জ্বলদর্চি

কুয়াশা যখন /পর্ব ২/বাসুদেব গুপ্ত

গল্প ধারাবাহিক  

কুয়াশা যখন  পর্ব ২
বাসুদেব গুপ্ত 

 রহস্যময় সেই লোকটি

“স্যার, আমাদের তো বলেছিলেন ওনার নাম সঞ্জিত দাস। ওনার নাকি ক্লিনিং সার্ভিস আছে, অফিস বাড়ী এসব পরিষ্কার করার অর্ডার নেন। আমার সঙ্গে টুকটাক গল্প হত। ভালো লোকটা, একটু দুঃখী মনে হত। ওর ডিটেলস আপনি আমাদের এডমিশান সেকশানে পেয়ে যাবেন”
“ঠিক আছে, ওনার দুঃখ  নিয়ে আপাতত আমাদের কৌতূহল নেই। লোকটাকে আমাদের চাই। দেখি এডমিশান সেকশানে কি পাওয়া যায়। ধন্যবাদ, আবার আসব”
“লোকটা কিন্তু সত্যি ভাল, ঠিক সময় না নিয়ে এলে পেসেন্ট বাঁচত না।“
“হুম, আপনাকে ভালই ইনফ্লুএন্স করেছে দেখছি, মনে হচ্ছে চালাক লোক। কিছু তো একটা গোলমাল আছে।“, হঠাৎ গলাটা কড়া করে পাকড়াশী বললেন, “যদি ফোন করে, বা এখানে আসে, আমাদের তক্ষুনি খবর দেবেন। কোন ভুল না হয়।“
“নিশ্চয় স্যার, পুলিশকে সাহায্য করা তো আমাদের জব ডেস্ক্রিপ্সানেই পড়ে। করব।“
হুড়মুড় করে বেরিয়ে পাকড়াশী ছুটলেন এডমিশানে। গীতা তটস্থ হয়েছিল, একটু হাল্কা হয়ে একবার সীটে গিয়ে বসল, একবার ফোন চেক করল। ততক্ষণে গৌতম আবার একটু স্থির হয়েছেন। 

 

“সিস্টার, সিস্টার!”  দুর্বল গলার ডাক। গীতা খাতায় এন্ট্রিগুলো ঠিকঠাক করে রাখছিল, নইলে মেট্রন আবার বকাবকি করবে। দশজন পেসেন্ট, একজন হার্ট, বলা যায় না কবে কি হয়ে যায়। বাকীরা নিমোনিয়ার পেসেন্ট,  নানা রকম অক্সিজেন চলছে তাদের। পুলিশ কেস এই একজনের। যতদিন না ডিসচার্জ হবেন, পাকড়াশীর আসা যাওয়া চলবে। ডাক শুনে গীতা হাতটা তুলে নাড়িয়ে শান্ত করল, “আসছি স্যার, আপনি একটু রেস্ট নিন, এই মাত্র ওষুধ দিয়েছি”। 
🍂

গৌতম তাও হাত নেড়ে ডাকছেন গীতাকে উঠতেই হল। “কি হল আবার। কিছু মনে পড়ল? “
গৌতম ধীরে ধীরে চোখ খুললেন, মাথাটা আলতো হেলিয়ে ফিসফিস করে বললেন, 
“সিস্টার, আমার ফোনটা আছে এখানে? কোনো মেসেজ এসেছে কি দেখতে পারি?”
গীতা হেসে বললেন, “অস্থির হবেন না তো, একটু বিশ্রাম নিন। ফোন আছে, মেসেজ এলে আপনাকে বলে যাব। ”

“একটু দেখুন না”,
“ঠিক আছে, আগে তো লগ ইন করতে হবে, দাঁড়ান দেখি” গীতা ড্রয়ার থেকে ফোনটা অন করে ওনার মুখের সামনে ধরল একটু, ফোন চেনা মুখ পেয়ে একগাল হেসে অন হয়ে গেল। সঙ্গে টুং টুং আওয়াজ, মেসেজ নোটিফিকেশান। 
“একটু পড়বেন?”
গীতা ইতস্ততঃ করছিল, ওনার কথায় মেসেজে ট্যাপ করতে একটা ভয়েস মেসেজ বেজে উঠল, পিছনে খুব গাড়ীর হর্ন আর গোলমালের আওয়াজ-
“তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে যান স্যার।“ মেসেজটা বাজার পরেই ডিসেপিয়ার হয়ে গেল। আর কোন ট্রেস নেই তার। 
গীতা নম্বরে কল করল তক্ষুনি। বেশ কিছুক্ষন কঁ কঁ করার পর ফোন বলল, দিস নাম্বার ইস আনরিচেব্ল। একবার দুবার তিনবার, গীতা হাল ছেড়ে দিল। পাকড়াশীকে জানাতে হবে। কল এসেছিল। 
 
 “মেসেজ করেছে একজন আপনাকে ভাল হয়ে যেতে বলেছে,” গীতা কল করার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল, এদিকে গৌতম ততক্ষণে আবার এলিয়ে পড়েছেন। হাল্কা ট্রাঙ্কুইলাইজার দেওয়া হয়েছিল, এতক্ষণে কাজ করতে শুরু করেছে। গৌতমের চোখ ভারী হয়ে গেল, কিন্তু মন ভেসে চলল অস্পষ্ট স্মৃতির সরণি বেয়ে। অফিসের দিনগুলো, ইঞ্জিনীয়ার, কম্পিউটার ডিস্প্লেটে স্ক্রোল করে যাচ্ছে হাজার হাজার লাইনের প্রোগ্রাম, অনলাইন মিটিং, একের পর এক মুখ ভেসে উঠছে, বন্ধ চোখের ডিস্প্লেতে। চন্দন স্বপন, পৃথা, রোজ যাদের সঙ্গে কাটত হই হই করে, তারা কিসব বলছে, কিচ্ছুই বোঝা যায় না। একে একে মুখগুলো মিটিং থেকে উড়ে গেল এক একটা ঘুড়ির মত, খোলা আকাশ, নীল থেকে ক্রমেই ধূসর হতে থাকল, তারপর ঝপ করে অন্ধকার। 

গীতা ফোন লাগাল সুবিমলকে। 
-সেবা নিকেতন থেকে গীতা বলছি স্যার, আই সি ইউ নার্স। স্যার একটা মেসেজ এসেছিল পেশেন্টের। 
ওপাশ থেকে উত্তেজিত গলা শোনা যায়,
“কি মেসেজ?”
“ভয়েস মেসেজ, তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে যান স্যার।  
“ভয়েস? তার মানে লেখা পড়া জানে না, বেশ, তো পেশেন্ট কি চিনতে পারল?
“উনি আবার ঝিমিয়ে পড়েছেন স্যার, কিছু বুঝতে পারছেন না। 
ওপাশ থেকে একটা অপশব্দ এল। তারপরেই বললেন
=সরি ওই শব্দটা ইগ্নোর করে যান, ওটা পেশার অবদান। তা আপনি নম্বরটা কল করে দেখলেন একবার?
=হ্যা, কিন্তু আপনার কলটি এখন কানেক্ট করে যাচ্ছে না, এইসব মেসেজ দিল
=হুঁ তার মানে ফোন ফেলে পালিয়েছে। আর কেউ জানে আপনার পেশেন্ট এখানে আছে?
=না স্যার, এক ঐ সঞ্জিত দাস ছাড়া তো কেউ জানে না। 
=তার মানে ওই করেছিল। একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি। ঠিক আছে, আপনি নম্বরটা দিন। আমি দেখচি। 
গীতা নম্বরটা পাঠিয়ে তাকায় গৌতমের দিকে। উনি তখনো ড্রাউসি। কোন সাড় নেই। মাথাটা একবার ঝাঁকিয়ে গীতা বসে পড়ে লগ বুক ঠিক করতে। 

সুবিমল আইটি সেকশানে ফোন লাগান। সেখানে সেকেন্ড অফিসার ব্যানারজী ধরলে, মেসেজ পাঠানো নম্বরটা দিয়ে বলেন, 
-মি ব্যানারজী, এই নম্বরটা একটু ট্রেস করবেন, ওনার কে, শেষ টাওয়ার লোকেশান কি কি ছিল। আর যদি কোন এক্টিভিটি হয় তাহলে আমাকে জানাবেন। 
ও হ্যাঁ ঐ গৌতম নামে পেসেন্টের নম্বরটা সেদিন দিলাম, এগুলো একই কেসের ফাইলে রাখবেন। আর ওটাতেও কোন কল টল এলে আমাকে জানাবেন। 
সব ব্যবস্থা করে সুবিমল ভাবেন আজ রাত্তিরে একটা কবিতা লিখবেন। অনেক দিন লেখা হয় নি। এই সব কাদা ঘেঁটে ঘেঁটে গা ঘিন ঘিন করে সবসময়।

-ক্রমশঃ-
বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

2 Comments

  1. এই বেশ ভাল, গল্পের পুলিশও কবিতা লেখে।😃

    ReplyDelete