসিক রোগ, আঘাত বা বিকারের নিরীক্ষণ, নির্ণয় ও নিরাময়ের দ্বারা মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা করা বা পুনর্বহাল করা। এঁদের মধ্যে কেউ যদি কোন বিশেষ প্রকারের রোগ বা রোগী বা চিকিৎসাপদ্ধতির চর্চার প্রতি নিবিষ্ট হন, তাঁদের সেই রোগ বা রোগীপ্রকার বা পদ্ধতির বিশেষজ্ঞ বা স্পেশালিস্ট বলা হয়। অন্যরা যাঁরা ব্যক্তিকেন্দ্রিক, পরিবারকেন্দ্রিক, জনগোষ্ঠীকেন্দ্রিক ইত্যাদি বিভিন্ন ভিত্তিতে, বয়স রোগ নির্বিশেষে, ক্রমান্বয়ে বা সর্বতোভাবে সাধারণ মানুষের নানারকম রোগবিকারাদির সাধারণ চিকিৎসা করে থাকেন, তাদের জেনারাল প্র্যাক্টিশনার বলা হয়। চিকিৎসার সঠিক ব্যবহার শুধু চিকিৎসাবিজ্ঞানের বুনিয়াদী পঠনভিত্তিক জ্ঞানের উপরেই নির্ভর করে না, বরং এর কার্যকারিতা ও প্রচলন প্রায় সম্পূর্ণরূপেই নির্ভর করে এই বিজ্ঞানকে পরিশীলিতভাবে প্রয়োগ করবার তথা ফলিত কলাবিদ্যায় পারদর্শীতার উপর। । চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য সেবার অন্যান্য পেশাদারী ব্যক্তিদের সাথেও অত্যন্ত নিবিড়ভাবে জড়িত।
ইবনে সিনা ছিলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম একজন ব্যাক্তি। তাঁর লেখা বইগুলো আজ আধুনিক যুগের চিকিৎসকগন অনুসরণ করছেন। তাঁকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক বলা হয়।
চিকিৎসকদের প্রধানত দুইটি দলে ভাগ করা যায়, যেমন, ১.প্রাথমিক চিকিৎসা বা সেবা প্রদানকারী চিকিৎসক এবং
২. বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
🍂
বিধান চন্দ্র রায়ের স্মরণে ১লা জুলাই "জাতীয় চিকিৎসক দিবস" পালিত হয়। তিনি ১৮৮২ সালের ১লা জুলাই জন্মগ্রহণ করেন এবং একই তারিখে ১৯৬২ সালে মারা যান। এই ১লা জুলাই দিনটিতেই 'জাতীয় চিকিৎসক দিবস'পালন করা হয়। এই দিনটিতে ইন্দোনেশিয়ান ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (আইডিআই) এর জন্মদিন উদযাপনের মাধ্যমেও চিহ্নিত করা হয়।
প্রতি বছর ১লা জুলাই, ভারতের বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের স্মরণে 'জাতীয় ডাক্তার দিবস' উদযাপন করে। এই দিনটি সমাজে ডাক্তারদের অমূল্য অবদানকে স্বীকৃতি দেয় এবং মানবতার জন্য তাঁদের নিরলস সেবাকে সম্মান করে। ডক্টর রায় ১লা জুলাই, ১৮৮২ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং কাকতালীয়ভাবে ১৯৬২ সালে একই তারিখে মারা যান, যা এই দিনটিকে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে।
ডঃ বিধান চন্দ্র রায়, একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা ছিলেন, যিনি ১৯৪৮ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান এবং অসংখ্য হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি পরিচিত ছিলেন। তাঁর কাজ পশ্চিমবঙ্গে স্বাস্থ্যসেবার গুণমানকে ব্যাপকভাবে উন্নত করেছে।
ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়, শরীর ও স্বাস্থ্য নিরাময়ের জন্য নিবেদিত একটি জীবন।
ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় ছিলেন একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক যার চিকিৎসা ক্ষেত্রের নিবেদন ছিল অতুলনীয়। তিনি কলকাতায় এবং পরে লন্ডনে তাঁর ডাক্তারি অধ্যয়ন শেষ করেন, মর্যাদাপূর্ণ রয়্যাল কলেজ অফ ফিজিশিয়ানের সদস্য হন। ভারতে প্রত্যাবর্তনের পর, ডঃ রায়ের চিকিৎসা বুদ্ধি এবং সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে ব্যাপক সম্মান ও প্রশংসা অর্জন করেছিল।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের তাৎপর্য অপরিসীম।যেমন,বলা যায়,
১.সচেতনতা বৃদ্ধি, জাতীয় ডাক্তার দিবস স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব এবং সমাজে ডাক্তারদের ভূমিকা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করে। এটি মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ডাক্তারদের চ্যালেঞ্জ, ত্যাগ এবং নিষ্ঠার কথা তুলে ধরে।
২.চিকিৎসা শিক্ষাকে উৎসাহিত করা: দিবসটি চিকিৎসা শিক্ষাকেও উৎসাহিত করে এবং চিকিৎসকদের মধ্যে ক্রমাগত পেশাদার বিকাশের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়। এটি স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে চিকিৎসা ক্ষেত্রে গবেষণা, উদ্ভাবন এবং অগ্রগতি প্রচার করে।
৩. অনুপ্রাণিত করা: জাতীয় ডাক্তার দিবস, ডাক্তার এবং চিকিতৎসা পেশাদারদের জন্য প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে।
জাতীয় চিকিৎসক দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম।
জাতীয় চিকিৎসক দিবস হলো, সেই চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন, যারা নিঃস্বার্থভাবে আমাদের সেবা করেন। COVID-19 মহামারী আমাদের জীবনে ডাক্তাররা,যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তা আমাদের কাছে আরো বাড়িয়েছে।এমনকি অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মুখেও তাঁদের অটল উৎসর্গ এই দিনের গুরুত্বকে বোঝায়।
জাতীয় চিকিৎসক দিবস উদযাপন বিভিন্নভাবে হয়, যেমন,
১.কৃতজ্ঞতা প্রকাশ,এর মাধ্যমে আমাদের জীবনে ডাক্তারদের ধন্যবাদ জানাতে একটু সময় দিতে হবে।একটি সাধারণ বার্তা বা একটি হৃদয়গ্রাহী নোট অনেক কিছু বোঝাতে পারে।
২.সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান,স্বাস্থ্য সমস্যা এবং নিয়মিত মেডিকেল চেক-আপের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণ করতে কিম্বা সংগঠিত করতে হবে।
৩.দান করা: হাসপাতাল, চিকিৎসা গবেষণা বা স্বাস্থ্যসেবা দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করার কথা বিবেচনা করতে হবে।
জাতীয় চিকিত্সক দিবস শুধু একটি স্বীকৃতির দিন নয়, এটি ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের মতো ডাক্তারদের দ্বারা মূর্ত সেবা, উৎসর্গ এবং করুণার চেতনার উদযাপন। আমরা এই স্বাস্থ্যসেবা বীরদের সম্মান করার সাথে, সাথে সমাজে তাদের অমূল্য অবদানকে সমর্থন ও প্রশংসা করার জন্যও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই ১লা জুলাই, আমাদের জীবনকে স্পর্শ করেছে, এমন ডাক্তারদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য,কিছুক্ষণ সময় আমাদের দিতে হবেই এবং প্রতিদিন একটি করে সদর্থক পরিবর্তন আনতে হবে নিজেদের মধ্যে।
ডঃ বিধান চন্দ্র রায় পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় অসংখ্য অবদান রেখেছেন। তিনি মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবার উন্নত করে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর নেতৃত্ব এবং দৃষ্টিভঙ্গি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠার দিকেও নেতৃত্ব দিয়েছিল, রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নকে বাড়িয়ে তোলে। তাঁর উত্তরাধিকার এই অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার অগ্রগতিতে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।
প্রত্যেকটা দিবসের একটা করে প্রতিপাদ্য বিষয় বা থিম দিন থাকে।
জাতীয় ডাক্তার দিবস ২০১৯সালের থিম ছিলো, "ডাক্তার এবং ক্লিনিকাল সংস্থার বিরুদ্ধে সহিংসতার জিরো টলারেন্স"। প্রত্যেক বছরের থিম, ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা ঘোষণা করা হয়,থিমটি ভারত জুড়ে ডাক্তারদের সাথে , সহিংসতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ায়।
বেশ কয়েক বছর ধরে, ডাক্তারদের অবদানের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য, সরকারী ও বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা সংস্থাগুলি দ্বারা জাতীয় চিকিৎসক দিবস পালিত হয়। স্বাস্থ্যসেবা সংস্থার কর্মীরা এই দিনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং কার্যক্রমের আয়োজন করে। চিকিৎসক দিবস উপলক্ষে রোটারি ক্লাব অফ দ্য নর্থ কলকাতা এবং নর্থ ইস্ট ক্যালকাটা সোশ্যাল অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন” বার্ষিক বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শেষে বলি,আমাদের সকল নাগরিকদের উচিত, চিকিৎসক এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানকে যথার্থ সম্মান দেওয়া।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপনের বিকল্প বিজ্ঞাপনই || ঋত্বিক ত্রিপাঠী
0 Comments