জ্বলদর্চি

নদীকৃত্য বা নদীর রক্ষা দিবস /দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

নদীকৃত্য বা নদীর রক্ষা দিবস 
দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে 

আজ ১৪ ই মার্চ নদীকৃত্য বা নদী রক্ষা দিবস। আসুন এই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নিই।

নদী মানব সভ্যতার ভিত্তি এবং জীবনের উৎস, যা খাদ্য, পরিবহন, এবং অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য। 
নদী হল,একটি প্রাকৃতিক সম্পদ, যা আমাদের জীবনে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। নদীকে আমরা কেবল একটি জলধারা হিসেবে দেখি না, বরং একে জীবনের ধারক হিসেবেও বিবেচনা করি। নদী মানব সভ্যতার মেরুদণ্ড, নদীমাতৃক দেশ ভারতবর্ষে শতাধিক বড় বড় নদী জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে এ দেশজুড়ে। কালের বিবর্তনে, বর্তমানে অনেক নদ-নদী সংকটাপন্ন। দখলদারদের দৌরাত্ম্যে অনেক নদ-নদী ভরাট হয়ে অস্তিত্ব হারিয়েছে। এসব নদী মরে যাওয়ায় চাষবাসে সংকট, জীববৈচিত্র্য ধ্বংসসহ অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

নদী হারাচ্ছে তার বৈশিষ্ট্য, অন্যদিকে দূষণের মাত্রাও বাড়ছে। বিশেষ করে নদীর জলে বর্জ্য মিশ্রণের ফলে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে নদীগুলো। নদীর প্রতি তাই দায়বদ্ধতা মনে করিয়ে দিতে ১৪ই মার্চ পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য বা নদী রক্ষা দিবস’। 

বর্তমানে অনেক নদ-নদী সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। উৎসমুখসহ বিভিন্ন স্থানে এসব নদ-নদী ভরাট হয়ে গেছে। এতে ভাটির জনপদে নৌপথ বন্ধ, চাষবাসে সংকট, অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। 

১৪ই মার্চ  আন্তর্জাতিক নদী কৃত্য দিবস, যাকে অন্য ভাবে বলা হয়, আন্তর্জাতিক নদী রক্ষা দিবস । ১৯৯৮ সাল থেকে সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ১৯৯৭ সালের মার্চে ব্রাজিলের কুরিতিয়া শহরে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সমাবেশ থেকে আন্তর্জাতিক নদী কৃত্য দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নদীর প্রতি মানুষের করণীয় কী, নদী রক্ষায় দায়িত্ব, মানুষের দায়বদ্ধতা কতটুকু; এসব বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নদী সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ও মানুষের মধ্যে নদী ভাবনা তৈরি করতে হবে।

১৯৯৭ সালে ব্রাজিলে যখন কুরিতিবা শহরে এক সমাবেশ থেকে এ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়, তখন সেখানে এক হয়েছিলেন বিভিন্ন দেশে বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। তাইওয়ান, ব্রাজিল, চিলি, আর্জেন্টিনা, থাইল্যান্ড, রাশিয়া, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ওই সম্মেলনে অংশ নেন প্রতিনিধিরা। ওই সম্মেলন থেকেই ১৪ই মার্চ আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস পালনের ঘোষণা করা হয়।

নদী তীরবর্তী জনপদের জীবন-জীবিকা বদলে যাচ্ছে। বিলীন হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। বিভিন্ন স্থানে গতিপথ পরিবর্তন, নাব্যতা হারিয়ে নদীভাঙন ব্যাপক হচ্ছে। এই নদীগুলো বাঁচানোর আকুতি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছেন পরিবেশবাদীরা।

🍂

এই দিবসের ইতিহাস অনেকটা এইরকম...
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নদী আইনজীবী মার্ক অ্যাংলোরোর উদ্যোগে একটি প্রস্তাবনার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ব নদী দিবস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। প্রতি বছর এই দিনে বিভিন্ন সংস্থা নদী দূষণ রোধ এবং নদীর বাস্তুতন্ত্রের উন্নতিতে কাজ করার জন্য সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। 

নদীর উপকারিতা অনেক, যেমন...
জল সরবরাহ:
নদী হল, মিষ্টি  জলের জন্য সবচেয়ে বড় জলাশয়, যা আমাদের পানীয় জল, সেচ এবং শিল্পকাজের জন্য জল সরবরাহ করে। 
খাদ্য নিরাপত্তা:
নদী এবং এর পাশে বসবাসকারী মানুষ মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর উপর নির্ভরশীল। তাই, নদী খাদ্য নিরাপত্তা প্রদানেও সাহায্য করে। 
পরিবহন:
প্রাচীন কাল থেকে নৌকাই হলো মালামাল পরিবহন ও যোগাযোগের সহজ উপায়। 
অর্থনৈতিক কার্যকলাপ:
নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়, কারণ নদী পর্যটন, মৎস্য এবং অন্যান্য ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 
জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ:
নদী জলবায়ু নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যা স্থানীয় অঞ্চলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। 
জলাশয় ও উদ্ভিদকুল:
নদ-নদী জীববৈচিত্র্যের একটি অপরিহার্য অংশ। নদ-নদীর পাশে অবস্থিত জীবকূল ও উদ্ভিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসভূমি, যেখানে বিভিন্ন ধরনের জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবনধারণের সুযোগ থাকে। 
বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদন:
নদী ব্যবহার করে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা যায়, যা বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 
নদীর ভবিষ্যৎ:
নদী আমাদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান, তাই আমাদের উচিত এদের সুরক্ষায় মনোযোগ দেওয়া। দূষণ এবং অপর্যাপ্ত জল ব্যবহারের ফলে নদীর পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, যা নদীর উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই, নদীর সুরক্ষার জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে, যেমন জল দূষণ নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্য জল ব্যবস্থাপনার উন্নতি এবং নদীর পাড়ের গাছপালা লাগিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।

Post a Comment

0 Comments