জ্বলদর্চি

সুধাংশুরঞ্জন সাহা


সু ধাং শু র ঞ্জ ন  সা হা 


বেলুনের কোন জন্মদিন নেই

পরিধি উপচে ইচ্ছের দামামা .....
জানালার শর্ত না মেনে পথ ছুটে যায় বৃষ্টির                                    ঠিকানার খোঁজে ।
এই দাবদাহে পথও রাজপথ ছেড়ে খুঁজতে থাকে                                                                  
অলিগলি পথ, গাছের ছায়ার নেপথ্যে ।
এসি গাড়িও দু'দন্ড দাঁড়ায় গাছের নিচে ।
কিন্তু ছায়াদের কোন ক্লান্তি নেই ।

নদী, পথ, বা শহরের জন্মদিনে রঙিন বেলুন                                    আবশ্যিক এখন ।
কিন্তু বেলুনের কোনো জন্মদিন নেই,                                              মনখারাপও নেই ।
বহুগামী আলোর ঠিকানায় যতটা অন্ধকার থাকে                                                               
ততটা আর কোথাও নেই ।
ওয়াচ টাওয়ার ছাড়া কেউ তার খোঁজ রাখে না।
ভবঘুরে ঘুঙুর 

এক একদিন মেহগনি ভোর এসে ডাকে :
'তোমার কি যাবার আছে কোথাও ? '
পথিক মাত্রই জানে 
সব পথ সরলরেখা হয় না।
বৃত্ত, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজও হয় দু'একটা।
ভবঘুরে ঘুঙুরও ঝড় তোলে মনের গভীরে, 
কিংবা নালিশ জানায় ব্যর্থ চোখ তুলে।
বাউল, লোকগানের কুয়াশাকাচে জমে ওঠে জীবন।                                                                 
যোগফল গুণফলে বারবার ধরা পড়ে ভুলে ভরা অংক।                                                             
আলোর জ্যামিতিক আভাসে ক্লান্ত গাছ ও  সড়ক                                                                    
খোয়া যাওয়া সরলতার বসবাস খোঁজে 
অন্ধকার সুড়ঙ্গের নির্জন ভ্রমণবৃত্তে 
অথবা মুঠো মুঠো এলজোলামের চিরঘুমের                                      কলোনিকথায়।


স্বরচিত ভুল 

ঠিকানা বদলাতে বদলাতে এখন 
আমি এক স্বরচিত ভুলের ঠিকানায় জড়িয়ে গেছি।                                                                  
আমার নিজস্ব বর্ণমালা 
প্রস্তুতিহীন প্রয়াসে থেমে গেছে 
নদীহীন, পারাপারহীন এক সরু গলিপথে।
দিনরাত সময়ের ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে 
কানে নির্বাসিত কথার ভিড়।অবিচলিত কথামুখ
ড্রাকুলা আখ্যান, নাকি মৃত্যুশিল্প।
এই কার্তিক শেষের রাতে হিম দীর্ঘশ্বাসের বাতাস।                                                                  
স্তব্ধরাত ছিঁড়ে নামে মহাবিশ্ব, 
অনন্ত ঐশ্বর্য অথবা মৃত্যুসুরা,
নাকি কোন প্রেতকুমারী, কে যায় ভেসে 
আমার রক্তপ্রবাহে ?
কল্পনাবিস্তারে কে বসায় থাবা ?
কে গায় মিছিল গান ?
শতাব্দীর সেতু ধরে কে মারে টান?
দিগভ্রষ্ট পাখি কেন বিভ্রান্তি ছড়ায় 
এপার ওপার !


সাদামাঠা বিকেল 

স্কুল ছুটির পর ক্লান্ত পায়ে হাঁটা শুরু করলে
রেলস্টেশন ছোঁয় তোমাকে রোজ।
সাদামাঠা বিকেল এসে চুপচাপ বসে তোমার পাশে।                                                                  
সাজগোজ মুছে বেহিসেবী ঠোঁট 
গল্প জুড়ে দেয় ট্রেনের গতির সাথে।
কিংবা উদাসীন একতারা গায় 
মানব জমিন চাষাবাদ কথা।
তিতির পাখিরাও নির্জন রক্তের ভিতর 
মর্মর অন্ধকার মাখে, নিষেধ না মেনেই।
একোয়ারিয়াম

একরাশ নির্জনতা কুচি কুচি করে 
একোয়ারিয়ামের রঙিন মাছেরাই 
ঘরময় সংসার পেতেছে, সেকি ভুল জলাশয়ে ? 
নাকি, জলের সঙ্গে মাছের কথা 
বর্ষা ও শীত যাপনে ! 
সেইসব লুকনো বিষাদ 
জলাশয় ছাপিয়ে ঘরময় সাঁতার কাটে !

কারও কি আসবার কথা ছিল ? 
ভেবে ভেবে শরীরে জমেছে চিনি ।
বেড়েছে প্রেসার,  আরও কত কী ! 
তবুও তো সে ফেরে নি !

দিনের পর দিন রান্না করে রাখে মা 
তবু, সে ছেলে ফেরে না !
সে কি অগোচরেই থেকে যাবে বাকি জীবন? 

মায়ের যাবতীয় কান্না জমে জমে একটা                                          একোয়ারিয়াম।

-------

Post a Comment

0 Comments