জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /কমলিকা ভট্টাচার্য

গুচ্ছ কবিতা
কমলিকা ভট্টাচার্য 



জীবনের দোল পূর্ণিমা

তোমার রঙে রেঙেছি আমি
আমার রঙে তুমি
প্রেমের রঙে রেঙেছে হৃদয় 
জীবন তাই পূর্ণ চন্দ্র এই দোল পূর্ণিমায়।


সৃষ্টিসুখে মেতে ...


তুমি কবিতা খুঁজে ফিরলে বসন্তের বুকে,
আমি তখন রক্তজবার শিহরণে ডুবে,
নব জীবনের ব্যথায় আকুল
কিন্তু সেই যন্ত্রণায় ছিল সৃজনের সুখ,
ফুল ফোটানোর গোপন অভ্যেস!

আমি আমের মুকুলে মাতাল করছিলাম বাতাস,
পলাশের আগুনে আঁকছিলাম রঙ,
নদীর কানে কানে বলছিলাম
"তুমি তৈরি হও, গ্রীষ্ম আসছে,
তোমার বুকের জলে স্বস্তি দাও পথিককে!"

তুমি আমার সন্ধান করেছো কবিতার পাতায়,
আমি ছিলাম মঞ্চের নেপথ্যে,
ঋতুর নাটকের পোশাক পরাচ্ছিলাম প্রকৃতিকে,
তবু কি বুঝতে পারোনি?
ও আমার প্রেমিক!
আমি তোমার হৃদয়ের মাঝখানে
অদৃশ্য অথচ চিরচেনা!

কবি!তুমি আমাকে পেতে চেয়েছো অধীর হয়ে,
কিন্তু আমি তো কেবল এক ডাকের দূরত্বে!
আমি চাই, তুমি থেকো আমার সৃষ্টির মাঝে,
আমার ফাগুনের আগুন, বর্ষার সুর
তোমার কবিতায় বেঁচে থাকুক আমার সমস্ত সৃষ্টিসুখ !

🍂


পদ্ম পাতায় জল

প্রেমের বিদ্ধ তীরে দিনের জাগে বৈরাগ্য,
মন লাগে না, অচেনা পথ খুঁজে ফেরে আরাধ্য।

শূন্য বাঁশে প্রাণের বায়ু বাজে হয়ে বংশী,
শান্ত ঘরে ঘড়ির টিকটিক নিঃসঙ্গের পড়শী।

আলতো রোদে লুকিয়ে থাকে কোন আদরের সুখ,
ভান করা হাসির আড়ালে জমে নীরব অসুখ।

সংসারের সরোবরে বেমানান পদ্ম ফোটে যখন,
বৃন্দাবনের প্রেমিক মন পাতায় জলের ফোঁটা তখন।



ডিভোর্স

প্রতিক্ষণ সুখ স্মৃতি হয়ে ছবি হয় অম্লান
তোমার সান্নিধ্যের সরোবরে আমার অবগাহন।

মেঠো পথে পায়ে পায়ে তোমায় অনুসরণ
ঘামে ভেজা মাটিতে সোঁদা মনের মরণ।

সোহাগার সুখে সোনা সোহাগের প্রহর
মন নিয়ে কি যে খেলা গোকুলের চোর।

আলোছায়ার খেলা বুঝি মেঘের ছলনা
হৃদয়ে জমা ব্যথা হয় নীরব যাতনা।

নিঃশব্দে ভেঙে যায় একতারা সুর
সম্পর্কের উষ্ণতা লুকানো জ্যোৎস্নার নূর।

কথার গহনে আজ শূন্যতার বাসা
বুঝি ভুল ঠিকানায় লেখা ছিল ভালোবাসা।

মিল অমিলের ফাঁদে মেলে না কুন্ডলী
ডিভোর্স করে প্রেম ছেড়েছে হৃদয়ের গলি।



ফেরত চিঠি


আমি তো বলিনি যেতে
নিজেই গেছ চলে,
দীর্ঘশ্বাসে কি ওড়া যায় ডানা মেলে?

হয়তো দিতে পারিনি কিছু,
যা চেয়ে ছিলে,
তবে পারবেনা বলতে,
ভালোবেসেছি অবহেলে?

আজ ঝোলাটা বড্ড ভারী,
ঢেলে ফেলে দেখি,
কয়েকটা চিঠি পোস্টম্যান দিয়েছে ফিরিয়ে,
বলেছে—
আকাশে আদর খোঁজো,
নিজে গিয়ে!

আর কিছু নীল সাগরের গভীর থেকে তুলে আনা
শঙ্খ, ঝিনুক,
কয়েকটা মুক্তো,
নিমেষেই গেল মিলিয়ে,
দেওয়ালগুলো হাসলো খিলখিলিয়ে!

চোখ মুছে দেখতে গিয়ে দেখি,
কোথায় সাজানো গোলাপের পাপড়ি?
হাতের ফাঁক থেকে ঝরে পড়েছে বালি,
শুধু বালিয়াড়ি...
শূন্য মরুতে...
একা দাঁড়িয়ে আমি ...


শব্দে খেলি হোলি


কি করে মানাবো বল?
হাতে পড়ি, পায়ে পড়ি,
দেব কি নাকখত?
নাকি নাককান মুলি,
তবে কি ফিরবে অভিমান ভুলি?

কানে কানে সত্যি কথাটা বলি?
দেখো, কেউ যেন না জানে,
তোমার নামটাই কবিতার রং হয়ে
গোপনে মিশে আছে আমার হৃদয়ে!

সে কি বলতেই হবে বারবার?
তুমি তো জানোই,
যতবার বলি "ভালোবাসি"
তারও থেকে তোমাকে চাই অনেক বেশি !

অভিমানের দেয়ালে কতো আর ঠোকর খাবো?
তুমি কি জানো না,
আমার চোখের পাতায়
তোমার কবিতাই ঘুম দিয়ে যায়।
 আমার কবিতার পাতায় পাতায়
শুধুই তুমিই আছো,
আমার ছলনাময় সব লেখায়!
এবার যাও সব ভুলি
এসো!
শব্দের রঙে খেলি হোলি।

Post a Comment

0 Comments