সঞ্জীব ভট্টাচার্য ও শিশির পাল-এর অণুগল্প
উপহার
সঞ্জীব ভট্টাচার্য
সুধন্য হাঁ করে তাকিয়ে আছে। তার মনে হল এই সৌন্দর্যের জন্যেই বোধহয় এখানে পোস্টিং,আর এই জন্যেই মধ্য-ত্রিশেও বোধহয় সে অবিবাহিত। চারপাশের মানুষের ভাবনা তো শুধু বড় চাকরি দিয়ে এ বয়সে মনের মত মেয়ে পাওয়া অসম্ভব।
অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য সুধন্য উঠে পড়ে লেগে গেল। সে বুঝতে পারলো ,রাস্তাঘাটে মেয়েটিকে বাবা ছাড়া একা পাওয়া কঠিন। ষাটের আশেপাশে হলেও দারুণ সৌম্য দর্শন। কিন্তু আসল লক্ষ্যই তো তেইশ চব্বিশের কোঠায়। বাবা বা মেয়ে রাজি হবে তো?
কিছুদিন যাওয়ার পর সুধন্য মেয়েটির মুখে প্রশ্রয়ের হাসি দেখলো।একা পেয়ে একদিন সে বলেই বসলো,'বাসায় যেতে পারি?'
-'কেন?'
-'পরিচয়'
মেয়েটি ঘাড় কাত করে ঘাতক হাসি হেসে চলে গেল।
সেজেগুজে হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে সুধন্য পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই বয়স্ক মানুষটি এগিয়ে এলেন। সে কিছু বলার আগেই তাকে হতাশা-আশার মাঝে ফেলে দিয়ে ডাক দিলেন ,'বন্যা তাড়াতাড়ি এসো।আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকীর প্রথম উপহার।'
পারফিউম
শিশির পাল
অফিসের দেরি হয়ে যাওয়ায় হনহন করে হাঁটছিল ময়ূখ। হঠাৎ একটা বাচ্চা মেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে ওর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেল ময়ূখ। মেয়েটাকে তুলে হাঁটুমুড়ে বসে জড়িয়ে ধরে বলল, "আয়াম সো সরি। আর ইউ ওকে মাই বেবি?" বলেই চোখ বন্ধ করল। কিন্তু এ কী? এই বাচ্চার গা থেকে এমন মন মাতানো খুব চেনা একটা পারফিউমের সুগন্ধ আসছে কেন? এই গন্ধটা ময়ূখ ভুলে থাকতে চায়। পাকাপাকি ভাবে ছেড়ে যাওয়ার সময়, ময়ূখকে ঠিক একই রকম পারফিউম দিয়েছিল মেহুলি। বলেছিল,"এই জীবনে তো আর একসঙ্গে থাকা হলো না! এটা রেখো তোমার কাছে!"
চোখ খুলে মেয়েটাকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল ময়ূখ। কিন্তু আর হাঁটতে পারল না। পাথরের মতো জড় হয়ে গেল। ময়ূখ অবাক। বাচ্চাটিকে নেওয়ার জন্য, ওর মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে খুব চেনা এক ভদ্রমহিলা। মেহুলি।
🍂
0 Comments