জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা ষষ্ঠ সংখ্যা


ছোটোবেলা /ষষ্ঠ সংখ্যা 

প্রকাশিত হল ষষ্ঠ সংখ্যা। এ সংখ্যায় আমন্ত্রিত লেখক হিসেবে মুক্তি দাশ ও অসিতবরণ বেরাকে পেয়েছি। সেই সঙ্গে স্বনামধন্য ফোটোগ্রাফার সন্তোষ জানার অতুলনীয় একটি ফোটোগ্রাফি থাকলো এই সংখ্যায়। আমরা গর্বিত। মা কুমিরের পিঠে চড়ে রোদের আমেজ নিচ্ছে কত কত কুমির ছানা!  ছবিটি একটু বড় করে দেখলেই স্পষ্ট হয়। 

প্রতিবারের মতো এবারও আহ্বান জানাই শিশুকিশোরকিশোরীদের, তারা যেন বাবামায়ের সহযোগিতা নিয়ে মৌলিক ও অপ্রকাশিত লেখা(ছড়া, কবিতা, ভ্রমণ, গল্প ইত্যাদি) ও ছবি মেল(jaladarchi@yahoo.in) করে পাঠায়।
সবাই সাবধানে থেকো। করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। বাড়িতে থেকে সৃজনশীল কাজে মন দাও। 
 
                ফোটোগ্রাফি - সন্তোষ জানা


আমার মুম্বাই দর্শন

বর্ণশুদ্ধি মাইতি( নবম শ্রেণি) 
               
মানুষ মাত্রই ভ্রমণ পিপাসু। ভ্রমণ করতে কে না চায়! এমন ভ্রমণ পিপাসা মেটানোর পরম সৌভাগ্য এসে গেল আমার। হঠাত্‍-ই মা-বাবা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, গরমের ছুটিতে মুম্বাই বেড়াতে যাবেন। কথাটা শুনে আমি উৎসাহে, আহ্লাদে আটখানা হয়ে গেলাম। মুম্বাই! সে তো বিরাট শহর। বিশাল বিশাল বাড়ির মহানগর। মনের ভেতর এক প্রবল উত্তেজনা নিয়ে দিন গুনতে লাগলাম কখন আসবে সেই মধুর ক্ষণ। 
 যথা সময়ে এসে গেল সেই দিন। ২৫ মে ২০১৮ তারিখে আমরা গড়বেতা থেকে অল্টো গাড়ি চড়ে খড়্গপুরে পৌঁছালাম। পৃথিবীর দীর্ঘতম রেল জংশন খড়্গপুর থেকে HWH-CSMT Express - এর এসি থ্রি টায়ারে চেপে সোজা পাড়ি দিলাম মুম্বাই। রাতে আর ঘুম আসতে চাইছিল না। মন ছটপট করছিল দেশের বৃহত্তম শহর দেখার জন্য। অবশেষে পরের দিন রাত এগারোটার সময় আমরা আমাদের গন্তব্যস্থল ‘কল্যাণ’ জংশনে গিয়ে পৌঁছালাম। সেখানে থাকে আমার এক দিদি-জামাইবাবু। জামাইবাবুর সাথে স্টেশন থেকে তাদের বাড়িতে পৌঁছালাম। খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমোতে রাত দু’টো বেজে গেল। প্রচণ্ড ক্লান্তি থাকা সত্ত্বেও মুম্বাই শহরকে তারিয়ে তারিয়ে দেখার জন্য পরের দিন সকাল ছ’টায় ঘুম ভেঙে গেল। বাবা, মা, দিদিকে চাপ দিতে লাগলাম খেয়ে দেয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়তে। কেননা ঘরের ভেতরে মন টিকছিল না কিছুতেই। 

 তারপর যথাসময়ে বেরিয়ে পড়লাম। প্রথমে গেলাম Phoenix Marketcity (ফিনিক্স মার্কেট সিটি) তে। সত্যি অসাধারণ মল ! প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই সেখানে কৃত্রিমভাবে তৈরি হয়েছে বরফের দেশ। গরম জ্যাকেট পরার পরেও বেশ ঠাণ্ডা লাগছিল। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে বরফে স্কেটিং করার পর আমরা গরম কফি খাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়লাম। কফি খেয়ে সোজা চলে গেলাম ‘জুহু’ সমুদ্রসৈকতে। সেখানে রাত আটটা পর্যন্ত মজা করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে শুয়ে পড়লাম। 

   পরেরদিন এসি বাসে করে মুম্বাই দর্শনে যাবার পালা। সকাল আটটা নাগাদ বাসে চড়ে পাড়ি দিলাম মুম্বাই বন্দরে। সেখানে লঞ্চেও চড়লাম। দেখলাম বহু দেশের জাহাজ। তারপরে গেলাম সায়েন্স সেন্টার। সেখানে দেখলাম স্পেস থিয়েটার। আমার প্রিয় বিষয় অ্যাস্ট্রোফিজিক্স হওয়ায় সেখান থেকে বেরোনোর ইচ্ছে ছিল না কিছুতেই। তারপরে গেলাম মিউজিয়াম। সেখানে দেখলাম আকবরের বহু পোশাক, শিবাজীর বাঘনখ। আরও বহু ঐতিহাসিক দ্রব্য দেখে বেরিয়ে পড়লাম গেটওয়ে অফ ইণ্ডিয়া দেখতে। দেখলাম ২৬/১১ সেই অভিশপ্ত তাজবেঙ্গল হোটেল। বাবা সেই জঙ্গিহানা সম্পর্কে অনেক তথ্য আমাকে দিলেন। ফিরতে ফিরতে দেখলাম শাহরুখ খান, রেখা, মুকেশ আম্বানি, অমিতাভ বচ্চন, শচীন তেণ্ডুলকার, লতা মঙ্গেশকর প্রভৃতি তারকাদের বাড়ি। 

  পরেরদিন গেলাম মাথেরণ। মহারাষ্ট্রের অন্যতম হিল স্টেশন। যা প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাক্ষেত্র। সেখানে ট্রয়ট্রেনে চড়লাম। অসাধারণ অভিজ্ঞতা। ঘোড়ায় চড়ে ঘুরলাম বহু পয়েন্ট। দার্জিলিং-এর মতো আঁকাবাঁকা পথে পাহাড়ের উপরে উঠলাম। হিল এরিয়া থেকে দূরের পাহাড় এবং খাদগুলো মনে হচ্ছিল যেন কেউ তুলি দিয়ে ছবি এঁকেছে। নিচের দিকে তাকালেই বুক কেঁপে ওঠে প্রকৃতির এই ভয়ঙ্কর রূপ দেখে। মাথেরণ থেকে বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে গেল। ঘুমোতে গিয়েও ঘুম আসছিল না। বারবার মনে পড়ছিল মাথেরনের অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্য। 
   পরের দিন আবার রওনা হলাম আমাদের আরও এক আকাঙ্ক্ষিত ভ্রমণ স্থান এলিফ্যান্টা কেভস-এ। প্রথমে গেলাম গেটওয়ে অফ ইণ্ডিয়া। সেখান থেকে সরকারি টিকিট কাউন্টারে টিকিট কেটে লঞ্চে চড়ে বসলাম। আরবসাগরের সেই অসাধারণ দৃশ্য দেখে মোহিত হয়ে গেলাম। কালো ঘোলাটে জল আরবসাগরে। এর আগে বঙ্গোপসাগর দেখলেও আরবসাগরের জল অনেকখানি আলাদা। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলাম বহু ছোটো ছোটো দ্বীপ। প্রায় পৌনে এক ঘন্টার যাত্রার পর পৌঁছে গেলাম মুম্বাই পোতাশ্রয়ের অন্তর্গত ঘরপুরি দ্বীপে। পোর্তুগিজরা যার নাম দিয়েছিল এলিফ্যাণ্টা কেভস। যেখানে পাহাড় কেটে তৈরি হয়েছে প্রাসাদ, গুহাচিত্র ও বুদ্ধমূর্তি। পোর্তুগিজদের অপূর্ব এক ভাস্কর্য শিল্প। গুহার গায়ে নানা চিত্রকলা দেখে আমরা অভিভূত হয়ে পড়ছিলাম। মা ইতিহাসের ছাত্রী। তাই এই গুহাচিত্রের সাথে অজন্তা-ইলোরার গুহাচিত্রের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। বহুক্ষণ সেখানে কাটানোর পর ফিরে সোজা গেলাম ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ টার্মিনাস রেলওয়ে স্টেশন। দূর থেকে দেখলে মনে হবে কেউ তুলি দিয়ে এঁকেছে এক অসাধারণ রাজপ্রাসাদ। পুরো মুম্বাই শহরে আছে প্রায় ৪০টি স্টেশন। সেখানকার পরিবহন ব্যবস্থাও বেশ উন্নত। প্রতিটি স্টেশনেই মিনিটে গড়ে প্রায় ২-৫টি ট্রেন আসছে এবং যাচ্ছে। দেখলাম ভারতের উচ্চতম বাড়ি ওয়ার্ল্ড ওন টাওয়ার। যার কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার কথা এই ২০২০ সালেই।
  পরেরদিন মুম্বাই থেকে ফেরার পালা। আসলে মুম্বাই থেকে ফেরার ইচ্ছে আমার ছিল না। তাই শেষ পর্যন্ত চোখের জলে বিদায় দিতে হল মুম্বাই শহরকে। যদিও চিরদিন আমার মনের মণিকোঠায় গাঁথা হয়ে থাকবে এই মুম্বাই শহর ও তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।                                 

হাতির লাথি
মুক্তি দাশ 

পালের গোদা হাতি
বলল, "এবার চিড়িয়াখানায় 
করবো চড়ুইভাতি।"

বলল বাঘের ছানা, 
"চড়ুইভাতি করবি যা তুই 
আছে আমার জানা!"

হাতি তখন রেগে
কষিয়ে লাথি বলল, "যা যা 
এখান থেকে ভেগে!"

এ কি চোখের ভুল! 
লাথির চোটে বাঘের ছানা 
দেখছে সর্ষেফুল!


অণুগল্প
কবন্ধের পাল্লায়
অসিতবরণ বেরা

১৯৬৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস। দুর্গা পুজোর ষষ্ঠী। সকালে ছিল প্রি-টেস্টের শেষ পরীক্ষা। বিকেলে বাবলপুরে ফুটবল টুর্নামেন্টে স্কুল টিমের খেলা।  স্কুলেই খেয়েদেয়ে হইহই করে খেলতে বেরিয়ে পড়লাম। 

 মাইল দুয়েক হাঁটা পথ। খেলার আগেই এক পশলা বৃষ্টি । বৃষ্টিতে পিছল মাঠে আমরা তের গোলে জিতলাম। দুটো হ্যাট্রিকসহ আমার আটটি গোল। খেলার শেষে টিপটিপে বৃষ্টি। স্কুলে এসে আমার বাইশ ইঞ্চি হারকিউলিস সাইকেল মেড ইন ইংল্যান্ড নিয়ে বাড়ির পথ ধরলাম। পাঁচ মাইল পথ । ঝিরঝিরে বৃষ্টি , ফুরফুরে মন ।  

রাস্তায় লোকজন তেমন নেই। সেই সময়  গাড়িও বিশেষ চলত না। ধীরে ধীরে বৃষ্টি কমলো। একটু একটু চাঁদের আলো। দু মাইল আসার পর রাণীসরাই বাংলো। রাস্তার দু পাশে ইয়া বড় বড় শিরিষ আর বট গাছ। জঙ্গলের মতো। মাঝে-মধ্যে এখানে ডাকাতি হয়। ‘যা হয় হবে’ এই ভাবনা নিয়ে প্যাডেলে চাপ দিলাম। নির্বিঘ্নে পেরিয়ে এলাম ডাকাতের ডেরা।   
ডাকাতের ডেরা পার হলেই ছোট্ট একটা বাঁক।  রাণীসরাই আর কলাবনীর মাঝখানে সেই বাঁকে আছে একটা শ্মশান। শ্মশানের চারদিকে রয়েছে শ্যাওড়া পাকুড় বাবলা আর শিরিষ গাছ। দূর থেকে দেখে গাটা ছমছম করে উঠল। কাক জ্যোৎস্নায় হঠাৎ দেখি শ্মশানের ধারে একটা ইয়া ব্বড়ো কবন্ধ। মাথা নেই। দু হাত আকাশে তুলে দাঁড়িয়ে। কবন্ধটা যদি আমায় দেখতে পায়? তাহলে তো ঐ দু হাত দিয়ে ধরে আমায় কপ করে গিলে ফেলবে। কী করি ? পিছনে ডাকাত সামনে কবন্ধ!  

যা থাকে কপালে , সমস্ত শক্তি দিয়ে সাইকেল চালাতে লাগলাম। পেরিয়ে গেলাম শ্মশান , কলাবনি, শুশিন্দা রেলগেট। স্পিড কমালাম না । যদি কবন্ধর  হাত দুটো লম্বা হতে থাকে। এক্কেবারে  বাড়ির উঠোন । সাইকেল ফেলে এক দৌড়ে  মায়ের কাছে। সব শুনে মা ভূতের বাতাস থেকে বাঁচানোর জন্য আগুন, লোহা, নিমপাতা নিয়ে যা করার করলো।  
পরের দিন সপ্তমীর সকালে দুই আবাল্য বন্ধু বাবলা, গোপালের কাছে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে সব বললাম। শুনে দুজনেই বলল ,”এক্ষুণি চলো, ভূতের ডেরাটা দেখেই আসি।"

নাছোড়বান্দা দুজনের সঙ্গে সাইকেলে চেপে সেই শ্মশানে গেলাম। বাবলা বলল ,”ভূতটা কীরকম দেখতে বল তো ?” 
বললাম ,”বেশ বড়োসড়ো, মাথাকাটা, দু হাত তোলা, সাদা রঙের।“ 
“ ব্যস ব্যস পেয়ে গেছি। “ হা-হা করে হাসতে-হাসতে ওরা বলে ,” দ্যাখো এই গাছটা! আগা কাটা, পাশের দুটো ডাল কাটা হয়নি। আর ছাল ছাড়ানো বলে কাণ্ডটা সাদা। তোমার কবন্ধ !” 
আমিও বোকার মতো হাসিতে যোগ দিই। 

জ্বলদর্চি পেজ-এ লাইক দিন।👇


------------------
আরও পড়ুন
এবারের বিষয় : বিজ্ঞান
জ্বলদর্চি কুইজ -১৪
ক্লিক করে উত্তর দেখে নিন।
নির্মাণ - ঋতরূপ ত্রিপাঠী 

Post a Comment

0 Comments