জ্বলদর্চি

ইংরেজি সাহিত্য: পর্ব বিন্যাস ও রূপরেখা || পর্ব - ৬


ইংরেজি সাহিত্য: পর্ব বিন্যাস ও রূপরেখা
পর্ব- ৬    

সৌ ম্য দী প  চ ক্র ব র্ত্তী

 
রোমান্টিক পিরিয়ড:

ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসের পাতা ওল্টালে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই এক যুগের সৃষ্টিশীলতার আঙ্গিকের বিরোধিতার মধ্যে দিয়ে নির্মিত হয়েছে পরের যুগের ভিত্তিপ্রস্তর। আর ঠিক তাই আমরা দেখি ইংরেজি সাহিত্যের রোমান্টিক পিরিয়ডে। নিওক্লাসিক্যাল পিরিয়ডের নিয়মে বাঁধা শিল্প-সাহিত্য চর্চার বিরোধিতার মধ্যে দিয়ে সূচিত হয় রোমান্টিক পিরিয়ডের মুক্ত মনের কৃষ্টি-চর্চা। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকেই দার্শনিক লক, রুশোর আবেগ-অনুভূতির অগ্রাধিকারের তত্ত্ব শিল্পী-সাহিত্যিকেরা সমাদর করতে থাকেন। ১৭৮৯ সালে সূচিত হওয়া ফরাসি বিপ্লবের প্রভাবে ইংল্যান্ডের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্বাধীনতা, সাম্য ও সৌভ্রাতৃত্বের আবহ তৈরী হয়। সময়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৭৯৮ সালে উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও স্যামুয়েল টেলর কোলরিজের যৌথ সংকলন 'লিরিক্যাল বাল্যাডস' প্রকাশের মধ্যে দিয়ে সূচনা হয় রোমান্টিক পিরিয়ডের।
অনেক সমালোচক মনে করেন এর অনেক আগেই ইংরেজি সাহিত্যে রোমান্টিক পিরিয়ডের সূচনা ঘটে উইলিয়াম ব্লেক, রবার্ট বার্নস ও থমাস গ্রে-র হাত ধরে। বেশিরভাগ সাহিত্যের ইতিহাসকারেরা এই তিন কবিকে 'রোমান্টিসিজমের অগ্রদূত' বলেই অভিহিত করে থাকেন। অনেক সমালোচক আবার ব্লেক-কে ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও কোলরিজের সাথে একই সারিতে রাখেন। বিষয় ও শৈলীর মূল্যায়ন করলে দেখা যায় ব্লেকের 'দি সংস অফ ইনোসেন্স এন্ড দি সংস অফ এক্সপেরিয়েন্স','দি ম্যারেজ অফ হেভেন এন্ড হেল', 'দি বুক অফ থেল' সংকলনের কবিতা গুলি 'লিরিক্যাল বাল্যাডস'-এর কবিতাগুলির সাথে অনেকক্ষেত্রেই একাসনে বসার দাবি রাখে।

রোমান্টিক পিরিয়ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি হলেন উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ। 'লিরিক্যাল বাল্যাডস'-এর ১৯ টি কবিতা ছাড়াও তাঁর লেখা আত্মজীবনীমূলক দীর্ঘ কবিতা 'দি প্রিলিউড' বিশ্বসাহিত্যের সম্পদ। কবিতা ছাড়াও 'লিরিক্যাল বাল্যাডস'-এর প্রস্তাবনা, 'দি প্রিফেস টু দি লিরিক্যাল বাল্যাডস'-এ তিনি রোমান্টিক কবিতা তথা সাহিত্যের বিষয়, বৈশিষ্ট্য সহ এক সম্যক ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। স্যামুয়েল টেলর কোলরিজের সাহিত্যকীর্তি শুধু কবিতার অঙ্গনেই সীমাবদ্ধ নয়। 'দি রাইম অফ দি এনসিয়েন্ট মেরিনার', 'কুবলা খান', 'ক্রিস্টাবেল'-এর মতো কবিতা ছাড়াও তাঁর 'বায়োগ্রাফিয়া লিটেরারিয়া' সমালোচনামূলক সাহিত্যে নতুন দিশা উন্মোচিত করে। ওয়ার্ডসওয়ার্থ এবং কোলরিজের সাথে কাম্বারল্যান্ডের 'লেক' ডিস্ট্রিক্টের আরেক বাসিন্দা রবার্ট সাউদের ঘনিষ্ট বন্ধুত্বের কথা সর্বজনবিদিত, এই তিন জন বিশিষ্ট কবিকে একসাথে সাহিত্যের ইতিহাসকার 'লেক পোয়েটস' বলে থাকেন।

ওয়ার্ডসওয়ার্থ, কোলরিজের পরে রোমান্টিক কবিতার জগৎ আবর্তিত হয় পি.বি. শেলি, জন কিটস এবং জর্জ গর্ডন (লর্ড)বায়রন-কে কেন্দ্র করে। শেলির কবিতা- 'টু আ স্কাইলার্ক', কাব্যধর্মী নাটক-'প্রমিথিউস আনবাউন্ড', কিটসের 'ওড' সমূহ,কাব্যধর্মী রোমান্স 'এন্ডিমিয়ন' এবং বায়রনের আত্মজীবনীমূলক দীর্ঘ কবিতা 'চাইল্ড হ্যারল্ড'স পিলগ্রিমেজ' ও বিদ্রুপাত্মক কাব্য 'ডন জুয়ান' বিশ্ব-সাহিত্যকে উৎকৃষ্ট করেছে। তবে সৃজনশীল লেখার পাশাপাশি শেলির 'আ ডিফেন্স অফ পোয়েট্রি' এবং কিটসের চিঠি-পত্র সমূহ সমালোচনামূলক সাহিত্যে এঁদের স্বকীয়তার পরিচয় দেয়। এসময়ের অন্যতম আলোচিত সমালোচনামূলক রচনা হলো মেরি ওলস্টোনক্রাফট-এর 'আ ভিন্ডিকেশন অফ দি রাইটস অফ উইমেন্' যা নারীর অধিকারের এক দলিল হিসেবে নারীবাদী সমালোচনামূলক লেখার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। 
কাব্য-কবিতার পাশাপাশি রোমান্টিক পিরিয়ড বেশ কিছু উৎকৃষ্ট উপন্যাস-ও উপহার দিয়েছে। গা-ছমছমে, শিহরণ জাগানো এক অভিনব ঘরানার উপন্যাস এসময়ে দেখা যায়। 'গোথিক' ঘরানার এই উপন্যাসগুলির মধ্যে অন্যতম অ্যান র‍্যাডক্লিফের 'দি মিস্ট্রিজ অফ উডোলফো', ম্যাথু গ্রেগরী লেউইসের 'দি মংক' এবং মেরি শেলীর 'ফ্রাঙ্কেনস্টাইন'। বলে রাখা ভালো, মেরি শেলীর 'ফ্রাঙ্কেনস্টাইন' কল্প-বিজ্ঞানমূলক উপন্যাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। ঐতিহাসিক উপন্যাসের ডালি সাজিয়ে এসময়েই উত্থান ওয়াল্টার স্কটের। স্কটের 'ওয়েভারলি নোভেলস' যেমন-'ওয়েভারলি', 'ইভানহো', 'রব রয়', 'দি হার্ট অফ দি মিডলথিয়ান' ঐতিহাসিক উপন্যাসের ঘরানাকে মজবুত করে। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, সম্পর্কের রসায়ন, অর্থ, সামাজিক প্রতিপত্তি,বিয়ে, গার্হস্থ্য জীবনের টানাপোড়েনের নানান দিক নিয়ে উপন্যাস রচনায় এসময়ের আরেক উজ্জ্বল নাম জেন অস্টেন। অস্টেনের 'সেন্স এন্ড সেন্সিবিলিটি', 'প্রাইড এন্ড প্রেজুডিস', 'ম্যান্সফিল্ড পার্ক', 'এম্মা' যেন আমাদের কথা, আমাদের যাপনকেই আমাদের সামনে তুলে ধরে। সাহিত্য চর্চা ও রচনার জগতে এসময়ে বেশ কিছু মহিলা ঔপন্যাসিকের নাম উঠে আসে; মেরি শেলী ও জেন অস্টেনের পাশাপাশি এসময়ে ফ্যানি বার্নি এবং মারিয়া এজওয়ার্থ তাঁদের উপন্যাসে নিজস্বতার পরিচয় দিয়েছেন।

গদ্য রচনাতেও এই যুগ কৃতিত্বের ছাপ রেখেছে। চার্লস ল্যাম্ব, উইলিয়াম হ্যাজলিট, থমাস ডি কুইন্সি, থমাস লাভপিকক-এর মতো একঝাঁক বিশিষ্ট গদ্যকার এসময়ের সাহিত্য-সম্ভারকে আরো উৎকৃষ্ট করে তুলেছে। সৃজনশীল গদ্য রচনার পাশাপাশি এঁরা বেশ কিছু সমালোচনামূলক গদ্য-ও রচনা করেছেন। নিজস্ব ছন্দে, রীতিতে রোমান্টিক যুগের সাহিত্য সারা বিশ্বের সর্বস্তরের পাঠকের কাছে বিপুল সমাদর পেয়েছে। এই সীমিত আলোচনায় রোমান্টিক পিরিয়ডের কিছু দিককে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম এই পর্বে।
----------

Post a Comment

3 Comments

  1. Your hard labour will enrich us sir.
    Thanks for your valuable information.
    Plz carry on the series in all about English Literature.

    ReplyDelete
  2. Bah.. Besh sajano gochhano 🌱

    ReplyDelete
  3. Swalpo porisore onektai somriddha... 😊

    ReplyDelete