জ্বলদর্চি

মৃত্যুকুটুম / শুভঙ্কর দাস

ফোটোগ্রাফি- সৈয়দ স্নেহাংশু   

মৃত্যুকুটুম


শু ভ ঙ্ক র  দা স 


জন্মে ভাগ বসাবার
সবরকমের করাত,কাটারি এবং কীর্তন
আঁচল আর অধিকারের চারপাশে ঘোরে
কী উপায় নতুন করে ভিটেমাটিতে দাঁড়াবার!
একটা কালোচক্ষু জ্বলে ওঠে দপ্ করে
এতটুকুও জো নেই পান থেকে চুন খসাবার!


রক্ত কি জানে দিনরাতের মানে?
যজ্ঞের শেষে প্রাপ্ত তাপ,তলোয়ার,তক্ষক
শরীরের যে ভাগেই রাখ না কেন,সময় পেলেই
করে উঠবে তীক্ষ্ণ ও তরল ফোঁস
এতো অভাগামঙ্গল,অসুর আর দেবতার মাঝখানে
যদি মানুষ জন্ম পাও,নিতে হবে সব দোষ!


হাঁটুভরে ভার আর করজোড়ে ভিক্ষার মুদ্রা রপ্ত হলে
প্রতিটি আঙুলে পরানো হবে নানা রঙা দড়ি
এই মুখ না তোলার দেশে,মুখোশ পরে নাচো
যাত্রাকালে রাতের মতো পৃষ্ঠায় শুভেচ্ছা আর হাতে হাড়ের তৈরি খড়ি
তার মধ্যে যদি রূপকথার গল্প লেখ,যদি বেঁচে যাও, বাঁচো 
এই মুখেশমুগ্ধ দেশে,করতে হবে মুখোশের চাষও...

তালপাতায় তেজ,তৈজস, তালুক লিখে দিয়েছে
শুধু একটু অশ্রু আর ঘামের রৌদ্রে শুকিয়ে নিতে হবে
বাইরে মুষলধারে বর্ষণ,সঙ্গে বজ্র- বিদ্যুৎ- ছাই
এরই মধ্যে কংসের কারাগার থেকে ভগবানকে মাথায় নিয়ে বসুদেব রাস্তা বানাচ্ছেন  যমুনায়..
তারই পাশে ক্লান্তশ্রান্ত  সংসার সেই তালপাতা ধরে বসে,যাতে ভিজে না যায়!

এবার মাঠে নামার পালা,নগ্ন করা হল জান-জমি-জরুর গোপন পোশাক
রোদের ভেতর রাত,বৃষ্টির ভেতর ব্যাকুলতা,খরার ভেতর খড়
আর জরার ভেতর জ্বর এমনভাবে ঢুকিয়ে দাও
যাতে প্রতিটি গোলায় মা লক্ষ্মীর পায়ের ছাপ পড়ে
সিংহাসন কীসের বানাবে? তুষের ভেতর চাল নাকি চালের ভেতর তুষ!
অবতারে চাইছ? পঞ্চভূত তো শাঁখের করাত,নিপীড়ন নিরঙ্কুশ

দুধেভাতে সন্তান যদি নাও থাকে,নুনভাতের বর
সত্যি করতে বেরিয়ে যায় বুকের পাঁজর- পিলসুজ- পারানি 
তারপরের গল্প,ঘাসের মতো সাদামাটা আর সন্ধ্যাভাষার মতো জটিল,তুলবে ওজন করা কাঠে
মৃত্যু বিক্রি করে জন্ম কেনে সেই যে আশ্চর্য এক হাটে
সেখানেই পাগল চেঁচায়,এপাশে জল,ওপাশে জল, মাঝখানে চার,তার মধ্যে বসে আছেন শিব সদাগর!

আঁশবটিতে জগজ্জননী সত্যকে ছাই মাখিয়ে কাটছেন
ঝোল- ঝাল- টক- অম্বল , এমন সহস্র ব্যঞ্জন
কার পাতে কী পড়বে,জানে তার আটকে আঙুলে পেট!
এতেই সারা পৃথিবীর আহ্নিক ও বার্ষিক গতির ফলাফল,তল,অতল!
সেইখানেই স্থির মন্দির- মসজিদ- গীর্জা আর গুরুদোয়ার
মা আঁচলের চাবি ও চাবুক ফেলে স্নানে গেছেন,দ্বার খুলতে দ্বারী সন্তানের বলি চায়!

সাহসের সাতটি রঙ জড়ো করলেও রামধনু হবে না!কারণ বেড়ার বাইরে যে স্বর্গের ছায়াছবি, তা একজীবনের জন্য নয়!তার জন্য লাগে জন্ম- জন্মান্তর,শুধুই  আসে- যায়!
হয়তো একই পথে শতবার হেঁটেছ,একই রমণীরত্ন সহস্রবার প্রেম,একই পুরস্কার কোটিবার প্রাপ্তি,যাকে নবজাতক বলে ভাবলে,সেই বয়সে মূর্ত আদিম পিতায়...

স্নান সেরে ঠিক করে নাও কী পরবে? রাতের পোশাক হলে সব কাম- ক্রোধ- মোহ সুনিপুণ হস্তে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে আর দিনের পোশাক পরলে মধু- মাধুকরী- মুমুক্ষু এমনি চলে আসবে!শেষপর্যন্ত তীর্থের আশা রাখি,প্রতিটি ইঁটে- পাথরে- চূড়ায়... সব ঠিক করা আছে,শুধু দাউ দাউ নরম- পিন্ডের চিমনি আর ততোধিক নরম লোমশ- সুরঙ্গ নিয়ে কী করবে? পরশমণির ছোঁয়ায়!


স্মৃতি আর সন্দেহ পাশাপাশি হাই তোলে! এই জাগ্রত, গুহার দেওয়াল চিত্র, শিকার,সজ্জা,গৃহ ঘুম
এই আবার গ্রহ- গ্রহান্তরের সুসফল অভিযান,পতাকা,পদচিহ্ন আর পার্থিব উপহার,মাথার মধ্যিখানে চুম!
ছায়ার ভেতর,কুচি ইঁটের পাঁজার ভেতর,জ্যোৎস্নার ভেতর রমণের শিৎকার আর প্রসব চিৎকারের মহা মরশুম!
শুধু মৃত্যু প্রতিটি শ্বাসে শ্বাসে শত্রু,অথচ সে চির জন্মকুটুম!

ফোটোগ্রাফি- সৈয়দ স্নেহাংশু   

Post a Comment

1 Comments

  1. খুব সুন্দর উপলব্ধি । অসাধারণ একটি কবিতা পড়লাম

    ReplyDelete