জ্বলদর্চি

ইতালিয়ান-আমেরিকান নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানী এমিলিও 'টেকনিসিয়াম' সেগ্রেই এবং তাঁর অ্যান্টিপ্রোটন /পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

বিজ্ঞানের অন্তরালে বিজ্ঞানী ।। পর্ব ― ১০

ইতালিয়ান-আমেরিকান নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানী এমিলিও 'টেকনিসিয়াম' সেগ্রেই এবং তাঁর অ্যান্টিপ্রোটন 

পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

'তেজস্ক্রিয়তা মানেই কেবল পারমাণবিক অস্ত্র বা ধ্বংস নয়; বিভিন্ন স্থায়ী মৌলের নতুন নতুন আইসোটোপ আবিষ্কার ও ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানীরা আজও সভ্যতার অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন'― মন্তব্য এক বিশ্ববিশ্রুত নোবেল জয়ীর।

   ইতিমধ্যে আবিষ্কৃত হয়েছে একটি তেজস্ক্রিয় মৌল টেকনিসিয়াম (Tecnitium)। যার চিহ্ন 'Tc'। ১৯৩৮ সালে। এ হেন টেকনিসিয়ামের তিনটি আইসোটোপ। আইসোটোপ হল একই মৌলের দুই রকম বা তার অধিক ভিন্ন নিউক্লিয়াস; যাদের পরমাণু ক্রমাঙ্ক অর্থাৎ প্রোটন সংখ্যা সমান, কিন্তু ভরসংখ্যা (নিউক্লিয়াসে প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যার সমষ্টি) আলাদা। তো, টেকনিসিয়ামের একটি আইসোটোপ 'Tc–৯৭'-এর ভরসংখ্যা ৯৭ ও অর্ধায়ুকাল ৯০ দিন। অপর একটি আইসোটোপ 'Tc―৯৫'-এর ভরসংখ্যা ৯৫ ও অর্ধায়ুকাল ৬০ দিন। অন্তিম Tc―৯৯ আইসোটোপটি খুবই স্বল্পায়ু। স্বল্প সুস্থিত সেই নিউক্লিয়াসের ভরসংখ্যা ৯৯ ও অর্ধায়ুকাল মাত্র ৬ ঘণ্টা। 

   শেষোক্ত আইসোটোপটি চিকিৎসা শাস্ত্রে বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের কাজে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয়। মাত্র ৬ ঘণ্টা অর্ধায়ুকাল হওয়ায় দেহে 'রেডিওঅ্যাকটিভ ট্রেসার' হিসাবে কাজ করে Tc―৯৯। টেকনিসিয়াম আবিষ্কারের পর আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় নিউক্লিয়ার মেডিসিন ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত রোগ নির্ণয় সংক্রান্ত বিভিন্ন মেডিকেল ইমেজিং ক্ষেত্রে। তাছাড়া ক্যান্সারের পর্যায়ভিত্তিক রোগের চিকিৎসায় নিউক্লিয়ার মেডিসিন থেরাপি এবং রেডিও থেরাপির জন্যও আজকাল অনেক তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহৃত হয়। তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহারের যথার্থতা নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে ইতালির প্রাদোভা শহরে একটি বিজ্ঞান সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৮৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। সেই সম্মেলনে উপরের মন্তব্যটি করে বসেন ইতালিয়ান-আমেরিকান নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানী এমিলিও জিনো সেগ্রেই। 
     
   
আসলে তিনিই টেকনিসিয়াম তেজস্ক্রিয় মৌলটির আবিষ্কারক। নিত্য নতুন তেজস্ক্রিয় পদার্থের আবিষ্কারে যারা সিঁদুরে মেঘ দেখছেন এবং নিউক্লিয় শক্তির অপব্যবহার নিয়ে যারা 'গেল-গেল' রব তুলছেন চায়ের আড্ডায়, কফি-শপে, অফিসে কিংবা জমাট মজলিসে; তাদের ধারণা কত ভ্রান্ত তা বোঝাতে এমন মন্তব্য তাঁর।

   তবে উপরের বক্তব্য পেশের পশ্চাতে কারণ কিঞ্চিৎ ভিন্ন। দীর্ঘ চার দশক আগে সমাপ্ত হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সেখানে বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে নিউক্লিয় শক্তির ধ্বংসলীলা। পরমাণু বোমার ভয়াবহ রূপ। তার ক্ষতিকর প্রভাব। পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের আতঙ্ক চিরতরে উবে যাওয়ার পূর্বেই বাজারে তখন এসে গেছে তার থেকেও হাজার গুণ অধিক ক্ষমতাশালী হাইড্রোজেন বোমা। এত সব মারণাস্ত্রের আবির্ভাব শান্তিপ্রিয় মানুষের চোখের ঘুম যেন কেড়ে নিয়েছে। শিহরিত হয়ে দুচোখের পাতা এক করতে পারছেন না আতঙ্কে। অথচ শুধু ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড নয়; শুভবুদ্ধি সম্পন্ন রাষ্ট্র চাইলে সেই নিউক্লিয়ার শক্তিকে শুভ কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে। সমাজের কল্যাণে তার ব্যাপক ও দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার রয়েছে। প্রয়োজন শুধু বদ ইচ্ছা পরিত্যাগ করে তা সফল রূপায়ণের দৃঢ়প্রতিজ্ঞা। সে-প্রসঙ্গে পণ্ডিত মানুষটির উপরিস্থিত উক্তির অবতারণা। এ হেন মানুষটি যদিও একসময় যুক্ত থেকেছেন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন প্রোজেক্টে। দায়িত্ব সহকারে কর্তব্য পালন করেছেন লস অ্যালামস-এ। আবার মজা করছেন তাঁর প্রিয় স্যার এনরিকো ফার্মি'র সঙ্গে। এ প্রসঙ্গে একটি খুব মজাদার ঘটনা উপস্থাপন করব এখানে।

   ইতালিয়ান পদার্থবিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মি। খুব অন্তর্মুখী। মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন সর্বক্ষণ। সহজে আলটপকা মন্তব্য করেন না। একদিন তিনি বলে বসলেন―

'মাঝারি মানের সব জার্নাল কেবলমাত্র ইতালিয় ভাষায় প্রকাশ যোগ্য; কিন্তু অত্যন্ত উৎকৃষ্ট জার্নালগুলো অন্য বিদেশি ভাষায়ও প্রকাশিত হওয়া উচিত।' এই ধারণা কেন পোষণ করতেন তিনি? ইত্যবসরে বিখ্যাত ব্রিটিশ ম্যাগাজিন 'নেচার'-এ অমনোনীত হয়ে ফিরে এসেছে তাঁর বিখ্যাত একটি আর্টিকেল। ফার্মির ধারণা― হয়তো তাঁর প্রবন্ধটি মাঝারি মানের! তা 'নেচার'-এ ছাপানোর অযোগ্য মনে হয়েছে কর্তৃপক্ষের। তাই অমনোনীত আর্টিকেলটি ফেরৎ এসেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর গবেষক-ছাত্র এমিলিও'কে উপরের এমন স্বভাববিরুদ্ধ মন্তব্যটি করে বসেন এনরিকো ফার্মি।

   গবেষণারত ছাত্রটিও কম যান না। একই সঙ্গে পাঠানো গবেষক-ছাত্রের একখানা প্রবন্ধ যথারীতি মনোনীত হয়েছে 'নেচার' পত্রিকায়! আর্টিকেল প্রকাশিত হওয়ার পর রসিকতা করলেন প্রিয় শিক্ষক মহাশয়ের সঙ্গে। বললেন, 'দেখলেন তো, স্যার; তারা ভালো আর্টিকেলটি চিনতে পেরেছেন।' বলেই হাসি চেপে রাখতে পারলেন না দু'জনের কেউই। আসলে এর আগে ঘটে গেছে আরেক ঘটনা। যার প্রাসঙ্গিকতা উল্লেখ করা খুব প্রয়োজন।

   ইউরেনিয়াম, রেডিয়াম, থোরিয়াম, প্লুটোনিয়াম প্রভৃতি ভারী মৌলের নিউক্লিয়াস অবিচ্ছিন্ন ভাবে ক্রমাগত ভাঙতে থাকে। এই বিঘটনে নিউক্লিয়াস থেকে তিনটি কণা নির্গত হয়― আলফা, বিটা ও গামা রশ্মি। এদের বলা হয় তেজস্ক্রিয় রশ্মি বা কণা। বাহ্যিক কোনও প্রভাব তেজস্ক্রিয় কণা নির্গমনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে না। এমন ঘটনা তেজস্ক্রিয়তা নামে পরিচিত। বিংশ শতাব্দীর প্রথম অর্ধে তেজস্ক্রিয় বিঘটন নিয়ে বিস্তর কাজ চলছে তখন দেশে দেশে। সেই তেজস্ক্রিয় বিঘটনে আলফা কণা ও গামা রশ্মির শক্তি বিচ্ছিন্ন বা ধারাবাহিকতাহীন (discrete)। অর্থাৎ শূন্য মান থেকে সর্বোচ্চ সীমার মধ্যে তাদের শক্তির মান একটানা হতে পারে না। ধরা যাক, আলফা কণা নির্গমনের আগে জনক নিউক্লিয়াস ও পরে দুহিতা নিউক্লিয়াসের দুটি সম্ভাব্য শক্তি স্ত‍রের মান হল যথাক্রমে ২৮.০ MeV (মেগা-ইলেকট্রনভোল্ট) এবং ২৩.৫ MeV। এখন জনক নিউক্লিয়াস বিঘটিত হয়ে আলফা বা গামা কণা নির্গত হলে তার শক্তি হবে (২৮.০ ― ২৩.৫) MeV বা ৪.৫ MeV। শুধু তাই নয়, একাধিক তেজস্ক্রিয় জনক নিউক্লিয়াসের বিঘটনে যে অগণিত আলফা বা গামা কণা নির্গত হয়, তাদের প্রত্যেকের শক্তি ৪.৫ MeV হবে; কোনমতেই তার থেকে কম বা বেশি হবে না। তাই আলফা ও গামা কণার শক্তি স্তরকে ধারাবাহিকতাহীন বা বিচ্ছিন্ন শক্তি স্তর (Discrete Energy Level) বলে।

   অপরপক্ষে সমস্যা বাধল বিটা কণাকে নিয়ে। তার শক্তি একটানা বা অবিচ্ছিন্ন (Continuous)। ওই জনক নিউক্লিয়াস ভেঙে বিটা কণা বের হলে তার শক্তি ০.৫ MeV (বিটা কণার ন্যূনতম শক্তি) থেকে ৪.৫ MeV পর্যন্ত যে কোনও মান হতে পারে। সেজন্য বিটা কণার শক্তি বর্নালী একটানা। এ হেন বিটা শক্তি বর্ণালীর সুষ্ঠু সমাধান দিলেন পাউলি। তিনি বললেন বিটা তেজস্ক্রিয় বিঘটনে বিটা কণার সঙ্গে নতুন কণা 'নিউট্রিনো' নির্গত হয়। বিটা ও নিউট্রিনো― উভয় কণার শক্তির যোগফল হবে বিচ্ছিন্ন। যার মান জনক ও দুহিতা নিউক্লিয়াসের শক্তির পার্থক্যের সমান হবে। অর্থাৎ উপরের উদাহরণ অনুসারে বিটা-নিউট্রিনো উভয় কণার মোট শক্তি ৪.৫ MeV হবে। বিটা'র শক্তি ৩.২৭ MeV হলে নিউট্রিনোর শক্তি (৪.৫ ― ৩.২৭) MeV বা ১.২৩ MeV হবে। আবার বিটা'র শক্তি ০.৫৫ MeV হলে নিউট্রিনোর শক্তি (৪.৫ ― ০.৫৫) MeV বা ৩.৯৫ MeV হবে। কোনমতেই দুজনের মিলিত শক্তি ৪.৫ MeV-এর বেশি হবে না। তেমন সম্পর্কের একটি গাণিতিক সমীকরণ পেশ করলেন এনরিকো ফার্মি।  যা তাঁর 'ফার্মি থিওরি অফ অ্যালাওয়েড বিটা ডিকে' (Fermi's Theory of Allowed Beta Decay) নামে পরিচিত। কিন্তু ফার্মি'র থিওরি বুঝতে পারলেন না ইংরেজ‍রা। তাই এডোয়ার্ডো এমাল্ডি, রোজেট্টি এবং আরও অনেকের সঙ্গে তাঁর গবেষক ছাত্র এমিলিও সেগ্রেই ফার্মিকে অনুরোধ করলেন তাঁর তত্ত্ব গুলো জার্মান ও ইতালিয়ান ভাষায় আর্টিকেল হিসাবে না ছেপে ইংরেজিতে ছাপতে। তাহলে ইংরেজদেরও সুবিধা হয়। 

   ফার্মি ছিলেন মান্ধাতা আমলের ধারণায় বিশ্বাসী ধ্রুপদী এক বিজ্ঞানী। তিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন মত পোষণ করতেন। বেশি দেখন-দারিত্ব তাঁর না-পসন্দ। তার স্থির বিশ্বাস উৎকৃষ্ট পেপারই একমাত্র অন্যান্য ভাষায় প্রকাশ করা উচিত; অন্যথায় নয়। হাজার বোঝানো সত্ত্বেও প্রিয় শিক্ষকের এ হেন মত বদলাতে পারেননি সেগ্রেই।

   আবার বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে আলোচিত পরমাণু বোমা তৈরির মারণযজ্ঞে তাঁর প্রিয় শিক্ষকের মতো তিনিও যুক্ত হয়েছিলেন ম্যানহাটন প্রোজেক্টে। প্রোজেক্টের ডিরেক্টর রবার্ট ওপেনহেইমার ডেকে পাঠালেন এমিলিও'কে। জিজ্ঞেস করলেন ম্যানহাটন প্রোজেক্টে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক কিনা। সেটা ১৯৪২-এর শেষ দিক। তারপর ১৯৪৩ সালের জুনে সপরিবার লস অ্যালামস-এ চলে আসেন। সেখানে খুব কাছ থেকে না হলেও ওপেনহেইমারকে মোটামুটি চিনতেন এমিলিও। সেজন্য একবার সাংবাদিক রোডসকে তিনি বলেন 'ওপেনহেইমার খুব জটিল প্রকৃতির মানুষ'। বিভিন্ন সময় চিঠিতে অথবা আড্ডায় পরস্পর বিরোধী অনেক মন্তব্য করেছেন ওপেনহেইমার। সেই সমস্ত চিঠির বয়ান কিংবা বক্তব্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে তাঁর ট্রায়াল পিরিয়ডে আইএফবি দেশের বিপক্ষে জরুরি দলিল হিসাবে তুলে ধরে এবং তাকে শাস্তি প্রদান করে। আবার এও ঠিক যেভাবে আইএফবি ওপেনহেইমারকে দোষী সাব্যস্ত করল, তারও ঘোরতর বিরোধী এমিলিও। বিশেষত টেলারের সাক্ষ্যের উপর নির্ভর করে যেভাবে ওপেনহেইমারের দণ্ড বিধানের কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তা মানতে পারেননি এমিলিও; সে ওপেনহেইমার যতই পরস্পর বিরোধী মন্তব্য করুন না কেন। 

   ১৯৪৩-এ পুরো ফ্যামিলি নিয়ে লস অ্যালামস-এ চলে এলেও তিনি সরাসরি বোমা তৈরির প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি এক্সপেরিমেন্টাল ফিজিক্স বিভাগে তেজস্ক্রিয়তা বিষয়ক 'P―5' ব্রাঞ্চের বিভাগীয় প্রধান নিযুক্ত হয়েছিলেন। তাদের কাজ ছিল তেজস্ক্রিয়তা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য অনুসন্ধান করা। পরমাণু বোমা তৈরির নিউক্লিয় বিভাজন প্রক্রিয়ার উপজাত দ্রব্যসমূহের তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা পরিমাপ করা ও তার তালিকা প্রস্তুত করা। সেজন্য এই গোপন মিশনে তাঁর ছদ্মনাম ছিল ইয়ার্ল সিম্যান (Earl Seaman)। 

   রোমের কাছে ইতালির তিভোলি শহরে এ হেন সিম্যানের জন্ম এক সেফার্ডিক ইহুদি পরিবারে, ১৯০৫ সালের ৩০শে জানুয়ারি। কিন্তু তাঁর জন্মক্ষণটি সরকারিভাবে লিপিবদ্ধ হয় জন্মের দুদিন পর, ১লা ফেব্রুয়ারি ১৯০৫ সাল। শেষোক্ত দিনেই তাই তাঁর জন্মদিন পালন হয়ে আসছে এতকাল। তাঁর মাতা এমিলিয়া সুসান্না ট্রেভেস। পিতা জিউসেপ্পি সেগ্রেই নিজস্ব একটি পেপার মিল চালাতেন। তাঁর কাকা জিনো সেগ্রেই আইনের অধ্যাপক ছিলেন। তিভোলির জিন্নাসিও'তে তাঁর লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়। তার পরেই সপরিবার রোমে গমন করেন তারা। সেটা ১৯১৭ সাল। এই রোম থেকে তিনি গ্র্যাজুয়েট হলেন ১৯২২-এর জুলাই মাসে। ভর্তি হয়ে গেলেন রোম লা স্যাপিয়েনজা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। কিছু দিন যেতে না যেতেই বিষয় বদল করে ফেললেন। ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে ফিজিক্স। ১৯২৭-এ তাঁর সাক্ষাৎ ঘটল ফিজিক্সের অধ্যাপক স্বদেশীয় ফ্রাঙ্কো রোসেট্টি'র সঙ্গে। তিনি পরিচয় করিয়ে দিলেন আর এক তরুণ স্বদেশীয় অধ্যাপক এনরিকো ফার্মির সঙ্গে। এসময় কোমো'তে বসেছে 'ভোল্টা সম্মেলন' (Volta Conference)। ১৯২৭ সালের সেপ্টেম্বরে। কনফারেন্সে বক্তব্য রাখবেন নীলস বোর, হাইজেনবার্গ, রবার্ট মিলিকান, পাউলি, ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক, আর্নেস্ট রাদারফোর্ড প্রমুখ ফিজিক্সের দিকপাল পণ্ডিতগণ। খ্যাতিমান বিশেষজ্ঞদের মূল্যবান বক্তৃতা শোনার সৌভাগ্য অর্জন করলেন তরুণ এমিলিও,  শিক্ষানবিশ হিসাবে। তারপর শুরু হল রোসেট্টি ও ফার্মির ল্যাব‍রেটরিতে গবেষণা। ইতিমধ্যে ইতালিয় আর্মির শ্যেন দৃষ্টি পড়ে তাঁর উপর। ১৯২৮ ও ১৯২৯ ― দুবছর সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় লিউটেন্যান্ট হিসাবে অ্যান্টি-এয়ারক্র্যাফট আর্টিলারিতে তিনি কাজ করেছেন। 'The Via Panisperna Boys'-এর মাধ্যমে পুনরায় ল্যাব‍রেটরিতে ফিরে আসেন তিনি। 
       
  
 তরুণ গবেষকদের একটি গ্রুপ হল 'The Via Panisperna Boys'। গ্রুপটি চালাতেন প্রফেসর এনরিকো ফার্মি। এই গ্রুপটি ১৯৩৪-এ রোমে ধীর গতির নিউট্রন (Slow Neutron) আবিষ্কার করে রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দেয়। কারণ এই স্লো-নিউট্রন দিয়ে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকট‍র গঠন সম্ভব; যা কিনা প্রথম অ্যাটমিক বোমা তৈরির প্রথম পদক্ষেপ। 

   ১৯৩০-এ এমিলিও বিশেষ কিছু অ্যালকালি ধাতুর উপর 'জিম্যান এফেক্ট' নিয়ে কাজ শুরু করেন। তেমন গবেষণার জন্য তাঁর প্রয়োজন এক বিশেষ ধরনের আলোকীয় যন্ত্র। 'Diffracting Gratting'। কোথাও খুঁজে পাচ্ছেন না সে-যন্ত্র। সাহায্যের জন্য ইউরোপের চারটি বিখ্যাত ল্যাবে চিঠি লিখলেন। প্রত্তুত্তর এল শুধু আমস্টারডামের 'জিম্যান ল্যাবরেটরি' থেকে। তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছেন স্বয়ং পিটার জিম্যান। জিম্যান বললেন, 'এমিলিও চাইলে জিম্যান-ল্যাবে তাঁর কাজ সমাপ্ত করতে পারেন।' এই সময় এমিলিও পুরস্কৃত হলেন। পেলেন Rockefeller Foundation ফেলোশিপ। ফেলোশিপ পেতেই হামবুর্গ-এ গিয়ে অটো স্টার্ন-এর অধীনে পড়াশোনা করার পরামর্শ দিলেন ফার্মি। 

   সেখানে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৩২ সালে রোম ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক নিযুক্ত হন এমিলিও। সেখানে অধ্যাপনা করেছেন ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত। এর মাঝে ১৯৩৪-এ ইহুদি এলফ্রিয়েডে স্পাইরো'র সঙ্গে মিলিত হন। সাক্ষাৎ থেকে প্রেম। প্রেম গড়াল বিয়ে অব্দি। ১৯৩৬-এর ২রা ফেব্রুয়ারি স্পাইরোর সঙ্গে শুভ পরিনয়ে আবদ্ধ হলেন তিনি। বিয়ের পর এমিলিও একটি স্থায়ী চাকরি খুঁজছিলেন। তাঁর সে ইচ্ছা পূর্ণ হল পালেরমো ইউনিভার্সিটির স্থায়ী অধ্যাপক পদে যুক্ত হয়ে। সেখানে ইউনিভার্সিটির বিভাগীয় ডিরেক্টর পদে উন্নীত হলেন তিনি। সেবছরই গেলেন ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলেতে। আর্নেস্ট লরেন্সের রেডিয়েশন ল্যাব‍রেটরি দর্শন করতে। এখানে এড্যুইন ম্যাকমিলান, ফান্স কুরি, রবার্ট ওপেনহেইমার প্রমুখ বিজ্ঞানীর সংস্পর্শে আসেন তিনি। কিছুদিনের মধ্যে ফিরে এলেন পালেরমোতে। ১৯৩৭-এর ফেব্রুয়ারিতে আর্নেস্ট লরেন্স একটি মলিবডেনাম মণ্ড পাঠালেন এমিলিও'কে। এমন মণ্ড থেকে অনবরত তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ হচ্ছে। সেই মলিবডেনাম মণ্ডের রাসায়নিক ও থিওরিটিক্যাল বিশ্লেষণ করে টেকনিসিয়াম মৌলের সন্ধান পান। যদিও মৌলটির নামকরণ 'টেকনিসিয়াম' (Technitium) রাখা হয় ১৯৪৭ সালে। এটাই কৃত্রিম উপায়ে সংশ্লেষণ করা প্রথম রাসায়নিক মৌল।

   ১৯৩৮-এর গ্রীষ্মে আবার গেলেন ক্যালিফোর্নিয়া ভ্রমণে। উদ্দেশ্য তাঁর আবিষ্কৃত টেকনিসিয়ামের স্বল্পায়ু আইসোটোপটি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ। কাজ শেষ করে আমেরিকা থেকে দেশে ফিরতে মনস্থির করলেন যখন, তখন বেনিটো মুসোলিনির ফ্যাসিস্ট সরকার সমস্ত ইউনিভার্সিটি থেকে ইহুদি অপসারণের অবৈধ সার্কুলার পাস করে দেশ থেকে ইহুদি বিতাড়ন শুরু করে দিয়েছেন। ফলে দেশে ফেরা খুব চাপ হয়ে গেল স্বামী-স্ত্রী উভয়ের। সাহায্যার্থে এগিয়ে এলেন রেডিয়েশন ল্যাবের গুণমুগ্ধ সতীর্থ বিজ্ঞানী ড: লরেন্স। বার্কলে রেডিয়েশন ল্যাবে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টের পদ অফার করলেন তাঁকে। বেতন অল্প। মাসিক মাত্র ৩০০ আমেরিকান ডলার। একজন বিজ্ঞানী, যে ইতিমধ্যে একটি মৌলিক পদার্থ আবিষ্কার করে ফেলেছে, তাঁর সম্মানের পক্ষে এই বেতন খুবই কম। এতদূর পর্যন্ত তাও বোধহয় মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু তারপর তাঁর সঙ্গে যা ঘটল, তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। তাঁর বেতনের এই হার মাত্র প্রথম ছ'মাস স্থায়ী হয়েছিল। লরেন্স যখন দেখলেন এমিলিও এবং তাঁর স্ত্রী ক্যালিফোর্নিয়ায় আইনত ভালো মতন ফেঁসে গেছেন, দেশে ফিরে যাবার বিকল্প কোনও উপায় নেই; তখন সুযোগের পুরো সদ্ব্যবহার করলেন লরেন্স। তাঁর বেতন আরও কমিয়ে মাসিক ১১৬ আমেরিকান ডলারে নামিয়ে আনেন। যা লরেন্সের মত একজন বিজ্ঞানীর পক্ষে এ কাজ শোভা দেয় না। এত অপমান সহ্য করেও এমিলিও গবেষণা চালিয়ে গেলেন গ্লেন সিবর্গ-এর সঙ্গে। এখানে টেকনিসিয়াম―৯৯ আইসোটোপটি পৃথকীকরণ সম্পূর্ণ করেন। এ হেন আইসোটোপটি এখন নিউক্লিয়ার মেডিসিন হিসাবে খুব ব্যবহৃত হয়। শুধু তাই নয়, বার্ষিক ১০ মিলিয়ন মেডিক্যাল ডায়াগনস্টিক কার্যপ্রণালীতে ব্যবহার করা হয় এটি। জেনন―১৩৫ আইসোটোপটিও তাঁর আবিষ্কার। এটি নিউক্লিয়ার বিষ হিসাবে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকট‍রে ব্যবহৃত হয়। এরপর তিনি পর্যায়সারণীর নিরুদ্দিষ্ট অ্যাসটাটিন―৮৫ মৌলটি আবিষ্কারে মনোনিবেশ করেন এবং আইসোটোপটি পৃথক করতে সমর্থ হন। সিবর্গ, ম্যাকমিলান,  জোশেফ কেনেডি ও আর্থার হয়্যাল-এর সঙ্গে যৌথভাবে শুরু করলেন প্লুটোনিয়াম-২৩৯ আইসোটোপটির খোঁজ। ১৯৪০-এর ডিসেম্বরে লরেন্সের ৬০-ইঞ্চি সাইক্লোট্রোন যন্ত্রের সাহায্যে খোঁজ মিলল প্লুটোনিয়াম-২৩৯ আইসোটোপটি। 

   ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র তখনও পর্যন্ত কোনও পক্ষ নেয়নি। নিরপেক্ষ দেশের ভাবমূর্তি বজায় রেখে পর্যবেক্ষণ চালাচ্ছে পরিস্থিতির ওপর। আর এমন সময় ঘটে গেল যুদ্ধে অংশগ্রহণের অজুহাত! ১৯৪১-এর ৭ ডিসেম্বরে জাপানীজ সেনা আক্রমণ করল আমেরিকার তৎকালীন গুরুত্বপূর্ণ নৌ-সেনাঘাঁটি হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্ল হারবার বন্দরটি। ধ্বংসস্তুপে মিশে গেল সেটি। ব্যাস, যুদ্ধে জড়িয়ে গেল আমেরিকা। তড়িঘড়ি যুদ্ধ ঘোষণা করল জার্মানি, ইতালি ও জাপানের সঙ্গে। এদিকে যুদ্ধ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ইতালিয় হওয়ার সুবাদে এমিলিও'র উপর নেমে এল কঠিন সময়। আমেরিকায় তিনি বনে গেলেন জাতীয় শত্রু। দেশে পিতা মাতার সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। সে এক দুঃসহ সময়। নিদারুণ মানসিক কষ্টভোগ। আর সীমাহীন দুশ্চিন্তায় অতিবাহিত হচ্ছে প্রতিটি ক্ষণ; এক একটি রাত্রি।
       
  
 এই কঠিন সময়ে এল ওপেনহেইমারের প্রস্তাব। ম্যানহাটন প্রোজেক্টে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ। দীর্ঘ কালের দমবন্ধ করা গরম আবহাওয়ার মাঝে এক ছটাক মুক্ত বাতাস বয়ে আনল সে-সংবাদ। সেটা ১৯৪২ সাল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ তখন মধ্যগগনে। ইউরোপের বাতাস শুকিয়ে যাওয়া রক্ত, যত্রতত্র ছড়ানো-ছেটানো ডেডবডি এবং বারুদের গন্ধে ম ম করছে। স্বজন হারানোর যন্ত্রণা, স্বভূমি ছাড়ার কষ্ট কুরে কুরে খাচ্ছে মানুষজনকে। ইউরোপে ঘটমান কাল্পনিক চিত্র মানসপটে এঁকে নিয়ে গোপনে দগ্ধ হয়েছেন এমিলিও। মুখ বুজে কাজে ব্যস্ত রেখেছেন নিজেকে। তাঁর টিম পর পর থোরিয়াম, ইউরেনিয়াম-234, ইউরেনিয়াম-২৩৫, ইউরেনিয়াম-২৩৮ এবং প্লুটোনিয়ামের অ্যাক্টিভিটি গণনা ক‍রেছে। আর তিনি ভেতরে ভেতরে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছেন। অজানা আতঙ্কে শিউরে উঠছে হৃদয়।

এমন সময় ১৯৪৪-এর জুনে ওপেনহেইমারের অফিস থেকে ডেকে পাঠান হল এমিলিও'কে। যে ভয় বুকের ভেতরে চেপে রেখে বিদেশ বিভুঁই-এ এতদিন নীরবে কাজ করে যাচ্ছিলেন, সে ভয়টাই সত্যি হল এবার। ১৯৪৩-এর অক্টোবরে নাৎসি আক্রমণে মারা গেছেন তাঁর মা। ঠিক একবছর পরে ১৯৪৪-এর অক্টোবরে তাঁর বাবা মারা গেলেন রোমে। এমিলিও কখনোই পিতা মাতার শেষ সময়ে উপস্থিত থাকতে পারলেন না। এ দুঃখ জীবনে ভোলার নয়। 

   ১৯৪৪-এর শেষে এমিলিও এবং তাঁর পত্নী আমেরিকার 'নিরপেক্ষ নাগরিক' হলেন। জীবনের একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল। শুরু হল নতুন পথচলা। লস অ্যালামসে এমিলিও তৈরি করলেন একটি নতুন R–4 গ্রুপ। এই দলটি ১৯৪৫ সালের জুলাই মাসে পরীক্ষামূলক 'ট্রিনিটি' বিস্ফোরণের পর গামা বিকিরণ পরিমাপনে বিশেষ তৎপরতা দেখায়। এরপর এল সেই মাহেন্দ্র ক্ষণ। ১৯৪৫-এর ৬ ও ৯ আগস্ট। ঝলসে উঠল হিরোশিমা এবং নাগাসাকি। আত্মসমর্পণ করল জাপান। শেষ হল মহাযুদ্ধ। প্রথমে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে আমন্ত্রণ পেলেন এমিলিও। কিছু দিন পর শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। মোটা বেতনের হাতছানিতে বেছে নিলেন শেষোক্ত ইনস্টিটিউট। সহকর্মীদের সঙ্গে মনোমালিন্য হলে ছেড়ে দিলেন শিকাগো ইউনিভার্সিটি। অধ্যাপনা শুরু করলেন ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়স-এ। শেষমেশ ১৯৫২-তে ফিরে এলেন বার্কলে ইউনিভার্সিটি। এখানে চেম্বারলিন এবং অন্যান্য সহকারী কলিগের প্রচেষ্টায় খোঁজ শুরু করলেন প্রোটনের বিপরীত একটি সাব-অ্যাটমিক পারটিকেল― অ্যান্টিপ্রোটনের। সন্ধান মিলল তেমন কণা, ১৯৫৫ সালে। প্রোটন যেমন একটি ধণাত্মক তড়িদাহিত কণিকা, যার অবস্থান প্রধানত পরমাণুর নিউক্লিয়াস। প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায়ও পাওয়া যায় প্রোটন। আর এ হেন প্রোটনের উল্টো কণা হল অ্যান্টিপ্রোটন; যার ভর প্রোটনের ভরের সমান এবং তড়িদাধান ঠিক উল্টো অর্থাৎ ঋণাত্মক। ৬ গিগা-ইলেকট্রনভোল্ট ক্ষমতার লরেন্সের 'বেভাট্রন' যন্ত্রে সনাক্ত করা গেল অ্যান্টিপ্রোটনের অস্তিত্ব। আবিষ্কারের চার বছর পরে মিলল নোবেল পুরস্কার। অ্যান্টিপ্রোটন কণিকা আবিষ্কারের জন্য ১৯৫৯ সালে সতীর্থ আওয়েন চেম্বারলিন-এর সঙ্গে ফিজিক্সে নোবেল পুরস্কার লাভ করলেন তিনি। 

   ১৯৭০-এ মারা গেলেন প্রথম স্ত্রী এলফ্রিয়েডে স্পাইরো। ১৯৭২-এ দ্বিতীয় বিয়ে করলেন রোজা মাইনস'কে। সে-বছর অবসর নিলেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া থেকে। ১৯৭৪ সালে রোম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদে অংশগ্রহণ করলেন। এক বছর পরে সেখানে থেকেও বাধ্যতামূলক রিটায়্যারমেন্ট নিলেন তিনি। অবসর সময় ভালোই কাটছিল তাঁর। ১৯৮৯ সাল। ২২-শে এপ্রিল। নিজ বাসভবনের কাছাকাছি হাঁটছেন তিনি। হঠাৎ আছাড় খেয়ে পড়ে গেলেন মাটিতে। মেজর হার্ট অ্যাটাক! নিভে গেল প্রাণের প্রদীপ। অমৃতলোকে গমন করলেন অ্যান্টিপ্রোটনের আবিষ্কর্তা নোবেল জয়ী এমিলিও জিনো সেগ্রেই। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। ফটোগ্রাফির খুব শখ ছিল তাঁর। অনেক ছবি তুলেছিলেন সারা জীবনে। মৃত্যুর পর তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী সে-সব ফটোগ্রাফ দান করেন 'আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব ফিজিক্স' কর্তৃপক্ষের হাতে। 
        

পদার্থবিজ্ঞানী এমিলিও সেগ্রেই-এর লেখা উল্লেখযোগ্য বইগুলো হল―
(১) A Mind Always in Motion
(২) Enrico Fermi, Physicist (1970)
(৩) From X―Rays to Quarks (1980)
(৪) From Falling Bodies to Radio Waves (1981)

পেজ-এ লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments