অয়ন মুখোপাধ্যায়ের কবিতা গুচ্ছ
মহালয়ার ভোরে
রক্তে ভিজে ওঠে আকাশ,
চিৎকার করে ওঠে অশ্বত্থের ডালপালা—
যেন কারও গর্ভের ভিতর থেকে
ফেটে বেরিয়ে আসছে হাজার সূর্য।
দশভুজা নারী দাঁড়িয়ে আছেন
অস্থির নদীর মাঝখানে।
তাঁর চোখে সন্ত্রস্ত গ্রহদের হাহাকার,
তাঁর ঠোঁটে সিংহের গর্জন।
আসলে প্রতিবারই
আমাদের অন্ধকার ভাঙে এইভাবে—
একটা নখ, একটা শ্বাস, একটা আগুন
ফেটে যায় মহাশূন্যে।
আর আমরা বলি—
জয় দুর্গা! জয় পরাজয়ের জন্মদাত্রী!
🍂
দেবীর ছায়া
বলাগড় গ্রামের ভেতরে আমাদের মতন পুরনো লোকেদের বুকে
গোপনে ঢাকের বাজনা বাজে।
যা শুধু আমরাই শুনতে পাই অন্য কেউ না
বাঁকানো গলির মধ্যে ভেসে আসে চণ্ডীপাঠের মন্ত্র ।
যা আমাদের নিজস্ব কক্ষপথে ঘুরে বেড়ায়।
তুমি কি দেখেছো?
এক লাল শাড়ি-পরা মহিলাকে—
তিনি শুধু প্রতিমা নন,
তিনি পেরিয়ে আসা শৈশব,
হারানো প্রেমিকা,
তৃষ্ণার্ত মাতৃভাষা।
দেবী আসেন আবারও।
তাঁর সিংহ ছুটে আসে আমাদের দুর্বল রক্তে,
তাঁর দশ হাত ভেঙে দেয়
আমাদের ভিতরের অসুরকে।
এই গ্রাম হেরে যায় হাজারবার,
কিন্তু প্রতিবারই মহালয়ার ভোরে
একটা নতুন সূর্য জন্ম নেয়।
মা আসছেন
ঘণ্টা বাজে, ঢাক বাজে,
চোখে ঘুম নেই কারও—
মহালয়ার ভোরে আসছেন মা,
নদীর ধারে ধোঁয়া ওঠে।
কেউ বলে—
দেবী নাকি সোনার রথে আসেন,
কেউ বলে—
দেবী নাকি মানুষের ভিতরে নেমে যান।
আমার তো মনে হয়
মা আসেন চালের হাঁড়ি ভরে,
মেয়ের নতুন শাড়িতে,
খুব গরিবের হেসে ওঠায়।
দশভুজা শুধু আকাশে নয়,
আমাদের ভিতরেও—
যেখানে একটা হাত চায় রুটি,
3 Comments
অসাধারণ,, প্রত্যেকটা কবিতাই ভীষন ভালো লাগলো। প্রচলিত গতানুগতিক ধারার পুজোর কবিতা থেকে একদমই আলাদা --
ReplyDeleteকবিতাগুলি পড়লাম...ভালো লেগেছে , সমসময় উঠে এসেছে ৷
ReplyDeleteভালো লাগল কবিতাগুলি। এত সুন্দর লেখেন আপনি।-- পৃথা।
ReplyDelete