ল ক্ষ্মী কা ন্ত ম ণ্ড ল
আর্তি এক
দুপুর রােদের মাঝে যদি বাজে বিসমিল্লার সুর
তবে মনে হয় সারা রাতের জীবাশ্ম খুইয়ে আসছে
ভাের, যদিও জ্যাবজ্যাবে ঘামে কষ্ট হয় শ্বাস নিতে
কয়েক লক্ষ মৃত্যুদিন অবৈধ চাঁদ হয়ে ঝুলে থাকে
কালসিটে বুকে, পুবদিকের নিতম্ব ছুঁয়ে পরম
বাতাসের ঢেউ পিপাসা বিলিয়ে দেয় থাক থাক,
ধোঁয়া ধোঁয়া পাশের নদীতে চলে নিঃসৃত রজের
অশৌচ পালন
তবুও সুর বাজতে থাকে , গ্রীষ্মকে বিলিয়ে দেয় আরও
গভীর ভাবে, ভেদ করে মজ্জার প্রাণ প্রস্তুত কণায়
এত যে স্পিডভ্যান এত যে ধুলো উড়ার পরিবেশ
সে পথের স্নান নেই , চলে শুধু নিরলস নিভু নিভু
সন্ধ্যারতি ; বুকে নিয়ে জ্বালাময় ভ্রুণ
কথা চাই, কথা বুক । যে কথায় বেজে যায় পরম বিসমিল্লা -
পদ্মাসন
একগােছা গোলাপ তখন ভাঙছিল অন্ধকার
ছুঁয়েছিল অনেক দিনের পুরনো একটা মুখ
যে মুখে ফোঁটা ফোঁটা দুঃখগুলো মােম হয়ে
উজ্জ্বল এক মুহুর্তে বেঁধেছিল শত দিন রাতের আয়ু
এ চোখের জলে আমার কোন দায় ছিল না
আমি মুক্তজল, আকাশের ছায়ায় ধ্যানমগ্ন, অনন্ত দিশার
মাঝে স্থির এক পাখি, ঝড় থামাই বুকের টলটলে
পদ্মপাতায়, সরল ফলন ঋতুর ছায়াকে সকলের
অগােচরে বসিয়ে দিই অস্থির মাঠের উর্বর আভায়
আঙুলে আঙুল জড়িয়ে আমার খণ্ডজন্মগুলােকে
ঈশ্বরীর প্রণয় সংকট থেকে অনুচ্চারিত করে ফেলি ,
আলো নেমে আসে ক্রমশঃ পায়ের দিকে - ভয়ে ভয়ে
তাকাই, শহর পেরিয়ে আসা পায়ে লেগে আছে বেহালার স্বর
আমার শীতরাতে ছড়িয়ে যায় তার অমৃত ঘাণ , বিবস্ত্র
স্বপ্নের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায় । আমি হয়ে উঠি
একান্ত নির্জন, পদ্মাসন ।
কালো নৌকার তৃষ্ণা
তৃষ্ণা বাড়লেই আমি বাঁশি বাজাই
নদীকে কাছে ডাকি ক্লান্ত বাউল
তখনই এক রমণী মাটি মাখে সারা গায়ে
নীল আকাশ বিছিয়ে দেয় অবাক দুপুরে
কালাে নৌকার কষ্ট: কৃষ্ণই তৃষ্ণা, রাধা
আবার সেই ডালপালা একা হয়ে যায়
অস্তিত্বের কুয়াশায় নীরব পাখির দহন
মাটি ছুঁতে না পারার ঝুলন্ত ঝুরি ছড়িয়ে পড়ে
পৃথিবীর বুকজোড়া স্নিগ্ধ যন্ত্রণায়, বেড়ে যায় গভীরতা
সেই গভীরের পাশে আমি তের নদীর স্বপ্নভার
কাটিয়ে দিই সকাল বিকেল
সারা দিন চরছোঁয়া নিসর্গ প্রলয় পায়ে পায়ে
চাঁদ ভাঙে
কম্পিত নিঃশ্বাস
শিকড়
অবিকল নদী হয়ে যেতে যেতে বুকে ধরি নির্জন,-
বাবলা গাছের বিষন্নতা ; তার ফুল রঙের আলোয়
চেপে ধরি আমার জন্মের নীল মাটি; তারপর
দীর্ঘশ্বাস ফেলে আঁকতে বসি আত্মগত ফসলখেত
জল খুঁড়তে খুঁড়তে কুপিয়ে যাই মাটির আদিম নেশা ,
তখন সূর্যমুখী হলুদ আমার চারপাশে বিছিয়ে দেয়
ডোরাকাটা স্বপ্ন শাড়ি , সীতা
বীজতলার জন্য ধার করি হৃদয় কাঁপন , বাড়তে থাকে
ধানের কথামুখ ,
ভাঙতে থাকি বিষন্নতার জেদ, হাওয়ারা সাথ দেয়
গন্ধ পাই দাদুর
ঘাম
সময় ছুঁয়ে উঠে আসে রোদ্দুরের লুকোচুরি
জ্যোৎস্নার ভাটিয়ালি বুকে কিরকির, উঁকি দেওয়া স্বপ্নের
কাঁটার আওয়াজ
তলান্তিক
অনন্ত পিপাসার ঘ্রাণে শুয়ে থাকি আমিও - আরও বেশি -
আরও বেশি ঢেউ ভাঙি ; পথের পেছনে সুর খোঁজে
প্রহেলিকায় অরণ্যের চাঁদ - ধূসর ছায়া - দেয়ালে জাগে
নিশ্বাসের দাগ
চোখের নাম দেয়ালঘড়ি দেওয়া যাক ! জেগে থাক বিবিধ
অষ্টম প্রহর - সমর্পণের উথাল পাথাল হতে পড়ে থাক
চৌকাঠে - শারীরিক জলন্ত প্রদীপ
সুতরাং বিশুদ্ধ জানলার পাশে আগুনের ক্রমশ দিগন্ত ;
পুরোটাই মেঘে ঢাকা পথগুলি প্রসারিত হয়ে ভাঙতে থাকে
শামুকের খোল - জন্ম নেয় সমুদ্র ; নুনের প্রকোপে দহন
গাঙচিল ---
-----
2 Comments
এক কথায় অনবদ্য কবিতা
ReplyDeleteধন্যবাদ। শুভকামনা জানাই।
Delete