জ্বলদর্চি

সোমেন চন্দ


স ন্দী প  কা ঞ্জি লা ল 


সোমেন চন্দ : এক সম্ভাবনার অকাল মৃত্যু
 

মনের ভেতর তাকালেই যে লেখককে আমরা মনের মধ্যে পাই সে লেখকের রচনাকর্ম ধ্বংস হয়না, লুপ্ত হয়না। তেমনই একজন লেখক সোমেন চন্দ। মানুষের কথা বলতে বলতে তিনি সমাজের ভেতর প্রবেশ করেন এবং অসহায় মানুষদের কথা তুলে ধরেন। কিন্তু আজ অস্বীকার করার উপায় নেই, তিনি তার প্রাপ্য মর্যাদা বা গুরুত্ব কোনোটাই পাননি। এ ব্যাপারে সাহিত্যের কারণ যত না রয়েছে, তার থেকে বেশি রয়েছে রাজনৈতিক কারণ। 

শোষণহীণ সমাজ ব্যবস্থার স্বপ্নকল্পনা নিয়ে আবির্ভূত লেখক সোমেন চন্দের রচনা কর্ম আজ বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।কোনও কোনও লেখক মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে পাঠক মন থেকে হারিয়ে যান। কিন্তু, সেই লেখক বেঁচে থাকেন আজীবনকাল যিনি নিজস্ব মৌলিক ভাবনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। সোমেন চন্দ এই পর্যায়ের লেখক। ১৯৮২ সালে ৮ ই মার্চ ঢাকায় আন্দোলনরত অবস্থায় ফ্যাসিস্ট শক্তির হাতে মাত্র বাইশ বছর বয়সে মারা যান। কিন্তু তাঁর রচিত সাহিত্য সেই মৃত্যুকে আজও অবজ্ঞা করে এগিয়ে চলেছে।
গবেষক দিলীপ মজুমদার একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, "তার রক্ত মিশে যায় দুনিয়াব্যাপী মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের সাথে।" তার অনেক রচনার মধ্যে 'ইঁদুর' অবশ্য তার সার্থকতম রচনা। শেষ গল্পে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির স্বার্থের গাছের কোটরে ও ফাটলে লুকিয়ে থাকে ধেড়ে ইঁদুর, তারা উৎপাত করে। তার গভীর কারণ রয়েছে মাটির নীচে, মূল শিকড়ে চাপা দেওয়া। সেই কারণে 'ইঁদুর' গল্পটি বহু ভাষায় অনুবাদ হয়েছিল।

তাই গবেষক বিশ্বজিৎ ঘোষ বললেন, "সৃজন লগ্নের ভোরবেলা থেকেই তিনি গেয়েছেন মানুষের মুক্তির গান, শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার কোরাস।"

তার লেখার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পরিনত বয়সে না যেতেই তার লেখার আগাগোড়া সাহিত্য রসে সমৃদ্ধ। খুব অল্পকালের মধ্যে তিনি তাঁর সৃজনশীল প্রতিভাকে সম্পূর্ণতা দান করার পথে এগিয়ে চলেছিলেন।প্রতিবিপ্লবীরা তাঁকে এগোতে দেয়নি। তা বলে কি তাকে থামানো গেছে?  না যায়নি! আরও দুরন্ত বেগে এগিয়ে এসেছে। ভয়কে জয় করে এগিয়ে যাওয়াই জীবন।  তাই তিনি  'ইঁদুর' গল্পে তার নায়ক সুকুমারকে দিয়ে বলেন, "মা, তুমি যা ভীতু!... আচ্ছা মা বাবাকে একটা কল আনতে বলতে পারোনা! কোনোদিন দেখবে আমাদের পর্যন্ত কাটতে শুরু করেছে।"

প্রয়াত কবি অধ্যাপক বীতশোক ভট্টাচার্য  'সত্যবতীর বিদায়' গল্পটি সুন্দর আলোচনা করেছেন। দাঙ্গা, বনস্পতি আরও অনেক উল্লেখযোগ্য গল্প প্রশংসার দাবি রাখে।

ভাষাবিদ পবিত্র সরকার তার 'সোমেন চন্দ : জীবন, গল্পাবলি'তে  লিখেছেন -  "মাত্র বাইশ বছর বয়সে খুন হয়ে যাওয়া এক স্বপ্নদর্শী তরুণ, যার হাতে জীবনকে রচনার অক্ষয় কলম, যার বুকে নিঃস্ব শোষিত ও বঞ্চিতদের জন্য এক মুক্ত মর্যাদাপূর্ণ জীবন নির্মাণের স্বপ্ন।" 
২০০১ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর বাংলায় সোমেন চন্দের গল্প পাঠ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। তাঁর নামে বাংলা একাডেমি থেকে পুরস্কার চালু হয়েছে। স্বল্প পরিসর! তাই শেষ করি এই কথা বলে, সোমেন চন্দ ছিল এক সম্ভাবনা, যে সময় সমগ্র বাংলার   বাংলা সাহিত্য সবেমাত্র তার রচনার আলোয় আলোকিত হচ্ছে,  ঠিক সে সময় গুপ্তাঘাতে প্রাণ হারালো বাংলা সাহিত্যের এক আগামী প্রতিভা।২৪শে মে ১৯২০তে যে আলোর ঝলকানি মাটির কাছাকাছি জীবনের শরিক হতে চেয়েছিল, অকালে তা নিভিয়ে দিয়ে  দুর্বৃত্তরা সাহিত্যের আকাশে নামিয়ে আনলো ঘোর অন্ধকার। 
-------

Post a Comment

3 Comments

  1. সুন্দর লেখা

    ReplyDelete
  2. মর্মস্পর্শী লেখা । জানতাম না এনার সম্পর্কে ।

    ReplyDelete
  3. মননশীল লেখনী। সমৃদ্ধ হলাম। লেখককে অনেক ধন‍্যবাদ।

    ReplyDelete