জ্বলদর্চি

সঙ্গীত শিল্পী শিলাজিৎ -এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবৃত্তি শিল্পী স্বাগতা পান্ডে


সঙ্গীত শিল্পী শিলাজিৎ -এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবৃত্তি শিল্পী স্বাগতা পান্ডে


স্বাগতা: 'ঝিন্টি তুই বৃষ্টি হতে পারতিস..'   কিম্বা 'আমাকে খুঁজে দে জলফড়িং ..' আবেগের গভীরে যেয়ে চিরস্থায়ী স্পর্শ রেখে আসা সব গান আর 'শিলাজিৎ' নামটা , একে অপরের সাথে মিলে মিশে একাকার। গানের জগতে আসাটা কি শুধু-ই ভালবাসা ? না কি পারিবারিক ঐতিহ্য ?

শিলাজিৎ: পারিবারিক বলতে, আমার বাবা ছিলেন কবি, লেখক এবং নাট্যকার । আমার বাবা অরুণ মজুমদারের লেখা থেকে আমি গানও করেছি। আমার চর্চার মধ্যে স্পার্ক যদি কিছু থাকে, তবে সেই ক্রিয়েটিভিটি, ভাললাগা আমার বাবার থেকে পাওয়া। তবে গানের মহল আমার মামার বাড়িতেও ছিল। তবে দুই বাড়ীতেই সুরের থেকে বেশি ছিল তালজ্ঞান। তাই ভালবাসা আর পরিবার, দুই-ই ছিল।

স্বাগতা: গানের জগতে কি সঙ্গীত শিল্পী হিসেবেই আসতে চেয়েছিলেন নাকি কম্পোজার হতে চেয়েছিলেন? 

শিলাজিৎ:  গান গাইব , এটা একটা আ্যক্সিডেন্ট। আমি গান গাইব এটা চাইনি, আমি কম্পোজার হতে চেয়েছিলাম। বাধ্য হয়েছিলাম এমন একটা অবস্থায়, যখন আমার গানগুলো, একজন কেউ নিজের গান বলে চালিয়ে দিচ্ছিল। সেইসময় মনমতো কোনো গায়ক পাচ্ছিলাম না। তখন মনে হলো নিজেকেই গায়ক হতে হবে। সেটা ছিলো ১৯৮৫ - ৮৬ কিম্বা ৮৭। তখন আমি কলেজে পার্ট ওয়ান বা পার্ট টু । তখন খেলার ছলে গান তৈরি করে ছোট ছোট জমায়েত করতে শুরু করি । আসলে ঐ সময় আমার গানটা বাঁচানোর জন্য- ই আমাকে গান গাইতে হয়েছিল। তবে গান কম্পোজ করতেই বেশি মজা লাগে আমার। ওটাই আমার বেশি ভালো লাগার জায়গা। 

স্বাগতা: ফোক সং আপনার গানে আ্যলবামে এবং আপনার ভালোবাসায়। আপনার অন্যতম আ্যলবাম 'লাল মাটির সরানে' ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল এবং এখনো সমান জনপ্রিয়। এই লাল মাটির সুগন্ধ নিয়ে কিছু বলুন।

শিলাজিৎ : হ্যাঁ, আমার বাড়ি বীরভূম ডিস্ট্রিক্টে— গড়গড়িয়া গ্রামে। ওটা আমার বাবার বাড়ি। আর মায়ের বাড়ি হচ্ছে সিউড়ি থেকে দু কিলোমিটার দূরে কড়িধ্যা গ্রাম। মানেটা হচ্ছে আমার বাবা মা দুজনেই বীরভূমের।
স্বাগতা: শুধু মাত্র,'শিলাজিৎ' লেখেন কেন ? শিলাজিৎ মজুমদার নয় কেন ? 

শিলাজিৎ: (প্রাণখোলা হাসি) না, না, আসলে এটা আমার কাছে কোন মানে রাখে না। মানে, কোনো কিছু ভেবে নয়, আসলে পদবি রাখতেই হবে, এটা কোন মানে রাখে না। তবে পদবি মানে, ডেফিনেটলি একটা পরিচিতি বুঝতে পারা যায়, কোথা থেকে আসছি বা কি , সেটা বুঝতে পারা যায়। তবে, মজুমদারটা কিন্তু আসলে উপাধি পাওয়া। আসল পদবি 'মুখার্জি'। ব্যাপারটা হলো, আমি যে খুব কনশাস হয়ে এটা করি , তা না । আসলে মনে হয় শিলাজিৎ মজুমদার তো আরো অনেকে থাকতে পারে। তাই আমার পদবি লোকে জেনে কিবা করবে । আমার নামটা আমার বাবা দিয়েছেন, তাই এটা আমার খুব প্রিয়, সেই জন্যই নামটাকে আর বেশি বাড়াতে চাইনি।
স্বাগতা: শুধু মাত্র জনপ্রিয় গায়ক বা জনপ্রিয় গীতিকার সুরকার হিসেবেই নয়, আপনার আরো একটা পরিচয়, আপনি অত্যন্ত শক্তিশালী  সুলেখকও। আনন্দবাজারে লেখাই হোক বা আপনার লেখা বই হোক, আপনার লেখক সত্ত্বার জনপ্রিয়তাও তুঙ্গে। এই লেখার শুরুটা কবে ? স্কুল জীবন থেকেই কি ? 

শিলাজিৎ : হ্যাঁ, ছোট থেকেই বাবাকে দেখে ইন্সপায়ার হতাম। যখন খুব ছোট, তখন থেকেই বাবা বলতেন,'শিলু, বাংলা ও ইংরেজি প্রতিদিন এক পাতা করে লিখবে'। একটা সময় ডাইরি লিখতাম। স্কুলে ছড়া লিখতাম। তারপর ঐ কচু কাটতে কাটতে ডাকাত হয়ে গেলাম (প্রাণখোলা হাসি) । আসলে প্রতিদিন লেখার চর্চার মধ্যে ছিলাম, লিখতে ভালো লাগতো।

স্বাগতা : লিটল ম্যাগাজিন 'জ্বলদর্চি'তে এর আগেও লিখেছেন। লিটন ম্যাগাজিন এর সাথে সম্পর্ক কি ছাত্র জীবন থেকেই ? 

শিলাজিৎ : পাড়ায় একটা ওয়াল ম্যাগাজিন চালাতাম। তখন আমাদের ওয়াল ম্যাগাজিনের খুব চল ছিলো। আমি এডিটও করে দিতাম। তখন স্কুলে প্রতি বছর ম্যাগাজিন বেরোতো, সেখানে লেখা জমা দিতাম। কিন্তু আমার লেখা কোনদিনও সেখানে ছাপা  হয়নি , আমার আঁকা ছবিও কোনদিন ছাপেনি ।

স্বাগতা: আনন্দবাজারে কবে থেকে লিখছেন ? 

শিলাজিৎ : আনন্দবাজারে যখন লেখা বেরোতে শুরু করলো, তখন আমি আনন্দবাজারে আর কাজ করি না, ছেড়ে দিয়েছি। আমি আনন্দবাজারে বিজ্ঞাপন বিভাগে কাজ করতাম। চাকরি করার সময় আনন্দবাজারে লিখিনি। চাকরি ছাড়ার পর লিখতে শুরু করি আনন্দবাজারে। আরো পরে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লিখেছি। তাই নিয়ে আমার দুটো সংকলন আছে,  'অনেকে পড়েনি' নামে।

স্বাগতা: সফল গায়ক,  সফল গীতিকার, সুলেখক হবার পাশাপাশি আপনি সফল ও জনপ্রিয় অভিনেতা। অভিনয়কে আপনি ঠিক কি ভাবে দেখেন ?

শিলাজিৎ : আসলে আমার নিজের ক্ষেত্রে অভিনয় করাটা খুব শক্ত লাগে না। আমার কাছে অভিনয় মানে, তো চরিত্রটা আমাকে করতে হবে, সেই লোকটা কি রকম করে ভাববে, কি ভাবে কাঁদবে - হাসবে, মানে সেই লোকটাকে আসলে ঠিক ভাবে ধরতে পারলেই, ঠিক সেই রকম ভাবে অভিনয় করা যায়।

স্বাগতা : অভিনয় জীবনের শুরুটা কোথায় ? 
শিলাজিৎ : ছোট বেলায় পাড়ায় অভিনয় করেছি। কলেজে 'অন দ্যা রকস্ 'করেছি । ইনসট্যান্ট ড্রামা করেছি। পরবর্তী কালে,  প্রফেশনাল থিয়েটার বলতে, গ্রুপ থিয়েটারে ব্রাত্যর নাটক করেছি। তবে তাতে বেশি শো আমি করতে পারিনি। আসলে তখন আমার অন্য কাজের জন্য আর সময়টাই দিতে পারলাম না। তবে খুব অদ্ভুত ভাবে আমার কাছে এখনো নাটকের প্রপোজাল আসে। আসলে সময় দিতে পারাটাই টাফ হয়ে যায়। তবে নাটকে অভিনয় শেখার আগ্রহ আমার এখনো আছে।

স্বাগতা : চলচ্চিত্রে আসার প্রথম ধাপ কি ঋতুপর্ণ  ঘোষের 'অসুখ' ? 

শিলাজিৎ :  প্রথম ঋতুপর্ণর-ই একটা টেলিফিল্মে আমি অভিনয় করি। তবে পরবর্তীকালে ওটা আর খুব বেশি প্রদর্শিত হয়নি।  টেলিফিল্মটার নাম ছিলো 'নতুন বাড়ি'।  টেলিফিল্মটা করার আগে ঋতু বলেছিলো , 'এটা করো, এটা করলে আমিও তোমাকে অভিনেতা হিসেবে জানতে পারব, আর তুমিও আমাকে ডিরেক্টর হিসেবে জানতে পারবে' । 'নতুন বাড়ি'-ই আমার ক্যামেরার সামনে ফাস্ট এক্সপিরিয়েন্স। 'অসুখ' তার পরে । তারপর ব্যাক টু ব্যাক প্রচুর কাজ করি, অনেকের সাথেই কাজ করি। কৌশিক গাঙ্গুলির সাথে প্রচুর কাজ করেছি। টেলিফিল্ম। সিরিয়ালেও কাজ করেছি। এই মুহুর্তে তিনটে সিনেমা রিলিজ করার জন্য রেডি হয়ে আছে। 

স্বাগতা: 'জ্বলদর্চি'কে কোনো বার্তা দেবেন ?

শিলাজিৎ : ঋত্বিকবাবুর সাথে আমার কোনদিনও দেখা হয়নি। হয়তো, ঋত্বিকবাবুও যাদের লেখা কালেক্ট করেন তাদের কারোর সাথেই দেখা হয়নি। তবে আমি ঋত্বিকবাবুকে জানি, ওর নাছোড়বান্দা মনোভাবের জন্য "জ্বলদর্চি" পপুলার হয়েছে। এবং একটা জায়গায় পৌঁছেছে একটা ভালো পত্রিকা হিসেবে। এই গোঁয়ার্তুমিটা না থাকলে হবে না। অনেক শুভেচ্ছা রইলো।

🍂

Post a Comment

0 Comments