জ্বলদর্চি

শম্ভুনাথ শাসমল


শ ম্ভু না থ  শা স ম ল 


সে আসবে না আর

ভোরের কুয়াশার বুকে চিরে
ঝমঝম করে চলে গেল ট্রেন টি
চাকায় নিয়ে রক্তের দাগ
সে দাগ কি মুছবে কোনদিন
অনীশের বুক থেকে? 

গত রাতে মোবাইলটা বেজে উঠেছিল যখন
বার্তা শুনে স্নেহার খুশির ঠিকানা ছিল না আর
ইচ্ছে করছিল বাকি রাতটাকে ঠেলে সরিয়ে
দরজায় এসে দাঁড়াবে নতুন সকাল এনে

রাত্রি শেষ হতে তখনো অনেক বাকি
সাজগোজ সেরে স্নেহা স্টেশনে এসে দেখে
তার ট্রেন প্লাটফর্মে দাঁড়য়ে
ওভার ব্রিজে যখন ও ট্রেন চলতে শুরু করে 
স্নেহা দৌড়ে উঠতে গিয়ে চলে যায় চাকার তলে

যীশুর জন্মদিনে হয়তো স্নেহার বার্থডে পার্টি হয় না
কিন্তু অনীশ কেক আনে
অনীশের কথামতো এবার সে শাড়ি পরেই বেরিয়েছিল
সাগরবেলায় ঝিনুক খুঁটে নিয়ে
অনীশের  বুকে হারিয়ে যাওয়ার কথা ছিল তার।

ওরা কাজ করে যায়

নিঃশব্দ দুপুরের নীরবতা ভেঙে
দূরে ঐ তপ্ত পথে হেঁকে যায় ন্যূব্জ দেহে
ক্ষীণতম উদরের জঠর জ্বালায়
পায়ে তার ফোসকার দাগ
সারা শরীরে লুনীর জোয়ার

দৃষ্টি না চলা ছেদহীন শ্রাবনধারা
দামিনীর নিদারুণ মেতে ওঠা খেলা
মাঝ মাঠের মেয়েটি অনুভব করে অন্য রসে
হাঁটু করে তোলা হেটো শাড়ি
আটাশি বিধবার লজ্জা ঢাকতে বাধ্য হয়
মোটা বাঁধে শুয়ে কাঁদে তার মায়ার বাঁধন

হাড় কাঁপানো বাঘের শীতে অর্ধনগ্ন দুই বুড়ি
ভোরের কচি আলোয় এক বুক জলে খুঁজে ফেরে গুগলি
হৃদয়ে লেগে থাকে সর ও শ্রমের দাগ
মোরাম রঙা কোরা শাড়ি সাপের মতো মাথায়
কুণ্ডলী পাকায় বৃত্তি বস্তা বহনে
স্টেশনে এসে দাঁড়ায় - দুচোখে জীবিকার প্রতীক্ষা

মধুমাস নিয়ে আসে নিমের তিক্ততা
প্রিয়হীন রিক্ত বুক শক্ত করে সাজায় প্রেমের গুটি
প্রিয়াহীন রুক্ষ মন স্নিগ্ধ হয়ে উঠতে চায়
প্রেম সমীরণে, ঋতুরাজ আসে 
এবারো কি ভাঙবে বালির বাঁধ?


অস্পর্শী

বৃষ্টি শেষের রোদে তোর হাসি ঝরে
তোকে অপরূপ করে সাজায় রামধনু
ভোরের শিশিরে ঝরে পড়া তোর একফোঁটা জল
কুয়াশার ঢেকে দেয় আমার মনটাকে
খেজুর রসের গন্ধে আমাকে জড়িয়ে ধরিস
মকর স্নানে ধুয়ে যায় সব পাপ
পঞ্চমীর অঞ্জলিতে একটু পুণ্যবতী
ফাগুন রাগে রঞ্জিত ও মুখ
বাসন্তী আবেশে ভরিয়ে তোলে চারদিক
চম্পার চকিত আভায় শিহরিত তোর মন
নিঃসঙ্গ ঘুঘুর ডাকে শুধুই স্মৃতি রোমন্থন
করাল কালবৈশাখী তোকে কোথায় উড়িয়ে নিয়ে যায়
আষাঢ়ের নীল মেঘ তোর গন্ধ দিয়ে যায়।


স্মৃতিতে শ্রাবণ

শ্রাবণের বৃষ্টি ভেজা একটি পাখি
মনবীণায় বাজিয়ে তোলে করুন একটি সুর
বর্ষা রাগিনীর সে সুর মূর্ছনায়
অনুরাগ অভিমান হয়ে ঝরায় হতাশার শ্রাবণ ধারা

জল থৈ থৈ দিঘির মতো
জল ভরা দুটি চোখ খুঁজে বেড়ায়
ফেলে আসা স্মৃতি মাখা
শ্রাবণের দিনগূলোকে
অর্ধনগ্ন কচি কাঁচার জল 
ছিটাছিটি থেকে
পরিণত মানবীর হাত পেতে বৃষ্টি মাখা
শ্রাবণের দিনগুলি বেদনার্ত করে তোলে।  

স্বপ্ন ছিল মনে- 
মস্ত বড় কবি হবে একদিন
হৃদয়ের ডাকে সৃষ্টি হয় কবিতার পর কবিতা
খ্যাতির গগন বুঝি খুব বেশি দূরে নয় 
সৃষ্টির হরষে বহে চলে আনন্দধারা।

প্রেরণার আলোক শিখা হঠাৎই নিভে যায়
কোন এক শ্রাবণের দমকা হাওয়ায়
মন- প্রকৃতির রাজ্যে আঁধার ঘনায়
একরাশ প্রতিভার অকাল প্রয়াণে।

শ্রাবণের ই এক ক্ষণে বলেছিল সে
তোমার সৃষ্টি রবে বাংলার ঘরে ঘরে
শ্রাবণের ই এক প্লাবন টেনে নিয়ে গেল তারে
পৃথিবীর শেষ ঠিকানায়।

কতকাল গেছে মুছে গেছে কত স্মৃতি
মনে রয়ে গেছে শুধু তার হারিয়ে যাওয়ার দাগ
ফুল এখনও ফোটে পাখিরা গান গায়
প্রকৃতির সব কিছু চলে প্রকৃতির নিয়মে
শুধু একটি স্থানে নিয়মের হেরফের
লেখা হয় না একটিও কবিতা
কবে হবে লেখা শ্রাবণের তরে
একটি শ্রাবণ গীতিকা।

স্বপ্ন হারিয়ে যায়

বসন্তের তাপ দগ্ধ এক ভরা দুপুরে
মাথাটা ঝিমঝিম করছিল রিমঝিমের
অসহ্য এক মানসিক যন্ত্রনায় ছটফট করে
পড়ন্ত বেলায় জানালার ধারে এসে দাঁড়ায়
জল ভরা দুটি চোখে।
অস্তমিত সূর্যের মোহিনী আলোকে
প্রকৃতি হয়ে উঠেছিল তিলোত্তমা তার চোখে
তবুও চোখ দুটি তার জলে ভাসছিল থরথর করে কাঁপছিলো দুটি ঠোঁট।
সামনের পথটা দিয়ে কোলাহল মুখর
ফিরছিল একদল পরীক্ষার্থী
এবার উচ্চ মাধ্যমিকে বসার কথা ছিল তার ও
পরিবারের রক্ষণশীলতার কৌলীনে
স্বপ্ন মরে যায় নববধূটির মনে।
স্বামী সংসার সংস্কার সহবত
তার জীবনটাকে মরুভূমি করে তোলে।
রবীন্দ্রনাথ জীবনানন্দ বিভূতি বনফুলেরা
তার মনে বিকশিত হওয়ার আগেই ঝরে যায়
অ্যভোগ্যাড্রো ডালটন বয়েল কিংবা চার্লস
অর্থহীন হয়ে পড়ে গৃহের পাঠে।
তারপর একদিন অনুভব করে
মা হয়েছে সে
জ্ঞানের মশাল তার চোখে নিভে গেলে ও
প্রতিদিন সন্ধ্যায় সে প্রদীপ জ্বালায় তুলসী তলায়
প্রার্থনা- চিরদিন জ্বলুক জ্ঞান দীপ
তার আগন্তুকের চোখে।
------

Post a Comment

0 Comments