জ্বলদর্চি

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস /দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে


বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস 

দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে 

আজ ১০ই অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস, মানুষের জীবনে শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষ গুরুত্ব রাখে। আসুন মানসিক স্বাস্থ্য কি এবং মানব জীবনে এর গুরুত্ব বা কতটা,এই সম্পর্কে সবকিছুই জেনে নিই।

মানসিক স্বাস্থ্য বলতে সুস্থতা বোঝানো হয়, যেখানে একজন ব্যক্তি তার নিজের ক্ষমতা উপলব্ধি করতে পারে, জীবনের স্বাভাবিক চাপ সামলাতে পারে, উৎপাদনশীলভাবে কাজ করতে পারে এবং নিজের সম্প্রদায়ে অবদান রাখতে সক্ষম হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এটি শারীরিক, মানসিক, এবং সামাজিক সুস্থতার একটি সম্পূর্ণ অবস্থা।

প্রতি বছর ১০ই অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়, যা মানসিক সুস্থতার গুরুত্বের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ২০২৪এর থিম ছিল -"কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সময় এসেছে"—ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে পরিবেশ তৈরির জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে কারণ কর্মক্ষেত্রে চাপের কারণে আরও বেশি সংখ্যক ব্যক্তি মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা অনুভব করছেন। এই সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে কেবল কর্মীদেরই লাভ হয় না, বরং সাংগঠনিক উৎপাদনশীলতা এবং সংস্কৃতিও বৃদ্ধি পায়।
🍂

আজকের দ্রুতগতির বিশ্বে, যেখানে কর্মক্ষেত্রে চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, পেশাদার পরিবেশে মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক চাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের চ্যালেঞ্জগুলি সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে, যার ফলে নিয়োগকর্তা এবং কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর কর্ম পরিবেশ গড়ে তোলা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব ক্রমবর্ধমান ।
কর্মক্ষেত্র একজন ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, কঠোর সময়সীমা এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে, কর্মীরা প্রায়শই নিজেদেরকে চাপে ফেলেন। প্রকৃতপক্ষে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগ বিশ্ব অর্থনীতির আনুমানিক ক্ষতি করে। প্রতি বছর ১ ট্রিলিয়ন ডলার উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে এই সংখ্যাগুলি মানসিক স্বাস্থ্য এবং কর্মক্ষেত্রের কর্মক্ষমতার মধ্যে সরাসরি যোগসূত্র দেখায়।

কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা করলে কর্মচারী এবং ব্যবসা উভয়ের জন্যই মারাত্মক পরিণতি হতে পারে। যখন মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় না, তখন কর্মীরা নিম্নলিখিত চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হয়, যেমন..

কমেছে উৎপাদনশীলতা: মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা প্রায়শই মনোযোগ এবং কর্মক্ষমতা হ্রাস করে।

অনুপস্থিতি বৃদ্ধি: চাপ-সম্পর্কিত সমস্যার কারণে কর্মীরা আরও বেশি সময় কাজ থেকে ছুটি নিতে পারেন।

বেশি টার্নওভার: শ্রমিকদের এমন চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে যা মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির দিকে পরিচালিত করে।

নেতিবাচক কর্মসংস্কৃতি: মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সহায়তার অভাব একটি বিষাক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারে যেখানে কর্মীরা অবমূল্যায়িত এবং চাপ অনুভব করেন।

মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোলামেলা কথোপকথন করা উচিত। নিয়োগকর্তাদের অবশ্যই মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে একটি উন্মুক্ত সংলাপ গড়ে তুলতে হবে, কর্মীদের বিচার বা প্রতিক্রিয়ার ভয় ছাড়াই তাদের চ্যালেঞ্জগুলি ভাগ করে নিতে উৎসাহিত করতে হবে।

মানসিক স্বাস্থ্যের চারপাশের চাপ কমাতে কর্মশালা এবং সচেতনতামূলক অধিবেশন পরিচালনা করতে হবে।
নেতা এবং ব্যবস্থাপকদের তাদের নিজস্ব মানসিক স্বাস্থ্য অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করতে উৎসাহিত করতে হবে।

কর্মচারী সহায়তা কর্মসূচি (EAPs) বাস্তবায়ন করতে হবে। EAP গুলি কর্মীদের কাউন্সেলিং এবং থেরাপি সহ পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য সংস্থানগুলিতে অ্যাক্সেস প্রদান করে। এই প্রোগ্রামগুলি কর্মীদের চাপ, উদ্বেগ এবং অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করে।

কাউন্সেলিং পরিষেবা প্রদানের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারদের সাথে অংশীদারিত্ব গ্রহণ করতে হবে। দূরবর্তী কর্মীদের জন্য ডিজিটাল মানসিক স্বাস্থ্য প্ল্যাটফর্ম প্রদান করতে হবে।
সকল কর্মীর কাছে এই সম্পদের প্রাপ্যতা সম্পর্কে নিয়মিত প্রচার করতে হবে।

কর্মক্ষেত্রে চাপের জন্য কর্মজীবনের ভারসাম্যহীনতা একটি বড় কারণ। নিয়োগকর্তাদের অবশ্যই কর্মীদের বিরতি নিতে, সীমা নির্ধারণ করতে এবং কর্মঘণ্টার বাইরে কাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে উৎসাহিত করতে হবে।

ব্যক্তিগত দায়িত্ব পালনের জন্য নমনীয় কর্মঘণ্টা স্থাপন করতে হবে।কর্মীদের নিয়মিত বিরতি এবং ছুটি নিতে উৎসাহিত করুন।
কর্মঘণ্টার পরে যোগাযোগ নিরুৎসাহিত করুন, নিশ্চিত করুন যে কর্মচারীরা কর্মঘণ্টার বাইরে কর্ম-সম্পর্কিত বার্তাগুলির উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

মানসিক স্বাস্থ্যের সতর্কতামূলক লক্ষণগুলি চিনতে ব্যবস্থাপকদের প্রশিক্ষণ দিন
কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণগুলি সনাক্ত করতে এবং যথাযথভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন।

মানসিক চাপ, উদ্বেগের লক্ষণগুলি কীভাবে সনাক্ত করতে হয় সে সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।
ম্যানেজারদের উৎসাহিত করতে হবে যেন তারা নিয়মিতভাবে দলের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং তাদের সুস্থতা মূল্যায়ন করেন।
যখন কোনও কর্মচারী মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উদ্বেগ প্রকাশ করেন, তখন পরিচালকদের অনুসরণ করার জন্য প্রোটোকল তৈরি করতে হবে।

একটি ইতিবাচক কর্মপরিবেশ দলগত কাজ, সহযোগিতা এবং শ্রদ্ধা বৃদ্ধি করে, যা চাপ কমাতে এবং মানসিক সুস্থতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। কর্মীরা যেখানে মূল্যবান বোধ করেন সেখানে একটি সহায়ক সংস্কৃতি তৈরি করা অপরিহার্য।

দলীয় সাফল্য এবং ব্যক্তিগত অবদান উদযাপন করতে হবে। সকল কর্মচারী যাতে স্বাগত বোধ করেন তা নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্ভুক্তি এবং বৈচিত্র্যকে উৎসাহিত করতে হবে।
সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ তৈরি করতে হবে, যেমন দল গঠনের কার্যকলাপ বা সুস্থতা দিবস।

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০২৪ এর প্রতিপাদ্য ছিল, "কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সময় এসেছে," পেশাদার পরিবেশে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার ক্রমবর্ধমান প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়। কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সংকটকে আর উপেক্ষা করা যাবে না। নিয়োগকর্তা এবং কর্মচারী উভয়কেই মানসিকভাবে সুস্থ পরিবেশ তৈরি করতে একসাথে কাজ করতে হবে, যেখানে সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং সমর্থন করা হবে।

Post a Comment

0 Comments