কমলিকা ভট্টাচার্য
বদলাবো না কিছুই, শুধু ‘গেল গেল’ রব তুলবো। গাড়ি গাড়ি জঞ্জাল এসে এঁদো পুকুর ভরে দক্ষিণ খোলা ব্যালকনিতে হাওয়া খাব। হাতের মডার্ন ঘড়িতে স্টেপ গুনে দেখে এই সুন্দর করে বানানো আবাসনের পার্কে ঘুরতে ঘুরতে ননীতলার মাঠে বর্ষায় কাদা মেখে ফুটবল খেলার কথা মনে করে হায় হায় করব, কিন্তু আবাসনের বাইরে আবর্জনার স্তুপ নাক চাপা দিয়ে পেরিয়ে যাব। বাজার করতে যাওয়ার আগে বাড়ি থেকে ব্যাগটি নিয়ে যেতে ভুলে যাব আর প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে বাজার আনতে আনতে নালা বন্ধ হয়ে গেলে রাস্তার জলে হাঁটতে হাঁটতে সরকারকে গালি দেব। বেশ বেশ, দোষ নেই, কারণ কেউই তো ধোয়া তুলসী পাতা নয়।
চায়ের দোকানের সামনে পায়ে পায়ে ঘুরতে থাকা কুকুরটিকে বিস্কুট খাইয়েই জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। জানি না, এই কুকুরগুলো দোকানবালার পোষা কিনা, হতেও পারে সবই বিজনেস ট্যাকটিস। তবে হলেও কোন দোষ নেই। আমরা সবাই তো পোষা, লেজ নাড়ি, উঠি বসি, লাল ঝরে, চেটে চেটে কোথায় যে পৌঁছেছি জাহান্নাম কিনা কে জানে। তবে মাঝে মাঝে ‘গেল গেল’ রব তুলতে ভুলিনা। আরে ভুলবো কি করে? ইতিহাস বলে তো একটা জিনিস আছে। কিছু কিছু স্মরণীয় দিন আছে। পুজো পার্বণ আছে, সেই দিনগুলোই তো গায়ে সেন্ট লাগিয়ে কলার তুলে ভাষণ দেওয়ার দিন। সেই দিনগুলোতে আমরা ডিকশনারি আর উইকিপিডিয়া। একটাই তো দিন কব্জি ডুবিয়ে মাংস ভাত খেয়ে নাকে সর্ষের তেল দিয়ে দিবানিদ্রা দেওয়ার। বাকি দিনগুলো আমরা এত ব্যস্ত যে পাশের ঘরের মানুষটির, থুড়ি, পাশের ঘর একটু বেশি দূর হয়ে গেল, পাশে শোয়া মানুষটিরও খবর নিতে পারিনা আমরা। সবাই জুড়ে আছি সোশ্যাল মিডিয়াতে, মানুষ সোশ্যাল জীব কিনা। তবে এখন আমরা সোশ্যাল নির্জীব। আমরা ঠিক তিন বাঁদরের স্ট্যাচুর মত---- খারাপ দেখেও দেখিনা, খারাপ শুনেও শুনিনা, ভালোমন্দ তো একেবারেই বলিনা। তবে চাবি ঘোরালে হাততালি দিয়ে বাঁদর নাচি,...
🍂
আরও পড়ুন 👇
হঠাৎ হাততালির ঝড় উঠল। সত্যবাবু কথাগুলো এক নিমেষে বলে চলেছিলেন। তারও হঠাৎ ঘোর কাটল। কি যে বলেছেন তা তিনি নিজেও জানেন না, কেউ যেন তার উপর ভর করেছিল।
এবার সত্যবাবুর সব মনে পড়ে গেল, আগের দিনের রাতের কথা। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে সোসাইটিতে তার ভাষণ দেওয়ার ছিল। সত্যবাবু এর আগে কোনদিন কোন জায়গায় ভাষণ দেননি। আর দিয়ে থাকলেও তা খালি স্ত্রী আর তার অধীনস্থ কর্মচারীদের সামনে। যেখানে ভাষণ দেওয়াটা বেশ সহজ এবং চলেও। রাতে তাই তিনি সবাই ঘুমিয়ে পড়তে ছাদে গিয়ে প্র্যাকটিস করছিলেন কি বলবেন, তবে কোনো শ্রোতা না থাকায় ঠিক জুৎ পাচ্ছিলেন না। হঠাৎ কোথা থেকে একদল ভূত এসে হাজির, তারা বলল তারাই শ্রোতা। তবে সত্যবাবুর মুখে সব অসত্য কথা তাদের একদম ভালো লাগছে না। সত্যবাবু বললেন ভাষণ দিতে গেলে সব মিথ্যে মিথ্যে বলতে হয়, সত্য কথা বলা যায় না। তাই হাজারো খারাপ লাগলেও ‘সত্য’ নামের বদনাম করে অসত্য কথা বলেন। ভূতেদের মধ্যে ছিল ভূতেদের সর্দার, সে বলে উঠলো, "আমি তোর নিষ্ঠায় বড়ই খুশি হয়েছি, তাই তোকে বর দিলাম, কাল যখন তুই বক্তৃতা দিবি তখন তোর মুখ দিয়ে খালি সত্য কথা বেরোবে আর সব লোক সমহিত হয়ে শুনবে, কেউ নড়বেও না, চড়বেও না আর কথা থামলে কারুর কোনো কথা মনে থাকবে না, তোরও না। তারপর ধীরে ধীরে বড় নেতা হয়ে উঠবি, আমি এইভাবে কত নেতা তৈরী করলাম, শুধু ভাষণটাই আসল, পরে সব ভুলে গেলে ক্ষতি কি?"
এতক্ষণে সবাই সত্যবাবুকে ঘিরে ফেলেছে। "অসাধারণ, ভীষণ ভালো," না না প্রশংসায় সবাই পঞ্চমুখ। ভূত সর্দারের বরের কথা মনে করে সত্যবাবু দরদর করে ঘামছেন... ঠিক সেই সময় একজন কেউ সত্যবাবুর হাতে ফোনটা দিয়ে বলল, "সত্যবাবু, মুখ্যমন্ত্রীর PA এর ফোন, তারা তাদের পার্টিতে প্রবক্তা নেতা হিসাবে আপনাকে চায়... কথা বলুন।"
0 Comments