মেদিনীপুরের মানুষ রতন, পর্ব -- ১৭৬
নন্দন মাজী (স্পোর্টস থেরাপিস্ট, ভারতীয় ক্রিকেট টিম, কোলাঘাট)
ভাস্করব্রত পতি
অনিল কুম্বলে ছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (বি.ই.)। তিনি কিন্তু হয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম বিশ্বমানের স্পিন বোলার। জাভাগাল শ্রীনাথ অর্জন করেছিলেন ইনস্ট্রুমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি. ই. ডিগ্রি। তিনি হয়েছিলেন ভারতীয় দলের অন্যতম ফার্স্ট বোলার। ভি ভি এস লক্ষ্মণ ভর্তি হয়েছিলেন এম বি বি এস কোর্সে। কিন্তু তিনি হয়েছিলেন ভারতের অন্যতম স্টাইলিস্ট ব্যাটসম্যান। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ছিল ইনফরমেশন টেকনোলজির ওপর বি. টেক ডিগ্রি। তিনিও ভারতীয় দলের হয়ে বিশ্ব মাতিয়েছেন। এছাড়াও রাহুল দ্রাবিড় এম বি এ পাস করে ক্রিকেটার হয়েছেন। আবিষ্কার সালভি অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে পি এইচ ডি করে ক্রিকেটার হয়েছেন। এসব তথ্য তাঁর জানা ছিল বলেই বেড়েছিল মনের খিদে। বেড়েছিল জেদ, চাহিদা আর চূড়ান্ত আগ্রহ। এঁরা যদি পারে, তবে তিনি কেন পারবেন না?
পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপ জয়ী দলের সদস্য নন্দন মাজী
তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি পাস করা ইঞ্জিনিয়ার। তবুও সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর ক্রিকেট জগতে পদার্পণ করতে তাঁর অদম্য উৎসাহ। ক্রিকেটের সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কোনও দূরগত সম্পর্কটুকু না থাকলেও মানসিক দৃঢ়তা আর অকৃত্রিম উৎসাহ সেই সোপান ছোঁয়ার সুযোগ করে দিয়েছে নন্দন মাজীকে। সেই দূরত্ব ঘুঁচিয়ে দিয়েছে। । নিজের কাজের ওপর নির্ভর করে আজ তিনি হয়ে উঠেছেন মেদিনীপুরের মানুষ রতন।
এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদকজয়ী ভারতীয় ক্রিকেট দলের একমাত্র বাঙালি সদস্য নন্দন মাজী
পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের প্রত্যন্ত জামিট্যা গ্রামের এই ছেলেটিও পেরেছে স্বপ্ন ছোঁয়ার দৃষ্টান্ত দেখাতে। গ্রামের ম্যাড়মেড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে ধাপে ধাপে এগিয়ে হেঁটে কলকাতার এক কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা পাস করেছিলেন। চাকরিও পেয়েছিলেন মাইথন পাওয়ার প্ল্যান্টে। এতে অর্থের সমস্যা মিটেছিল। কিন্তু মনের খিদে ছিল অন্য কিছু। ২০১৩ তে সেই নিশ্চিত চাকরি ছেড়ে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পানে ছুটেছিলেন নিজের মনের খোরাক মেটাতে। সফল হয়েছেন অবশেষে। পেয়েছিলেন সেই স্বপ্নের নায়ক রাহুল দ্রাবিড়, ভি ভি এস লক্ষ্মণদের সান্নিধ্য। তাঁদের সাথে দিনের পর দিন ক্রিকেট মাঠে সময় কাটিয়েছেন সকাল থেকে সন্ধ্যা। এখন তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভারতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সাপোর্টিং স্টাফ।
পরিবারের সাথে
নন্দন মাজী। ভারতীয় ক্রিকেট দলে অন্তর্ভুক্ত অশোক দিণ্ডা, দয়ানন্দ গরাণির পরে পূর্ব মেদিনীপুরের আরেক কৃতি সন্তান। কোলাঘাটের জামিট্যা গ্রামের ছেলে। বাবা জগন্নাথ মাজি এবং মা ঝর্ণা মাজি। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছোট। জামিট্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তেন। স্কুলের দিদিমনি কৃষ্ণা মণ্ডল সাহুর তত্বাবধানে তখন খেলতে যেতেন জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্ষদের খেলায়। ব্যাস এটুকুই। খেলার সঙ্গে সংযুক্তিকরণ এভাবেই। না ছিল প্রশিক্ষক, না ছিল প্রশিক্ষন। কিন্তু খেলাধুলার প্রতি ছিল ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা তাঁকে আজ পৌঁছে দিয়েছে বড় জায়গায়।
সম্পূর্ণ প্রচারবিমুখ। অত্যন্ত বিনয়ী এবং লাজুক স্বভাবের নন্দন মাজীর উত্থানের কাহিনি বেশ চমকপ্রদ। বেশিরভাগ মানুষই জানেনা তাঁর লড়াইয়ের কথা। ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। এজন্য অমানুষিক পরিশ্রম করার দক্ষতা, ক্ষমতা এবং চাহিদা থাকতে হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকা ট্যুরে জয়ী দলের সাথে
নন্দন কখনও ভালো ব্যাটিং, বোলিং বা কিপিং হয়তো করতে পারেনি। কিন্তু অত্যন্ত খেলাপাগল মানুষ। খেলাকে খুব ভালোবাসে। খেলার মাঠের মাটি ছুঁয়ে থাকতে চায় সর্বক্ষণ। সবসময় যে বোলিং, ফিল্ডিং, কিপিং, ব্যাটিং করতে জানতে হবে, কে বলেছে? এর বাইরেও নিজের দক্ষতা দিয়ে ক্রিকেটের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকা যায়। ওতপ্রোতভাবে মিশে থাকা যায়। সেটা করতে পেরেছে মেদিনীপুরের নন্দন মাজী।
অষ্ট্রেলিয়ায় নন্দন মাজী
তবে এই ক্রিকেটের প্রতি তাঁর আগ্রহ ও অনুপ্রেরণার মূলে ছিল নিজের গ্রাম জামিট্যার আরেক লিজেন্ড দয়ানন্দ গরাণি। যে কিনা টি ২০ ক্রিকেটে বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য ছিল। একই গ্রামের দুই 'মেদিনীপুরিয়ান' আজ ভারতীয় ক্রিকেট দলের অন্দরমহলের অন্যতম সহযোগী। গর্বিত কোলাঘাট। গর্বিত মেদিনীপুর। দয়ানন্দ গরাণি যখন টি ২০ বিশ্বকাপ জয় করে ঘরে ফিরেছে, তখন নন্দন মাজী ব্যস্ত ছিল ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচ ভি ভি এস লক্ষণের নেতৃত্বে ভারতীয় দলের হয়ে জিম্বাবোয়ে সফরে। সেখানেও সাফল্য তাঁকে দুহাত ভরে পাইয়ে দিয়েছে। শুভমান গিলের নেতৃত্বে সেবার ভারত জেতে ৪-১ ব্যবধানে। সেই দলে ছিল অভিষেক শর্মা, শিবম দুবে, জসস্বী জয়সওয়াল, সঞ্জু স্যামসন, ঋতুরাজ গাইকোয়াড়, ওয়াশিংটন সুন্দর, রিয়ান পরাগ, রিঙ্কু সিং, রবি বিষ্ণোইরা।
চাকরি ছেড়ে প্রথমে তিনি যুক্ত হন কে সি সি তে। কলকাতা ময়দানে ২-৩ বছর কাটানোর পর ২০১৬ তে চলে যান বেঙ্গালুরু। সেখানে নিজস্ব ক্লিনিকে কাজ করতেন। যুক্ত হলেন বি সি সি আই একাডেমিতে। N.C.A. তে যুক্ত হন ক্রিকেটারদের সাপোর্টিং স্টাফ হিসেবে। তখন মেন্টর ছিলেন স্বনামধন্য ক্রিকেটার রাহুল দ্রাবিড়। তাঁর অধীনে থেকেই ভারতের উঠতি ক্রিকেটারদের নানা ধরনের ফিজিক্যাল ট্রেনিংয়ের কাজ করে গিয়েছেন নিরলসভাবে। এরপর ভি ভি এস লক্ষ্মণের সাথে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন ক্রিকেটারদের নিয়ে।
অষ্ট্রেলিয়ার সাথে টি টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের পর
ভারতীয় দলের Under 19 টিমের সঙ্গে গিয়েছেন বিভিন্ন দেশে। India A দলের হয়েও গিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। এছাড়াও ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাথে ট্যুর করেছেন আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অষ্ট্রেলিয়াতেও। নন্দনের প্রথম আই পি এল টিম লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস। ২০২১-২০২৩ পর্যন্ত টানা তিন বছর এই দলের ক্রিকেটারদের সাপোর্টিং স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন। অবশেষে ভারতীয় ক্রিকেট দলের নিয়মিত সদস্য হওয়ায় আই পি এল ছেড়ে দেন। অবশিষ্ট ভারতীয় দলের হয়ে ইরাণি ট্রফি (২০২৩-২০২৪) জয়ী দলেরও সদস্য ছিলেন। বর্তমানে ভারতীয় সিনিয়র ক্রিকেট দলের নিয়মিত সদস্য।
রামেশ্বরম মন্দিরে স্ত্রীর সাথে
তবে সবচেয়ে বড় সাফল্য জুটেছিল ২০২৩ এর ৭ ই অক্টোবর। ভি ভি এস লক্ষ্মণের কোচিংয়ে ভারতীয় দলের হয়ে চিনের হ্যাংঝাও প্রদেশে এশিয়ান গেমস ক্রিকেটে স্বর্ণপদক জয়ী ভারতীয় দলের সদস্য হিসেবে থেকে। এবারেই প্রথম ভারতীয় দল এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে। ভারতীয় মহিলা এবং পুরুষ উভয় ক্রিকেট দলই এখানে আবির্ভাবেই চ্যাম্পিয়ন হয়। ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি ক্রিকেট ফিল্ডে আফগানিস্তানকে হারিয়ে ঋতু রাজ গাইকোয়াড়ের নেতৃত্বে তাঁরা জেতে এশিয়ান গেমসে ক্রিকেটের প্রথম স্বর্ণপদক। সেখানে খেলেছিলেন জসস্বী জয়সওয়াল, রিঙ্কু সিং, শিবম দুবে, তিলক ভার্মা, অর্শদীপ সিং, জিতেশ শর্মা, সাই কিশোর, ওয়াশিংটন সুন্দর, রবি বিষ্ণোইরা। সেই দলে একমাত্র বাঙালি প্রতিনিধি ছিল মেদিনীপুরের নন্দন মাজী। ভারতের মহিলা দলও সেবার সোনা জেতে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে।
এশিয়ান গেমসের পর এবার ২০২৫ এ সূর্যকুমার যাদবের নেতৃত্বে জয় এশিয়া কাপ। গৌতম গম্ভীরের কোচিংয়ে টানা সাত ম্যাচ অপরাজিত থেকে ভারতীয় ক্রিকেট দল ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দুবাইতে। এই নিয়ে নয়বার এশিয়া কাপ জিতল ভারত। যা সর্বকালীন রেকর্ড। একটি টুর্নামেন্টে পাকিস্তানকে তিনবার হারানোর বিরল রেকর্ডও করেছে ভারতীয় ক্রিকেট দল। যা বিশ্বে আগে কখনও হয়নি। নন্দনের কথায়, এই সাফল্য সকলের মিলিত প্রচেষ্টা এবং হার্ড ওয়ার্কের ফসল। এই আনন্দ ভাষায় বোঝানো সম্ভব নয়। অভিষেক শর্মা, তিলক বর্মা, সঞ্জু স্যামসন, হার্দিক পাণ্ডিয়া, জসপ্রিত বুমরা, কুলদীপ যাদবদের সাথে লেপটে ছিলেন সর্বক্ষণ। নন্দনের কাজ ছিল ক্রিকেটারদের নানা ধরনের আঘাত, ব্যথা, চোট থেকে Recovery করা। সে কাজে তিনি সফলতা পেয়েছেন। মূলত এই ভারতীয় দলের 'স্পোর্টস থেরাপিস্ট' হিসেবে ছিলেন কোলাঘাটের নন্দন।
জামিট্যা গ্রামের দুই হিরো দয়ানন্দ গরাণি ও নন্দন মাজী
নন্দনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা কৃষ্ণা মণ্ডল সাহু ও কার্তিক সাহুও উচ্ছ্বসিত ছাত্রের এহেন সাফল্যে। তাঁদের কথায়, "এই উত্তরণের যাত্রাপথ যেকোনো রূপকথার গল্পের মতই। শহীদ মাতঙ্গিনী ব্লকের জামিট্যার এক দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা। প্রাথমিকের পাঠ জামিট্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। দয়ানন্দর সাথেই। দয়ানন্দ খেলাধুলায় দুরন্ত। আর লাজুক স্বভাবের নন্দন বড্ড ভাবুক। তাঁর ভালোবাসা কবিতায়। স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। উচ্চমাধ্যমিকের পর ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়েই পড়াশোনা। না, মন বসল না তাতেও। রূপনারায়ণ নদ তীরবর্তী গ্রাম জামিট্যা। সেখানে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ আর প্রকৃতির মনোরম পরিবেশের মেলবন্ধন। কল্পনাপ্রবণ মনে ধরা দেয় হাজার স্বপ্নের রামধনু। নন্দনের মনে লেখালেখির ভাবনা। সাথে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ইচ্ছা। কোনোভাবেই হচ্ছিলনা। সামনে তখন এলাকার আইডল দয়ানন্দ। অন্যখাতে বইয়ে দিল জীবনের বাঁক। মাঠের ধুলো গায়ে মেখে ঘাম ঝরানো শুরু নন্দনের। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই। সমস্ত প্রতিবন্ধকতা উড়িয়ে সুযোগ এসে যায় আইপিএল টিমে। আর এখন একেবারেই ভারতীয় ক্রিকেট টিমে। সহকারী প্রশিক্ষক হিসেবে।"
ছোট থেকেই তাঁকে দেখে এসেছেন কোলাঘাটের ক্রীড়া পরিচালক শ্যামলেন্দু আদক। নন্দন মাজীর জীবনের উত্থান তিনি দেখেছেন নিজের চোখে। তাঁর কথায়, "নিশ্চিত জীবন ছেড়ে মাটি কামড়ে অনিশ্চিত ভালোলাগার জীবনে দিনের পর দিন পড়ে থাকা। একদিন ম্যাসিওর কাজে সে পাড়ি দেয় বেঙ্গালুরু। ধীরে ধীরে আসতে থাকে সাফল্য। সেখান থেকেই প্রথমে আই পি এল এ সুযোগ। আর তারপরেই সুযোগ এসে যায় ভারতীয় দলে।"
আজ থেকে আহমেদাবাদে শুরু হয়েছে ভারত ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার টেস্ট সিরিজ। সেখানেও নন্দন রয়েছেন ভারতীয় দলের সাথে। এশিয়া কাপ জয় করে ফিরে এসেই ফের ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেট টিমের সাথে। এরপর ভারতের অষ্ট্রেলিয়া সফর। সেখানে পাবেন বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের। তারপর দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। ঠাসা সিডিউল। দম ফেলার সময় নেই। কিন্তু তিনি তাঁর কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান। অবিচল। নিষ্কম্প। অলসতা দূরে সরিয়ে দিয়েছেন কবেই। তাঁর কথায় "কাজ তো সবাই করতে পারে, কিন্তু যে কাজের মধ্যে মিশে থাকে মনের গভীর থেকে উৎসারিত ইচ্ছাশক্তি আর নোনতা ঘামের ককটেল, যে কাজের মধ্যে অন্তর্নিহিত থাকে মাতৃভূমির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, গরিমা, সম্মান রক্ষার আদ্যোপান্ত বাসনা, সেই কাজই হয়ে ওঠে সবচেয়ে দামি। আমি সেরকম কাজ করতে ভালোবাসি।"
🍂
0 Comments