জ্বলদর্চি

দূর দেশের লোকগল্প— ২৫৯/প্যাঁচারা বাসা বোনে নামঙ্গোলিয়া (এশিয়া)/চিন্ময় দাশ

দূর দেশের লোকগল্প— ২৫৯

প্যাঁচারা বাসা বোনে না

মঙ্গোলিয়া (এশিয়া)

চিন্ময় দাশ

মঙ্গোলিয়া মানে মরুভূমি পাহাড় আর জঙ্গলের দেশ পাহাড়ের মধ্যে আবার তিনটে পাহাড় বড়। এর মাঝখানে যে পাহাড় সেটাতে এক প্যাঁচা থাকে। ঘন জঙ্গল তার ভিতর একটা গাছের ডালে থাকে পেঁচাটা।

ভারী অলস পাখিটা। এমনকি ওড়াউড়ি করতেও ভালো লাগে না তার। এক গাছ থেকে আরেক গাছে যাবে, সে উৎসাহও পায় না কোনও দিন। 

একদিন একটা গাছের ডালে বসে ঘুমোচ্ছিল পেঁচা। এমন সময় কোত্থেকে একটা কাঠঠোকরা উড়ে এসে বসেছে সেই গাছেই। বসেই কাঠঠোকরার যা কাজ। গাছ ঠোকরাতে শুরু করে দিয়েছে। ঠক-ঠক শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেছে পেঁচার। আচমকা এমন উটকো শব্দে মিষ্টি ঘুমটা ভেঙে গেলে, কার না মেজাজ খারাপ হয়!  ভারী বিরক্ত হয়ে ডানা ঝাপটালো প্যাঁচা। জিজ্ঞেস করল-- ঝামেলা করছিস কেন বল তো? দিলি তো ঘুমটা ভেঙ্গে। হতভাগা কোথাকার। 

মুসুর দানার মত ছোট্ট দুটো চোখ কাঠঠোকরার। চোখ দুটো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সে বলল-- কেন গো! তুমি দেখতে পাচ্ছ না?  আমি খাবার খুঁজছি। দেখতে পাও না, সব পাখিই কিছু না কিছু কাজ করছে? তোমার চোখে পড়ে না সে সব? সারাটা দিন আলসের মধ্যে বসে থাকো, আর ঝিমোতে থাকো। তোমার মত আলসে এই দুনিয়ায় আর দুটি নেই। 

পেঁচা বলল-- নেই তো নেই। তাতে তোর কি? তুই আর জায়গা পেলি না? ভাগ এখান থেকে। 

--কুঁড়ের বাদশা কোথাকার। বকর বকর করতে করতে কাঠঠোকরা উড়ে চলে গেল।

পেঁচা আবার আরাম করে বসে, চোখ বুজিয়ে ফেলেছে। চোখ যখন ঢুলুঢুলু, আবার একটা বিদঘুটে শব্দ। একটা ম্যাগপাই পাখি এসেছে, কাছাকাছি একটা ডালে বসে চা খেতে শুরু করেছে।

ঘুমের চটকা ভেঙ্গে যেতে, পেঁচা ভারী বিরক্ত। এটা ওটা বলে, খুব গালাগাল করল ম্যাগপাইকে। পাখিটা কিন্তু গা করল না তাতে। উল্টে পেঁচাকেই মুখ শুনিয়ে দিল-- সব সময় তুমি এমন ঘুমিয়ে থাকো কেন বল তো? অন্য পাখিদের দিকে তাকিয়ে দেখো। সবাই কাজে ব্যস্ত। ঘুমোবার সময়ই পায় না তারা। কেউ বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছে। কেউ বাসা বাঁধবার যোগাড় করছে। কেউ এটা বা ওটা—কিছু না কিছু করছেই। আর দেখো, কেবল তুমিই সারাটা দিন ঘুমিয়ে থাকো।

পেঁচা খেঁকিয়ে উঠলো-- তাতে তোর কি রে, হতভাগা? 

উত্তর না দিয়ে ম্যাগপাই উড়ে সরে চলে গেল। আবার ঘুমের জোগাড় করলো পেঁচা। একটু বাদেই মনে হল মাথার উপর দিয়ে কেউ উড়ে যাচ্ছে। চোখ খুলে দেখলো ছোট্ট একটা কুইল পাখি। বাসা বানাবে বলে, পপলারের ডাল কুড়োতে বেরিয়েছে।

বারবার ঘুমের ব্যাঘাত হওয়াতে পেঁচা ভারি বিরক্ত। আর ঘুম আসছে না। বসে বসে এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখছে। কোন কোন পাখি এদিক ওদিক উড়ছে। কেউ ঘুরে  বেড়াচ্ছে বাসা বাঁধবে বলে। কেউ বা পোকা খুঁটছে ঘাসের মধ্যে।

🍂

পেঁচা ভাবল—না, আমাকেও এবার একটা বাসা বানাতে হবে দেখছি। সবারই বাসা আছে। আমারই  কেবল নেই। ঠিক আছে। একদিন বাসা একটা বানাবোই।

দেখতে দেখতে সূর্য ঢলে পড়ল পশ্চিম আকাশে। অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে চারদিক জুড়ে। বাতাসে ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। ডানা দুটো জোর করে চেপে, ঘুমিয়ে পড়বার আয়োজন করলো প্যাঁচা। তখন টমট্রিট পাখির বাসার কথা মনে পড়ল। ছোট্ট পাখি, তার বাসাও ছোট্ট। কিন্তু ভারী আরামদায়ক বাসা। প্যাঁচা ভাবল, একদিন আমিও ঠিক এইরকম একটা সুন্দর বাসা বানাবো। বেশ আরামদায়ক করেই বানাবো সেটা।

রাত বাড়তে বাতাসের ঠান্ডাও বাড়লো। ডানা একটু কনকন করছিল পেঁচার। আকাশে হাজার হাজার তারা জ্বলছে টিম-টিম করে। তারাও যেন ঠান্ডায় কুঁকড়ে আছে। পাঁচার মনে হলো, একসময় জমে গিয়ে মরে যাবে। কখন ভোর হয়, সেই অপেক্ষায় বসে রইল। 

সূর্য উঠে সকাল হলো এক সময়। একটু একটু করে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ল বাতাসে। ঠান্ডা শরীর আবার গরম হতে লাগলো পেঁচার। একসময় বেশ আরামদায়কও মনে হলো আবহাওয়া। শরীর গরম হতেই, মনে বেশ ফুর্তি। আবার ঘুমিয়ে পড়ল পেঁচা।। 

সারা বছর এভাবেই দিন কেটে যায় প্যাঁচার। রাতও কেটে যায়। নতুন করে বাসা বানানোর কাজে লেগে পড়া, তার আর হয় না। আজও তাই পেঁচাদের কোন বাসা নেই।

Post a Comment

0 Comments