প্র তা প সিং হ
ধ্বংসের উপর
পাখি রক্ষা হল না
ফুল রক্ষা হল না
রক্ষা হল না জল,পুকুর, নদী, জলাশয় --
নির্বংশ হয়ে গেল গাছ,লতাগুল্ম,
পাহাড় পর্বত, মস্ত মস্ত জনপদ,
হাজার হাজার কুঠার জ্বলতে লাগল
হাজার হাজার আগুনের শিখা
জড়িয়ে ধরল তোমাকে আমাকে
একটি বাঁজা অপুষ্পক প্রকৃতির মধ্যে
আমরা ঘুরতে লাগলাম দিনের পর দিন
নিরবয়ব ছায়ার মতো হাহাকার করতে লাগলাম
একদিন দেখতে দেখতে
লুপ্ত হয়ে গেল সব ঐতিহ্য,
প্রেম, অঙ্গীকার --
স্তব্ধ হয়ে গেল একদিন সভ্যতার স্রোত
আমাদের ধ্বংসের উপর জেগে উঠল একেকটা
শূন্য, ফাঁকা, অশরীরী ইমারত।
তোমার প্রতিমা
কেউ -বা তোমাকে পাতার মতন ভাবে
কেউ -বা ভেবেছে ফুলের অহংকার
দুঃখী কবিটি কী আর করতে পারে --
তোমাকে প্রতিমা সাজিয়েছে বারবার।
মেঘে বর্ষণে ভরে গেছে দু'টি চোখ
রৌদ্রের রঙে এঁকেছে তোমার মুখ
দুঃখী কবিটি কী আর করতে পারে --
তোমার বিষয়ে এখনো সমুৎসুক।
লেখার টেবিলে নদীর টুকরো জুড়ে
সাজিয়ে দিয়েছে দুরন্ত কবিতায়
তোমার প্রতিমা চুরি হয়ে গেছে কাল
অঙ্গাভরণ পড়ে আছে জ্যোৎস্নায়!
গান
গলা ছেড়ে কেউ গান গাইছে।
যোধপুর পার্ক পেরিয়ে এলাম,
যাদবপুর রয়ে গেল পিছনে,
সুকান্ত সেতুর সামনে অনেকক্ষণ
থমকে দাঁড়িয়ে রইলাম, গানটা শেষ হল না।
কতদিন পরে সুরের মায়া।
সর্বাঙ্গ ভিজে গেল।
বাঘাযতীন পেরিয়ে এলাম,
স্তব্ধ হয়ে আছে গাঙ্গুলিবাগান,
রামগড় আর আমাকে এগোতে দিচ্ছে না!
চিত্রার্পিত হয়ে আছে আকাশ, সুরের আকাশ।
গানটা এখনও আগের মতো,
কিছুতেই শেষ হল না।
শরীরের শুকনো ডালপালায়
ঝংকার উঠছে।
সুরের ঝংকার।
মহামায়াতলায় পৌঁছে আমি
একটা সম্পূর্ণ গান হয়ে গেলাম।
ঘুড়ির মতো একা
১.
তুমি আমার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা
তুমি আমার শাসন, চোখরাঙানি,
তুমি আমার হাজার হাজার বেত্রাঘাত
হাড়মাংস এক হয়ে গেল। তবু হাত জোড়
করতে পারলাম না।
২.
ফুল আসছে হাওয়া আসছে দরজা ফাঁক করে
কাগজ আসছে উড়ে আসছে তুলো , ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে আসছে দূরান্তের পাখি
তবু লাল দরজা নীল দরজা দিয়ে একটাও
মানুষ আসছে না।
৩.
কেউ আমার সঙ্গে নেই
কেউ আমাকে দেখছে না
মুদির দোকান মাছের আলু পেঁয়াজের দোকান
সবাই দূর -ছি করছে
কী অদ্ভুত অমঙ্গল ঘনিয়ে এলো জীবনে।
৪.
শরীরের মধ্যে খুব জল জমেছে
দিন দিন ভারী হয়ে উঠছে শরীর
আমি কীরকম যেন মন্থর হয়ে উঠছি
তুমি আমাকে সব দিয়েছ,কিন্তু একবারও
ব্যথার ওষুধ দাওনি।
৫.
ভাত দিলে না, ডাল দিলে না, পোস্ত দিলে না,
চচ্চড়ি দিলে না, ঝোল দিলে না, ঝাল দিলে না,
থালা ভর্তি করে শুধু কয়লা সাজিয়ে দিলে --
বুঝলাম আমার ভগ্নশয্যা এবার শেষ হয়েছে।
দিনের পর দিন
ছাদ হয় না, জানলা হয়।
কথা হয় না, শুধু হাসি হয়।
কোনোদিন রাগ হয় না, দুঃখ হয়।
আক্রোশ হয় না, কান্না হয়।
ফুল হয় না, পাতা হয়।
হাজার হাজার পাতায় সারাদিন
খড়খড় মড়মড় শব্দ হয়।
মিলন হয় না, শুধু দিনের পর দিন
আনন্দ হয়।
এক আকাশ আনন্দ নিয়ে
নিঃশব্দ অন্ধকারে উড়তে থাকি।
------
1 Comments
কবিতা গুলি বেশ ভালো।
ReplyDelete