বার্লিনের ডায়েরি
(পর্ব ৫৮ )
চিত্রা ভট্টাচার্য্য
(ভ্যাটিকান মিউজিয়ামের পরবর্তী অংশ)
রাফায়েল ---
স্ট্যানজে অফ রাফায়েলের গ্যালারিতে ও ভীড় জমেছে অজস্র দর্শকের । জন জোয়ারের ঢেউয়ে ভীড়ের স্রোতে ভেসে ওরা ক্রমশঃএগিয়ে চলেছিল। এতো ভীড় তবু ও ধাক্কা ধাক্কি বা লাইনে দাঁড়িয়ে অসভ্যতা বা লাইন ভেঙে ঢোকার চেষ্টা হৈচৈ চেঁচামেচি এখানে কিছুই নেই। ওরা এককথায় ভীষণ সভ্য নিয়ম নিষ্ঠজাতি। মানুষ যে এমন ধৈর্য্যশীল শান্তিপ্রিয় সুসভ্য শৃঙ্খলা পরায়ণ হতে পারে-- না দেখলে শ্রীর বিশ্বাস হতো না। ও দিকভ্রান্ত না হয়ে আশেপাশে যত দেওয়াল গাত্রে মাথার ওপর সিলিঙে এমন কি মোজাইকের মেঝেতে ও যা কিছু শিল্প সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে দুই চোখ ভরে তাই গিলতে গিলতে চলেছিল। ঋষভ শ্রীর দিকে তাকিয়ে বলে আমিতো তো শিল্পের সমঝদার নই ; কিছুই বুঝি না কিন্তু এখানের যে কোনো শিল্প সৃষ্টি আমাকে প্রবল ভাবে চুম্বকের মত আকর্ষণ করছে।মনে হচ্ছে ,এই ভাস্কর্য্য --ঐ স্থাপত্য রঙ তুলির অপরূপ ছন্দ বিন্যাস মনে কৌতূহলের সাথে অপার বিস্ময় জাগায়। শ্রী ও ঋষভ কে সমর্থন করে বলে ঠিক তাই এমন শিল্প গাঁথার সাথে জড়িয়ে জগতের আর কোথাও কিছু আছে বলে মনে হয় না। সেইকোন অতীতের যুগে ঐ সাদা ক্যানভাসের ওপর পেন্সিল স্কেচ রঙ তুলির টানের সাথে শিল্পীর অনুভূতির মিলনে,অন্তর্দৃষ্টিতে যে ছবির জন্ম হয়েছে তাই ই অনিবার্য্য ভাবে আজো গভীর শ্রদ্ধায় হৃদয় স্পর্শ করে চলেছে। তিতির বলে অদ্ভুত এক মোহস্পর্শে যা দেখছি চোখের পাতায় স্থির হয়ে তাই বসে থাকছে। তাকে তো কিছুতেই দৃষ্টির আড়ালে রাখা যায় না।
''বার্লিনের ডায়েরির '' ধারাবাহিক ভ্রমণ উপন্যাস টি শ্রীময়ী এই রাত গভীরে সাজিয়ে লিখতে বসে পুরোনো ডায়েরির পাতা উল্টে এক ঝলক দেখে নিয়ে আবার লেখায় মন দেয়। ওর মনে পড়ে অসংখ্য বেড়ানোর খুঁটিনাটি নিয়ে কত গল্প।
শিল্পী রাফায়েলের নিখুঁত শিল্পকার্য্য অঙ্কিত চিত্র প্রদর্শনের জন্য প্রথমেই মহামান্য পোপের বাসস্থান অপোস্টলিক প্যালেসের দরজায় ওরা এসে দাঁড়িয়েছিল। চারটিঘরের গ্যালারি ভরা বিশাল শিল্প সম্ভার। এখানের গাইড সুইস ভদ্রলোকটি বললেন ঐতিহাসিকের মতে এই জায়গাটি এক সময় দ্বিতীয় জুলিয়াস দেলা রোভেরের সময় থেকে পোপের বাসস্থান ছিল। কিন্তু ১৫০৮খ্রীস্টাব্দ থেকে ১৫২৪ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত রাফায়েল ও তাঁর ছাত্রদের আঁকা ছবিতে এই ঘর গুলো নব চেতনার মোড়োকে অঙ্কন শিল্প সৃষ্টির প্রবাহে সমৃদ্ধ হয়ে আছে। তাঁর অঙ্কিত দেওয়াল চিত্র রাশি সমাজের প্রবহমান ধারার বিভিন্ন দিকে ইতিহাস ,রাজনীতি দর্শন অধ্যাত্মিক চেতনায় সংস্কৃতিতে সে কালের প্রগতির উজ্জ্বল স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। এই প্রতিটা কামরার অভ্যন্তরে ''রুম অফ সেগনাচ্যুরা '' রাফায়েলের সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত কয়েকটি ফ্রেস্কোর পটভূমি। ভ্যাটিকান সিটির এই চারদেওয়ালের ঘেরাটোপের মধ্যে জন্ম এই ফ্রেসকো গুলোই অমর শিল্পী রাফায়েলের প্রথম সৃষ্টি এবং রেনেসাঁসের শিল্প সত্তার বিকাশের উন্নত শিখরে এগিয়ে যাওয়ার সিঁড়ি। ঐতিহাসিকের মতে --ষোড়শ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে এই ঘরেই পোপ সর্বোচ্চ বিচারের আলোচনা সভা বসাতেন। ১৫০৮থেকে ১৫১১সালে মাত্র তিন বছরে আঁকা ছবি গুলোর মধ্য দিয়ে মানুষের মনের truth justice beauty --সত্য ন্যায় ও সুন্দরেরস্পষ্ট প্রকাশ পাওয়া যায়।
ভ্যাটিকান মিউজিয়াম
গাইডসাহেব প্রতিটা ছবির ব্যাখ্যা করে বোঝালেন --শিল্পী রাফায়েলের অনবদ্য শৈল্পিক চেতনায় কোথাও দেখাযায় শিল্পের পূজারী এঁকেছেন দৈব নির্দেশিত সত্য কে। কোথা ও বা দার্শনিক সত্যের বিকাশ। নিবিড় ভাবে মন দিয়ে ছবিটি দেখে আদ্রিজা বলে এখানে ছবিতে নাম লেখা আছে " ডিস্প্যুটেশন্স অফ দ্য হোলি সাক্রামেন্ট "। .ছবিতে স্বর্গ ও মর্ত্য লোকের বিস্তার দেখানো হয়েছে ,স্বর্গ শোভায় আলোর প্রভা মন্ডলের মাঝে ও যীশুকে ঘিরে আছেন মাতা মেরী সঙ্গে আছেন আদম জেকব মোমেস এবং বাইবেলীয় আরো অনেক সাধুসন্ত। ছবিতে স্বর্গ ও মর্ত্যলোকের বিস্তার দেখানো হয়েছে প্রকৃতি দত্ত দিব্য দীপ্ত আলোকরশ্মির প্রভামন্ডলের ওপরে স্বর্গীয় মহীমাময় মায়ায় স্বয়ং ঈশ্বর বিরাজিত। নীচে মর্ত্য রাজ্যের পৃথিবীর হিতে নিবেদিত প্রাণ ভক্তবৃন্দেরা অধ্যাত্ম আলোচনায় মগ্ন হয়ে আছেন। এই সভায় আলোকিত সভ্য বৃন্দের মাঝে নক্ষত্রের মত উজ্জ্বল দেখা গেল পোপ ,দান্তে এবং রেনেসাঁস স্থপতি ব্রাম্যান্টের নিখুঁত প্রতিকৃতি। তারই সাথে সভায় আছেন চার্চের অনান্য সদস্যবৃন্দ গণ। এর প্রাথমিক ভাবনা থেকেই জন্ম হয়েছিল মাইকেলেঞ্জেলোর আঁকা সেন্ট পিটার্স বাসিলিকার নক্সা। ছবির নামের মধ্য দিয়েই ডিস্প্যুটেশন মানে মতান্তর বা তর্কের ঝড়ে আন্দোলিত আলোচনা সভার পরিচয় পাওয়া গেল। ''স্ট্যাঞ্জা ডেল্লা সেগনাত্যুরা ''কক্ষ টি তে এরপরের ছবি "স্কুল-অফ-এথেন্স "কে বিশেষজ্ঞ দের মতে রাফায়েলের শ্রেষ্ঠ ছবি বলা হয় যে চিত্র টি তিনি মাত্র ২৭ বছর বয়সে এঁকেছিলেন। এই ছবির মূলমন্ত্র-ছিল - কার্য্য কারণের জ্ঞান। অদ্রিজার মনে পড়ে ও স্কুল লাইফে ছবি আঁকা শিখেছিল অনেকদিন। এই ছবির জগতের প্রতি নিবিড় এক ভালো লাগায় মুগ্ধ হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে। খুব নীচু স্বরে শ্রী কে বলে দেখ ছবির সামনে আঁকা চওড়া উঠোন, কয়েক ধাপ সিঁড়ি, পিছনে কারুকার্য্য ময় দালান সব কেমন স্পষ্ট -নিটোল বাস্তব মনে হচ্ছে। ১৫০৯ থেকে ১৫১১ সালের মধ্যে আঁকা রেনেসাঁ কালীন ইতালীর অন্যতম বিখ্যাত চিত্র কর্ম টি দৈর্ঘ্য ৭৭০সেন্টিমিটার। এই দেওয়ালে অঙ্কিত ফ্রেস্কোটির চিত্রে বিশাল এক গম্বুজ বিশিষ্ট একটি হল ঘর দেখতে পাওয়া যায়। ফিগারগুলোকে মাঝ বরাবর সরল ভাবে সাজানো ,প্রাচীন কালের অর্থাৎ সে যুগের দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক ,কবি সবাই একসাথে এখানে সমবেত হয়েছেন। দার্শনিক মন্ডলী কেউ বই পড়ায় ,কেউ আলোচনায় ,কেউ চিন্তিত মুখে ,কেউ তর্কে, কেউ পায়চারিতে ব্যস্ত। ঋষভ বলে দেখ এই ছবিটিতে এথেন্সের সভায় তৎকালীন স্মরণীয় জ্ঞানী গুণী মনীষী বিদগদ্ধ পন্ডিত ব্যক্তিদের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
তাঁরা বিভিন্ন ভঙ্গিমায় আসীন রয়েছেন। একে একে প্লেটো ,এরিষ্টটল সক্রেটিস, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ,মাইকেলেঞ্জেলো ,পাইথগোরাস ,ইউক্লিড আলেকজান্ডার হিরোডোটাস টলেমী ডায়োজেনিস প্রভৃতি নমস্য অসাধারণ প্রতিভাধর ব্যক্তির সাথে একমাত্র নারী সদস্যা বিদুষী গণিতজ্ঞ হাইপেশিয়া সহ "রাফায়েল --" যিনি পরিচিত ছিলেন মরণ শীল ঈশ্বর নামে। সভ্যতার সৃষ্টির ধারক যাঁদের কাঁধের ওপর নির্ভর করে আজ বর্তমান সমাজ সভ্যতা। সেই অতীত থেকে যুগযুগ ধরে তিলেতিলে এতো আধুনিক হয়ে উঠেছে। সমস্ত পৃথিবীর কাছে এই একবিংশ শতকে ও যাঁরা প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে আছেন --স্রষ্টার মনের মাধুরীতে তাঁদের অবিস্মরণীয় অভিব্যক্তি প্রকাশের মুহূর্তগুলো এখানে অপরূপ ব্যঞ্জনায় চিত্রিত হয়ে আছে । ছবিটির সামনে বিস্ফারিত নেত্রে শ্রী দাঁড়িয়েছিল। এক আর্ট বিশেষজ্ঞ ফ্লোরেন্স দম্পতি ইংলিশে বোঝাচ্ছিলেন ছবিটিতে লক্ষ্য করে দেখ ;-মেঘ মুক্ত নীলাকাশের পটভূমিকা পিছনে রেখে সাদা ক্যানভাসের ওপর বরেণ্য শিল্পী এই চিত্র টি এঁকে ছিলেন। নিজেও বিরাজমান আছেন এথেন্সের সেই জ্ঞানের সভার অসংখ্য উজ্জ্বল প্রদীপের শিখার মাঝে। জমকালো মনুমেন্টাল স্থাপত্যের মধ্যে এই চিত্রটি ষোড়শ শতকের একটি অসামান্য গুরুত্ব পূর্ণ পরিকল্পনা। এটি একটি মঞ্চ যেখানে শিল্পী প্রাচীন কালের বিখ্যাত পন্ডিত দার্শনিক শিল্পী কবি ও বৈজ্ঞানিক গণিতজ্ঞের সমাবেশ দেখিয়েছেন। চিত্রের মাঝে প্রবীণ প্লেটো কে জ্ঞানী হিসেবে দেখানো হয়েছে তাঁর পরিধেয় বস্ত্র টি আগুন রঙের যার অর্থ বাতাস ও আগুন দুইই ভরহীন বস্তু। তাঁর হাতের পুস্তক টি তে ও যেখানে সৃষ্টি ও প্রকৃতি বিষয়ক তাঁর বিখ্যাত সংলাপগুলো লিপিবদ্ধ করা রয়েছে। তিনি ওপরের দিকে আঙ্গুল তুলে যেন বোঝাতে চাইছেন দৈব শক্তির অপার মহিমা এই বিশ্বে প্রাকৃতিক দর্শনের ঐশ্বরিক ও জ্যামিতিক সমন্বয় রয়েছে।
শ্রীর বুঝতে অসুবিধা হয় না শ্রবণেন্দ্রিয় কে সচল রেখে একদৃষ্টিতে ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে। তিতিরকে মৃদুস্বরে বলে প্লেটোর পাশে ভাব বাদী চিন্তার দার্শনিক পন্ডিতদের সমাবেশ হয়ে আছে। অন্যদিকে তাঁর শিষ্য বস্তুবাদী দার্শনিক প্রাণবন্ত এরিস্টটল হাতে তার এথিক্স নামে বইটি ,তাঁর জল ও মাটির রঙের পোশাক যা পৃথিবীর ভরের বিপুল অংশ।এখানে বস্তুবাদী এরিস্টটলের মত-- ' আগে বাস্তবের কার্য্যকারণ যুক্তি দিয়ে জগৎ কে বুঝতে হবে। তার চতুর্দিকে ঘিরে আছে বিভিন্ন মতের দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। চিত্রটির একেবারে সামনের দিকে গ্রীক দার্শনিক হেরাক্লিটকে একটি বাক্সের ওপর কনুই রেখে গভীর চিন্তায় মগ্ন দেখা যাচ্ছে। সিঁড়ির ওপরে আলুথালু বেশে গ্রীক দার্শনিক ডায়োজিনিস দ্য সিনোপ কে দেখা যাচ্ছে কেমন চিন্তামগ্ন। ইউক্লিড ঝুঁকে মেঝের ওপর রাখা জ্যামিতিক সংজ্ঞার কিছু নির্দেশ ছাত্রদের নিকট বিশ্লেষণে করে চলেছেন। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির সাথে পাশে সে যুগের আর এক মহান চিত্র শিল্পী মাইকেলেঞ্জেলো কেও এঁকেছেন রাফায়েল।
এদের পিছন দিকে হলুদ পোশাকে ভূগোল বিদ টলেমি এবং শ্বেত বস্ত্রে পারস্যের প্রাচীন ধর্ম সংস্কারক জরাথুষ্ট্র কে সামনা সামনি তর্ক যুদ্ধে দন্ডায়মান দেখা যাচ্ছে। সুন্দর মুখের তরুণ রাফায়েলের চোখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি। টলেমী তাকিয়ে আছে রাফায়েলের দিকে। প্লেটোর পাশের সারিতে বিখ্যাত দার্শনিক গভীর চিন্তাগ্রস্থ সক্রেটিসের বিপরীত দিকে বীর আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট। তাঁদের পাশে দার্শনিক জেনোফেন এবং গ্রীক রাজনীতিক ও বাগ্মী এসচিনেসকে দেখা যাচ্ছে দুইপাশে আলোর দেবতা এপেলো এবং জ্ঞানের দেবী এথিনার অপরূপ চিত্র চিত্রিত রয়েছে।
🍂
রাফায়েলের বহুমুখী প্রতিভা শিল্প সাধনার উৎকর্ষতা ও শ্রেষ্ঠত্বের চরম প্রকাশ এই চিত্র শিল্প কর্ম টি। চার দেওয়াল জুড়ে বরেণ্য শিল্পী দেখিয়েছেন জীবনের মূল কেন্দ্রে আছে দৈব সত্য সুন্দর ন্যায় নিষ্ঠার প্রতিষ্ঠা। এখানে তিনি একজন ম্যুরালিস্ট ,সমস্ত মন প্রাণ উৎসর্গ করে শ্রেষ্ঠত্ব ও পারদর্শীতার প্রমান রেখে দিয়েছেন তাঁর অমর সৃষ্টিতে পোশাকের ভাঁজ এবং মুখের অভিব্যক্তিতে। রঙ তুলির অসামান্য ছোঁয়ায় ছবিটি ভারী চিত্তাকর্ষক লেগেছিল। সবচেয়ে বেশী দর্শকের সমাবেশ ভীড় দেখা গেল রেনেসাঁ যুগের এই অনবদ্য শিল্পীর চেতনায় রঙে রসে উৎসারিত সৃষ্টির রাফায়েলের গ্যালারির এই অনুপম দৃশ্য টি কে কেন্দ্র করে। অন্য আরেকটি ঘরে তৎকালীন ধর্ম মহাগুরু পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াসের ব্যবহৃত ঘর গুলোর প্রতিটি দেওয়াল জুড়ে রাফায়েলরই একের পর এক অনবদ্য চিত্রকর্ম-- এ যেন অনন্ত মহাসাগরের গভীর অতল থেকে রাশিরাশি ঢেউয়ে ভেসে আসা রত্ন রাজি এই বিশাল বিশ্ব কে যুগযুগ ধরে মণি মুক্তোর উপহারের মালায় সাজিয়ে সমৃদ্ধ করে তুলেছে।
শ্রীর ডায়েরি মনে করিয়ে দেয় আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘরের কথা,রেনেসাঁ যুগের এই বরেণ্য শিল্পীর আঁকা শেষের দিকের ছবিগুলো ট্রান্স ফিগারেশন ,ম্যাডোনা অফ ফলিনো এবং ক্রাউনিং ভার্জিন। বাইবেলে বর্ণিত কাহিনী তে প্রভু যীশু তাঁর তিন শিষ্য পিটার জেমস ও জন কে উঁচু পর্বতের উপরে নিয়ে গিয়ে দৈহিক ভাবে রূপান্তরিত ও উজ্জ্বল শ্বেত বস্ত্রে যীশু মোজেস ও এলিজা কে সঙ্গে নিয়ে শিষ্য গণের সামনে এক নতুন বেশে নতুন রূপে আত্ম প্রকাশ করেছেন । তার ই কল্পিত চিত্র টি এখানে আঁকা হয়েছে।
আর একটি অনবদ্য চিত্র ম্যাডোনা অফ ফলিনোতে মেঘের কোল জুড়ে আলো করে বসে থাকা যীশু কে কোলে নিয়ে মেরী মাতা কে দেবদূতেরা চারিদিক থেকে ঘিরে আছে। অপর আর একটি চিত্রে সেন্ট সিগিসমন্ড লাল রঙের বস্ত্র পরিহিত হয়ে আছে। এর পাশে সেন্ট জেরেমো পালিত সিংহর সাথে এবং পশুর চর্ম গাত্রে দাঁড়িয়ে আছে সেন্টজন ব্যাপটিস্ট মধ্যস্থলে দেবদূত শিশুটি বিরাজমান। শ্রদ্ধাবনতো চিত্তে মাথা নীচু করে এই মহান শিল্পীর কর্ম যজ্ঞের সামনে ওরা দাঁড়িয়ে ছিল। অদ্রিজা বলে রেনেসাঁ যুগের এই শিল্পী ছিলেন সে যুগের অন্যতম সেরা স্থপতি খুবই শক্তিশালী নক্সাবিদ এবং একজন পৃথিবীর প্রথম প্রত্নতত্ত্ববিদ। ইতিহাসে রাফায়েল কে বলা হয় এক বিশ্বখ্যাত নন্দন শিল্পী তাঁর চিত্রকর্মের অতুলনীয় কম্পোজিশন এককথায় অনবদ্য। দেওয়ালে অঙ্কিত চিত্র। রাফায়েল অঙ্কিত সমস্ত দেওয়াল আর্ট গ্যালারিগুলো নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করে ঋষভ স্বগতোক্তি করে বলে এই অজেয় নিপুন শিল্পী কী অভাবনীয় সহজিয়া ছন্দে ধর্মীয় বিষয় কে তুলির আঁচড়ের টানে এঁকে অসাধরণ এক কাব্যময় রূপে প্রকাশ করেছিলেন। ফ্রেস্কো এই অনবদ্য -- দেওয়াল চিত্রগুলো সর্বত্র তাঁর পরিচয় বহন করে চলেছে। একথা অনায়াসে বলা যায় যে এই মহান শিল্পীর যদি ১৫২০ সালে মাত্র ৩৭বছর বয়সে অকাল প্রয়াণ না হতো তা হলে এই মহাবিশ্ব আজ তাঁর কাছে আরো অজস্র অমর অঙ্কন শিল্প সৃষ্টিতে পরিপূর্ণ হয়ে এক নতুন পথের দিশারী রূপে গৌরবান্বিত হয়ে থাকতো । রেনেসাঁ যুগের এই প্রখ্যাত ক্ষণজন্মা শিল্পী তাঁর অসামান্য সৃষ্টি দিয়ে বিশ্ব ইতিহাসের আকাশে অমরত্বের শ্রেষ্ঠ আসনে চির উজ্জ্বল নক্ষত্র সম বিরাজমান থাকবেন।
0 Comments