অ জি তে শ না গ
ওকে চাই
যেখানে পাহাড়টা ধুঁয়ো হতে হতে প্রায় বিলীয়মান,
ঠিক সেখানে দেবদারু গাছটার নিচে ও কে?
ওই বুঝি গত শতাব্দীর হারিয়ে যাওয়া মেয়েটা?
ওকে আমার চাই, এনে দাও ওকে।
ওর নগ্ন গায়ে তুলে দেব আমি সদ্য পুরস্কারে পাওয়া চাদরখানি,
তুমি কি জানো ও খুশী হবে?
তুমি কি জানো ও আজো তৈরি নয় সপ্তপদীর তরে?
তুমি কি জানো ওর ত্বক মোমের চেয়েও নরম!
তুমি কি জানো আমার হাসি ওর বুক ছুঁয়ে চলে গেছে ঐ পাহাড়ের দিকেই?
ওকে আমার চাই, এনে দাও ওকে, যেভাবে, যেখান থেকেই পারো,
ওর ডিম্বাণু নিষিক্ত হতে হতে কত শতাব্দী পার,
ঐ যে বললাম, গত শীতেও ওকে দেখেছি গালে টোল ফেলে হাসতে।
কোথায়? ঐ ধরো মেক্সিকোর কোন গ্রামে, অথবা
নাইজেরিয়ার প্রত্যন্ত প্রান্তরে, মায়া সভ্যতার সিঁড়ি কিংবা মাচু-পিচুর কাছাকাছি;
পছন্দ না হলে পেয়ে যাবে ঠিক চে-গ্যেভারার গ্রামে....
কী আসে যায়? এই সময়ে ওকেই চাইছি, এই যেখানে আছি।
ফিরে এলাম ঠিক
দেখো আমি ফিরে এসেছি ঠিক,
এখনো তোমার স্বামীর রেখে যাওয়া গতপরশুর ফুল,
তোমার সমাধির আশেপাশে ইতিউতি ওড়ে।
দেখো এখনও পড়ন্ত দুপুরের রোদ ছুঁয়ে ফেলতে চাইছে তোমায়,
ঠিক যেমন তোমায় ছুঁতাম আমি নানা অছিলায়,
জানো কোলকাতার ভরদুপুরে আমি দেখে এলাম পেঙ্গুইনের দল,
জোড়ায় জোড়ায় হাঁটছে রাসবিহারীর রাস্তায়,
অথচ একজনও কেউ অবাক হচ্ছে না, যেমন আমি অবাক হলাম।
অথচ একজনও কেউ এখন কবরখানায় নেই –
যাকে দেখে ভাবি, এখনও মানুষ আছে পৃথিবীতে।
জানি সমাধির নিচে তোমার শরীর –
যে শরীর আমার কাছে নিভৃতে ছায়াস্নান
যে শরীর আমার কাছে বেদুইনের মরুদ্যান
যে শরীর আমার কাছে কবিতার সূতিকাগার
যে শরীর আমার কাছে সন্ধ্যেয় জ্বলে ওঠা আলো
যে শরীর আমার কাছে ফিরে আসার যোগ্য অনুপাত।
তবুও দেখো আমি ফিরে এসেছি ঠিক; কারন -
আমি তোমার সামনেই কাঁদতে চাই, ঈশ্বরের সামনে নয়।
আমার অনুপস্থিতির সুযোগে
তুমি ভাবতেই পারো,
আমার অনুপস্থিতির সুযোগে -
একটা সন্ন্যাসিনী তোমার খালি ফ্ল্যাটে উঁকি দিয়ে যাবে,
আরেকজন কলিংবেল বাজিয়ে দেখবে আমি ঘরে আছি কিনা,
আবার কেউ নরম গদীতে মোড়া গাড়ির কালো কাঁচের এপার থেকে –
সরাসরি দেখে যাবে আমি ফ্ল্যাট থেকে বেরোলাম কখন,
ঐ ধরো নেদারল্যান্ড অথবা যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকের কোন মিলিটারি গুপ্তস্থান থেকে –
একটানা অথবা বিরতি দিয়ে দিয়ে গোপনীয় টেলিফোন।
তুমি চাইতেই পারো,
ওদের কাউকে নিয়ে কোন পাঁচতারা বাসস্থানে আশ্রিত হতে,
ফুটপাতে বিক্রি হওয়া সস্তা আধাঝরা গোলাপ উপহার দিতে,
আবার সন্ন্যাসিনী অথবা কামুক নারী – কোথাও কোথাও কখনও।
আমার অনুপস্থিতির সুযোগে,
তোমার কাশের ফুলে আগুন ধরাতে চাইলেই বা,
সে অথবা তুমি।
ফলাফল শূন্য।
কেননা ওরা কেউ দেবতা নয় যে তোমার শারীরিক অক্ষমতাকে সহ্য করবে।
অভাবিত
আমি জানি এক গ্রামের কথা,
সেখানকার তুলোমাটিতে পড়েনি মিলিটারি বুটের ছাপ,
যেখানে আজো রাইকিশোরী এসে জানায় জনান্তিকে – কিছু চাই?
আর প্রতি সন্ধ্যায় উলুধ্বনি পাল্লা দেয় আজানের সাথে,
ভাবো তো কত আনন্দ!
আমি দেখি সেই গ্রামের কথা,
যেখানে শীতে নকশী কাঁথা মুড়ে দেয় ধান ক্ষেতের পর ধান ক্ষেত,
সামান্য জলে দুধসাদা পা ডুবিয়ে একটা মেয়ে বলে – কিছু চাই?
যে গ্রামে বৃদ্ধ নেই, সবহারা নেই, বাঁজা গরু নেই, নেই বেশ্যা।
ভাবো তো কত আনন্দ!
আমি পড়ি সেই গ্রামের কথা,
যেখানে কমলালেবুর গাছ পড়ে থাকে অদেখাই, ঝড়ঝঞ্ঝা সঙ্গী করে,
সেখানে কুমোর পাড়ায় গরুর গাড়ি আর বেচে না কলসি হাঁড়ি,
শুধু নোয়াপাড়ার মাঠের ওপরে কাজলকালো চোখ মেলে কেউ বলে – কিছু চাই?
আমি জানি, সেথায় পোড়া বাড়ি নেই, রেলগাড়ি নেই, নেই কৃষ্ণের বাঁশী।
ভাবো তো কত আনন্দ!
আমি লিখি সেই গ্রামের কথা,
সে গ্রামের ঈশ্বর এই কিছুদিন হল ব্যস্ত মধুচন্দ্রিমায়,
আর মসজিদের তরুণ ইমাম ছুটি দিয়েছে আল্লাকে,
আর খুব ভোরে শিশির আবিষ্কারে ব্যস্ত মেয়েটা মুখ উঁচিয়ে খালি বলে – কিছু চাই?
এ গ্রামে সবাই শিশু, কেউ সুলভ, খালি রাতদিন গীতিকবিতায় সুর দেয়।
ভাবো তো কত আনন্দ!
ভালো থেকো নিরন্তর
তুমি যত ভালোবাসা দিয়েছিলে কারনে কারনে -
সবটুকু তুলে রেখেছি কুলুঙ্গিতে
জানি হয়ত কোনদিন পেড়ে পড়বার সাধ জাগবেনা ফিরে
তবু সামনের শীতে রোদে মেলে রাখবে
অথবা অকাল বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচাবো অনেক আদরে।
ওটুকুই তো আমার এই ছোট্ট ঘরে বেঁচে থাকার রসদ -
তুমি শুধু রত্নসংগ্রহে ব্যস্ত থেকেছ সারাদিনমান
যেটুকু ভালোবাসা দিয়েছ, তাও অনাদরে
যেমন পরিতৃপ্ত আহারের শেষে মাছের ভগ্নাংশ
সেটুকুতেও তোমার ঠোঁটের আস্বাদ ছিল।
আজকাল আমি আকাশের দিকে তাকাই অনেকক্ষণ --
ছোট্ট ঘরটায় কেমন দমচাপা ভাব
তুমি জানিও কেমন দেখতে সমুদ্র,
কেমন করে পাহাড়ের পিছে চাঁদের জন্ম
আমি ডাকপিওনের অপেক্ষায় না হয় দুপুরটা কাটাবো।
জানি সামনেই ভীষণ ঠাণ্ডা পড়বে এই শীতে
আমি বরফ পড়তে দেখিনি জানো
তোমার ভালোবাসা জমানো আছে গ্রন্থাকারে
রাতে ঐটুকু আমার নিদারুন ওম দেয়
শুধু তুমি ভালো থেকো বাকি শীতটুকু নিজস্ব কামনায়।
------
0 Comments