জ্বলদর্চি

অন্যধারার শর্টফিল্ম- ৪/নিসর্গ নির্যাস মাহাতো

অন্যধারার শর্টফিল্ম 

পর্ব- ৪

নিসর্গ নির্যাস মাহাতো 


প্রোডাকশন হাউস মানে বহু শিল্পীর মিলনস্থল, আর শিল্পের  মানচিত্র হয় না

প্রোডাকশন হাউস বললেই মনে আসে বেশ কিছু নাম। ইমেজ অ্যাণ্ড ইমাজিনেশন, মীরা, এজ, ক্রিয়েটিভ মেমোরিজ, আরশি, এনভি, নতুন মুখ। (নিজে যেইসব প্রোডাকশন হাউসের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত সেইসব নাম সচেতন ভাবেই বাদ দিলাম।) 

শহরের এইসব প্রোডাকশন হাউস নতুন নতুন বিষয় নিয়ে কাজ করছে জোর কদমে। শহর তথা জেলা জুড়ে তুলে আনছে নতুন ট্যালেন্ট। শুধু তাই নয় গণ্ডি পেরিয়েছে ভিন জেলা তথা রাজ্যের।

একদিকে যেমন ধারা চলছে কমার্শিয়াল, অন্যদিকে তেমন কেউ কেউ খুঁজে চলেছে আর্ট। অবশ্য এখন সবকিছুতেই মিশেল দেখা যায়। যা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে আমাদের ঠিকঠাক অনুপাতটা জানতে হবে।

শুধু শর্ট ফিল্ম নয়। মিউজিক ভিডিও, ফটো সিরিজ, ডকুমেন্টরি'র দিকেও ঝুঁকেছে প্রোডাকশন হাউস গুলি। ফটো সিরিজেও ধারাভাষ্যের ব্যবহার শহরকে প্রথম উপহার দিয়েছে আরশি। অবশ্য বেশিরভাগ প্রোডাকশন হাউস'ই অনেকটাই ব্রাত্য রেখেছে ডকুমেন্টরি ও থ্রিলার ফিল্ম কে। এইদিক ভেবে দেখলে শহর তথা জেলা সমৃদ্ধ হবে। উঠে আসবে তথ্য। যা সময়ের দলিল হয়ে রয়ে যাবে। 

অন্যধারার ডান্স ভিডিওতেও পিছিয়ে নেই শহর তথা জেলা। বিভিন্ন নৃত্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তাক লাগিয়ে যাচ্ছে দর্শকদের। শেষাদ্রী ডান্স একাডেমি, অথেন্টিক ডান্স মেকার, অরিফেরাস ক্রিয়েশন, নৃত্যনীড়- এর নাম না করলেই নয়। বলা যায় এই সব প্রতিষ্ঠান যেন নিজেরাই একেকটা প্রোডাকশন হাউস।

শর্ট ফিল্ম বা মিউজিক ভিডিও-এর টেকনিক্যাল জিনিসে পিছিয়ে নেই কেউই। উন্নত মানের ড্রোন, ক্রেন, গিম্বল, অ্যাকশন ক্যামেরা বা লাইটিং, এডিটিং তাক লাগাচ্ছে ছোটখাটো প্রোজেক্টেও। 

প্রতিটি প্রোডাকশন হাউসে ছোটখাটো গোষ্ঠীতেই থাকছে স্ক্রিপ্ট রাইটার, ডিরেক্টর, সিনেমাটোগ্রাফার, কোরিওগ্রাফার, এডিটর। 

বিভিন্ন প্রোডাকশন হাউসের কম্পিটিশন থাকলেও প্রত্যেকেই একে অপরের 'বন্ধু' হয়ে ওঠে। এটাই কাম্য। শত্রুতা নয় বরং প্রয়োজন স্পোর্টিং মনোভাবের। তবেই শহর তথা জেলা সমৃদ্ধ হবে। আর এ কথা মাথায় রেখেই গড়ে উঠেছে সকলের জন্য এক মঞ্চ 'রিলিজ উইন্ডো'। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে প্রোডাকশন হাউস গুলিকে সাহায্য করছে মেদিনীপুর ফিলম সোসাইটি। সোসাইটির সদস্যরা অপেক্ষা করে আছেন তরুণ প্রজন্মের।

সমস্ত প্রোডাকশন হাউসের খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠছে সোশ্যাল মিডিয়া। এ বাদে শহর তথা জেলার বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহ ও মুক্ত মঞ্চ তো আছেই। 

এর আগে প্রোডাকশন হাউজ গুলিকে এক ছাতার তলায় নিয়ে এসেছে 'মেদিনীপুর ললিতকলা'। জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগেও একাধিকবার 'আন্তর্জাতিক সামাজিক জনসংযোগ চলচ্চিত্র সম্মেলন'-এ একত্রিত হয়েছে শহর তথা জেলার বহু প্রোডাকশন হাউস। ওয়েস্ট মিডনাপুর ফটোগ্রাফি সোসাইটি এই উদ্যোগ নিয়েছিল একবার। 

প্রোডাকশন হাউস গুলিকে ক্রমাগত উৎসাহ দিয়ে গিয়েছে গণমাধ্যম।
সকলের দৃষ্টিই আকাশ ছোঁয়া। তবে সকলকেই মনে রাখতে হবে তাদের কাজ নিজেদের মতো। প্রতিটি কাজেই সকলে তাদের 'সেরা' টা দেন। এই শহর তথা জেলার বহু কাজকে অসাধারণ বললেও কম বলা হয়। তাই, 'কলকাতার মতো', 'মুম্বাই-এর মতো' কাজ হয়েছে বলে নিজেরা হীনমন্যতায় ভুগবেন না। কাজ নিজেদের মতো হয়। বহু ক্ষেত্রে এই শহর- এই জেলা বারবার ছাপিয়ে গিয়েছে কলকাতাকে। জায়গা কখনো শিল্পের মাপকাঠি হতে পারে না। কলকাতায় বসে যারা কাজ করেন, সকলেই আহামরি নয়। আবার অনেক কাজই অসাধারণ। শিল্পের-শিল্পীর কোনও মানচিত্র হয় না। তাই 'কলকাতা', 'মুম্বাই' ট্যাগ দিয়ে অনুগ্রহ করে আমার শহর, আমার জেলাকে কেউ ছোট করতে চেয়ে, নিজেকে বড় প্রমাণ করতে চেয়ে 'আত্মশ্লাঘায়' ভুগবেন না। শিল্পীদের মাথা উঁচু করে থাকাটা সবার আগে দরকার। আর প্রোডাকশন হাউস মানে বহু শিল্পীর সমন্বয়। সুতরাং দাপট রাখুন, একই সঙ্গে জারি থাকুক বিনয়, ভাবনা আর অনবরত শেখার চেষ্টা।(ক্রমশ)
--------- 
আরও পড়ুন।
শর্টফিল্ম একটা আন্দোলন। লিটল ম্যাগাজিনের মতোই। এখানে প্রতিভা প্রকাশ করতে 'নেপোটিজম' ব্রাত্য থাকাই শ্রেয়।

জ্বলদর্চি পেজ-এ লাইক দিন।👇


Post a Comment

0 Comments