চতুষ্কোণ /অংশুমান খাঁন

চতুষ্কোণ

অংশুমান খাঁন

প্রেম

আমি তোমায় চেয়েছি যত

পুকুরঘাটে তত বেড়েছে জল

জলে ভেসেছে নৌকা

নৌকায় মিশেছে ছন্দ 

ছন্দে বৃষ্টি অবিরত,

আমি তোমায় চেয়েছি যত

হৃদয়ে জমেছে পলি

পলিতে গাছেদের সংসার,

সংসারে অবাধ্য ডালপালা

ডালে একাকী নিশ্চুপ কাক

আমি তোমায় চেয়েছি যত

দুপুর হয়েছে দুঃসহ

বিকেল তেপান্তর

সন্ধেতে মায়া লাগায় শাঁখ

রাত্রে রোমাঞ্চ জাগে

যেন সমস্ত ক্ষতের মুখে

হাত বুলিয়ে দিল কেউ

চুলের মধ্যে তোমার কোমল স্পর্শ...

আমি তোমায় চেয়েছি যত

তত হৃদয়ে জেগেছে বিস্ময়

চারদিকে প্রগাঢ় অন্ধকার, প্রেম তবু মধুময়!

দেশ

আমি জন্মের পর যে স্থানটাকে নিজের বলে জেনেছিলাম

যে বিরাট গাছটাকে আপনজন মনে হতো

এখন সেখানে সাহাদের দোতলা বাড়ি

ইচ্ছে হয় একবার ওদের ঘরে যাই

দেখি বিরাট গাছটার কোনও ঝুরি কোথাও থেকে গেছে নাকি

গাছটায় বিরাট কোটর ছিল,

চমকপ্রদ সেই আশ্রয়

সাহাদেরও তেমন চমক জাগে?

তেমন অন্ধকার? অনন্ত বিস্ময়?

জন্মের পর যে দেশের গল্প শুনেছিলাম

যে দেশ আমার ঘরকন্না, বসতবাটি

খেলার মাঠে ছেলের দল, নদীতে নেমে ডুবসাঁতার...

সেই দেশ এখন নাকি শুধু তোমাদের

আমার গৃহহীন মন চমকে ওঠে

তোমরাও কি সাহাদের মতো কেড়ে নেবে

এই আশ্রয়? এই দেশ? স্বপ্নের ঘরবাড়ি?

🍂

হৃদয়

আগুন দেখে ভয় পাব কি

তাতে বাড়িয়ে দিয়েছি হাত

পুড়ে গেছে মোম

রয়ে গেছে মোহ...

তোমায় ছুঁয়ে শীতল হব

এমন আমার ভাগ্য কই

তাই আবার আগুনে দিয়েছি হাত

এবার পুড়ে গেছে শোক...

রয়েছে শুধু বিছানা ভরতি আগুন

ঘরময় রাশি রাশি তুলো

তুমি নেই তাই বাতাসে শুধুই প্রদাহ...

বৃষ্টি ভেঙেছে পাখিদের ঘরবাড়ি

শাখায় শাখায় ভয়ানক শূন্যতা

অশ্রুত এই কুটিল দিনান্তে

দেবতা জেনেছে হৃদয়ের ব্যর্থতা।

যক্ষপুরাণ

নীলকমলের সশস্ত্র সৈনিক

পাহারা দিচ্ছে আস্ত তেপান্তর

তারই মাঝে একটু বিরাম খুঁজে

মনে পড়ছে সুবর্ণ তার মুখ

অর্ধেক ঘুম তোমার কাছে থাক

অর্ধেক ঘুম আমি হৃদয়ে রাখি 

দু-এক বার স্বপ্নে দ্যাখা হবে

আমাদের এই একটুখানি সুখ

তোমার বাড়ি বড্ড জাঁকজমক

নিজের আছে হাজার-এক কাজ

সে সব সেরে রাত্রি দুই প্রহর

চোখে তোমার স্বপ্ন নেমে আসুক

জানি লোকে মন্দ বলবে ঠিক

বিয়ের পর প্রেমিক মুছে যায়

তবু যদি নিয়ম কানুন ভুলে

ঘুমের মধ্যে একটু দ্যাখা হয়

সার্থক হয় দীর্ঘ অপেক্ষা

নিশ্চুপ রাত, দীঘল কালো বাড়ি

তার মধ্যে ক্লান্ত দুটি প্রাণ

কুয়াশা ঢাকা এইতো একটু সুখ

তবুও তুমি আনমনা কেন হও?

বিষণ্ণতা ছেয়েছে চোখ মুখ

বিদায়বেলা উপস্থিত জানি

রাত পরেছে ভোরের সাজপোশাক

তপ্ত দিন ঘুম মুছে দেবে ঠিক

ঘুমের ভেতর শীতল সেই নদী

ক্লান্ত হৃদয়ে স্পন্দিত হয়ে যাবে

আমরা দুজন শুধুই অচেনা মুখ।