নিউজিল্যান্ডের কিয়া
কথাকলি সেনগুপ্ত
আজকে আপনাদের নিউজিল্যান্ডের কিয়া পাখিকে নিয়ে গল্প করতে বসেছি। জাতে সে হোল mountain parrot, আর বেশ উড়ে বেড়াতে পারে, তার স্বদেশী অন্য জাত ভাই বন্ধু সেই কিউই বা কাকাপো 'দের মতো মাটিতেই চরে বেড়ানো গোছের এলেবেলে নয়! তবে এর আরো কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। মানুষ কে দেখে সরে যাওয়া বা ভয় পাওয়ার মতো কোনো দুর্বলতা এদের মধ্যে নেই।
আমরা তখন সাউথ আয়লানড এর ফিয়রড ল্যান্ড নামক অসাধারণ সুন্দর একটি বনের মধ্যে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে ফিরছি। মিলফোর্ড সাউন্ড নামের বিখ্যাত একটি জল প্রপাতের cruise শেষ করে। বনের একটি জায়গাতে অনেক গাড়ি ই খানিকটা বিশ্রাম নিতে দাঁড়িয়েছে দেখে আমরাও তাই করেছি। এ বেশ একটি গাছের ডাল থেকে কয়েক টি তুরুক লাফ দিয়ে সোজা সামনে চলে এল। এদিকে সেদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমার দিকে মনোযোগ দিতে মনস্থির করে বসল।
আমার পায়ের লেস বাঁধা জুতোর লেস টা বোধ করি ওর পছন্দ হয়ে গেছিল। সেটার এক প্রান্ত ধরে জব্বর টানাটানি লাগিয়ে দিল! আমার সাথীরা তো মজা পেয়ে খুব হাসছে, আর তারা আর অন্য গাড়ির লোকেরা ছবি তুলতে লেগেছে। তার কোনো হেল-দোল নেই! আমার ননদ তো ভয় পেয়ে সোজা গাড়ি তে ঢুকে পড়েছে আর 'ও বৌদি, চলে এস, এ কী ডাকাতে পাখি রে বাবা' বলে আমায় ডাকাডাকি শুরু করেছে। আমি যাব কি, একটু নড়বার চেষ্টা করতেই সে তার একটা পা দিয়ে বেশ করে আমার জুতো শুদ্ধ পা চেপে ধরে বসেছে।
তা খানিক পরে কি তার মতি হোল, ছেড়ে দিয়ে আবার অন্যের পা এর দিকে নজর ফেরাল। একটু আলগা পেয়ে ই আমি আর থাকি সেখানে! সোজা গাড়িতে ঢুকে গেছি। মজার কথা হোল, আমার মেয়ে ও কিন্তু সেখানে ই ছিল, তবে তার জুতো তে কোনো লেস ছিল না। তাই বোধ হয় সেই পাখি ওকে কিছু টি বলে নি। পরে খোঁজ খবর নিয়ে জেনেছি যে শুধু ঐ জুতোর লেস ই নয়, দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির ওয়াইপার এর রবারের লাইনিং বা জানালা যদি বা একটু নামানো পেয়েছে, তার লাইনিং এসব ই এই পাখি গুলো নিজেদের ঘর সাজানোর জন্য বাগিয়ে নিতে খুব পছন্দ করে। কী কান্ড! ছবিটি 2020 এর জানুয়ারি মাসের তিন তারিখে নিউজিল্যান্ডের ফিয়রড ল্যান্ড এতে তোলা।
🍂
মাঝে বেশ বছর কয়েক এটি 'বার্ড অব দা ইয়ার' এর তকমা পেয়েছিল। সেই প্রসঙ্গে এদিককার জাতীয় খবরে একটি প্রতিবেদন দেখানো হচ্ছিল।
তাইতে ডোনা মেরী লিভার নামের একজন সাংবাদিক ফিয়রড ল্যান্ড এর ঐ পাখি গুলোর বিষয়ে 'লাইভ' টিভিতে বলছিলেন। এরা বেশ খেতে ভালোবাসে, তাই ডোনা'র হাতে সেসব ও একটি বাটিতে ধরে রাখা ছিল। অকুতোভয় তিনটি কি তার ও বেশি কিয়া পাখি উড়ে এসে প্রতিবেদকের কাঁধে হাতে এসে বারে বারে বসেছিল আর খাবার নিয়ে যাচ্ছিল। এক সময় দেখা গেল - মনোযোগ টিভির ক্যামেরার থেকে তাদের খাওয়ানোর দিকে ঘোরাবে বলে একটি কিয়া তার ঐ বাঁকানো শক্ত পোক্ত ঠোঁট দিয়ে ডোনার নাক টেনে ধরছে!
0 Comments