গুচ্ছ কবিতা /অভিজিৎ পানিগ্রাহী

গুচ্ছ কবিতা 

অভিজিৎ পানিগ্রাহী

বাংলা ভাষা ভালোবাসার ভাষা

বাংলা ভূমিতে কত কৃতী গুণী

ধন্য করেছে বাংলার মাটি,

বাংলার গানে বাংলার তানে

মাতৃভাষার কত আহ্বানে—

ভাষা প্রতিবাদে আর আন্দোলনে-

বানানে শব্দে আর অক্ষরে

বদলায় ভাষা বদলায় রূপে

মর্যাদা কত বাড়ে ঐ কলেবরে—

লড়াই থেমে থাকে না

তুমি কি ভেবেছ কোনোদিন 

কোনোদিন তুমি জিতে যাবে!

ভেবেছ কি হারের মধ্যে আনন্দ আছে!

হেরে গিয়েও জেতার উল্লাস করি

কখনও

জিতেছি জিতেছি বলে

আনন্দে অশ্রু ঝরে

সুগভীর আনন্দ নিয়ে দুঃসহ বেদনা

হার-জিতের খেলা চলে জীবনভর

তবুও লড়াই করি

লড়াই করতে হয়, আসলে

সংগ্রাম-ই যে জীবন ।

অজানা অস্তিত্ব

তোমার হাসি ছড়িয়েছিল

ছড়িয়ে আছে এখনও

হৃদয় জুড়ে নয়ন জুড়ে সেই হাসি

সমুদ্রের অসীম হিল্লোলে শুভ্র ফেনারাশি 

নিকট থেকেও দূর করেছ তুমি 

না জানি তোমার স্পর্শ যদি পাই 

তুমি না ধরা দিলে অধরা যে তুমি

শিশিরে ভেজা পাতা কি ছোঁয়া যায়?

ছুঁলে গড়িয়ে পড়ে যায়

আলগোছে দৃষ্টি বিনিময় শুধু

কেন যে দূরে থাকো অনিঃশেষ আকুতি নিয়ে! 

নিঃশ্বাসের সুমিষ্ট সুবাসে মন মুগ্ধ হয় 

তবুও তুমি দূরে... ঐ ওখানে

যদিও তুমিই বলো—

এই তো আমি

কাছেই আছি তোমার

অদূরে যে তুমি।

🍂

সময়ের কথামালা ১

সময় আলোর দিশারী

সময় করায় অধিকারী

বিপন্ন মানবতার জন্য

জীবনের অনুশাসনের জন্য

সময় কখনও শত্রু হয়

কখনও মিত্র

সময় কখনও অজাতশত্রু

কখনও সে বিচিত্র

সময় যাচ্ছে প্রমাদ গুনছে

কখন যে কে বাঁচছে

সময় ছিনিয়ে কত কী নিচ্ছে

তা কি কেউ জানতে পারছে?

সময় চাইলেই কি সময় পাওয়া যায়?

সময়ের কাঁটা চাইলেই কি উল্টোদিকে ঘোরানো যায় ?

লোকটা

কাঁথা মুড়ে শুয়েছিল লোকটা 

উসকো খুসকো চুল

বিবর্ণ চামড়ায় জীর্ণ পোশাক

মলিন মুখে ক্ষুধার্তের ছাপ

ফুটপাতের পাশে সুবিশাল ম্যানসনের দেয়ালের পাশে

দেখে মনে হল, খাওয়া হয়নি

ভিক্ষা তো চায়নি সে, পয়সার পাত্র নেই কাছে

পয়সা দেব? নেবে?

মেলেনি উত্তর ।

ভিখারি তো নয়

সব ছিল তার—

সুখ শান্তি অর্থ আপনজন -

হারিয়ে গেছে সব

ভূমিকম্পের অভিশাপে—

অথর্ব দেহে বাড়িয়ে দেওয়া একটুকরো কাগজ

লেখা ছিল—

বেঁচে থাকার স্পৃহা নেই

সবাই চলে গেছে বলে

নিজের জন্য চাই না অর্থ আশ্রয় অন্ন

চাপা পড়েও বেঁচে রইলাম

চাপা কান্না নিয়ে

বেঁচেও মরে আছি!

কেন বাঁচি?