কথাকলি সেনগুপ্ত
আপনাদের সাথে এবারে আমাদের গেলো বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে ওয়েস্ট কোস্ট এর ঝটিকা সফর এর বিষয়ে একটু গল্প সেরে নি; আমরা প্রথম ওই দিকে বেড়াতে যাই আজ থেকে প্রায় আট বছর আগে, সেই লেক Brunner এর ই অন্য দিকে থেকে ছিলাম ;নিচে তার ছবি দিয়েছি; তখন চার পাশে তে হোটেল, বা ব্যাচ জাতীয় থাকবার জায়গা খুব ই কম ছিল, আর লেক টাকে ও আয়তনে যেন আরো বড় তাই লেগেছিলো।
তা আমরা `মোয়ানা' নামের যে জায়গাটা তে বাড়ি এবারে পেয়েছিলাম, সেটা থেকে লেক তা মাত্র পাঁচ মিনিটের ই হাঁটা পথে; বাড়িটার দোতালাতে দাঁড়িয়ে নানা দিক থেকে সেটা খুব সুন্দর দেখা ও যাচ্ছিলো; বাড়িটা তে জনা দশেক লোক একসাথে থাকতে পারে, পুরো তাই ভাড়া করে ছিল; একটি মারাঠি বন্ধু পরিবার আর আমাদের আরেক কেরালার বন্ধু সব মিলিয়ে মোটমাট আমরা দশ জন তাই বেশ হৈ হৈ ব্যাপার আর কি!
তাই এবারে দলে বেশ ভারী হয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল; সাধারণতঃ আট জনের বসবার বড় গাড়িতে আমরা একসাথে যায়; এবারে লোক বেশি বলে আরো দুই জন নিজের নিজের ছোট গাড়ি'কে চালিয়ে নিয়ে যেতে অনুমতি পেয়েছিলো; অনেক টা ই পাহাড়ি রাস্তা আছে, আর্থার পাস এতে চালানো বেশ শক্ত আদি সতর্ক বাণী দিয়ে তবে গিয়ে 'দুর্গা দুর্গা' বলে রওনা দেয়া হয়েছিলো; তিন তিন খানা গাড়ি তো বেশ বেলা এগারোটা নাগাদ ক্রিস্টচার্চ শহর ছেড়ে হাইওয়ে ধরলো।
ওল্ড ওয়েস্ট কোস্ট রাস্তা ধরে অনেক রকমের ফার্ম (হরিণ, আলপাকা আর গরু বাছুর)দেখতে দেখতে আমরা প্রথম 'কাসল হিলস' এতে খানিক বিশ্রাম এর জন্যে দাঁড়িয়ে নিলাম; আকাশ খুব পরিষ্কার ই ছিল; কিন্তু তার পরেই যখন সেই আর্থার পাস এর পাহাড়ি বাঁক গুলো এলো, হঠাৎ করে কথা থেকে জানি না ঘন মেঘ প্রায় রাস্তার ওপরে নেমে এসে চেপে ধরলো, যেন তারা আমাদের অপেক্ষাতে কোথাও লুকিয়ে ছিল; এতো মেঘ ছিল যে হেড লাইট জ্বেলেও ১০/১২ ফুট এর বেশি সামনে কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না; একেবারে গুঁড়ি মেরে চলা'র মতন করে প্রায় ৪০/৪৫ মিনিট খুব সতর্কতা 'র সঙ্গে চালিয়ে আমরা সে জায়গাটা পেরিয়ে গিয়েছিলাম; তার পরে অবশ্য আর কিছু গোলমাল হয় নি।
বিকেল নাগাদ আমাদের "রিলাক্স ইন মোয়ানা " নামের বাড়িটিতে আমরা ঢুকে পড়ি; নিচে খুব সুন্দর লন, আর তার চার পাশে নানা বড় গাছে ঘেরা, কাপড় শুকানোর জায়গা, বড় বড় ঘর, কিচেন ওপরে, সেখানেও সবার ঘর, সবাই মিলে বসে খাবার ঘর, বিশাল বড় ঘেরা বারান্দা, যা পুরো বাড়িটাকে ঘিরে চলে গেছে, বার-বি-কিউ করবার জায়গা এসব ছিল সেখানে. মানে কোনো রকমের সুবিধের খুব একটা অভাব ছিল না; যাতে আমি আর ননদ মূলতঃ লম্বা জার্নি করে এসে একটু বিশ্রাম পাই, সেই রাতে ছেলেরা হাত লাগিয়ে BBQ করে খাবার ব্যবস্থা করেছিল; স্কুয়ার (মানে কাঠি কাবাব এর মতন আর কি) এতে মশলা লাগানো চিকেনের, টুকরো, তার সাথে পেয়াঁজ, সিমলাই মরিচ এর টুকরো, ফুল কপি, এছাড়া আগে তথা বাড়ির থেকে ম্যারিনেট করে নিয়ে আসা পাঁঠা'র মাংস'র টুকরো, এছাড়া বেগুন, আলু এসব, পাউরুটি দুই রকমের তাতে স্প্রেড লাগিয়ে নিয়ে। গরম গরম সব তৈরী হয়ে আসছিল, আর সব বেশ রান্না ঘরে তে না ঢুকেই বড় টেবিলে সাজানো হয়ে যাচ্ছিল। চা কফি ঠান্ডা পানীয় এসবের ব্যাবস্থা ও ছিল।
মজার ব্যাপার হলো - যেখানে ছেলেরা রান্না করছিল, সেই বিবিকিউ মেশিন টির ঠিক ওপরের বাতিটি ই খারাপ দেখা গেল। তখন রাত সাড়ে আটটা পার হয়ে গেছে। চারদিকে অন্ধকার হয়ে এসেছে, কী করা যায়? হঠাৎ করে দলের একজন বুদ্ধি দিল - মাইনার'স লামপ এর দুটো দুজনে কপালে বেঁধে নিক। সত্যিই তাই ই করা হলো। আর তাইতে কাজ ও ভালো ভাবে হয়ে গেল। সেদিন খাবার আর বাসন ধোয়া এর পাট চুকিয়ে তাড়াতাড়ি ই শুয়ে পড়ে ছিলাম।
পরের দিন আমরা খুব তাড়াতাড়ি করে উঠে সকালের চা পাউরুটি খেয়ে নিয়ে, রওয়ানা দিলাম লেক মাঠেসন এর দিকে; এটি একটা বিশাল গ্লাসিয়াল লেক, যেটার একদিকে ফ্রান্স জোসেফ গ্লেসিয়ার আর অন্য দিকে ফক্স গ্লেসিয়ার; খুব ভালো দিনে আকাশ পরিষ্কার থাকলে ওই লেক এর জলে তে দুটোর খুব সুন্দর ছায়া পড়ে - যেটা বিশেষ করে দেখতে দেশ বিদেশ থেকে প্রচুর লোকে আসে রে; তা বেরুনোর আগে খুব দক্ষ হাতে বেশ কিছু স্যান্ডউইচ বানিয়ে নেয়া হলো, যাতে রাস্তায় আমরা একটু খানিক বিশ্রাম নেবার সময়ে খেতে পারি; চা কফি ও ফ্লাস্ক এতে করে নিয়ে নেয়া হয়েছিল; খুব সুবিধে হয়েছিল তাতে।
আমরা প্রায় চার ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে ওই লেক এর কাছে পৌঁছেছিলাম; তা, ভিউ প্লাটফর্ম তা আবার ঘন বনের মধ্যে দিয়ে ৪৫ মিনিট মতন হেঁটে পৌঁছাতে হয়; সেটা ও করা হলো, খুব ই সুন্দর কিন্তু বেশ পরিশ্রম সাধ্য ছিল সেটা। আমাদের গাড়ি যেখানে পার্ক করে রেখে এসেছিলাম, সেখানে একটা খুব বড় কাফে ছিল; আমরা সবাই সেখানে একত্র হয়ে, খানিক বিশ্রাম নিয়ে, কেক আর এক কাপ করে কফি খেয়ে তার পরে ফেরার রাস্তা ধরেছিলাম।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে - ফক্স আর ফ্রাঞ্জ জোশেফ এই দুই গ্লেসিয়ার এর মাথাতেই খুব মেঘ করে বসেছিল; তাই লেক এর জলেতে যে প্রতিফলন দেখতে চেয়েছিলাম, সেটা খুব পরিষ্কার করে কিছু দেখিনি; আর ছিল হেলিকোপটার ফ্লাইট নিয়ে একেবারে গ্লেসিয়ার এতে গিয়ে নামা; ঠিক সেই দিনেতেই নর্থ আইল্যান্ড এতে এরকম একটা টুরিস্ট হেলিকোপটার ক্র্যাশ করবার খবর আসে; ব্যাস, আর তাইতে চড়ি? আর সত্যি বলতে কি, যদি মেঘে ঘিরে থাকে তো সেটা করে যাওয়া তো খুব বিপদের ই হতো, তাই না? সেদিন খুব ক্লান্ত হয়ে আমরা বেশ রাত নয়টা নাগাদ মোয়ানা'তে ফিরতে পেরেছিলাম; চট পট ভাত ডাল আর ফুল কপি আর আলু'র চচ্চড়ি করে খেয়ে নিয়ে সবাই শুয়ে পড়েছিলাম।
পরের দিন মঙ্গলবারে'তে আমরা পুনাকইকি রকস দেখতে গিয়েছিলাম; এটি একটা ন্যাশনাল পার্ক এর মধ্যে, আর প্রচুর লাইম সটোনস এর রকস যা বহু বছরের সমুদ্রের আর হাওয়ার দাপট সহ্য করতে করতে বিশেষ চেহারা নিয়েছে, যাকে দেখতে প্যান কেক এর মতন লাগে, বলে প্যান কেক রকস বলেও অভিহিত করা হয়ে থাকে; কিছু কিছু জায়গাতে আবার খুব জোরে সমুদ্রের জল ঢুকে ফেনা হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে, যাকে দেখলে মনে হয় যেন বড় কোনো তিমি মাছে শ্বাস নিচ্ছে; সেগুলো কে Blow holes বলা হয়ে থাকে। সেখানেও যেতে ২০ মিনিটের আসতে কুড়ি মোট ৪০ মিনিটের বনে পাহাড়ি পথেতে হাঁটা ছিল। দু দুবার বাচচা সহ ওয়েকা পাখিরা ঝোপে ঝাড়ে দেখা দিয়েছিল।
সেখান থেকে "রস" সমুদ্রের ধার এতে গিয়ে খানিক চা কফি আর স্যান্ডউইচ খেয়ে বিরাম দিয়ে আমরা ওয়েস্ট পোর্ট আর হকিটিকা এই দুটো জায়গা ঘুরতে গেলাম; সেগুলো শুধু ওপর ওপর, কারণ পরের দিনে আমাদের হক্কিটিকা গর্জ বিশেষ করে ঘুরতে যাবার ছিল; সেসব করে মোয়ানা তে বিকেলে ফিরে এলাম; পথে সুপারমার্কেট থেকে পাউরুটি, স্প্রেড আদি যা যা রসদ কমে এসেছিলো, সেগুলো কিনে নিয়ে এসেছিলাম। সে রাতে খিচুড়ি আর আলু বেগুন ভাজা দিয়ে মনের সুখে রাতের খাওয়া সারা হলো।
বুধবারে তে আমরা তৈরি হয়ে হক্কিটিকা গর্জ দেখতে বেরোলাম; প্রায় পোনে দুই ঘন্টা ড্রাইভ করে সেখানে তে গিয়ে দেখি, বেশ খানিকটা আবার সেই জঙ্গল আর পাহাড়ি পথে হাঁটা আছে; তবে ই গিয়ে ভিউ প্লাটফর্ম এতে চড়া যাবে; ভাগ্যে একেবারে শেষের দিকে গিয়ে খুব উঁচু নিচু রাস্তা ছিল, কিন্তু শুরুতে নয়; তাই দলের সবাই, কমজোর হাঁটু ওলা রাও, বেশ খানিকটা আসতে পেরেছিলো।
দু দুটো ঝোলা ব্রিজ পেরোতে হয়েছিল, লেখা ছিল যেন ৬ জনের বেশি একসাথে তাতে না চড়ে; ছয় কি, দুজনে উঠলেই যে জোরে সেগুলো দুলতে লাগছিলো যে কি বলবো! তবে হক্কিটিকা নদী, ও তার দুই তিন তে বড় বড় শাখা নদী তোতারা, ইনঙগাহুয়া এসব দেখবার মতো বটে; শেষ যেটার নাম বললাম, সেটাতে NZ এর সর্ব প্রথম হাইড্রো পাওয়ার তৈরি শুরু হয়েছিল, Walter প্রিন্স নামের এক ভদ্রলোকের দ্বারা বিংশ শতকের একেবারে গোড়াতে; সেটা ছিল প্রাইভেট; যবে থেকে সরকারি ভাবে বিদ্যুৎ তৈরি শুরু হয়, সেটা বন্ধ হয়ে যায়।
বৃহস্পতি বার এতে গ্রে - মউথ এতে গিয়ে গ্রে নদী ও তার আশ পাশ খানিক ঘুরে বেড়ানো হলো; কিছু স্থানীয় ওয়াক তথা বনে পথে হাঁটা এসব করে বাইরে খেয়ে নিয়ে উঠতে উঠতেই খুব জোরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো; সমুদ্র একদিকে, তার ওপরে বৃষ্টি পড়ছে, বিশাল বড় গ্রে - নদী, তাইতে বৃষ্টি পড়ছে, খুব সুন্দর লাগছিলো দেখতে; তবে সেই কারণে আমাদের মোয়ানা ফেরা ও একটু তাড়াতাড়ি করে নিতে হয়েছিল।
শুক্রবার আমরা `ভ্যালেন্সকি ফরেস্ট ওয়াক' এতে গিয়েছিলাম; সেটা আমাদের থাকার জায়গা'র থেকে বেশ কাছেই, তবে খুব খানিক পাহাড় আর বনে মিলিয়ে সেই হাঁটা টা; ঢোকা থেকে বের হয়ে আসা পর্যন্ত এক ঘণ্টা লাগে! তা সেখানে সথানীয় এক খুশ - মেজাজের সারমেয় এর সাথে দেখা হয়ে গেল। তার মালিক তাকে লিশ খুলিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সে তো খুবই খুশি হয়ে আমায় আর আমার বন্ধু টিকে শুঁকে লেজ নেড়ে আনন্দ প্রকাশ করে বসল!
শনিবার এতে সকাল সকাল তৈরি হয়ে খেয়ে নিয়ে আমরা ক্রিস্টচার্চ এর জন্যে রওনা হয়ে যাই; রাস্তায় এত্ত জোরে `ক্লাউড বার্স্ট' হয়ে তেড়ে বৃষ্টি আর শীল পড়তে লেগেছিলো যে, আবার সেই রওনা হবার দিনের মতন গাড়ি হামাগুড়ি দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে কোনো মতে প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে motorway দিয়ে চলতে বাধ্য হয়েছিল, অনেক কটা গাড়ি আসে পাশে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে পড়েছিল; পাছে বাজে পড়ে, তাই সে দিকে আমরা যাই নি; খুব গেছে বটে সময় টা! আমরা প্রায় 22 বছর এখানে আছি, কখনো এরকম অভিজ্ঞতা হয় নি আগে;
বিদেশে বেড়ানো; কিছু সুবিধে অসুবিধের গল্প:
নানা সময় এদেশে বেড়ানোর বিষয়ে আমার বন্ধুদের লিখে আমি পাঠিয়ে থাকি; এবারে একটু অন্য বিষয়ে লিখছি; নিউজিল্যান্ড এতে এসে আমাদের নানা দিকে বেড়াতে যাবার সময় নানা কাণ্ড হয়েছে। তাদের মধ্যে একটা মজার ব্যাপার বলি; সেটা হচ্ছে ওয়েস্ট কোস্ট এর 'মোয়ানা' তে বছর চারেক আগে থাকবার সময়। বাড়িটি দোতালা ছিল। আমাদের একতলা থেকে দোতলা উঠবার সিঁড়ি নিয়ে ই ঘটনা টা; এটা ছিল আমাদের কলকাতার চিত্তরঞ্জন এভিনিউ এর সেই ৩৪ টেলিফোন এক্সচেঞ্জ এর বাড়িটা 'র মতন `স্পাইরাল' আর একেবারে `ভার্টিকাল'; যদিও লোহার বা সিমেন্ট এর নয়, কাঠের তৈরি, কিন্তু হাঁটু তে বেশ শুরুতে কষ্ট হতো।
🍂
বাড়ির মালিক তো বেশ `ইকো ফ্রেন্ডলি' উপায়ে আর অতি অল্প জায়গা নিয়ে সিঁড়ি করেই খালাস; সেটা দিয়ে একবার যাও বা উঠে তো পড়লাম, কিন্তু দিনে দশ বারে দশ রকম কাজেতে অনেক বার ই নামতে হতো, শোবার ঘর গুলো ওপরে, রান্না খাওয়ার ব্যাবসথা তো নীচে; আর তখন ই যেন কখন গোড়ালি, কখন বা হাঁটুতে ভারী চাপ পড়তো; তা একদিন সবে আমি নিচে নেমেছি, বন্ধু শাইনি'র সঙ্গে কথা বলে ওপরে উঠতে যাবো, দেখি দলের সবচেয়ে ছোট সদস্য টি নিচে নামছে, ঠিক বয়স্কদের মতন, একটা সিঁড়ি তে প্রথম পা দিয়ে, দুই নম্বর তাকে তাতে নামিয়ে, তারপরে আবার পরের তাতে, এই আর কি; তা আমি তো হেসে উঠে ওকে বলেছি `তুই দেখি একেবারে বুড়ো হয়ে নামছিস রে'; সে একগাল হেসে বলে উঠেছে - `বল কাকিমা, বুড়োরা এরকম করে নাম কিনা'!
আমি আরো জোরে হেসে ওকে বললাম যে খানিক আগেই আমি নিজে ওরকম ভাবেই নেমেছিলাম; সে বেচারা তখন লজ্জাতে লাল বেগুনি হয়ে বারে বারে বলতে লাগলো `কাকিমা, আমি মিন (mean) হয়ে কিছু বলি নি জানো তো'; হিঃ হিঃ!
কিন্তু ওর কপালে আরো দুর্ভোগ সেদিন বাকি ছিল; তার পরেতে দেখি প্রথমে ওর কাকু নামছে, ঠিক ওই রকম করে, আর পেছনে আমার ননদ টি ও; বেচারা তখন মুখ লুকোতে জায়গা পায় না আর কি; আসলে বহুদিন আমাদের ওই রকম খাড়া সিঁড়ি বেয়ে ওঠা নাম করবার অভ্যাস চলে গেছে তো, তাই শুরুতে বড় রা সবাই খুব সতর্ক হয়ে চলছিলাম; তার পরে তে ঠিক হয়ে যায়। এর খানিক পরে যখন আমরা বেড়াতে যাচ্ছি, আর যে যার গাড়িতে নির্দিষ্ট জায়গাতে উঠতে যাচ্ছি, তার বড় ভাই দেখি হাসি হাসি মুখে ননদ এর কাছে এসে বলছে যে `জানো মা, ভাই এর আজকে সকাল থেকে ই দিনটা খারাপ যাচ্ছে'; একটু আগেই ও তার কামরা থেকে দরজা'র সামনে পায়ের শব্দ শুনে (নিজের দাদা এসে চুপ করে ওকে ভয় দেখানোর জন্যে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে মনে করে ) `কে রে ওখানে' ঠিক বাড়ির বুড়ো কর্তা দের চালে বলে উঠেছিল; কিন্তু দুর্ভাগ্য ক্রমে সেটা তার দাদা ছিল না, আমার বন্ধুটি আসলে স্নান সেরে তার স্নানের কাপড় মেলতে যাচ্ছিলো ওই দিক দিয়ে; আন্টি হেসে উঠতে সে আবার বেগুনি বর্ণ ধারণ করে।
আমাদের বালতি আর মগ বিভ্রাট নিয়ে এবারে বলি; মানে রওনা হবার আগে খুঁতখুঁতে স্বভাবের আমার জীবন সাথী টি দুটো মগ বাথরুম এতে ব্যবহার করবার জন্যে কিনে এনেছিল; না, স্নানের জন্যে নয়, বেড়াতে গিয়ে 'বড় কম্মো' সেরে ধোয়ার কাজের জন্যে; এসব দিকে তো স্নানের জায়গা ছাড়া জলের ব্যবস্থা সেরকম কোথাও থাকেই না; তা প্রথম বারেতে মগ 'টা ননদ নিজে পছন্দ করে কিনেছিলো, সেটা কি যে বিরাট কি বলবো! আমার মনে আছে যে তার দাদা ও খুঁত খুঁত করছিলো যে এত বড় একটা বোধহয় অসুবিধের সৃষ্টি করবে; তা সে শোনে নি।
এবারে ওয়েস্ট কোস্ট এতে পৌঁছে হলো কি, প্রথম দিন তো কোনোমতে ম্যানেজ হলো; তার পরেই দেখি Grey মাউথ এর সুপারমার্কেট এতে গাড়ি পাউরুটি আদি রসদ এর জন্যে যেই থেমেছে, ননদ একেবারে তেড়ে মেড়ে বালতি আর মগ এর বিভাগে গিয়ে দাঁড়িয়েছে; প্রশ্ন করে জানতে পারলাম যে ওর আনা মগ টা আগের দিন ওকে খুব ঝামেলাতে ফেলেছিলো; এত্ত বেশি বড় ওটা যে ওটা থেকে জল ঢালা তাই একটা বিরাট ব্যাপার, ওটা নাকি `ঠিক জায়গাতে' যত না জল ঢেলেছে, চারি দিকে ছড়িয়েছে তার চেয়ে বেশি; আবার নিচের জায়গা মুছে ওকে সাফ করতে হয়েছে; সবাই তো খুব হাসতে লেগেছে। `তোকে বলে ছিলাম আগেই, তুই শুনিস নি'!
তা এবারে দুটো মগ কেনা হলো, কিন্তু সেগুলো ছিল আসলে measuring মগ, যা কিচেন এতে এখানকার লোকে তে ব্যবহার করে; এখানে তো স্নানের জায়গা ছাড়া টয়লেটে জলের ব্যাবহার কেউ চিন্তা ই করতে পারবে না; কিন্তু আসবার সময়ে আর কেউ ওই মগ বা বালতি ধরতে চায় না; একেবারে নতুন, মাত্র ৫/৬ দিনের ব্যবহার করা, কিন্তু `পায়খানাতে' ব্যবহার হয়েছে বলে কথা; তো ওই মোয়ানা'তেই তাদের কে ফেলে আসা হয়েছে।
আসতে আসতে গাড়িতে দেখি সবাই এর মাথায় সেই চিন্তা ঢুকেছে - `বাড়িওয়ালা আবার আমরা ভুল করে ফেলে গেছি মনে করে আমাদের কে courier করে পাঠিয়ে দেবে না তো ওগুলো'? আমরা তো হেসে মরছি তখন; কারণ এর কাছাকাছি একটি অভিজ্ঞতা আমাদের এর আগের বারেই ঘুরতে গিয়ে হয়েছিল; একবার মেয়ে ভুল করে আমাদের ই একটি ভিসিডি প্লেয়ার এর রিমোট মটুএকা ঘুরতে গিয়ে সেখানেই ফেলে চলে এসেছিলো; বাড়ির মালিক পরে দেখতে পেয়ে সেটি পোস্ট এর মাধ্যমে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন; তবে স্বস্তি'র কথা হলো যে সেবারে কোনো courier আমাদের কাছে আসে নি।
বুঝুন অবস্থা, এটাও আরেকটা কালচারাল শক যেটাতে আমাদের অভ্যস্ত হতে বহু সময় নিয়েছে; এসব দেশে বেড়াতে আসতে গেলে এ জাতীয় অসুবিধের কথা মাথায় রাখলে মানিয়ে নিতে সুবিধে হবে। আমরাও তো প্রথমে টুরিসট হিসেবে ই নিউজিল্যান্ড এতে এসেছিলাম! জন্ম থেকেই আমরা আর দশ জন স্বদেশ বাসীর মতন টয়লেটে জলের ব্যাবহার করেই অভ্যস্ত। এর বাইরে যে কিছু হতে পারে তা তো ধারণা তেই ছিল না। তার ওপরে আবার দলে শবশুর মশাই ও শাশুড়ি-মা এঁরা ছিলেন। বন্ধু শাইনি'র মা বাবা ছিলেন; এ নিয়ে ওঁদের বিশেষ করে খুবই অসুবিধা হয়েছিল। দলে বয়স্ক আত্মীয় স্বজন এঁরা থাকলে পর এ নিয়ে বিদেশে অসুবিধে হতে পারে, সে বিষয়ে মানসিক প্রস্তুতির যথেষ্ট দরকার রয়েছে; সংস্কৃতি গত কারণে সেটা আমাদের কিন্তু ছিল না।
1 Comments
হি হি হি, খুব ভালো লাগলো।এই টয়লেট নিয়ে না না অভিজ্ঞতা আমাদেরও আছে টয়লেটেও কার্পেট, ছেলে যখন এখন আমেরিকা গেল,ওর বাবা খুঁজে খুঁজে দোকান থেকে সবচেয়ে ছোট বালতি কিনে সবার আগে প্যাক করে দিল। জায়গা আর ওজনের জন্য অন্য অনেক জিনিস বাদ পড়লেও বালতি ঠিক গেছে।😂
ReplyDelete