শ্যা ম ল শু ভা ভ ঞ্জ প ণ্ডি ত
রাত নামছে
রোদ্দুর তার ডানা গুটিয়েছে অনেকক্ষণ।
পায়রাদের এখন ঘরে ফেরার তাড়া
রাত নামছে। ব্যালকনির খাঁজকাটা
আলো অন্ধকারে চুঁইয়ে পড়ছে চাঁদ
বিষণ্ণ কবিতার মতো। জমাট অন্ধকারে
শিকারের খোঁজে ডানা জাপটাচ্ছে
জ্যোৎস্নার দল। নগ্ন মাঠ পড়ে আছে একা।
ওকে খবর দিতে হবে। রাত নামছে ।
তীক্ষ্ম থাবা সবজেটে চোখ আর
লোলুপ ঠোঁট নিয়ে ওত পেতে আছে রাত।
পা চালাও তোমরা। জোরে আরও জোরে
এখন নক্ষত্রের আলোয় ঘরে ফিরতে হবে ।
ডাক
নির্মম মেঘ এক,বৃষ্টি পদানত
নতজানু দেহ তবু বাতাস উদ্ধত
পিচগলা যৌবনে রাজপথ জানে -
ছুটে চলা মিছিলের বলিষ্ঠ গানে
মুখরিত হবে জানি প্রতিবাদী সুর
মিশে যাবে দিগন্তে দূর বহুদূর
সহস্র শ্রুতি পাবে সহস্র মুখ
অনাদি জীবনের অনন্ত সুখ
সহস্র অক্ষরা হবে সেই এক স্বর
পৌছবে মহাব্যোমে অব্যক্ত অক্ষর
আনন্দময়ী সেই অমৃতা বাক্
অগণিত মানুষের প্রতিবাদী ডাক ।।
জীবিত
যদি হঠাৎ একদিন ঘুম থেকে উঠে মনে হয়
বুকের বাঁ দিকটায় চিনচিনে ব্যাথা ।
অকারণ অভিমানে চোখ ভরে উঠেছে মাঝরাতে ।
কিংবা হঠাৎ সন্ধের কুয়াশামাখা রাস্তায়
কোনো অচেনা অজানা আধো অন্ধকার গলির দিকে
তাকিয়ে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে আপনার ।
রাস্তার ধারের ল্যাম্পপোস্টগুলো, যারা উদ্ধত নিশানের মতো
মাথা তুলে আছে । আপনারও তাদের মতো
মাথা তুলে দাঁড়াতে ইচ্ছে করে । ফুটপাথের একপাশে
কাঠকয়লার আগুনে চা ফুটছে ।
যেন ফেনিয়ে উঠছে সমস্ত জীবন । ইচ্ছে হয়
জ্বলে যেতে পুড়ে যেতে ওই কাঠকয়লার মত।
ভয় নেই বন্ধু । আপনি জানবেন, নিশ্চিত ভাবেই জানবেন
আপনি বেঁচে আছেন এখনও।
এ শহরে রাত
এখানে উড়ালপুল বেয়ে নামে রাত ।
অলিগলি চোরাবালি ফুটপাথ
আধোঘুমে পাশ ফেরে শিশুদের দল।
নিরন্ন দিনের শেষে ক্লান্ত কোলাহল।
পসারিনী তবু জেগে থাকে,
পসরা সাজিয়ে তার শরীরের বাঁকে।
বুড়ি চাঁদ গুঁড়ি মারে শ্বাপদের মত
যৌবন পুড়ে যায় উদ্দাম উদ্ধত
এ শহরে রাত বাড়ে দিন কমে যায়।
অন্ধকার ভিড় করে আলোর ছায়ায়।
যাত্রা
হালকা ঘুমের পর্দা ছিঁড়ে
কুয়াশার মতো শব্দেরা
আলগোছে স্পর্শ করল কান-
'ওঠ এবার যেতে হবে যে !'
সেই লালগড়ে স্কুলপালানো মেয়েদের দল বুনোকুলের খোঁজে পথ হারিয়েছিল।
কানে আসছিল ক্যানেস্তারা পিটানোর স্বর !
পুঁটি বলল-
"হুই দ্যাখ্ হাতি আসছে রে.."
ছুট ছুট। মেয়েবেলা পিঠে ফেলে
ছুটেছিল ওরা, সেই পুঁটি নাবাল খাঁটতে গিয়ে সেবার ভরা বর্ষায় ফিরলনা আর।
তার বুড়ি মা আজও কপাল চাপড়ে বলে
"বিটিছ্যানার এমনই ভাইগ্য মা আগুপিছু কুনো জমি নাই"
বুকের ভেতর লেবুপাতার গন্ধটুকু আঁতিপাঁতি খুঁজি। পোঁটলা পুঁটলি গোছানো হয়ে গেছে কবেই,
যেটুকু গোছাতে পারিনি সে আমার ছিল না বোধহয় !
এখন পৌষের রোদটুকুর মত
যাওয়ার বড় তাড়া। জানি না কোথায় !
------
4 Comments
বাহ! সত্যি রাত বাড়ে দিন কমে যায়।
ReplyDelete'যাত্রা' কবিতাটা বেশ ভালো লাগলো। অসহায় জীবনের ছবি সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে কবির ভাষায়।
ReplyDeleteকবিতা গুলি অনবদ্য, অলঙ্করণ ও অসাধার।
ReplyDeleteঅলঙ্করণ ও অসাধারণ।
ReplyDelete