কথাসাহিত্যিক অমর মিত্র-র সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সন্তু জানা
সম্ভ জানা: শুরুটা করি মেদিনীপুর জেলার কথা দিয়ে। শুনেছি, মেদিনীপুর জেলার সঙ্গে আপনার আত্মিক সংযোগ রয়েছে। এমন যোগের সূত্রপাত ঠিক কবে থেকে?
অমর মিত্র: আসলে মেদিনীপুর জেলার সঙ্গে আমার যোগাযোগ আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে থেকে। মেদিনীপুরের নিসর্গ, গ্রাম, নদী, মানুষ আমার চোখে জীবনকে অন্য দৃষ্টিতে দেখার ইন্ধন জুগিয়েছে। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে আমি অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার গোপীবল্লভপুর থানার এক দুর্গম এলাকায় বদলি হই। তখন সারা ভারতে জরুরি অবস্থা। ইউনিয়ন করার কারণে সেই দূরবর্তী অঞ্চলে পাঠানো। আমি ভূমি রাজস্ব বিভাগের কানুনগো ছিলাম। গ্রামে ছিল অফিস, হল্কা ক্যাম্প। ক্যাম্প হয় বংশীধরপুরে। ১৯৭৫-এর ডিসেম্বরে গিয়ে ১৯৭৬-এর ডিসেম্বরে চলে এসে আর যেতে পারিনি সেই গ্রামে। জায়গাটি বাংলা, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার সীমানা এলাকা। ঘন শাল জঙ্গলের ধারে সুবর্ণরেখা নদী। তার দুই তীর প্রস্তরাকীর্ণ। জায়গাটির নাম হাতিবাড়ি। সুবর্ণরেখা নদীর উপর নির্মিত জামশোলা ব্রিজ থেকে বংশীধরপুর যেতে প্রায় ১ ঘস্টাফ ৪৫ মিনিট হাঁটতে হতো। ওই দূরে মৌভাণ্ডার গ্রাম টিলা, তারপর আবার জঙ্গল। ডানদিক দিয়ে নদী বয়ে যাচ্ছে। মস্ত তার বিস্তার। দুই দিকে দু'হাত ছড়িয়ে দিয়েছে যেন। জল অনেকটা দূরে, মস্ত বালুচর পার হয়ে যেতে হয়। উপন্যাস লিখি সেই গ্রাম নিয়ে আর সুবর্ণরেখা নদীর মাটিদহ নিয়ে।
সন্তু: সুবর্ণরেখা অববাহিকার লোককথা ব্যবহার করেছেন আপনার লেখায়?
অমর: হ্যাঁ। হাতিবাড়ির সুবর্ণরেখা খুব গভীর নদী। ষাট হাত জল সেখানে। পুরাকালে এ অঞ্চলের রাজা যাবতীয় অনাচারে রুষ্ট হয়ে সুবর্ণরেখার ভেতরে নেমে গিয়েছিলেন তার প্রাসাদ নিয়ে। কিন্তু রাজা তো প্রজা বৎসল ছিলেন। তাই নদীতে বান এলে, পশ্চিমের জল নেমে এলে বন্যার হাত থেকে প্রজাদের বাঁচাতে জলের নিচে প্রাসাদে ঘণ্টা বাজিয়ে দিতেন। বন্যার সময় নাকি সেই ঘণ্টাধ্বনি শোনা যায়। আমার প্রথম উপন্যাস, 'নদীর মানুষ' বংশীধরপুরের পটভূমিকায় লেখা। সেখানে হাতিবাড়ির মাটিদহর পুরাণ-কথা ব্যবহার করেছিলাম।
সন্তু: আপনার জন্ম ওপার-বাংলার সাতক্ষীরার ধুলিহর গ্রামে। পরবর্তীকালে আপনারা ভারতে চলে এলেন। আপনার বাস্তব অভিজ্ঞতা যদি কিছু বলেন।
অমর: আমরা সাতচল্লিশে পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে চলে আসি। আসলে আমার বাবা দেশভাগের আগে বাংলা সরকারে চাকরি করতেন। বাবা অপশন পেয়েছিলেন। স্বাধীনতার প্রাক্কালে তিনি ভারত সরকারের পক্ষে মতদান করেন। ফলে আমাদের পাকিস্তান ত্যাগ করতেই হয়। সাতক্ষীরা লাগোয়া বসিরহাটে আমরা থাকতাম। পরেও আমাদের যাতায়াত ছিল। আমার কাকা ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাড়েন। দেশভাগ নিয়ে আমার যেটুকু স্মৃতি তা আসলে আমার মায়ের মুখ থেকে শোনা স্মৃতি রোমন্থন বলতে পারেন।
সন্তু: এই যে আপনার শৈশবের নির্মল বাংলাদেশ, আর আজকের দিনে তার যে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন। কেমন বদল চোখে পড়ছে আপনার? ওখানে তো সাহিত্য-সংস্কৃতি কর্মীরা রীতিমতো কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। তাই নয় কি?
অমর: দেখুন, লেখক কবি শিল্পী সবসময়ই কোণঠাসা। তিনি যদি প্রকৃত লেখক হন, তবে বিপত্তির মধ্যে দিয়েই তাঁর কলম চালাবেন। তিনি আপন শক্তিতে বলীয়ান। বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ-বিগ্রহ, উদ্বাস্তু সমস্যা, গাজা-ইজরায়েল, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন এসব যেমন তিনি সমর্থন দেবেন না। তেমনি আবার, আমাদের দেশেও যে ধর্মীয় সন্ত্রাস বা সংখ্যালঘুদের প্রতি অন্যায় অবিচার হচ্ছে, তার বিরুদ্ধেও প্রকৃত লেখকের কলম প্রতিবাদ করবেই, তা তিনি যতই কোণঠাসা হন না কেন।
সম্ভ: আজকে দুনিয়া জুড়ে প্রখর ফ্যাসিবাদের অসুখ। অথচ অসুখের প্রতিবাদে সুন্দর শৈল্পিক বর্ণনায় সোচ্চার হয়েছে আপনার লেখা 'অশ্বচরিত'। কত বছর আগে থেকে এমন প্রতিবাদী ভাবনার উদ্রেক?
অমর: ঠিকই। 'অশ্বচরিত' অনেকদিন আগে সেই ১৯৯৮ সালে লেখা। অনেকটা পথ এগিয়ে গিয়ে লেখা। বিশ্বজনীন ফ্যাসিবাদী অত্যাচারের বিপক্ষে আমার এমন প্রতিবাদী কণ্ঠ পাঠক আরো কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুনে থাকবেন। যেমন, আমার 'নিরুদ্দিষ্টের উপাখ্যান' নামে একটি ছোট উপন্যাস আছে, যেখানে ভিখারি পাশোয়ান নামে জুট মিলের এক শ্রমিককে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়, তার আর কোন সন্ধান মেলেনি। 'পুনরুত্থান' নামক উপন্যাসে পুলিশ কাস্টেডিতে মৃত্যু হয় বিচারাধীন ব্যক্তির। এইসব সামাজিক অনাচার আমার লেখায় উঠে এসেছে বারবার। যদিও 'অশ্বচরিত' এই সব কিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
সম্ভ: 'অশ্বচরিত'-এ যেভাবে মেদিনীপুরের সামাজিক পটভূমিকায় আপনি সর্বজনীন ভাবনা ও দর্শনকে মিলিয়েছেন, তার জন্য তারিফ করতেই হয়। কিন্তু, 'অশ্বচরিত' সম্পন্ন করতে আপনার সম্ভবত ১৬-১৭ বছর সময় লেগেছিল। কেন এত বছর ধরে পরিক্রমা?
অমর: আসলে ঠিক তা নয়। আমি ১৭ বছর ধরে উপন্যাসটি লিখিনি। তখন ১৯৮০ সালের কথা। আমার বয়স মেরেকেটে তিরিশ হবে। একটি নভেলেট লিখেছিলাম 'শিলাদিত্য' পত্রিকায়। সম্পাদক ছিলেন সুধীর চক্রবর্তী। 'বিভ্রম' নাম ছিল সেই নভেলেটটির। একটি সামান্য ঘোড়ার গল্প। মেদিনীপুরের সমুদ্র উপকূলে দীঘার একজন হোটেলওয়ালার
সেই ঘোড়া ছিল। ঘোড়াটি প্রতি আশ্বিনে পালাতো। সুবর্ণরেখা এবং সমুদ্রের মোহনার কাছে বড় একটি চর ছিল। আশ্বিনে সেই চরে চারদিক থেকে ঘোটক ঘোটকীরা পালিয়ে আসে সবুজ ঘাস এবং প্রেমের নেশায়। ঘোড়া এবং ঘুড়িদের ভেতর ভালোবাসা হয় সেই সময়। কিন্তু সেই বছর বৈশাখে সে অদৃশ্য হয়েছিল। নিখোঁজ সেই ঘোড়া খুঁজতে যায় হোটেলওয়ালার আশ্রিত হা-ঘরে ভানু দাস। কিন্তু, যে কথা বলতে চাইছি, আশ্বিনে যার পলায়নের কথা, সে বৈশাখে কেন পালিয়েছে? গেল কোথায় সেই বুড়ো টাট্টু? ভানু জানে না। লেখক জানবে কী করে?
অমর: সেটাই বলতে চাইছি। ১৯৮১-র ফেব্রুয়ারি মাসে 'শিলাদিত্য' পত্রিকায় ছাপা হয় 'বিভ্রম' নামের যে নভেলেট, তা আর বই আকারে বার করিনি। আসলে এর গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে আমার নিজের মনেই বিস্তর খটকা ছিল। ১৭ বছর পরে তা 'অশ্বচরিত' নামক অবয়ব ধারণ করেছিল। পুরো ঘটনার প্রেক্ষাপটটি বেশ অদ্ভুত। 'বিভ্রম' নভেলেট যখন প্রকাশিত হয়েছিল তখন বহু পাঠকের ভালো লেগেছিল বটে। কিন্তু, অচেনা লেখকের লেখা ছেপেছিলেন সুধীরবাবু, শুধু পাণ্ডুলিপি পড়ে। তাই খুব ভরসা পাইনি। বছর সাতেক বাদে ১৯৮৮ সাল নাগাদ আমি আবার লিখতে আরম্ভ করি উপন্যাসটিকে। এক প্রকাশকের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য কিংবা সৌভাগ্য, তিনি পাণ্ডুলিপি হারিয়ে ফেলেছিলেন। মনে হয়েছিল ‘বিভ্রম’আর বের হবে না। পড়ে থাকল আরও দশ বছর। ১৯৯৭-এ রাজস্থানের মরুভূমিতে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের পর আমি আবার নভেলেটটিকে সামনে রেখে নতুন উপন্যাস লিখতে শুরু করি। বিস্ফোরণের দিন ছিল বৈশাখী পূর্ণিমা। আমার ঘোড়াটি পালিয়েছিল সেইদিনই। আমি সেটি ১৯৮১ সালে লিখেছিলাম। এরপর ১৭ বছরের মাথায় সেই বুদ্ধ পূর্ণিমাই হয়ে গেল পথ। রাজপুত্র গৌতমের অশ্ব কণ্ঠক হয়ে গেল সেই বুড়ো টাট্টু। ভানু হয়ে গেল গৌতমের সারথি ছন্দক। তারা তপোবনে দিয়ে এসেছিল রাজপুত্রকে। তিনি ফিরবেন এ হিংসার পৃথিবীতে। ভগবান বুদ্ধ ফিরবেন। সারথি ছন্দক আর অশ্ব কণ্ঠক অপেক্ষা করছে তার জন্য। সময়কাল ১৯৯৮। রাজপুত্র ফিরে এলে পৃথিবী হিংসামুক্ত হবে। পলাতক ঘোড়া বিভ্রমে পড়েছিল। বিভ্রম তাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। ছুটতে ছুটতে সে হিরোশিমায় গিয়ে পড়ে। সেখানে তখন কালো বৃষ্টি।
সন্ত: আপনি সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার প্রাপক। আবার, এশিয়ার মধ্যে প্রথম কথাশিল্পী হিসেবে ও' হেনরি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। সবই সম্ভব হল বাংলা সাহিত্য ইংরেজিতে অনুবাদের ফলে। আজকের দিনে অনুবাদ সাহিত্যের গুরুত্ব কতখানি?
অমর: অনুবাদের প্রয়োজন উত্তরোত্তর বাড়ছে বৈকি। ইংরেজি ভাষা আন্তর্জাতিক। তাই সেই ভাষায় অনুবাদ হলে বিশ্ব জুড়ে পাঠক তৈরি হয়। তবে হ্যাঁ, এক্ষেত্রে যথার্থ অনুবাদকের গুণের ওপর নির্ভর করে মূল লেখাটির সাহিত্যগুণ। ১৯৭৭ সালে লেখা আমার 'গাঁওবুড়ো' গল্পটি ২০২০ সালে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন অধ্যাপক অনীশ গুপ্ত। ২০২১ সালে প্রকাশিত হয় আমেরিকার একটি ম্যাগাজিনে। ২০২২ সালে ও' হেনরি পুরস্কার প্রাপ্তি ঘটে। অনীশ গুপ্ত আমাকে খুব সাহায্য করেছেন। আরেকজন ছিলেন আরব দেশের কবি হাসিম বুসনানি। তিনিও যথার্থ সাহায্য করেছেন। পরবর্তীকালে পেঙ্গুইন থেকে গ্রেট বেঙ্গলি শর্ট স্টোরি সংকলনে আমার 'দ্য ওল্ড ম্যান অফ কুসুমপুর' গল্পটি প্রকাশিত হয়েছে।
সন্তু: একবার লাতিন আমেরিকার কবি পাবলো নেরুদাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি কেমন লেখেন? উনি উত্তর দিয়েছিলেন যে, যদি আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন আমি কেমন লিখি, আমি বলব, জানি না। কিন্তু যদি আপনি আমার কবিতাকে প্রশ্ন করেন, সে বলতে পারবে, আমি কে। দাদা, আপনার লেখাকে প্রশ্ন করলে আমরা কি জানতে পারব যে, একজন আদ্যন্ত রসায়নের একনিষ্ঠ ছাত্র কিভাবে এমন প্রথিতযশা কথাসাহিত্যিক হয়ে উঠলেন?
অমর: সত্যি কথা বলতে কি, কলকাতা থেকে বাইরে চলে যাওয়াটাই আমাকে নতুন করে ভাবতে শেখালো। বাইরে বলতে মেদিনীপুর আর বাঁকুড়া। এই দুই জেলা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। বিশেষত মেদিনীপুর। মেদিনীপুর আমাকে তৈরি করেছে। আই অ্যাম গ্রেটফুল টু মিডনাপুর। মেদিনীপুরের গ্রামেই আমার বিজ্ঞানী মনের রসায়ন সূত্র থেকে সাহিত্যের মহাকাশে উত্তরণ।
সন্তু: যত দিন যাচ্ছে লিটল ম্যাগাজিনের পরিসরকে আমরা যেন দুটো ভাগে ভাগ করে দিচ্ছি। মহানগরীয় এবং মফসলীয়। ভাবনা অথবা প্রচেষ্টার দিক থেকে না হলেও সমর্থন, লেখকের জোগান, অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা কি সত্যিই আমার এই যুক্তিতে সায় দেয়?
অমর: আমি বলব বাংলায় লিটল ম্যাগাজিন বলে আর কিছু কি অবশিষ্ট আছে? আমাদের সময় দু'চার জন মিলে চাঁদা দিয়ে কম আয়তনের এক একটি কাগজ বেরোত। সেখানে আনকোরা বহু লেখক কবি লিখতেন। অনেকে নতুন কিছু এক্সপেরিমেন্ট করতেন। এখন আর সেসব কোথায়? এখন কলকাতা থেকে যেসব পত্রিকা বেরোয় সেগুলি গায়-গতরে বেশ ভারী, বিজ্ঞাপনে ভরপুর। যেন এক একটি বিশালকায় প্রতিষ্ঠান। অনুষ্টুপ, কোরক প্রভৃতির কন্টেন্ট খুব ভালো, সম্পাদকবৃন্দ যথেষ্ট যত্নশীল। কিন্তু, লিটল ম্যাগাজিনের ধর্ম পালন করা হল কি? কয়েকজন বন্ধু মিলে সুনীল গাঙ্গুলিদের সময়কালীন কৃত্তিবাসের যে সুবাস, তা এখন খুবই কম মেলে।
সন্তু: আপনি বেশ বাস্তবধর্মী মানুষ। লেখাও তেমন। আপনার সাহিত্যে বাস্তবতা কীভাবে এসেছে?
অমর: আমার সাহিত্যে কীভাবে কী এসেছে তা বলবেন পাঠক। সমালোচক। আমি মনে করি, আঁকাড়া বাস্তবতা এক জায়গায় গিয়ে থেমে যায়। কল্পনা এবং বাস্তবতা দুইয়ের ভেতরে আমি চলাফেরা করতে ভালোবাসি। মানুষের অন্তর্গত রহস্য উদ্ধার করতে চেয়েছি যেমন, তেমনি চেয়েছি শিকড়ে পৌঁছতে।
সন্ত: আপনার লেখা উপন্যাসগুলোর মধ্যে আপনার প্রিয়তম কোনটি?
অমর: সবাই আমার সন্তানতুল্য। তবে আলাদা করে বললে, নাম করবো 'ধনপতির চর' উপন্যাসটির। আমার অনেকটা আবেগ জড়িয়ে আছে ওই লেখায়। আজকাল তো একাডেমিতে ওই উপন্যাসটি নিয়ে রমরমিয়ে নাটকও পরিবেশিত হচ্ছে। এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে। এছাড়াও কন্যাডিহি, যশোমতি, একটি গ্রাম একটি নদী— এইসব গল্পগুলিও আমাকে অনেকটা প্রশান্তি দেয়।
সন্তু: সব ভালো যার শেষ ভালো। মেদিনীপুর নিয়ে আমাদের আবেগ অসীম। তাই, যেতে যেতে জানতে ইচ্ছে করে সাহিত্য জগতের মাঝে এক টুকরো মেদিনীপুরকে কিভাবে মাপবেন দূরদর্শী গাঁওবুড়ো?
অমর: মেদিনীপুরের সাহিত্য জগৎ বেশ সমৃদ্ধ। এককালে রাধানাথ মণ্ডল, শিবতোষ ঘোষ দারুণ লিখতেন। তারপর হঠাৎ করে হারিয়ে গেলেন। কবি গুণময় মান্নার লেখনী ছিল যথেষ্ট পোক্ত। খুব শক্তিমান কবি ছিলেন। ওঁর শালবনী লেখাটির কথা খুব মনে
পড়ে। রাধানাথের একটি পুরোনো উপন্যাস 'আটঘড়ার মহিমালদার' নতুন করে প্রকাশের ব্যবস্থা করেছি আমিই। ভূমিকাটিও আমি লিখেছি। এছাড়া আমাদের সময়ের অনিল ঘড়াই, ভগীরথ মিশ্র, নলিনী বেরা তো ছিলেনই, এখনো আছেন। কবিতার জগতে বীতশোক ভট্টাচার্য মহীরুহ। আর ছিলেন অনবদ্য শম্ভু রক্ষিত। শেষের জনকে নিয়ে তো একটি আস্ত উপন্যাস পর্যন্ত লিখে ফেলেছি। হলদিয়ার কাছে বিরিঞ্চিবেড়িয়া গ্রামের মানুষ শম্ভু। তাঁর মৃত্যুর বছরে শারদীয় আজকাল পত্রিকায় লিখেছিলাম 'কবি-কাহিনী' নামে একটি গল্প। পরে সেটাকেই উপন্যাসের রূপদান করি। নাম দিয়েছিলাম 'নতমুখ চরাচর'। বছর দুই আগে। আমার স্মৃতিতে মেদিনীপুর সর্বদা উজাগর।
সন্তু: এতক্ষণ ধরে সময় দেবার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
0 Comments