অ নি ন্দি তা শা স ম ল
প্রণাম
কার্পেটের ওপর উল দিয়ে অতি যত্নে মা লিখে রেখেছিলেন-
"যাতে চরিত্র তৈরী হয়,মনের শক্তি বাড়ে,বুদ্ধির বিকাশ হয়,নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে,এইরকম শিক্ষা চাই।"
প্রতিদিন দরজার সামনে ফ্রেমে বাঁধানো এই লেখাগুলো পড়ে,
পাশে একইভাবে রাখা একটি ছবিকে প্রণাম করে বাড়ির বাইরে
পা রাখতাম।
কী তেজোময় দৃপ্ত ভঙ্গি, স্থির দৃষ্টি !
মনে সাহস পেতাম,পৃথিবীর সব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার।
সেই থেকে কর্মমুখর জীবনযাপন,
হার না মানা জেদের হাতেখড়ি।
মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকার,
মনকে রাশি রাশি তথ্য দিয়ে নয়,
অপার বিস্ময় থেকে জানার মাঝে অজানার সন্ধানে ,সামনে এগিয়ে চলা।
দূর থেকে আজও শুনি--
সাগরপারে শিলাখন্ডে বসে থাকা ছায়ামূর্তির সেই ধ্যানগম্ভীর উদাত্ত কন্ঠস্বর --
"আমরণ কাজ করে যাও-- আমি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে রয়েছি।"
কবিতার খোঁজে
সারাদিন হাওয়ায় ভেসে বেড়াই
সারাদিন সাঁতার কাটি জলে
আমার ডানা ভিজে আছে শব্দে
আমার বুক জুড়ে তোলপাড় শব্দরা..
আমার ওষ্ঠে শব্দের অস্ফুট উচ্চারণ
সারাদিন...
ও আকাশ,ও বাতাস,ও চরাচর
আমাকে শব্দ দাও, কথা দাও..
আমাকে ভাষা দাও।
আমি কবিতা লিখতে পারিনা
কবিতাকে অনুভব করি
আমি কবিতা ভালোবাসি
পাগলের মতো ভালোবাসি
কবিতার সঙ্গেই আমার দিনযাপন
কবিতার সঙ্গেই আমার প্রেম
জন্ম--জন্মান্তরের সম্পর্ক।
ও কলম, আমাকে অক্ষর দাও...
চালচিত্র
এমনই বৃষ্টিমুখর দিনের অঝোর ধারায়,
সেই যে আমাদের প্রথম ভ্রমণ--
চিল্কিগড় আর ডুলুং নদী।
প্রবল বর্ষণে অটোর ঘেরাটোপের মধ্যে হাতে হাত, প্রথম শিহরণ,
কানে আর মনে না বলা সেই গানের কলি--
ডেকেছি কে আগে,কে দিয়েছে সাড়া,
কার অনুরাগে কে গো দিশাহারা..
কতদিন কত ট্রেনের কামরায় মুখোমুখি,লুচি আলুভাজার সুখের সংসার,আনন্দযাত্রা !
শুশুনিয়া,বিহারীনাথ, জয়চন্ডী, বনলতা, পাঞ্চেত, বড়ন্তী, আযোধ্য পাহাড় আর রাঢ় বাংলার আদিগন্ত সবুজে হারিয়ে যাওয়া...
মুকুটমনিপুরের স্থির জলে ছায়ার মতো থেকে গেছে সেসব কথা।
নারীজন্ম সার্থক তোমার ছোঁয়ায়।
দিনযাপন আর প্রাণধারণে হাঁটতে হাঁটতে,
ডেকে ডেকে চলে গেছি কত দূরে..
আমার আষাঢ়, আমার আগমনী,আমার হেমন্তদিন।
অনুচ্চারিত ব্যবধান
নিশ্চিন্ত নিরুদ্বেগ সম্পর্ক মনকে শান্ত করে।
সারারাত নিরবচ্ছিন্ন ঘুম।
চাওয়া পাওয়ার হিসেব শুরু হলেই,
নির্মল বন্ধুত্বটাও নষ্ট হয়ে যায়। নষ্টনীড়ের মতো অনুচ্চারিত ব্যবধান।
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায় আচমকা।
নক্ষত্রখচিত রাতের আকাশের দিকে অসহায় তাকিয়ে নিজের ভুলগুলো
ভাবতে ভাবতেই , কখন যেন পূর্ব দিগন্তে লাজুক লাল ফুটে ওঠে।
এখন নতুন সকালের প্রতীক্ষা!
তরঙ্গ
বাঁধনহারা মনের যে উচ্ছ্বাস,
তাকে ঢেউ বলি।
সমুদ্রের গভীরে গর্জন করে ছুটে আসতে আসতে,তীরে পৌঁছে পাড় ডাঙে।
ছড়িয়ে পড়ে।
হৃদয়ের না বলা বাণী,
দূর থেকে মুখর ছুটে আসে।
মুখোমুখি এসে দাঁড়ালেই, চোখের নীরব ভাষার স্তব্ধতা।
সব তোলপাড় সংযত হয়।
তরঙ্গ হয়ে বহুদূর ছড়িয়ে পড়ে।
ব্যপ্ত হয়ে যায় আরেক হৃদয়ে।
------
0 Comments