জ্বলদর্চি

কেন আমি এমন / ভাস্করব্রত পতি

ফোটোগ্রাফি - সৈয়দ স্নেহাংশু   


গুচ্ছ কবিতা 

ভা স্ক র ব্র ত  প তি


এই তো আমি

এই তো আমি যাইনি চলে --
   মুখ ঘুরিয়ে মুখ ফিরিয়ে,
   তোমার ডাকে সাড়া দিয়ে
                 আবারও চলে এলাম!
   ভুলতে পারি তোমার কথা?
   তোমার কষ্ট তোমার ব্যাথা।
তোমার বুকের দরজা খুলে,
            সেই তো থেকেই গেলাম!!

এই তো আমি যাইনি চলে --
   তোমায় ছেড়ে দূরের গাঁয়ে,
   মনের টানে তোমায় চেয়ে
                  বুকের মাঝে নিলাম!
   তোমার সাথে আমার স্মৃতি
   তোমার আমার দুঃখ ও প্রীতি।
বছর বছর সেসব ভুলে,
               যেসব পেয়ে ছিলাম!!

এই তো আমি যাইনি চলে --
   দূর গগনের তারা হয়ে,
   তোমার ছবির ছাউনি ছেয়ে
               হৃদকমলে দিলাম!
   ধুলোয় মাখা স্মৃতির কাঁড়ি
   আমিই তোমার বংশীধারী।
কোথায় যাবো তোমায় ফেলে,
               আবার যখন পেলাম!!


শুধু তোমার জন্য

ঘুম চলে যায় চোখের কোনে
রাতের আঁধার প্রহর গোনে -
          মিস্টি তারায় দৃষ্টি রেখে,
মেলে কেবল শূন্য!
শুধু তোমার জন্য!!

মন জুড়ে রয় উতল হাওয়া
বিজন মনে একটু চাওয়া -
           রূপসায়রে সাঁতার এঁকে,
পরাণটা হয় বন্য!
শুধু তোমার জন্য!!

মুখের মাঝে বাক সরেনা
কন্ঠনালী সাড় করেনা -
             অলসতা ঠোঁটের ফাঁকে,
চায় কিছু সে অন্য!
শুধু তোমার জন্য!!

মন উচাটন উতাল পাথাল
বাগ না মেনে হয় সে মাতাল -
              রঙিন রঙের স্বপ্ন দ্যাখে,
হৃদকমলের পণ্য!
শুধু তোমার জন্য!!

তৃষায় ভরা মনের পাড়া
একটু দেখা একটু সাড়া -
              একটুখানি পরশ সুখে,
তাতেই হৃদয় ধন্য!
শুধু তোমার জন্য!!

জানি এসব প্রলাপ বকা
পাগল হিয়ায় চিত্র আঁকা -
               জীবন কাটুক নদীর বাঁকে,
আর কোরো না গন্য!
শুধু তোমার জন্য!!


একলা মানে

একলা মানে
শূন্য ঘরে,
         বেবাক মুখের ছাপ!
একলা মানে
বন্ধ দোরে,
         গুমোট বাতাস তাপ!!

একলা মানে
দৃষ্টি হারা,
         সঙ্গহীনা ফেউ!
একলা মানে
নিচুপ পাড়া,
         মন হারানো ঢেউ!!

একলা মানে
আটকে থাকা,
          বুকের জমা বাক্য!
একলা মানে
জমিয়ে রাখা,
          প্রেমের স্মৃতির সাক্ষ্য!!

একলা মানে
শূন্য পথে,
            কেবল হাঁটা চলা!
একলা মানে
মরণ রথে,
           জোর এগিয়ে চলা!!

একলা মানে
বিষের বাঁশি,
            সুর হারানো শব্দ!
একলা মানে
নীরব ফাঁশি,
              অতল পাঁকে জব্দ!!

একলা মানে
ছিন্ন নীড়ে,
              দুঃখ জাগানি কান্না!
একলা মানে
সবার ভিড়ে,
              না পাওয়া সেই পান্না!!

একলা মানে
চুমুর ছোঁয়া,
             জীবন থেকে ব্রাত্য!
একলা মানে
চিতার ধোঁয়া,
              এ জীবনের সত্য!!


যেদিন আমি থাকবো না

যেদিন আমি থাকবো না
নাচবে পাতা
দুলবে শাখী।
বইবে বাতাস
ডাকবে পাখি।
বিজন দুপুর কূজন ভরে,
   সুজনহারা মানবে না!
   যেদিন আমি থাকবো না!!

ঝরবে বারিষ
ভিজবে নাগর।
নাচবে নদী
ফুঁসবে সাগর।
পাথর মাখা ঝর্ণা পাহাড়,
    আদর করা থামবে না!
    যেদিন আমি থাকবো না!!

ভাসবে মেঘ
মাখবে কালো।
ফুটবে তারা
জ্বলবে আলো।
মোম জোছনার আলতো চুমোয়,
     মোটেও আকাশ ছাড়বে না!
     যেদিন আমি থাকবো না!!

উড়বে ভাষা
গাইবে গান।
বলবে কথা
ভরবে প্রাণ।
টুকরো হওয়া হৃদয় নিয়েও,
      নীরবতা ভাঙবে না!
      যেদিন আমি থাকবো না!!

জ্বলবে জোনাক
মিলবে আদর।
পড়বে শিশির
ঢাকবে চাদর।
কুয়াশা মাখা কুসুম চোখে,
      মোটেও মনে পড়বে না!
      যেদিন আমি থাকবো না!!

রাখবে মধু
চাইবে দ্বিধা।
মিলবে দ্বন্দ্ব
মিটবে খিদা।
উদাসী প্রেম ওড়াবে ধুলো,
      ভুলেও আমায় ভাববে না!
      যেদিন আমি থাকবো না!!


আমার কি হবে?

মনের চিঠি তোমার পানে
নীরব ভাষায় নীরব গানে।
চিলতে খুশি মুচকি হাসা
সবুজ মাখা ভালোবাসা,
          দেখেছিলাম তোমায় আমি যবে!
এখন যদি অন্য সুরে,
ভ্যাপসা হওয়া হৃদয় দোরে,
আমায় রাখো খোঁয়াড় ঘরে!!
           তখন?
হর্ষহারা মন চেঁচাবে --
                         আমার কি হবে?

ছন্দ মাখা সুগন্ধ সুর
পিরিত প্রেমের রোশনাই পুর।
নরম ঠোঁটের গরম ছোঁয়া
চোখচোঁয়ানো হিমেল ধোঁয়া,
              তোমার সাথেই স্বপ্নমাখা ভবে!
এখন যদি রাখোই দূরে,
আগুনরঙা পরাণটিরে
তুলোট কাগজ ধুলোট ভরে,
              তখন?
হর্ষহারা মন চেঁচাবে --
                          আমার কি হবে?

মিশিয়ে আমার মনের সাথে
কল্পলোকের উজান পথে।
স্বপ্নখেয়ার হয়নাকো শেষ
জ্যোৎস্নারাতেও হারায়না রেশ,
            সে সব স্মৃতি আমার হিয়ায় রবে!
এখন যদি বাঁধন ছিঁড়ে,
প্রেমসায়রের সঙ্গ ছেড়ে
আমায় ফেলে যাওরে উড়ে,
             তখন?
হর্ষহারা মন চেঁচাবে --
                         আমার কি হবে?



কেন আমি এমন?

চোখের দৃষ্টি কালো হয়ে আসে
ঘৃণার মাঝে স্বপ্নেরা ভাসে,
         ঘরে বাবা মা'র 
         'ধিক ধিক' রব -
         ক্ষোভের বাঁধনে
         বুক জবজব -
'নন প্লেসমেন্ট' হয়ে বসে থাকবার
                   নিদারুণ যন্ত্রনা!
মন শুধু চায় একটুকু আলো -
সরে যাক যত জমে থাকা কালো,
                   পচা গলা মন্ত্রনা!!

জানালার পাশে বসে বসে একা
মনে হয় যেন পৃথিবীটা বাঁকা,
           কোনোও মানুষই
           চলে নাকো সোজা -
           সকলের মাথায়
           জিলিপির বোঝা -
বেবাক মুখে ভাষাহীন হয়ে
                    বসে বসে দিন গোনা!
তবুও কেউই এগিয়ে এসে -
একটুখানি ভালোবেসে,
                     দ্যায়না কো সান্ত্বনা!!

ভাবো যদি মোরে অযাচিত কেউ
নামহীন কোনও সাগরের ঢেউ,
          তোমরা যাঁরা 
          মান্য ও গণ্য -
          ফেলোনাকো জল
          আমার জন্য -
এঁকে দিও শুধু বাতাসের গায়
                   ঠোঁট দিয়ে আল্পনা!
থেমে যাবে যবে কন্ঠের রব -
মুছে দিয়ে যাবো দুহাতেই সব,
                   ছিল যত কল্পনা!!
ফোটোগ্রাফি - সৈয়দ স্নেহাংশু   





Post a Comment

0 Comments