বিশ্ব ছাত্র দিবস (১৫ইঅক্টোবর)
দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে
আজ ১৫ ই অক্টোবর "বিশ্ব ছাত্র দিবস"। আসুন আমরা জেনে নিই এই দিনটি কেন এবং কি জন্য বিখ্যাত, এর তাৎপর্যই বা কি?
বিশ্ব ছাত্র দিবস শুধুমাত্র ভারতে পালিত হয়। অনেকেই জানেন না যে, এটি কীভাবে উদ্ভূত হয়েছিল, জাতিসংঘ নিশ্চিত করেছে যে ১৫ই অক্টোবর বিশ্ব ছাত্র দিবস জাতিসংঘ কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি। শিক্ষা ক্ষেত্রে কালামের অবদানকে স্মরণ করাই এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য ছিল।
বিশ্ব ছাত্র দিবস, প্রতি বছর ১৫ই অক্টোবর তারিখে পালিত হয়, এক অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনার্থে। সেই ব্যক্তিত্বটি হলেন ভারতের মহান মহাকাশ বিজ্ঞানী ও একাদশ রাষ্ট্রপতি (২০০২ - ২০০৭) এ. পি. জে. আবদুল কালাম (১৯৩১ - ২০১৫)
জনগণের রাষ্ট্রপতি, ডক্টর কালামকে জনপ্রিয়ভাবে বলা হত।২০০২থেকে ২০০৭সাল পর্যন্ত ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর অধীনে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকারের সমর্থনে এবং প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জাতীয় পার্টির সমর্থনে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তিনি একজন মহাকাশ বিজ্ঞানী ও শিক্ষক ছিলেন এবং ১৯৯৮সালে পোখরান পারমাণবিক পরীক্ষার সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, যা তাঁকে "ভারতের মিসাইল ম্যান" উপাধি অর্জন করতে সাহায্য করেছিল। তাঁর অধীনে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা কর্মসূচি বেশ কয়েকটি মাইলফলক ছুঁয়েছে।তবে, তিনি চেয়েছিলেন বিশ্ব তাঁকে একজন শিক্ষক হিসাবে মনে রাখুক। ডাঃ কালাম একজন রাষ্ট্রপতি ছিলেন, যাঁর কথা সবাই জানেন। ছাত্র, শিশু এবং শিক্ষকরা তাঁর দিকে তাকাতেন এবং তিনি যোগাযোগ করতে এবং নতুন ধারণা শুনতে পছন্দ করতেন। তাঁর বিখ্যাত উক্তি, "সফল হওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে স্বপ্ন দেখতে হবে" একটি প্রজন্মের ছাত্র এবং শিশুদেরকে তারা যা ভালোবাসে, তা করতে অনুপ্রাণিত করেছে। তাঁর চিন্তাভাবনা এবং উদ্ধৃতিগুলি এখনও ব্যাপকভাবে সমাজে প্রচলিত। কালাম একজন নীতি ও ধারণার মানুষ ছিলেন এবং তিনি তাঁর চাকরির প্রত্যাশাকে অতিক্রম করেছিলেন এবং এই কারণেই তাঁর জন্মবার্ষিকীকে বিশ্ব ছাত্র দিবস হিসাবে চিহ্নিত করা উপযুক্ত বলে মনে করা হয়েছিল।
১৯৩১ সালে তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে জন্ম ও বেড়ে ওঠা, ডক্টর কালাম মহাকাশ প্রকৌশল অধ্যয়ন করেছিলেন। তিনি DRDO, Isro-তে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প পরিচালনা এবং বিজ্ঞান প্রশাসক হিসাবে চার দশক কাটিয়েছেন।
তিনি তাঁর জীবদ্দশায় অসংখ্য পুরস্কার জিতেছেন। তিনি ১৯৮১ সালে পদ্মভূষণ এবং ১৯৯০ সালে পদ্মবিভূষণে ভূষিত হন। গবেষণায় অবদানের জন্য তিনি ভারতরত্ন প্রাপ্ত হন। তিনি একজন লেখকও ছিলেন এবং 'উইংস অফ ফায়ার', 'মাই যাত্রা', 'ইগনিটেড মাইন্ডস' এর মতো অনেক বই লিখেছেন।
ডক্টর কালাম যেটা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন—শিক্ষা দিতে গিয়ে মারা গেছেন। ২০১৫ সালে, তিনি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট, শিলং-এ একটি বক্তৃতা দেওয়ার সময়, তিনি স্ট্রোকের শিকার হন এবং প্রায় সাথে সাথেই মারা যান।
বেশ কয়েকটি ভারতীয় সংবাদ সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্ব ছাত্র দিবস, জাতিসংঘ কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হয়।প্রতি বছর ১৫ইঅক্টোবর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামের জন্মবার্ষিকীতে বিশ্ব ছাত্র দিবস পালিত হয়। আমাদের সমাজে শিক্ষার উন্নয়নে কালামের নিঃস্বার্থ অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে উদযাপিত হয়। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শিক্ষকতার প্রতি এতটাই নিবেদিত ছিলেন যে, তিনি ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে তাঁর মেয়াদ শেষ করার পরের দিনই তাঁর শিক্ষকতা পেশায় ফিরে যান। ডঃ কালাম সবসময় তাঁর ছাত্রদের নিজেদের সেরা সংস্করণ হতে উৎসাহিত করতেন। তিনি বলতেন,"যদি আপনি ব্যর্থ হন তবে কখনোই হাল ছেড়ে দেবেন না কারণ FAIL মানে 'শিক্ষার প্রথম প্রচেষ্টা'। শেষ মানে শেষ নয়, যদিও বাস্তবতার দিক দিয়ে 'প্রচেষ্টা কখনও মরে না।' যদি আপনি উত্তর হিসাবে 'না' পান তবে মনে রাখবেন 'না' মানে 'পরবর্তী সুযোগ', তাই আসুন ইতিবাচক হই,"।
আবদুল কালাম সর্বদা বিশ্বাস করতেন যে, ছাত্ররা ভবিষ্যত এবং প্রগতিশীল মনের অধিকারী, যা আমাদের দেশকে প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্যের নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। আবদুল কালামের ছাত্রদের প্রতি ভালোবাসা উদযাপনের জন্য বিশ্ব ছাত্র দিবসের উদ্ভব ঘটে।
বিশ্ব ছাত্র দিবস ২০২২থিম ছিল, “শিক্ষক দিয়ে শিক্ষার রূপান্তর শুরু”।
বিশ্ব ছাত্র দিবসকে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ইভেন্ট হিসাবে বিবেচনা করা হয়, কারণ এটি ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডঃ এপিজে আব্দুল কালামের জন্মদিনকে চিহ্নিত করে। এই দিনটিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করার অন্যান্য কারণগুলি হল,
এটি শিক্ষার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করে।
এটি শিক্ষার মৌলিক অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার দিন।
এটি ডক্টর এপিজে আব্দুল কালামের উজ্জ্বল কাজকে স্মরণ করে,
কালাম ২৭শে জুলাই, ২০১৫সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন, আইআইএম-শিলং-এ একটি বক্তৃতা দেওয়ার সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর কয়েক বছর পর, তার অবদান এখনও দেশের সেরা বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হিসাবে স্মরণ করা হয়।
শিক্ষক হিসাবে ছাত্রদের সর্বদাই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। স্বভাবতই তিনি তাঁর জীবদ্দশায় দেশের ছাত্রসমাজ, সমগ্র ভারতীয়দের মননে ও হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। একাধিক ভূমিকায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। কখনও তিনি বিজ্ঞানী, কখনও শিক্ষক, আবার তিনিই ভারতের রাষ্ট্রপতিপদে আসীন হয়েছিলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। কর্মদক্ষতায় তিনি পরিচিত হয়েছেন "মিসাইল ম্যান" নামে। কিন্তু আবদুল কালাম নিজেকে শিক্ষক ভাবতেই বেশি পছন্দ করতেন। জাতিসংঘও ২০১০ খ্রিস্টাব্দে ড. এ. পি. জে. আবদুল কালামের ৭৯ তম জন্মদিনে তাঁকে সম্মান জানাতে এবং তারই আদর্শে ছাত্রদের কঠোর পরিশ্রম ও সংকল্পে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে ১৫ অক্টোবর তারিখটিকে বিশ্ব ছাত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১০ খ্রিস্টাব্দের ১৫ অক্টোবরই প্রথম বিশ্ব ছাত্র দিবস পালিত হয়।সেই থেকে প্রতি বৎসর বিশ্ব জুড়ে দিনটি পালিত হয়ে আসছে বিভিন্ন প্রতিপাদ্য বিষয় তথা ভাবনা নিয়ে।
এ বিষয়ে উল্লেখ্য এই যে, প্রতি বৎসর ১৭ নভেম্বর তারিখটিও উদ্যাপন করা হয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী দিবস বা International Students Day হিসাবে জাতিসংঘের ২০০০ খ্রিস্টাব্দের ঘোষণা অনুযায়ী। সেটির উদ্দেশ্য হল, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের প্রতিবাদী চেতনার স্বীকৃতি হিসাবে। কেননা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে নাৎসিরা চেকোশ্লাভাকিয়ায় আগ্রাসন চালিয়ে পুরো দেশ দখল করে নেয়। এতে স্বাধীন চেকোশ্লাভাকিয়া প্রজাতন্ত্রের দাবিতে বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয় দেশের সর্বত্র। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের একত্র করা হয়। এদের একজন নেতা বাড়ি ফেরার পথে জার্মান সেনাদের হাতে নিহত হলে তাদের আন্দোলন আরো তীব্র আকার ধারণ করে। তাদের প্রতিহত করতে বন্ধ করা হয় সমস্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বারোশো শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে সংশোধনাগারের পাঠানো হয় এবং বিনা বিচারে ন’জন ছাত্র ও শিক্ষককে ফাঁসি দেওয়া হয়। এই নির্মমতায় বিশ্ববাসী উদ্বেলিত হয়।
বিশ্বের ছাত্রদের কাছে দিবস দুটি বহু সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্যের শিক্ষার্থীদের পালনীয় উৎসব হলেও তাৎপর্য পৃথক। ১৫ অক্টোবরের উদ্দেশ্য, ছাত্রসমাজের অনুপ্রেরণাদাত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন আর ১৭ই নভেম্বরের উদ্দেশ্য হল বিশ্বের শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী চেতনার স্বীকৃতির পক্ষে থাকার জন্য।
🍂
0 Comments