জ্বলদর্চি

সঞ্জীব ভট্টাচার্য ও সন্দীপ দত্ত-র অণুগল্প

সঞ্জীব ভট্টাচার্য ও সন্দীপ দত্ত-র অণুগল্প 
দাগ
সঞ্জীব ভট্টাচার্য    



 রাকেশ আর শোভন। একই স্কুলের দুই শিক্ষক। প্রায় সমবয়সী, ৩০ অনূর্ধ্ব। খুব ভাব দুজনের। গরমের ছুটিতে দার্জিলিং বেড়িয়ে বাসে করে ফিরছিল। কাল মুর্শিদাবাদ দেখে বাড়ি ফেরা। 

   কন্ডাক্টর-নির্দিষ্ট হোটেলে গিয়ে রুমে ঢুকেই ওদের গা ঘিন ঘিন করে উঠলো। বেড শীটটা দাগে ভর্তি। শেষ অবধি যে খেতে দিতে এসেছিল তাকে বলে পাল্টানো। খেতে খেতে রাত প্রায় বারোটা। এমন সময় কেমন চেঁচামেচির শব্দ। শোভন দরজা খুলে দেখতে গেল। সঙ্গে সঙ্গে প্রায় উলঙ্গ এক মহিলা তাদের রুমে এসে ঢুকে গেল। 'বাঁচাও' 'বাঁচাও' শব্দে শোভনের কেমন একটা দয়া হলো। সে দরজা বন্ধ করতে চাইছিলো।
     কিন্তু রাকেশ আসন্ন বিপদের গন্ধ পেয়ে দরজার বাইরে এসে ইশারা করে মাতাল পুরুষটিকে ডাকলো।  লোকটা চুল ধরে মেয়েটিকে টানতে টানতে নিয়ে  যাচ্ছিলো আর খিস্তি দিচ্ছিলো, শালি তোর জন্য দশ হাজার টাকা? আমাকে ধাপ্পা। রাকেশ বিছানায় ফিরে এলো। শোভন অভিমান করে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। রাকেশের ঘুম আসছিল না।  একটা দাগ তার চারদিকে ঘোরাফেরা করছে। সে ভোরের অপেক্ষায় বসে রইল।
🍂


আইনরক্ষক
 সন্দীপ দত্ত


"আপনার কাউকে সন্দেহ হয়?" বিপিনের চোখে চোখ রেখে সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে জিজ্ঞেস করলেন অফিসার।
"হ‍্যাঁ স‍্যার, আমার মাকে।" বিপিন দৃঢ় গলায় বলে।
"মাকে! নিজের মাকে সন্দেহ করছেন আপনি? যে আপনাকে জন্ম দিয়েছে, এই পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে,যার জন‍্য আজ আপনার এই ভাল থাকা, ছেলে হয়ে সেই মাকে আপনার সন্দেহ করতে বিবেকে বাধছে না? কোথায় আপনি কেসটাকে অন‍্যভাবে সাজাতে মরিয়া হবেন, তা না করে আপনি বলছেন আপনার বউয়ের কানের সোনার দুলজোড়া আপনার মা চুরি করেছে? কেসটা কোর্টে উঠলে আপনার মাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। একটা পুলিস ফ‍্যামিলিতে এই ধরণের ঘটনা ঘটলে মিডিয়া ছেড়ে কথা বলবে না। একবার ভাবুন! আসুন না, ব‍্যাপারটাকে আমরা নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিয়ে কেসটাকে ঘুরিয়ে দিই।" বলে আঙুলের ফাঁকে ধরে থাকা সিগারেটটাতে আবার একবার টান দিলেন অফিসার রুদ্রাংশু সেনাপতি। 
সেই কোন সকাল থেকে মাথাটা বড্ড ধরে আছে তাঁর। চা খেতে গিয়ে অমন দামি কাপটা যদি না ভেঙে ফেলত বাবা, আশি বছরের বুড়ো মানুষটার গালে ওভাবে সপাটে একটা চড় কষাতে পারতেন কি তিনি? বিদেশ থেকে আনা সেট। বেশ দামি। গায়ে লাগে না!


Post a Comment

0 Comments