জ্বলদর্চি

বার্লিনের ডায়েরি - ৪৩ পর্ব /চিত্রা ভট্টাচার্য্য

ঐতিহ্যময় রোম নগরী

বার্লিনের ডায়েরি  - ৪৩ পর্ব    
চিত্রা ভট্টাচার্য্য

রোম -রোম-রোমা 

রোমের পথে

স্মৃতির পারাবারে সময়ের চঞ্চলা নদীর উত্তাল তরঙ্গে উজান বেয়ে যে সোনারতরী আনমনে দিশাহীন ভেসে চলেছিল ,উদাসী হাওয়ায় সেই টলোমলো তরী খানির দিকে পিছনে ফিরে তাকিয়ে শ্রীময়ী দেখেছিল সেখানে বহু যত্নে থরেথরে সাজানো রয়েছে তার এই সুদীর্ঘ জীবনের যাত্রা পথে কত চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সঞ্চয় করা পাথেয়। আপন মনের অনুরাগে এককালের সযত্নে গুছিয়ে রাখা দেশ বিদেশের বেড়ানোর গল্পে ভরা কত বর্ণময় অভিজ্ঞতা। মলাট খসা ছেড়া পুরোনো ডায়েরির পাতা আর কতদিন তাকে বুকের মাঝে আগলে রাখবে ? ওর চিন্তাশীল মন ভাবে বাস্তব জীবনের চলার পথের হিসেবের খাতায় মাঝে মাঝে এমন কিছু ভালো মন্দ মিশিয়ে ঘটনা ঘটে যায় হয়তো সে ঘটনা গুলোই অলৌকিক রূপ নিয়ে কাছে এসে দাঁড়ায়। যার জন্য আগের থেকে মন কখনো প্রস্তুত থাকেনা। শ্ৰীময়ী র জীবনে রোম ভ্রমণের অপ্রত্যাশিত আমন্ত্রণ অনেক টা তেমন ই আকস্মিক এক চমক। 
বার্লিন ট্যাগেল এয়ারপোর্ট

'শ্রাবণী পূর্ণিমার অঝোরে বৃষ্টিঝরা ঝরোঝরো মুখর বাদল রাতে কাগজ কলম হাতে নিয়ে 'বার্লিনের ডায়েরি '' ওর সদ্য লেখা উপন্যাসের নতুন পর্ব সাজিয়ে তুলতে ওর অনুভবী মনে চলেছে গভীর প্রয়াস।  এতদিন পর স্মৃতির পাতা থেকে তুলে এনে তাকে ক্রমানুসারে সাজিয়ে লিখতে বসে শ্রীময়ী অতীতের সাগরে ডুবে বেশ হিমশিম খাচ্ছে । এই তো সবে মাত্র জলে মগ্ন ভেনিসের পথে ভেপোরাত্ত তে ঘুরে সে দেশের গল্প লেখা শেষ হলো। এখন ভেনিস কে বিদায়ী জানিয়ে ধারাবাহিক বেড়ানোর গল্প লিখতে  মননিবেশ করে বাস্তব ছেড়ে চলেছে আরো দূর বিদেশের পাহাড়ের রুক্ষ বন্ধুর পথে।চিরসজীব নগরী eternal city নামে পরিচিত রোম  সাম্রাজ্যের রাজপথে, প্রাসাদ নগরের অলিন্দে ,স্থাপত্যে ,ভগ্নস্তূপে।       

সেই সময়ে শীতের আমেজে উৎসব মুখর বার্লিনে মাসাবধি কাল ধরে "বড় দিনে --২৫শে ডিসেম্বরের '' পবিত্র জেসাসের জন্ম উৎসব পালন এবং নতুন বছর ২০১৬র বর্ষ বরণ চলেছিল। সিলিয়ার ফ্যামিলির সাথে শ্রী ও মেতেছিল  সেই বর্ষ বরণের মুখরিত  আনন্দ যজ্ঞে। বাড়ির সামনে বড়ো ঝাঁকড়া মাথা ম্যাপেল গাছটার নীল সবুজ জোনাক জ্বলা বাহারি আলোতে একটা পাতা ও দেখা যায় না। চার্চগুলোর গায়ে হলুদ আলোর মালা ,রাস্তা ঘাট ,মাঠ প্রান্তর স্মৃতি সৌধ থেকে সাধারণ বাড়ি ঘর কৃত্রিম আলোকের ঝর্ণা ধারায় স্নাত হয়ে স্বর্ণালংকারে সেজেছে। সিনেমা হল ,অপেরা হাউজগুলো জমজমাট। বাতাসে ভেসে বেড়ায় সুগন্ধি পুডিং ,চকলেট ,কুকিজ , কেকের গন্ধ। সন্ধ্যের আকাশ জুড়ে আতস বাজির বাহার ,হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে এক অপরূপ ঝলমলে পরিবেশ। পার্কে হোটেল বা মোটেলেও  তিল ধারণের জায়গা নেই। রেস্তোরাঁগুলো তে নানারকম খাদ্য সম্ভারের সাথে ভীড় উপচে পড়ছে। আনন্দের উৎসবে শহর জুড়ে আহার বিহার ও পানীয়ের বিপুল আয়োজন। সর্বত্র আনন্দ ধারা বইছে।  
 
বিকেলের চায়ের কাপ হাতে শ্রী কাঁচের জানলার বক্সে বসে আকাশ আর রাস্তা দেখার ছলে বাড়ি ফেরার স্বপ্ন দেখছিল জাগরণেই।ওর চরৈবেতি মন এবার উদাসপথের হাতছানিতে নয়,তবুও নিরন্তর ছুটে চলেছিল আজন্ম পরিচিত কলকাতা শহরের টানে ,ঘরের কোণের নিরালায়।  ডোরবেল বেজে উঠলে ও ছুটে গিয়ে দরজা খুলে অসময়ে অদ্রিজা কে দেখে চমকে ওঠে। অত্যন্ত ব্যস্ততায় ঝড়ের গতিতে মেয়ে  ঘরে ঢুকে গম্ভীর মুখে ড্রয়ার খুলে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র,ল্যাপটপ নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করে। শ্রী তিতিরের হাতে ওর ফেভারিট ব্ল্যাককফির মগ টি ধরিয়ে দিলে হঠাৎ আদেশের ভঙ্গিতে সে বলে,'' তোমরা দেরী কোরোনা। এক্ষুনি ব্যাগ প্যাকিং শুরু করো। প্রতিবারের মত এবারেও ভোররাতে আমাদের বেরোতে হবে। সকাল সাড়ে ছ 'টায় ফ্লাইটের টিকিট কনফার্ম হয়ে গিয়েছে। আমরা পাঁচ-ছয় দিনের জন্য রোম বেড়াতে যাচ্ছি ।'' 
রোমের পথে

ঋষভ অবাক ! শ্ৰীময়ী ও আকাশ থেকে পড়লো !' সে কি তাও আবার সম্ভব হয় নাকি ? আমি কিছুতেই যাবো না। ভীষণ রেগে গিয়েছিল। চেঁচিয়ে বলে , খুব খারাপ,দুষ্টু পাজি মেয়ে, সব ব্যবস্থা করার পর এখন জানানো হচ্ছে? "  

অদ্রিজা মুখে অসম্ভব গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলে ,এখন আর যাব না বলে চেঁচিয়ে কোনও কোনো লাভ নেই। শ্রী রাগ দেখিয়ে হাত পা গুটিয়ে গুমমেরে বসে থাকে। ততক্ষণে পিতা পুত্রী ব্যাগ প্যাকিং শুরু করে দিয়েছে।  পরিস্থিতি একটু সামলে নিয়ে তিতির বলে, রোমে কনফারেন্সে যাওয়ার জন্য কয়েক দিন ধরেই অফিস ল্যাবে কথাবার্তা চলছিল ,আজ সকালেই সব কনফার্ম হয়েছে। ওরা পার্সোনাল এপার্টমেন্ট দিচ্ছে। এই সুযোগে ফ্যামিলি ও যেতে পারবে,অবশ্যই ব্যক্তিগত খরচ। ঐ জন্যই আমার তরফের তিনটে টিকিট বুক করেছি। প্ল্যান প্রোগ্রাম ছাড়া এমন বেড়াতে যাবার  হুজুগে শ্রীময়ীর মাথা গরম হওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্তু ঋষভ ও তার সাথে কপট তর্জন গর্জন শুরু করলে তিতির কিন্তু ওর কাজে নির্বিকার।
 
অগত্যা ব্যাগ গুছোতে বসে শ্রীর মনে পড়ে গত বারে মিলন ট্রিপ থেকে ভেনিসে যখন এসেছিল তখনই তিতিরের ইচ্ছে ছিল রোমে বেড়াতে যাবার। কিন্তু বেশী ছুটি না পাওয়ায়  সে যাত্রায় ওরা রোমের দরজার সামনে থেকে ফিরে এসেছিল। এখন আবার সেই পথেই রোমে যাওয়া। তাছাড়া অতিরিক্ত এতো খরচ ? এক্সট্রা প্লেন ভাড়া ! মধ্যবিত্ত সাংসারিক চিন্তা ধারায় এটাই মন থেকে শ্রীর মেনে নিতে খারাপ লাগছিল। ও ভাবছিল আধুনিক ছেলে মেয়েরা কত স্মার্ট ! ওরা ভূত ভবিষ্যৎ --এসব নিয়ে মোটেই চিন্তিত নয় । ওদের কাছে বর্তমানের মূল্য অপরিসীম। এবং যৌবনের দাবী যে অপ্রতিরোদ্ধ। তাকে কোনোমতেই অস্বীকার করা যায় না। 
  
প্রতিবারের মত এবারেও ভোর রাতের  ট্যাগেল এয়ারপোর্টে পৌঁছে টানটান উত্তেজনায় সময় কাটছিল। যদি ও অন্যান্যবারের মত তুষারপাত বা বৃষ্টি সম্ভাবনা এবারে মোটেই নেই। কিন্তু ভীষণ ঠান্ডায় হাত,পা জড়োসড়ো। বুকের মধ্যে যেন হাতুড়ি পেটানোর আওয়াজ শুনছিল। এয়ার বার্লিনের ডোমেস্টিক এই প্লেন বেশ লম্বা চওড়া নয় ছোট মাপের ভিতরে জায়গা কম। পাসপোর্ট ভিসার আইনগত সব ফর্মালিটি সেরে ঠিক সময়েই প্লেনের উইন্ডো সিট টি দখল করে নিয়ে শ্রী বেল্টেরফাঁস জড়িয়ে খুব শান্ত হয়ে বসে। গত রাতের দুর্ভাবনা দুশ্চিন্তা রাগ ইত্যাদি সব মন থেকে মুছে গিয়েছে। অদ্রিজা একগাল হেসে বলে, কি গো মা ! কেমন সারপ্রাইজ দিলাম ? শ্রীময়ী তখনো হতবাক ! ওর বিশ্বাস হয় না যে ওরা রোমেই বেড়াতে যাচ্ছে। 

🍂
কুয়াশাচ্ছন্ন বার্লিন। আঁধার রাতের গাঢ় কালিমা মাখা শীতের জড়তায় এখনো ঘুমিয়ে আছে। রানওয়ের ওপর দুরন্ত গতিতে প্লেন ছুটে চলে এবারে আকাশের কালচে নীলের আলো আঁধারি  ছুঁয়ে আরো ওপরের দিকে উঠে ঘন মেঘের মাঝে গা ভাসিয়ে দিলো। মিষ্টার ঋষভ পাসের থেকে হেসে বলে,রোম নগরী বেড়ানোর আনন্দে তোমার মার রাগ একবারে উধাও হয়ে গিয়েছে। এত ঠান্ডায় গরম মেজাজ গলে জল। শ্ৰী ও মুখে হাত চাপা দিয়ে হেসে ফেলে। ও  ভাবছিল ''কী অদ্ভুত কাণ্ড! দুর্দান্ত সব ব্যাপার। বলা নেই কওয়া নেই, নেট ঘাটাঘাঁটি নেই,অজস্র চিন্তা ভাবনা কিচ্ছু নেই। 'উঠলো বাই তো কটক যাই 'এর মত  ' উঠলো বাই তো রোম যাই '। সত্যি এমন সারপ্রাইজের তুলনা ভূ ভারতে মেলে কি না সন্দেহ ? 

জীবনের আকাশে অজস্র আলোকিত তারার মাঝে প্রবাসে বার্লিনে কন্যার সাথে সেই আনন্দে কাটানো  মুহূর্তগুলো আকাশের প্রজ্জ্বলিত শুকতারা সম ওর স্মৃতিতে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে। ছায়া ছায়া অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে শ্রীময়ীর ভাবনায় জেগেছিল নতুন সুর। প্লেনের গতির সাথে পাল্লা দিয়ে তন্ময় হয়ে ভাবছিল --  স্কুল ,কলেজের সিলেবাসে পড়া যে সাম্রাজ্যের ঐতিহাসিক গরিমার কাহিনী মুখস্থ করে সেই কোন অতীতে মন উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। এখন সেই রাজ্যের নাগরিক জীবনের পথ পরিক্রমায় চলেছে সে  বিনা আয়োজনে। 

 সারা পৃথিবী একদিন আন্দোলিত হয়েছিল  যে সম্রাটের শৌর্য্য বীর্য্যের পরিচয়ে , যে শহরের বুকে কান পাতলে আজো শোনা যাবে ঢাল তরোয়ালের ঝঙ্কার , যুদ্ধবাজ নির্ভিক সৈনিকের পদভারে ভারী বুটের আওয়াজে কম্পিত হতো ধরাতল।  অস্তমিত সূর্যের আলোয় পাহাড়ি পথের রাঙা ধুলো উড়িয়ে দুরন্ত ঘোড়ার ক্ষুরের আওয়াজে ছুটে চলার পদধ্বনি --টট -লট -টট -ল -ট-টট -লট। সেই রোমের শহরের পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়ে জীর্ণ পাতায় লেখা রয়েছে তারই গল্প । মনেপড়ে ,ইতালীর প্রথম রাজা রমুলাসের রোম ,জুলিয়াস সীজার ,মার্ক এন্টোনিও ,রানী  ক্লিওপেট্রার গল্পের সাথে ট্রয়ের যুদ্ধ।  বিস্তর অতীতের ইতিহাসের স্তূপে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতায় গল্পে ঠাসা বুনুনির অসামান্য সেই রোমনগরীর ইতিহাস ।  

সপ্তপাহাড়ের সমষ্টি নিয়ে খ্রীষ্ট পূর্ব ৭৫৩ সালে রোম ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছিল। এবং ইতালীর প্রথম  রাজা রোমিউলাসের নামে এই শহরের নামকরণ হয়েছিল রোম। কিন্তু ইতালীবাসী ভালোবেসে এ দেশ কে রোমা বলে ডাকে। রোম মানেই বিশাল এক গল্পের পাতা। ২৫০০ বছরের প্রাচীন স্বয়ং সম্পূর্ণ এক ঘটনা বহুল ঐতিহাসিক উপন্যাস।রোমের প্রসঙ্গে কত ছোটবেলা থেকে শোনা সেই বিশেষ প্রচলিত প্রবাদ বাক্য গুলো "রোম শহর একদিনে গড়ে ওঠেনি"( Rome was not built in a day )বা "রোমে যখন তা রোমান দের মত আচরণ কর। "  মনে পড়ছে সেই প্রবাদ বাক্য " রোম নগরী যখন পুড়ছে ,সম্রাট নিরো তখন বীনা বাজাচ্ছিলেন।" শ্রীময়ীর মনে বহুদিন ধরে এক বদ্ধমূল ধারণা ছিল ,এই  প্রবাদ বচন টি আসলে অবিবেচক অপদার্থ শাসক সম্রাটের উদাহরণ হিসাবে ব্যবহৃত হতো। এখনো কোনো অপদার্থ বিলাসী ভোগোন্মত্ত শাসক কে বোঝাতে এই উপমাটির প্রচলন আছে।

এ নগরীর প্রাচীন ঐতিহ্য এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান গুলো আপন আকর্ষণে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ কে এ শহরের পথে প্রান্তরে অদৃশ্য মোহমায়ায় বেঁধে ফেলে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ায়। যেখানে কালেরকণ্ঠে আজো সোচ্চার হয়ে আছে সেই  সাম্রাজ্যের গৌরবোজ্জ্বল প্রাচীন ঐতিহ্য সমৃদ্ধির কাহানি। সভ্যতার ইতিহাস যেন সেকালের এক অলিখিত দলিল।  

  ভোরের আকাশে কে যেন অলক্ষ্যে থেকে পলাশ রাঙা রক্ত রাগে রাঙিয়ে দিয়েছিল। রাতের আঁধারের জঠর ভেদ করে জন্ম নিচ্ছে নতুন এক প্রভাত। আকাশের তীর্থ পথে এক মুখ অনাবিল হাসি নিয়ে আগামীর শিশু সূর্য ধীরে ধীরে  জেগে উঠলো। সেখানে  ভৈরবী রাগের অপূর্ব প্রভাত সংগীতের  ধুন বাজে। ধ্যানমগ্না বসুন্ধরা কে ধীরে ধীরে জাগিয়ে তোলার অনন্ত প্রয়াসে চলে রঙের মেলা। গত রাতের সাথে দিনের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে আশা ভরসায় ভরা সোনালী আলোর সকাল এলো। 
ইতিহাসের শহর রোম। প্লাজার সামনে।

ভোরের বেলার প্লেন যাত্রায় আকাশপথে  পাড়ি দেবার সময় নিস্বর্গ নীলাম্বরীর কোলে সূর্যোদয়ের এমন অবর্ণনীয় সৌন্দর্য, প্রতিবার শ্রী কে সমান মুগ্ধ করে। ঢেউ খেলানো তুষারাবৃত আল্পস পর্বতের চূড়া গুলোর ওপর ,প্রথম সূর্যের আলো পড়েছে। দূরের থেকে দেখে মনে হয় রাশিকৃত তরল সোনা গড়িয়ে পড়ছে প্রকৃতির শ্বেতশুভ্র আঁচল খানি ঘিরে।  অবর্ণনীয় সে দৃশ্য ,বারেবারে দেখে ও এ দেখার স্বাদ শ্রীময়ীর জন্ম জন্মান্তরে ও মিটবে না। পাশে ঋষভ খুব মৃদুলয়ে গুনগুনিয়ে গেয়ে ওঠে ''মধুর তোমার শেষ যে না পাই'-- ---শ্রী বলে এই তো প্রহরের শুরু হলো। হলুদ আলোয় আকাশ মাতিয়ে নতুন এক সোনালী দিনের মাত্র শুরু!  তুমি বেলা শেষের গান গাইছো ? ঋষভ খানিক হেসে বলে ঐ দূরের বর্ণময় আকাশ দেখো। বড়ো মধুময়! আমায় এক স্বপ্নের জগতে নিয়ে চলেছে।সেখানে শুরু শেষের গল্প নেই। প্লেন এবার রোমের আকাশের সীমানা পথে বিরাজমান। আর বেশী দেরী নেই  লিওনার্দো এয়ারপোর্টের রানওয়ের মাটি স্পর্শ করতে।                                                                          
  শ্রীময়ীর ডায়েরির পাতায় এতদিন ধরে অযত্নে যে গল্পের কাঠামো খসড়া কোনোমতে আঁকা ছিল ,এবারে তাকে তুলে এনে সে কাঠামোর খড়ের ওপর 
 আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে কথা ও লেখনীরূপ মাটির প্রলেপ ,রং তুলি লাগিয়ে মন সচেষ্ট হয়েছে নিখুঁত এক প্রতিমা গড়ে তুলতে।  শ্ৰীময়ী মননিবেশ করেছে তার ভ্রমণ উপন্যাসে ইতিহাসের রোম কে নবরূপে সাজিয়ে তুলতে। সে যে আত্মপ্রকাশের দাবিতে উন্মুখ। বাইরে তখনো বিদ্যুৎ চমকের সাথে অবিরাম ঝরে চলেছে অশান্ত শ্রাবণের ধারা। ওর কলম থামেনা ,নতুন উৎসাহে চলতে থাকে। 
                                                                                                                                                 ক্রমশ

Post a Comment

0 Comments