গ্রেভ অফ্ দ্য ফায়ারফ্লাইজ্ - স্মৃতির কবর থেকে ওড়ে জোনাকি ভালবাসা।
রেটিং – 5/5
পরিচালনা - ইশো তাকাহাতা
অভিনয় (ভয়েস ওভার) –
সেতা - সুসটো তাতসুমি (জাপানি ১৯৮৮) জে রবার্ট স্পেন্সার (ইংরেজি ১৯৮৮) অ্যাডাম গিবস (ইংরেজি ২০১২)
সেতুসুকো - আয়ানো শিরাইশি (জাপানি ১৯৮৮) করিনে ওর (ইংরেজি ১৯৮৮) এমিলি নেভেস (ইংরেজি ২০১২)
সেতা সেতুসুকো এর মা - ইয়োশিকো শিনোহারা (জাপানি ১৯৮৮) ভেরোনিকা টেলর (ইংরেজি ১৯৮৮) শেলি ক্যালেন-ব্ল্যাক (ইংরেজি ২০১২)
সেতা এবং সেতসুকোর মাসি - আকেমি ইয়ামাগুচি (জাপানি ১৯৮৮) অ্যামি জোন্স (ইংরেজি ১৯৮৮) মারসি ব্যানোর (ইংরেজি ২০১২)
মুক্তি – ১৯৮৮
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস, ভয়াবহতার সাথে আমরা সকলেই কমবেশি পরিচিত। বিশ্বযুদ্ধকে কেন্দ্র করে হলিউডে আজ পর্যন্ত যে সমস্ত সিনেমা বানানো হয়েছে সেগুলির বেশিরভাগই জয়ী মিত্রশক্তির বীরগাথারই পরিচায়ক। কষ্টের চিত্র যা দেখানো হয়েছে, তাও যুদ্ধে প্রিয়জন হারানো মার্কিনি সাধারণ মানুষেরই কষ্ট। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারানো সেসব সৈনিক এবং তাদের হতভাগ্য পরিবারের প্রতি পূর্ণ সহানুভূতি রেখেও বলা যায়, সেসব সিনেমাতে কোথাও পরাজিত জাতির দুর্দশার ছবি দেখানো হয়নি। যুদ্ধকে গ্ল্যামারাইজ করে দেখানোর এই হলিউডি ট্রেন্ডের একদম বিপরীত স্রোতে হেঁটে জাপানি চিত্রপরিচালক ইশো তাকাহাতা ১৯৮৮ সালে বানালেন জাপানি অ্যানিমে ছবি ‘হোতারু নো হাকা’, যে ছবিকে আমরা ‘গ্রেভ অফ দ্য ফায়ারফ্লাইস’ নামেই বেশী জানি। জাপানি ঔপন্যাসিক ও গীতিকার আকিয়ুকি নোসাকা রচিত একই নামের একটি আত্মজৈবনিক ছোটগল্পের ওপর ভিত্তি করেই নির্মিত ছবিটি।
সেতুসুকো (বয়স ৪) এবং সেতা (বয়স ১৪) যুদ্ধকালীন জাপানে বসবাসরত দাদা ও বোন। তাদের বাবা জাপানী রয়্যাল নেভীর অফিসার। মার্কিন বিমান হামলায় তাদের মা মারা যাওয়ার পরে তারা মাসির কাছে আশ্রয় নেয়। সেখানে নির্দয় মাসির সাথে ঝগড়া করে তারা শহর ছেড়ে চলে যায় এবং পরিত্যক্ত একটি বাঙ্কারে আশ্রয় নেয়। শুরু হয় দাদা বোনের বেঁচে থাকার কঠিন লড়াই। বাবার কোনও খবর নেই তাই দুজনে হয়ে ওঠে দুজনের নির্ভরতা। ক্ষুধা, কষ্টের মাঝে বেঁচে থাকার এই অসম লড়াইয়ে তাদের জীবনে আনন্দের রোশনাই হয়ে জেগে থাকে এক ঝাঁক উজ্জ্বল জোনাকী।
সাধারণত, অ্যানিমেশন সিনেমা বললেই আমাদের সামনে যে ছবিটা ফুটে ওঠে, তা হল ছোটদের জন্য বানানো ডিজনির মজাদার কোনো চলচ্চিত্র। সেই গল্পে নেই কোনও বিষাদ নেই বিচ্ছেদের যন্ত্রণা। এই প্রচলিত স্টিরিওটাইপকে নস্যাৎ করে এরকম এক অন্য ধারার সিনেমা বানানোর সাহস দেখিয়েছিলেন জাপানী পরিচালক তাকাহাতা। এই প্রসঙ্গে সিনেমা সমালোচক রজার এবার্ট বলেছিলেন- ‘Grave of the Fireflies forces a rethinking of animation.’ গল্পের লেখক আকিয়ুকি নোসাকার মতো পরিচালক তাকাহাতাও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শিকার হয়েছিলেন। বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা সামনে থেকে দেখার কারণে পর্দায় সেই বাস্তবতা খুব নিখুঁতভাবেই ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। চিরাচরিত অ্যানিমেশনের থেকে জাপানি অ্যানিমে ফর্ম্যাটটি খানিক স্বতন্ত্র। অ্যানিমেশন ফর্ম্যাট এবং ওয়ার জঁর চলচ্চিত্রের এই দুই ভিন্ন শ্রেণীর বিষয়কে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে পর্দায় উপস্থাপন করতে একশো শতাংশ সফল হয়েছিল ‘গ্রেভ অফ দ্য ফায়ারফ্লাইজ’। সেজন্যেই, নিঃসন্দেহে পৃথিবীর চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এই সিনেমা এক অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে। আপনি যত বড় সিনেমা প্রেমী হন না কেন এই সিনেমাটি যদি আপনি না দেখে থাকেন তাহলে ধরে নিন আপনার সিনেমা বিলাসের মনন এখনও পূর্ণতা পায়নি। এটি এমন এক সিনেমা যেটি একবার দেখলে দ্বিতীয়বার দেখার সাহস হয়না। এক অজানা শূন্যতা, হতাশা, মনখারাপ গ্রাস করে ফেলে হৃদয়কে। কারণ এই অ্যানিমি সিনেমায় দেখানো অসহায় দুই ভাই-বোনের দুঃখ-কষ্ট,যন্ত্রণা এবং তাদের বাঁচার আকুতি এতটাই হৃদয় দিয়ে অনুভূত হয় যে দ্বিতীয়বার আর তাদের মুখোমুখি হওয়ার সাহস হয়না। এই কারণেই এটি পৃথিবীর মোস্ট ডিপ্রেসড্ মুভির তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এই অ্যানিমি সিনেমাটি YouTube এ বাংলা, হিন্দী এবং ইংরেজী এই তিনটি ভাষায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে উপলব্ধ রয়েছে। আপনি যদি জাপানী অ্যানিমির ফ্যান হয়ে থাকেন তাহলে এই কালজয়ী সিনেমাটি মিস করবেন না।
রেটিং :
5 অসাধারণ
4 বেশ ভালো
3 ভালো
2 দেখতে পারেন
1 না দেখলেও চলবে
0 Comments