জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা -পঞ্চম সংখ্যা

ছোটোবেলা ৫ম সংখ্যা || ২০২০

প্রকাশিত হল পঞ্চম সংখ্যা। এবারের সংখ্যায় স্বনামখ্যাত ফোটোগ্রাফার গৌতম মাহাতো উপহার দিয়েছেন তাঁর ফোটোগ্রাফি। শিশুর হাতে স্বাধীনতার প্রতীক দেশের পতাকা। কিন্তু লোহার রেলিং বাধা! লোহাতেও তো জং পড়ে! আর, হলই-বা বদ্ধ জীবন! মন যে মুক্ত! তাই তো পতাকা এসেছে বেরিয়ে, মুক্ত হাওয়ায়! এই ব্যঞ্জনাই কি স্পষ্ট হয়েছে! 

ছোট্ট বন্ধুরা তোমরা তোমাদের লেখা ও ছবি মেল (jaladarchi@yahoo.in) করে পাঠাও।
ফোটোগ্রাফি - গৌতম মাহাতো 


আমার বাড়ির পুষি

তিতাস হাতী(বয়স- ৮) 

আমার বাড়ির পুষি,
আছে বেজায় খুশি।
বিগড়ে গেলে ঝগড়া করে,
লাগাই তখন ঘুঁসি।

পায়রা আছে ছাদে,
মনে মনে কী ফাঁদে!
দরজা খোলা পেতেই সেদিন,
উঠেই গেছে ছাদে।

পিছু গিয়েই দেখি,
চুপটি করে, একি!
মতলবটা নয়তো ভালো, 
ধরবে নাকি পাখি!

ঝোটন এল ফিরে, 
লাফটি দিয়ে পুষি তখন ....
ধরলো চেপে জোরে।
ছুট্টে গিয়েই তাই,
দিলাম কষেই ভাই,
কানটি ধরে দিলাম বকে...
'এমন করতে নাই '।

আমন্ত্রিত লেখা 

ছবি

পল্লব তেওয়ারী

দূরের রাস্তা অনেক দূরে
পথ পেরিয়ে নদী
আঁকতে আঁকতে প্রজাপতির
ডানায় ভাসি যদি।

রঙবেরঙের নকশা কাটা
নীল পাহাড়ের কোলে
হারিয়ে যাওয়া জলপরি সব
সাতরঙা ঢেউ তোলে।

আবার কখন অনেক দূরে
দিগন্তেরই শেষে
লালরঙা এক শান্ত রবি
ফিরছে নিজের দেশে।

আপনমনে ছোট্টো শিশু
স্নিগ্ধ তুলির টানে
মায়ের কোলে আঁকছে ছবি
সকালবেলার গানে।


সন্ধে সাতটা পাঁচ
গৌতম বাড়ই


ভজন মাষ্টারের গলা পেলাম বাড়ির দরজায়।শ্রাবণের এক সন্ধ্যায়।

সারাদিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টিপাত হয়েই চলেছে।জলে থৈ থৈ চারধার।নালা ডোবা সব জলে ডুবে গিয়ে একাকার। তাই দেখছিলাম সেই বৃষ্টিভেজা দিনে জানালায়। তখনকার পাড়া এখনকার তুলনায় পাড়াগাঁ।সন্ধ্যার আলো অন্ধকার গায়ে মেখে ঘরে ঢুকলেন ভজনমাষ্টার,আমাদের গৃহশিক্ষক ছিলেন।মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।আবার পড়াশোনা করতে হবে এমন মজার বৃষ্টিভেজা রাত ছেড়ে।

ঢুকেই বললেন- আমি তোদের আজ পড়াতে আসিনি।মন খারাপ করিস না।আমি অবাক হলাম!
আমাদের মনের কথা বুঝে নিয়েছেন বলে।

ভজনদা বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ জানি।জোরে জোরে শ্বাস নেয়। চেহারাটাও দিনদিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।বাবা আর মা বললেন--বসো ভজন।তারপর বাইরের ঘরে বসে ধীরে ধীরে গল্প করছিলেন বাবার সাথে।আর এসে বলেছিলেন--কাকীমা আজ আপনার রান্না খেয়ে তবে বাড়ি যাবো।

মা খাইয়ে দাইয়ে রাতে বাড়ি পাঠালেন।আমাদের বলে গেলেন--পড়াশোনা নিছক পড়া আর শোনা নয়।আগ্রহ তৈরী কর সব বিষয়ে।তোরা বড় হয়ে উঠলেই আমার পরম প্রাপ্তি।

পরদিন সকালে হৈ চৈ ভজন মাষ্টার কাল রাতে নরেনের ডোবায় জলে পড়ে ডুবে মারা গিয়েছেন।বাবা বললেন--ওর পড়িয়ে রোজগার করা টাকায় ওদের সংসার চলতো রে! তবে সবাই বলছে সন্ধে সাতটার দিকে জলের মধ্যে ভজন মাথা ঘুরে পড়ে যায় আর জলের স্রোতে ভেসে ডোবায়।আমরা তো জানি এটা আরও রাতের ব্যাপার।লোকজন না জেনে বানিয়ে যা তা গল্প জুড়ে দেন।আমাদের বাড়ির থেকেই তো অনেক রাতে বেরুলো সে।

আমার বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো।আরে ভজনদা যখন দরজায় কড়া নাড়ছে আমি তো তখন দেয়াল ঘড়িতে মোমের আলোয় দেখেছিলাম সন্ধে সাতটা পাঁচ!

কঠিন কুপোকাৎ

 রূপক কুমার হাতী

  কঠিন -জটিল যত নামেতেই সার, 
  সঠিক আঘাত পেলে হয় চুরমার। 
   অকারণে ভয় কেন, কেন হারমানা ?
   কোমল - সরল হবে থাকে যদি জানা। 
    কঠিন ধাতু কিবা কঠিন শিলা, 
   ভেঙে করে চুরমার, দেখেছো কী খেলা! 

   বারে বারে ঘর্ষণে কঠিনের হার, 
   ভেঙে পড়ে দুদ্দাড়, হয়ে চুরমার। 
   পড়া বা কাজটা যদি করে নাজেহাল, 
   তবে, বারে বারে পড়ো তাকে ছেড়ো নাকো হাল।

    তবেই, সহজ - তরল হবে, কঠিন যা কিছু, 
                সফলতা সহজেই রবে পিছু পিছু।।


স্রোতস্বিনী
উওম দোলাই

আপন করে পাবার মতো
কিছু স্বপ্ন ছিল রূপালি আলোয়। 
নীরবতায় বুঝেছি ক্ষুধার জ্বালা
বৃষ্টি ভেজা হৃদয়ের প্রসারিত কর্মধারা। 
আমার ইচ্ছে করে নদীর বাঁকে বাঁকে, 
খেলাকরি  ছেলেদের সাথে সাথে। 
শালফুলের মালা গলায় দিয়ে, 
কাশফুলের দুইধারে মনটা ছুটে বেড়ায়--
প্রকৃতির নিয়মে অস্থির হয়ে পড়ি। 
খোলা জানালায় দাঁড়িয়ে--
স্বপ্নের চিন্তা বুকে নিয়ে।
---------------
আরও পড়ুন 


Post a Comment

0 Comments